Breaking News

তারে ভালোবাসি বলে । পর্ব-১৪



অয়ন অনেকটা কষ্ট করে বসতেই নার্স অয়নকে বলল
— স্যার আপনার কি কিছু চাই?
অয়ন কথা বলার চেষ্টা করছে তবে কথা বলতে পারছে না। কষ্ট হচ্ছে ভিশন। অয়ন অনেকটা কষ্ট করে থেমে থেমে বলল
— আমাকে এখানে কে নিয়ে এসেছে বলতে পারেন? আমার সাথে একটা মেয়ে ছিলো। ও কোথায়?
নার্স অয়নের কথার জবাবে বলে
— জ্বি স্যার আপনি ম্যাডামের কথা বলছেন! ম্যাডাম একটু বাহিরে গিয়েছে। আমি কি তাকে ডেকে দিবো?
অয়ন নার্সের উদ্দেশ্য হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। নার্স দৌড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। অয়ন নিজের চেষ্টায় বিছানার উপর দিকে হেল দিয়ে বসে। চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ। কপালে ব্যান্ডেজ। ঠোঁট জোড়া শুকিয়ে গেছে তার। উজ্জ্বল বর্ণের চেহারাটা আজ ফ্যাকাসে। বেঁচে আছে এটাই অনেক।
অয়ন ঠিক করে বসা মাত্রই কোথা থেকে যেনো কেবিনে দৌড়ে অনু চলে আসে। অনু অয়নকে বসে থাকতে দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। নার্সের থেকে অয়নের সুস্থতার কথা শুনে অনু ছুটে চলে আসে অয়নের কাছে। অনু হাঁপাতে হাঁপাতে অয়নকে বলল
— তুমি ঠিক হয়ে গেছো?
.
অয়ন অনুকে দেখে খুশি হয় ঠিক তবে অতটাও না। অয়নের চোখ জোড়া দেখে স্পষ্ট যে এই চোখ জোড়া এখন তার প্রিয় মুখটি দেখার জন্য ব্যাকূল হয়ে আছে। অয়ন অনুর পানে দৃষ্টিপাত করে মৃদু হেসে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। অনু একটু থেমে আবারও বলতে শুরু করে
— জানো অয়ন আমরা কতটা চিন্তার মধ্যে ছিলাম! বিধাতার কাছে তোমার সুস্থতার জন্য ফরিয়াদ ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না আমাদের। তোমার বাবা মা তো তোমার জন্য পাগল প্রায় হয়ে যাচ্ছিল। ওনাদের যে কি করে সামলেছি আমি তা শুধু আমি জানি। তুমি সুস্থ আছো এটা তারা শুনে যে কতটা খুশি হবে তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।
অনুর কথার মাঝে নার্স কেবিনে প্রবেশ করলো। অয়ন অনুর দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নার্সের দিকে দৃষ্টিপাত করে অনেকটা কষ্ট করে থেমে থেমে বলল
— আপনি কি ম্যাডামকে বলেছেন আমি তাকে দেখতে চাই?
নার্স অনুনয়ের কন্ঠে বলল
— জ্বি স্যার, বলেছি।
.
অয়ন একটু বিষন্ন দৃষ্টিতে বলল
— যদি বলে থাকেন তবে সে আসলো না কেনো? কোথায় ও?
অয়নের কথাটা শুনে অনু ভিশন অবাক হলো। কোন ম্যাডামের কথা বলছে অয়ন? আমি তো ওর সুস্থতার কথা শুনে দৌড়ে চলে এলাম। আর কাকে খুঁজছে অয়ন?
অয়নের কথার জবাবে নার্স উত্তর দিলো
— স্যার ম্যাম তো আপনার পাশেই বসে আছে।
অয়ন নার্সের কথায় চরম বিরক্তি প্রকাশ করে বলল
— আমি অনুর কথা বলছি না। ঈশা ম্যাডামকে ডেকে দিন। ঈশাকে বলুন অয়ন দেখা করতে চায় তার সাথে। এখন মানে এখনি।
অয়নের কথার প্রতিউত্তরে নার্স কিছু বলার আগেই অনু অয়নের দিকে তাকিয়ে বলল
— ঈশা এখানে নেই অয়ন। ও তোমাকে ছেড়ে অন্য কারো সাথে চলে গেছে।
অনুর কথা শুনে অয়নের মাথার উপরে যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। অয়ন অপ্রস্তুত হয়ে বলল
— মানে? কি সব বলছো কি তুমি? ঈশা কন্য কারো সাথে মানে?
— হ্যাঁ, আমি সত্যি বলছি। তুমি জানো এই এক্সিডেন্ট কে করিয়েছে বা কেনো করিয়েছে? শুনলে অবাক হয়ে যাবে তুমি। এই সব নিয়ে পরে আমারা কথা বলবো। আগে তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠো।
— না আমি এখন শুনতে চাই। অনু প্লিজ আমাকে বলো সবটা।
.
