তারে ভালোবাসি বলে । পর্ব-১৫
অয়নের বাবা মা আর অনু। অয়ন আর ঈশাকে এক সাথে দেখে ভিশন অবাক হয়ে গেলো। অনু যে ঈশাকে দেখে বেশ বিরক্ত তা তার চেহারায় স্পষ্ট। অয়নের বাবা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অয়ন এসব কি? তুই হাসপাতাল থেকে এভাবে চলে আসলি কেনো?
অয়ন ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
— যদি ওভাবে না যেতাম তবে কেউ একজন আমার জন্য ছটপট করতে করতে পাগল হয়ে যেতো। তাই চলে গেছি।
অয়নের মিষ্টি সুর কারো মন গলাতে পারলো না। অয়নের বাবা একটু থেমে বলল
— এসবকে পাগলামি বলে অয়ন। তুই নিজের কথা একটি বার চিন্তা করলি না? তোর যদি কিছু হয়ে যেতো! তখন আমাদের কি অবস্থা হতো? তুই অন্য দের কথা ভাবিস ঠিক তবে আমাদের কথা না।
অয়নের ভিশন অৎভূত লাগলো তার বাবার বলা কথাটা। অন্য কেউ মানে? বাবা অন্য কাউকে বোঝাতে কাকে মেন করছে? ঈশা অয়নের বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। অয়ন তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অন্য কেউ বলতে তুমি কাকে বোঝাতে চাচ্ছো বাবা? ঈশা অন্য কেউ নয়। ঈশা
অয়নকে বাকি কথা বলতে দিলো না তার বাবা। উনি হাস্যজ্বল চেহারা নিয়ে বললে
— তুই ঈশাকে দেখতে চাস এটা বললেই তো হতো। আমরা ওকে নিয়ে আসতাম। তুই নিজে কেনো অসুস্থ হয়ে ওদের বাড়ি গিয়েছিস? তোর যদি কিছু হয়ে যেতো তখন? আমাদের তোকে নিয়ে ভিশন চিন্তা হয়।
অয়ন তাচ্ছিল্য কর হাসি দিয়ে বলল
.
— তাই না বাবা আমি কি দেখতে চাই? কাকে দেখতে চাই? সেটা কি তোমরা জানতে না?
আর তোমরা ওর বাড়ি গিয়ে নিয়ে আসতে! যদি তাই হতো না বাবা বিশ্বাস করো কষ্ট করে আমাকে যেতে হতো না। তোমরা থাকার পরেও ঈশাকে ডিপ্রেশনের মধ্যে দিন কাটাতে হয়েছে।
ঈশার পরিবারকে অপমান সহ্য করতে হয়েছে। হুমমম তোমরা ছিলে তারপরেও।
আমাকে নিয়ে অযথা চিন্তা কেনো করো তোমরা? উহু আর করতে হবে না।
অয়নের কথার বিপরীত জবাবে তার বাবা বেশ কর্কশ গলায় বলল
— তখনকার পরিস্থিতি আমাদের বাধ্য করেছে ঈশাকে অপমান করতে।
ঈশা তোর এক্সিডেন্টের জন্য দা….
— ব্যস বাবা হয়েছে। ঈশা আমার এক্সিডেন্টের জন্য দায়ী।
এটাই তো বলবে তুমি? তবে শুনো ঐ দিন এক্সিডেন্ট টা কাকতালীয় ছিলো।
তার সম্পর্কে না ঈশা অবগত আর না আমি।
আর আমি বুঝতে পারছি না তোমরা কার কথায় এতো বড় অভিযোগটা ঈশার উপর চাপিয়ে দিয়েছো?
অয়নের কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনু অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অয়ন যা হয়েছে তা ভূল বোঝাবুঝি মাত্র। তোমার অসুস্থতার আমরা নিজেদের মাথা ঠিক রাখতে পারিনি। তাই ঈশাকে দোষ দিয়েছি। এখন ভূল বোঝাবুঝির অবসান করে সব কিছু সুধরে নিতে হবে।
অনু হাসি মুখে কথাটা বললেও অনুর মনের মধ্যে অন্য কাছু কাজ করছে।
পরিস্থিতি অনুর বিপক্ষে চলে গিয়েছিলো।
সবাই যদি অয়নের সামনে অনুর নামটা বলে দিতো তবে অয়ন অনুকে এখানে আর থাকতে দিতো না।
অনু সেটা চায় না। সেই জন্য হাসি মুখে অয়ন আর ঈশাকে মেনে নিতে হলো তাকে।
ঈশা অয়নের হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। ঈশা কল্পনাও করতে পারেনি যে অয়ন তার জন্য
তার পরিবারের বিরুদ্ধে পর্যন্ত যেতে পারে।
অয়ন ঈশার মায়াবী চোখ জোড়ার দিকে তাকিয়ে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— তো তোমার কোনো সমস্যা নেই তো আমাকে বিয়ে করতে?
