দুষ্টু গার্লফ্রেন্ড । পর্ব -১৬
আয়রাঃ এত রাতে ড্রিংক করার কি দরকার।
আকারঃ তুই বল কি বলবি।
আয়রাঃ মেয়েটি আমাদের বাসায় কি করছে?
আকাশঃ কোন মেয়েটি?
আয়রাঃ আহিরের বোন।
আকাশঃ আহিরের বোন ঈশা’ই সেই মেয়ে।যে আমার থেকে জোর করে ২০ হাজার টাকা নিয়েছিলো।
আকাশ ঈশার সাথে প্রথম দেখা থেকে সবকিছু বললো আয়রা’কে।আয়রা জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আকাশের কথা শুনছে।আয়রা বললো!
আয়রাঃ আমাদের বাসায় কেনো এসেছে ঈশা?
আকাশঃ আমার সাথে ডিল হয়েছে ঈশার।
আয়রাঃ কিসের ডিল?
.
আকাশঃ পুরো ১ মাস আমাদের বাড়িতে সার্ভেন্ট হয়ে থাকতে হবে।আমি যা বলবো তাই করতে হবে।কোনো কাজে ‘না’ বলা যাবে না।রাগ দেখানো যাবে না আমার সাথে।যদি ১ মাস এই কন্ডিশন গুলো মেনে চলতে পারে! তাহলে তিনশো ফিট বস্তি আমরা ওদের সবাইকে দান করে দিব।
আয়রাঃ হুয়াট? আর ইউ ক্রেজি আকাশ? ওই বস্তি’টা আমাদের জন্য বিজনেস।আমি ওখানে শপিং কমপ্লেক্স তৈরি করবো।তুই আমার কাছ থেকে না শুনে নিজে কিভাবে এত বড় ডিসিশন নিতে পারিস?
আকাশঃ রিল্যাক্স আপু।
আয়রাঃ রিল্যাক্স মানে কি?
আকাশঃ আপু আমি ঈশা’কে ভালোভাবে চিনে ফেলেছি।ঝাঁছি কি রাণী ও।১ মাস তো দূরের কথা ১০ দিনও থাকতে পারবে না আমাদের বাসায় ঈশা।
আয়রাঃ সেটা কিভাবে?
আকাশঃ ঈশা খুব সেন্সিটিভ একটি মেয়ে।নিজের সম্মানে আঘাত লাগলে রেগে যেতে বাধ্য ঈশা।আর সেটাই হবে ঈশা’কে হারিয়ে দেওয়ার উপায়।
আয়রাঃ কি করবি তুই?
.
আকাশঃ ঈশার সম্মানে আঘাত করবো।এতটা অপমান করবো যে! বাধ্য হয়ে আমার উপর চিল্লিয়ে উঠবে ঈশা।তখনি আমি চ্যালেঞ্জে জিতে যাবো।আর ঈশা হেরে যাবে এবং ওই বস্তি ওদের ছেড়ে দিতে হবে।
আয়রাঃ অপমান করবি মানে?
আকাশঃ তুমি শুধু চিল করো।আর অফিসে আহির’কে শিক-কাবাব বানাও।বাড়িতে ওর সুদর্শিত ছোটো বোন ঈশা’কে আমি চিকেন বিরিয়ানি বানাবো।
আয়রাঃ জানি না কি করবি তুই।
আকাশঃ তুমি শুধু দেখতে থাকো।আগে-আগে কি করি আমি ঈশার সাথে।তোমাকে আর আমাকে করা প্রতিটা অপমানের শোধ নিবো ওদের দু ভাই/বোন এর কাছ থেকে।
আয়রাঃ নিশ্চুপ………..!
আকাশঃ গুড নাইট আপু।
আয়রাঃ গুড নাইট।
আকাশ শয়তানি হাসি দিলো।ওয়াইনের বোতল হাতে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।আয়রার খুশি হওয়ার কথা আকাশের প্ল্যান শুনে।কিন্তু আয়রার কেনো জানি মনে খুব অশান্তি লাগছে।আকাশের কাজ গুলো ঠিক বলে মনে হচ্ছে না আয়রার কাছে।
.
আকাশ নিজের রুমে গিয়ে জানালার সামনে দাঁড়ালো।আকাশের আজ একটুও নেশা হচ্ছে না।এক বোতল ওয়াইন প্রায় শেষ।কিন্তু আকাশের নেশা হচ্ছে না।ঈশা’কে নিজের মাথা থেকে সরাতে পারছে না।শুধু টেনশন করছে।
আকাশঃ ঈশা ঠিক মতো বাসায় পৌছে গেছে না’কি কোনো বিপদ হলো? একটা ফোনও করতে পারছি না।
ঈশা বাড়ির সামনে এসে নামলো রিকশা থেকে।টাকা বের করে রিকশা ওয়ালা কে দিতে যাবে! কিন্তু ঈশা টাকা দেওয়ার আগেই কেউ রিকশা ওয়ালার সামনে টাকা ধরলো।পাশে তাকিয়ে দেখলো আহির।ঈশা ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়ালো।রিকশা ওয়ালা আহিরের হাত থেকে টাকা নিয়ে চলে গেলো।আহির ঈশার সামনে দু পকেটে হাত রেখে দাঁড়ালো।
.
ঈশাঃ [আজ আর বেঁচে যাওয়ার চান্স নেই আমার।]
আহিরঃ ক’টা বাজে রাত? [ঠান্ডা মাথায়]
ঈশাঃ ১০:০০টা বাজে।
আহিরঃ কোথায় ছিলি এত রাত পর্যন্ত তুই?
