ভালোবেসে ভুল করিনি । পর্ব -০৪
রাকিব তো খুব ভালো করেই জানতো আমি রাইকে
ভালোবাসি।তাহলে ও কি করেই বা পারলো আজ
বরের রুপে এখানে হাজির হতে?হে প্রভু কেনও,বারবার
আমার সাথেই এমনটা হয়?কি দোষ করেছিলাম আমি!
নিয়তি কেনও ঘুরে ফিরে প্রতিবার অজস্র কষ্ট,যন্ত্রনা
বেদনা গুলোকে, ”আমাকে ইঙ্গিত করে চিনিয়ে দেয়?
ছোট বেলা থেকেই কষ্ট আমার জীবন সঙ্গী ছিল,আছে,
হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে।আনমনে কোথায় হেটে হেটে
যাচ্ছি তা আমার খেয়ালেরও শত বাহিরে।তবে আজ
আমার দুঃখে যেনও ঘোটা আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন রুপ
ধারণ করেছে।কখনো ভাবতেও পারিনি,যে রোহিকা
ভাবী এতটা নিম্ন মনের নিচু স্বভাবের একজন নারী।কি
এমন অপরাধ করেছি আমি,যে রোহিকা ভাবী আমার
সাথে এমন এক নিষ্ঠুর কাজ করলো।আমাকে এভাবে
ফাঁসিয়ে দিলো।রাইয়ের সামনে আমার মাথাটা নিচু
করে দিলো।আমাদের সংসারটা ভেঙ্গে চুর্ণ-বিচুর্ণতে
রুপান্তর করে দিলো।শুধু মাত্র রোহিকা ভাবীর জন্য
আজ ভালোবাসার মানুষটি আমাকে ভুল বুঝে নতুন
এক খাচায় বন্ধি হওয়ার জন্য বধুর সাজে বিয়ের
পিরিতে বসেছে।
জানিনা এতে আমার ঠিক কত খানিই বা
কষ্ট হচ্ছে কিন্তু আজ তার চেয়েও অধিক কষ্ট
লাগছে,এটা ভেবে ”যে মাত্রারিক্ত খেটে যার
অপারেশনের জন্য নিজের রক্ত পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়ে
ছিলাম।আজ সেই বন্ধুই,যে খুব ভালো করেই জানতো
আমি রাইকে নিজের জান-প্রান দিয়ে ভালোবাসি।কিন্তু
তারপরও সব কিছু জেনে-শুনে এটা আজ সে কি
করেই বা পারলো?জানি না আর কত দিনি বা আমি এ
পৃথিবীর মানুষদের রঙ বেরঙের রুপ গুলো দেখতে
পারবো?রাই হীন বেঁচে থাকাটা আমার পক্ষে কষ্ট স্বাধ্য
ব্যাপার কারন রাই ছিল আমার বেঁচে থাকার
অক্সিজেন।অক্সিজেন ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচতে পারে
না।তেমনি আমিও রাই ছাড়া বেশি দিন বাঁচতে পারবো
না।তবে তার আগে আমাকে যে করেই হোক রোহিকা
ভাবীর মুখোমুখি হতে হবে।তার উপর আঙ্গুল তুলে
বলতে হবে, কেনো আমার সংসারটা ধ্বংসের শীর্ষ
স্থানে তুলো দিলো?কেনো আমার সাথে তিনি এরুপ
জঘন্য অন্যায় করলেন?কি এমন ক্ষতি করেছিলাম
তার?যার জন্য আমাকে আজ এরুপ কঠিন পরিস্থিতির
শিকার হতে হচ্ছে।
ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে নিজের
গন্তব্যে যাওয়ার একটা বাসে গিয়ে উঠে বসলাম।পরের
দিন সকাল সকাল নিজের শহরে গিয়ে পৌছিলাম।সারা
রাত বাসে “নিরবে কান্না করেছিলাম।এই ভেবে এতক্ষণে রাই হয়তো
নতুন কারও খাচায় বন্ধি হয়ে গেছে?আস্তে আস্তে বাস থেকে নেমে পড়লাম।মাথাটা
হাল্কা জিম জিম করছে, সঙ্গে মাথা ব্যাথা তো বটেই!
বাড়ির সামনে আসতেই দেখতে পেলাম,রোহিকা ভাবী
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে শান্ত মাথায়,নিজের চুল চিরনি
দিয়ে আচরাচ্ছে!অতঃপর দ্রুত রোহিকা ভাবীর ফ্লাটের
সামনে গিয়ে কলিংবেল বাজানোর সাথে সাথে রোহিকা
ভাবী দরজা খুলে দেয়।হয়তো এতক্ষন আমার
অপেক্ষাতেই ছিলেন তিনি!
—আমি জানতাম!তুমি ঘুরে-ফিরে ঠিক আমার দুয়ারেই
আসবে?তা কি খাবে চা” না কফি?