ঈশা লজ্জা পেয়ে অয়নের চোখে দিক থেকে নিজের চোখ নামিয়ে নেয়।
অয়নের বাবা ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল
ঈশা মা আমাদের উপর তোমার কি কোনো অভিযোগ আছে? ঈশা ছলছল চোখে বললো
.
— না আংকেল আমার কোনো অভিযোগ নেই। আপনি আমার গুরুজন অবশ্যই যেটা ভালো মনে করছেন আপনি। তাই করেছেন।
— হুম, ওকে তাহলে ঈশার বাবা, মা কে খবরটা দিয়ে দেই! কি বলো অনু?
অনু মুখে কিছু বলল না শুধু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। অয়ন ঈশাকে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে। দুজনের একান্তে কিছু কথা আছে। এখন সেই কথা তো আর সবার সামনে বলা যায় না। অয়ন ঈশাকে রুমে নিয়ে এসে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। ঈশা তো চমকে যায় অয়নের কান্ড দেখে। ঈশা আমতো আমতো করে অয়নকে বলল
— এএএই, কি করছো এসব? দরজা কেনো বন্ধ করছো?
অয়ন একটু বাঁকা হেঁসে ঈশার প্রশ্নের জবাবে বলল
— তোমার যাতে করে লজ্জা না লাগে তাই দরজা বন্ধ করলাম।
— মানে? এই কোনো প্রকার ফাজলামি করবা না তুমি। আমি কিন্তু আত্নরক্ষা করতে জানি।
— ও বাবা তাই নাকি। দেখাও তো তোমার আত্নরক্ষার টেকনিক।
কথাটা বলতেই অয়ন ঈশার হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে ঈশাকে। অয়ন দুহাতে শক্ত করে চেপে ধরে আছে ঈশার কোমর। দুজনের মাঝে বিন্দুমাত্র দূরত্ব নেই। ঈশা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে অয়নের চোখ বরাবর। অয়ন মৃদু হেঁসে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে
— আত্নরক্ষে শেষ!
.
ঈশা চোখ নামিয়ে নিলো। অয়ন একটা হাত দিয়ে ঈশার থুতনি টা স্পর্শ করে উপর দিকে হালকা উঠিয়ে নেয়। ঈশা চোখ বন্ধ করে আছে। অয়নের স্পর্শে ভিশন রকম দূর্বল সে। অয়ন ঈশার ঘন চুলে আলতো করে হাত রেখে ঈশার ঠোঁট জোড়ার দিকে অগ্রসর হয়। অয়নের পদক্ষেপ সর্ম্পকে কিছুটা অবগত ঈশা। ঈশার ঠোঁট জোড়া কাঁপছে। অয়ন বিলম্ব না করে নিজের ঠোঁটের সাথে ঈশার ঠোঁট জোড়া পরম আবেশে এক করে নিলো। কিছু মূহূর্ত ধরে চলল তাদের ভালোবাসার আদান প্রদান। হঠাৎ করেই অয়নকে অবাক করে দিলো ঈশা। ঈশা অয়নের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ধাক্কা মেরে অয়নকে বিছানায় ফেলে দিলো। অয়ন ধপাস করে বিছায় পরে গিয়ে অবাক হয়ে যায়। তবে মনে মনে একটু খুশিও হয়। অয়ন খুশি হয় এই ভেবে যে ঈশা হয়তো তাকে আরো কিছু দিতে চায়। অয়ন অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে ঈশার পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য। ঈশা হাঁপাতে হাঁপাতে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অসভ্য, ফাজিল, ছেলে একটা। এভাবে কেউ কিস করে? আল্লাহ গো আমার জীবন বেরিয়ে যাচ্ছিল প্রায়।
অয়ন মৃদু কন্ঠে বলল
.
— সরি। আচ্ছা আবার আসো এবার ঠিক ঠাক ভাবে করবো।
ঈশা মুখ বাঁকিয়ে বললো
— হুম, আর তো কাজ নাই আমার। ফাজিল একটা।
ঈশা দৌড়ে চলে যেতে লাগলো রুম থেকে। অয়ন বিছানা থেকে উঠতে দাড়িয়ে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— এটা কি হলো? ধোঁকা দিলে আমায়?
— জ্বি জনাব দিলাম।
— সময় ও সুযোগ আমারও আসবে।
— দেখা যাবে।
ঈশা রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। অয়ন আনমনে হেঁসে দিলো। অয়ন মনে মনে ভাবছে এই মেয়ে যে কিস করতে দিয়েছে এটাই আমার ভাগ্য। এর থেকে বেশি কিছু যে দিবে না তা আমি আগেই জানতাম। তবে কি করবো বলুন বোবা মনের ব্যাকূল ইচ্ছে হয় তো তাই আর কি আশা করে বসে ছিলাম। হলো না। অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বাকিটা বিয়ের পর বুঝে নিবে।
— ড্যাম ইট। ওই ন্যাকা ঈশা আমার পুরো প্লানটা চপাট করে দিলো। উফফফফ গড! আমি এখন কি করবো? অয়নের সাথে ঈশাকে কি করে আমি সহ্য করবো?