ঈশাঃ আমি মানে…!
আহিরঃ ঈশা তুই আমার বোন।ছোটো থেকে যথেষ্ঠ ভালো শিক্ষা দিয়ে বড় করেছি তোকে আমি।তাই তোর উপর আমার সম্পূর্ন বিশ্বাস আছে।তুই এমন কোনো কাজ করবি না যাতে তোর মা-বাবা-ভাই-বন্ধু বান্ধব সবার মাথা নিচু হয়ে যায়।সবার সম্মান ধুলোয় মিশে যায়।
ঈশাঃ আমি জানি তুই আমাকে বিশ্বাস করিস ভাইয়া।কিন্তু…!
আহিরঃ হ্যাঁ তোকে বিশ্বাস করি বলেই আজ কোনো প্রশ্ন আর জেরা করবো না তোকে।কিন্তু চেষ্টা করবি তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার।কারন ভদ্র পরিবারের সন্তান’রা কখনো কোনো কারন ছাড়া এত রাত অব্দি বাহিরে থাকে না।নেক্সট টাইম বি কেয়ারফুল ওকে।
ঈশাঃ হুমম।
.
আহিরঃ তোর টেস্ট এক্সাম চলছে তাই কিছু বললাম না।হয়তো পড়াশোনার কাজে ব্যস্ত ছিলি।কিন্তু সব’সময় আমি মেনে নিবো না।
ঈশাঃ হুমমম। [মাথা নিচু করে]
ঈশা আর কথা বাড়ালো না।আহির খুব ফ্রেন্ডলি ঈশার সঙ্গে।কিন্তু বড় ভাই হিসেবে আহিরের কিছু দায়িত্ব আছে নিজের ছোটো বোনের উপর।আহিরের দায়িত্ব ঈশা’কে সব রকম বিপদ থেকে দূরে রাখা।শাসন করা ঈশা’কে।আহির আজ সেটাই করেছে।আহিরও বাসায় ঢুকলো।
ঈশার মাঃ ঈশা এসেছে?
ঈশার বাবাঃ এত রাত পর্যন্ত কেনো বাহিরে থাকবে ও? এই শিক্ষা দিয়েছি ওকে আমি? [ঈশা’কে উদ্দেশ্য করে]
আহিরঃ আব্বা আমি ঈশা’কে বকেছি এবং বুঝিয়েছি।
ঈশার বাবাঃ এভাবে বললে হবে না।শাসন করতে হবে।ছেলে-মেয়ে ভুল পথে গেলে তাকে ঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে হবে।ও ভুলে যাচ্ছে যে! একটি গরিব ঘরের মেয়ে ও।এত রাত অব্দি বাসার বাহিরে থাকলে আশেপাশের লোকে কি বলে?
ঈশার মাঃ হয়েছে আপনি চুপ করুন।মেয়েটা সারাদিন পর বাসায় ফিরলো।আপনি এভাবে বকছেন কেনো?
ঈশার বাবাঃ তোমার আর তোমার ছেলের আস্কারা পেয়ে! মাথায় উঠে বাদর নাচ দিচ্ছে তোমার মেয়ে। [ঈশা’কে উদ্দেশ্য করে]
.
ঈশার মাঃ শুনতে পাবে ঈশা।
আস্তে কথা বলুন আপনি।
ঈশার বাবাঃ এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যেতে বলো তোমার মেয়েকে।
এত রাতে বাহিরে থাকা কোনো ভালো মেয়ের লক্ষন নয়।
ঈশার বাবা ঈশা’কে খুব বকলো জোরে-জোরে।তারপর বিছানায় শুয়ে পরলো।
ঈশার মা রান্নাঘরে গেলো ঈশার জন্য খাবার গরম করতে।আহির চুপ করে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনলো।
কিছুই করার নেই।বাবার মুখের উপর কথা বলার সাহস নেই আহিরের।
ছোটো থেকে এই শিক্ষায় বড় হয়’নি আহির।
ঈশা নিজের ঘরে বসে বাবার সব বকা মুখ বুজে শুনলো।শুধু ফুঁপিয়ে-ফুপিয়ে কাঁদলো ঈশা।
আর কি করার আছে ওর? যা করছে বস্তির মানুষের ভবিষ্যৎ-এর কথা ভেবে করছে ঈশা।
ঈশার মা ঈশার জন্য খাবার গরম করে নিয়ে এলো।দেখলো আহির এখনো দাঁড়িয়ে আছে।
আহির এগিয়ে গিয়ে ওর মায়ের হাত থেকে খাবার প্লেট নিয়ে বললো!
আহিরঃ আমি ঈশা’কে খাইয়ে দিব।তুমি গিয়ে শুয়ে পরো আম্মা।অনেক রাত হয়েছে।
ঈশার মাঃ ঠিক আছে।ঈশা জেদ করলে শুনবি না।জোর করে খাবার খাইয়ে দিবি ওকে।
আহিরঃ বলতে হবে না।আমি খাইয়ে দিব।
ঈশার মা ঘরে চলে গেলো।আহির সোজা খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে ঈশার ঘরে ঢুকলো।
দেখলো ঈশা বিছানায় বসে ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি মেরে কাঁদছে।
আহিরের বুঝতে বাকি নেই! ঈশা ওর বাবার বকা শুনেই এভাবে কাঁদছে।
.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com