এমনিতেই মাথাটা গরম হয়ে রয়েছে তার মধ্যে আবার
রোহিকা ভাবীর এমন কথা গুলো আমাকে আমার
রাগের শীর্ষে নিয়ে গিয়েছে।ঠাশঠাশ করে কোষে দুটো
রোহিকা ভাবীকে থাপ্পার দিয়ে,ধিক্কার দিতে দিতে
বললাম,
ছিহ,আপনার কি লজ্জা সরম আত্য-সম্মান বলতে
কিছুই নেই?আপনার কি ক্ষতি করেছি আমি?আপনি
কেনো আমার সংসারটাকে ভেঙ্গে চুর্ণবিচুর্ণ করে দিলেন
চুপ করে থাকবেন না!উত্তর দিন রোহিকা ভাবী?
—থাপ্পর মারাটা তোমার একেবারেই ঠিক হয়নি
শাহরিয়ার?উত্তর একটাই আমার, “তোমাকে চাই?
—হ্যা আমার মনটাও না অনেক বার বলেছিল আমায়!
থাপ্পরটা মারা উচিত হয়নি তবে গলা চেপে মেরে
ফেলাটাকে উচিত বলে সম্মোধন করেছে?
—শাহরিয়ার!!!!!
—চেঁচাবেন না?কথা আস্তে বলুন!আর আমাকে চাই
মানে?আমি কি কোনো প্লাস্টিকের হাতের খেলনা,যে
চাইলেই পেয়ে যাবেন?শুধু মাত্র আপনার কু মন-
মানসিকতা আর নোংরামির জন্য আজ আমার
ভালোবাসার মানুষটি আর আমার বুকে নেই?আজ
আমার বুক শুন্য আর শুন্য বুকে রয়েছে শুধুই যন্ত্রণা।
আমার জবাব চাই আপনি কেনও আমার সাথে এমন
করলেন?
—কত বার বলবো আমার তোমাকে চাই?শুধুই
তোমাকে”সঙ্গে তোমার বউ কে নয়!তাইতো ওকে পথের
কাঁটা ভেবে সরিয়ে দিয়েছি নিজের পথ থেকে।আমি
তোমার সাথে সম্পর্ক করতে চাই।তোমাকে বিয়ে করতে
চাই?নতুন করে তোমার সাথে সংসার করতে চাই?
একবার যদি তুমি রাজি হয়ে যাও তাহলে আমার এই
বিশাল সম্পত্তি গাড়ি,বাড়ি টাকা,পয়সা ব্যাংক,ব্যালেন্স
সব কিছু আমি তোমার নামে করে দিবো?আমাকে বিয়ে
করলে তুমি কখনো কষ্টে থাকবে না বরং রাজার মতো
বিলাসিতার সাথে থাকতে পারবে,বাঁচতে পারবে?
—ভাবী আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন আপনি ভুল মানুষ
কে ভুল ধরনের কথা শুনাচ্ছেন?আমি শাহরিয়ার
লোভের কাছে নিজের পরাজয় শিকার করি না সয়ং
লোভ আমার কাছে নিজের পরাজয় শিকার করে হার
মানতে বাধ্য হয়।
—যথা সম্ভব এখন রাইয়ের বিয়ে,বাসর সব হয়ে গেছে?
এখনো রাইয়ের কথা ভেবে কি’ কোনো লাভ আছে?
এখন ওর আর তোমার দুরুত্বটা অনেক বেশি?তাই
বলছি তুমি আমার প্রস্তাবে সহমত প্রকাশ করো!কথা
দিচ্ছি রাই তোমাকে যতটা না সুখে রাখতে পেরেছে,
তার চেয়েও দ্বিগুন আঁকারে আমি তোমাকে সুখে
রাখবো।
—রাই আর আমার দুরুত্বটার পিছনে তো আপনি
নিজেই দ্বায়ী?আর আপনার প্রস্তাবে সহমত করার চেয়ে
নিজের প্রানটা হারিয়ে ফেলা শত গুন ভালো?আপনি
আমার সংসার ভেঙেছেন,রাইকে আমার বুক থেকে
আলাদা করেছেন,রাইয়ের চোখে আমাকে অমানুষ
হিসেবে আক্ষাহিত করেছেন,রাইয়ের পরিবারের সামনে
আমার মাথাটা ডাউন করে দিয়েছেন,কি ভাবছেন?
এসব করে আপনি আমাকে অতি সহজে পেয়ে যাবেন?
ব্যাপারটা হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়!তবে একটা
কথা শুনে রাখুন?আপনাকে আমি অতি সহজে
কিছুতেই ছাড়ছি নাহ?আমি নিশ্চিত,যে আমি রাই হীন
বেঁশি দিন বাঁচতে পারবো না তবে এটাও নিশ্চিত করে
বলছি মরার আগে আপনি আমাকে যতটা কষ্টের
মুখোমুখি করিয়েছেন তারচেয়ে বেশি কষ্ট যন্ত্রণার সাথে
আপনার সাক্ষাৎ কার করিয়ে আপনাকে মারবো?