.
আনমনে অনু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে অয়নের কথা। হঠাৎ অনু লক্ষ করলো ঈশা মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে দৌড়ে অয়নের রুম থেকে বের হচ্ছে। অনুর কাছে এই বিষয়টা মোটেও সুখকর হলো না। ভিশন কৌতুহল নিয়ে অনু অয়নের রুমের দিকে গেলো। অনু অয়নের রুমের যেতেই দেখতে পেলো অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। অনু অয়নের চোখের দিকে তাকালো। অয়নের চোখ জোড়ায় স্পষ্ট উঁকি দিচ্ছে ভালোবাসার অনুভূতি। অনু অয়নের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো হালকা লিপস্টিকের দাগ। অনুর বুকটা দুমরে উঠলো। সহ্য হচ্ছে না অনুর। সে যে অয়নের ভাগ অন্য কাউকে দিতে পারবে না। অয়নের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে অনু। অয়ন ভ্রু কুঁচকে বলল
— কি হলো অনু? এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে?
অয়নের প্রশ্নের জবাবে অনু নিশ্চুপ। কোনো উত্তর দিলো না। অয়ন আবারও অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অনু আমি তোমাকে কিছু বলছি। কি হয়েছে? সব ঠিক তো!
অনু মাথাটা নিচু করে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। অয়ন অনুর দিকে একটু এগিয়ে এসে বলল
— তোমাকে দেখে ভিশন আপসেট লাগছে। মন খারাপ নাকি তোমার?
অনু আর কিছু বললো না। মুখ ভারি করে চলে যায় অনু। অয়ন একটু অবাক হলো অনুর ব্যবহারে। তবে অনুকে নিয়ে ভাবার সময় অয়নের হাতে নেই। অয়নের ভাবনা এখন ঈশাকে নিয়ে। ভালোবাসার মানুষকে সারা জীবনের জন্য আপন করে পাওয়াটা সবার কপালে হয়ে ওঠে না। এতে ভাগ্য লাগে।
* অনু নিজের রুমে এসে স্থির হয়ে বসে আছে। কিছুই ভালো লাগছে না তার। মনে মনে বলেছে অনু
— অয়ন আমার মন খারাপ সেটা বুঝলে শুধু বুঝলে না আমার মন কেনো খারাপ? বুঝতে পারলে না আমার মনের অনুভূতি। যা তোমাকে নিয়ে আছে।
.
কথা গুলো ভাবতেই অনুর ফোনটা বেজে উঠলো। অনু ফোনটা কানে নিয়ে কিছু সময় ধরে রাখলো। অতঃপর অনু বলল
— হুম তাই হবে। যা আমি পাইনি তা ছিনিয়ে নিবো। আসছি আমি।
অনু কলটা কেটে রহস্য জনক এক হাসি দিলো। তার হাসিতে বুঝতে বাকি রইলো না নিশ্চয়ই খারাপ কিছু হতে চলেছে।
* ঈশাকে নববধূ রূপে সাজানো হলো। অসম্ভব সুন্দরী লাগছে তাকে। এতোটাই সুন্দরী লাগছে যে অয়নের চোখ ফেরানো দায়। অয়ন নিজের রুমে একদম তৈরি হয়ে বসে আছে। কিন্তু মন খারাপ ভিশন।
— এটা কি হলো? সবাই ঈশাকে নিয়ে মেতে আছে আর আমি একা একা বসে আছি। বন্ধু গুলোই হয়েছে বজ্জাতের হেড অফিস। সব গুলা ভাবী ভক্ত। এই জন্যই এদের ইনভাইট করতে চাইনি। আহহহহ আজ যদি পালিয়ে বিয়ে করতাম। কত ভালো হতো। আর ভালো! বাবা মা মানলো কেনো? ঈশাকে রিজেক্ট করলেই হতো। আমি তো পালিয়ে লাভ ম্যারেজ করার জন্য তৈরিই ছিলাম। তবে মহারানীর আদেশ। বিয়ে পারিবারিক ভাবেই করতে হবে।
আপন মনে বলছে কথা গুলো অয়ন। হঠাৎ করে অয়নের রুমে চলে আসে অনু। অনুর
চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে রক্ত বেরিয়ে যাবে। অনুকে দেখে অয়ন বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অয়ন কিছু বলতে যাবে এমন সময়…..
.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com