অনু একটু থেমে অয়নের কাছে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করলো
— ঈশা তোমাকে খুন করতে এই এক্সিডেন্ট করিয়েছে। ওর সাথে দিব্বর সম্পর্ক আছে। ঈশা চাইতো তোমার উপর প্রতিশোধ নিতে। তুমি ওকে যা যা অপমান করেছো তার জবাবে ঈশা এটা করেছে। তোমাকে মৃত্যুর মুখে ফেলে ঈশা দিব্বর হাত ধরে নিজের সুখ খুঁজে নিয়েছে। ঈশা একটা দু মুখো সাপ। মানুষ চিনতে তুমি ভূল করেছো অয়ন। ঈশা সময় ও সুযোগ বুঝে তোমাকে ছোবল মেরেছে।
অনুর কথা গুলো সরাসরি অয়নের বুকে গিয়ে বিধলো। চোখ বেয়ে না চাইতেও জল গড়িয়ে পড়লো। অয়ন একটু রহস্য জনক হাসলো। অতঃপর অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল
— তাই না? প্রথমত তোমার কথা আমি বিশ্বাস করতে পারলাম না। আর ২য়ত আমি নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে ভূল মানুষকে আপন করি নি। ঈশা যদি একটি বার বলতো আমার জীবনটা ও চায়। বিশ্বাস করো আমি হাসি মুখে মৃত্যু বরন করতাম। ওর এই এক্সিডেন্টের নাটক করার কোনো প্রয়োজন নেই। তবুও যদি তোমার কথা সত্যি হয়। তবে আমি ওকে নিজের করে না পেলে অন্য কারোর হতে দিবো না। এর জন্য আমাকে যদি দিব্বকে মেরে ফেলতে হয় তবে আমি তাই করবো।
অয়ন কথাটা বলেই বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অনু অয়নের হাত জোড়া শক্ত করে ধরে ফেললো
— কোথায় যাচ্ছো তুমি? তুমি এখনও সুস্থ না। প্লিজ অয়ন এখন যেনো না। আগে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে নাও। তারপর না হয় যেও।
.
— আমি ঠিক আছি। হাত ছাড়ো আমার।
— না ছাড়বো না। অয়ন তুমি এভাবে যেতে পারো না।
— ছাড়ো!
অয়ন এক ঝটকায় সরিয়ে দিলো অনুকে। অনুর থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কেবিন থেকে হনহন করে বেরিয়ে যায় অয়ন। অয়ন হাসপাতালের সামনে নিজের গাড়িটা দেখে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। গাড়ির সামনে যেতেই অয়ন দেখতে পায় গাড়িতে ড্রাইভার বসে আছে। অয়ন ড্রাইভারকে নির্দেশ দিলো গাড়ি থেকে নেমে যেতে। ড্রাইভার গাড়ি থেকে নামতেই অয়ন গাড়িতে উঠে বসলো। গাড়ি স্টার্ট করে বেরিয়ে যায় সে হাসপাতাল থেকে। স্টেয়ারিং ধরে নিজে ড্রাইভ করছে বিধায় অয়নের বুকের বাম পাশ থেকে চুইয়ে চুইয়ে ব্লাড বেরিয়ে পরছে। অয়ন তা উপলব্ধি করতে পারলো। কিন্তু তাকে যেতেই হবে ঈশার কাছে। সেটা যে কোনো মূল্যেই হোক না কেনো। শরীরের আঘাতের থেকেও অয়নের বুকের আঘাতটা বেশি যন্ত্রণা দায়ক।
* অয়ন অনেকটা কষ্ট করে গাড়ি ড্রাইভ করে ঈশার বাড়ির সামনে এসে পৌঁছায়। গাড়ি থেকে নেমে অয়ন ঈশার বাসায় চলে আসে। অয়নকে এই অবস্থায় দেখে ঈশার বাবা মা বিচলিত হয়ে পরে। অয়নকে উদ্দেশ্য করে বিচলিত কন্ঠে ঈশার বাবা বলল
.
— অয়ন তুমি এই অবস্থায় এখানে কেনো এসেছো?
অয়ন একটু বাঁকা হেঁসে জবাব দিলো
— ভয় নেই আংকেল আমি ঠিক আছি। ঈশাকে একটু ডেকে দিন প্লিজ!
ঈশার কথা অয়নের মুখে শুনে ভিশন রাগ হলো ঈশার বাবার। ঈশার বাবা রাগি কন্ঠে বলল
— এতোটা নির্লজ্জ তুমি! ঈশাকে কেনো চাই? আর কত কষ্ট দিবে মেয়েটাকে? এখন কি তুমি অপমান করে এসেছো? তোমার পরিবার কি কম ছিলো নাকি? আমাদের একটা আত্নসম্মান আছে। বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে। আর কখনও আসবে না তুমি।
— আংকেল প্লিজ আমার পরিবার কি করেছে তা আমি জানি না। তবে দয়া করে আমাকে ঈশার সাথে একটি বারের জন্য হলেও দেখা করতে দিন। প্লিজ!