অতঃপর কথা গুলো বলেই আমি রোহিকা ভাবীর ফ্লাট
থেকে নিজের ফ্লাটে চলে আসলাম।আসার সময়
রোহিকা ভাবী বলেছিল,
— এতো কিছু করেছি?এমনি করেই আমার হাতের
বাহিরে চলে যাওয়ার জন্য নাকী?তুমি আমার হাতের
মুষ্ঠি বদ্ধ!চাইলেও বের হতে পারবে না?
অতএব রোহিকা ভাবীর এমন হাস্যকর কথায় আমি
কোনো রকমি পাত্তা না দিয়ে চলে আসলাম।সব কিছু
গুছিয়ে নিচ্ছি,আজি এখান থেকে চলে যাবো।পরিশেষে
সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে যখন ফ্লাট থেকে বের হতে যাবো
তখন বাড়ির অনান্য অনেক ভাড়াটিয়া আমাকে
আটকে ফেলে।কিছুতেই যেতে দিচ্ছে না!তারা নিজেরা
নিজেরাই একে অপরকে বলা বলি করছে,
—দেখো’ দেখো’ কদিন আগে বাড়িওয়ালার সর্বনাশ
করে এখন হুট করে লুকিয়ে লুকিয়ে এসে সব কিছু
গুছিয়ে নিয়ে কিভাবে পালিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা
করছে?এই একে কেউ যেতে দিবেন না!শক্ত করে ধরে
রাখুন যাতে পালিয়ে কোথাও যেতে না পারে?
তারা কি বলছে এসব আমার মাথায় কিছুই যেন ধরছে
না।আর আমি রোহিকা ভাবীর কি সর্বনাশ করলাম?যা
সর্বনাশ তো আমার সাথে রোহিকা ভাবী করেছেন?
ভাড়াটিয়া লোক গুলো আমাকে কোনো রকম কথা
বলার সুযোগ না করে দিয়ে জোর করে একটা রুমে
আটকে দেয়।যাওয়ার আগে তাদের মধ্যে কেউ একজন
বলে যায়,
—-রোহিকা ভাবীর সাথে আকাম-উকাম করে তাকে
প্রেগনেন্ট বানিয়ে এখন স্বাধু সাজা হচ্ছে?সন্ধ্যার পরে
তোমাদের বিয়ে দেয়া হবে?তাই এখন চুপচাপ রুমের
মধ্যে পড়ে থাকাটা তোমারি জন্যে মঙ্গলকর!
লোকটার কথা শুনে আমি যেনও নিমিষেই স্তব্ধ হয়ে
যাই।কি বলছে এসব?তারমানে এসব রোহিকা ভাবীর
একটা চাল!সন্ধ্যার পরে আমাকে রুম থেকে বের করে
জোর করে রোহিকা ভাবীর রুমে নিয়ে যাওয়া হয়।
রোহিকা ভাবী হাল্কা সাজে বসে আছেন তার সামনেই
কাজি সাহেব বসে রয়েছেন।আমাকে জোর করে
রোহিকা ভাবীর পাশে বসিয়ে দেওয়া হলো।আমি
হাজার বার চিৎকার করে বললেও, যে আমি নির্দোষ
এসব মিথ্যে?আমাকে ফাঁসানো হয়েছে?কিন্তু কেউই
করলো না আমায় বিশ্বাস!সাবাই যেনও রোহিকা
ভাবীর হাতের পুতুল।রোহিকা ভাবী যা বলছেন সবাই
তা মানছেন।পরিশেষে আমাকে যখন কবুল বলতে বলা
হয় তখন আমি চুপসে গেলাম।কিছুতেই,সে শব্দটা
আমার মুখ থেকে বের হচ্ছিলো না হঠাৎ পিছন থেকে
একটা লোক আমার মাথায় থাপ্পর মেরে বললেন,
—চুপচাপ কবুল বল! নইলে শেষ করে ফেলবো?
এই লোকটাকে আমি ভালো করেই চিনি!এলাকার
প্রভাব শালী ক্ষমতাদ্বারী মানুষ,সম্ভাবত উনি রোহিকা
ভাবীর মামা হবেন হঠাৎ কেউ একজন দরজা দিয়ে
ভেতরে প্রবেশ করতে করতে বলল,
—এই বিয়ে বন্ধ করুন?
কন্ঠটা শুনে আমার হৃদয়টা যেনও মুহূর্তেই লাড়া দিয়ে
উঠলো!আমার দু-নয়ন যেনও বিশ্বাস বলে কিছুই
করতে পারছে নাহ ,যে এটা আর কেউ না সয়ং রাই…..
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com