— না তা হবে না। মেয়েটা আমার একটা জিবন্ত লাশের পরিনত হয়েছে। আমি চাই না তোমাকে দেখে ও আবার কষ্ট পাক। তোমার অবস্থা মোটেও সুখকর নয়। চলে যাও বাবা তুমি। আমার মেয়েটাকে একটু একা থাকতে দাও।
* অয়ন আর কিছু বললো না। আসলে কি বলবে সে? সত্যিই তো ঈশা আমার জন্য বার বার কষ্টের সমূক্ষীন হয়েছে। অয়ন একটু থেমে হনহন করে ঈশার রুমের দিকে চলে যায়। ঈশার বাবা মা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল অয়নের দিকে। অয়ন ঈশার রুমের সামনে আসতেই দেখতে পেলো ঈশা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ বেয়ে পরছে অজস্র নোনা জল। অয়ন ঈশার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি ঠোঁটে এনে বলল
— তুমিও কি তারিয়ে দিবে আমায়?
.
ঈশার বাকরুদ্ধ। কোনো জবাব তার মুখে নেই। আজ ঈশার কথা গুলো চোখের জল হয়ে জবাব দিচ্ছে অয়নের প্রতিটা প্রশ্নের। অয়ন ঈশার চোখের দিকে তাকিয়ে অনুভব করছে ঈশার অতিবাহিত করা এই দিন গুলো কতটা কষ্টের ছিলো। ঈশা অয়নের দিকে এগিয়ে আসছে। অয়ন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। ঈশা অয়নের কাছে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অয়নকে। চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে ঈশা। মনের ভিতর যত কষ্ট, অভিমান, অভিযোগ, রয়েছে তার। আজ সব প্রকাশ করে মনটা হালকা করতে হবে তাকে। ঈশার কাঁদতে কাঁদতে বলছে অয়নকে
— কেনো আসছো তুমি? সবাই বলে আমি নাকি তোমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছি। আমি নাকি রাস্তার মেয়ে। প্রতিশোধ নিতে আমি তোমাকে… চলে যাও আমি সব কিছু মেনে নিয়েছি। আর কখনও আসবে না তুমি। চলে যাও অয়ন প্লিজ!
ঈশা কথা গুলো বলছে আর কাঁদছে। অয়ন আলতো করে ঈশার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো। ঈশা এখনও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। ঈশাকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে অয়নকে আর হারাতে চায় না সে। সারা জীবন এভাবে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায় ঈশা। অয়ন ঈশাকে শান্ত করে বলে
— হয়েছে তো। আর কাঁদতে হবে না। শার্ট ভিজে গেছে আমার।
— হুমমম
.
— উফফফফ লাগছে বুকে এখন তো ছাড়ো। পরে না হয় আবার জরিয়ে ধরো।
* অয়নের কথাতে ঈশা ভিশন লজ্জা পেয়ে গেলো। ঈশা অয়নকে ছেড়ে দিতেই ইশারা চোখে পরলো অয়নের বুক থেকে রক্ত বের হচ্ছে। ঈশা প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
— এই রক্ত বের হচ্ছে তোমার বুক থেকে। তুমি এখানে কিভাবে এসেছো?
— বিচলিত হতে হবে না তোমায়। এটাতো সামান্য একটা ক্ষত। বুকের মধ্যে আরও অনেক বড় ক্ষত হয়ে আছে। সেটার রক্তক্ষরণ কি তোমার চোখে পরে না?
— অয়ন ফাজলামো করো‌ না। হসপিটালে চলো এখনি।
— উহু যাবো না। আগে আমার সাথে তোমার মেতে হবে।
— কোথায় যাবো আমি?
— আমার বাড়িতে।
— সম্ভব না অয়ন। এতো অপমানের পরে আমি ওবাড়িতে মেতে পারবো না।
— আমার জন্য ও না।
— না। আমি ভালোবাসি তোমায় কিন্তু তোমার সাথে থাকতে চাই না।
— মানে? কি বলছো তুমি?
— সত্যি বলছি অয়ন। আমাদের ভাগ্যে পূর্ণতা নেই। আছে শুধু যন্ত্রণা। আমি চাই না আমার জন্য তোমার ক্ষতি হোক। তুমি আমার থেকে দূরে থাকলে ভালো থাকবে। আর আমি এটাই চাই। কি করে ভাবতে পারলে আমি তোমার থেকে দূরে থাকলে ভালো থাকবো? কি হয়েছে? কি জন্য আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছো তুমি? বলো
ঈশা অয়নকে সেই ফোন কলের কথা বলল। অয়ন ঈশার কথা শুনে অবাক হয়েছে ঠিক তবে তাছিল্য কর হাসি দিয়ে সে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— ২০২১ সালেও একটা ফোন কলের উপর ভরসা করে নিজের ভালোবাসার বিসর্জন দিচ্ছো তুমি! সত্যি অবাক করার কথা।
.
— সামান্য কল না। এটাই সত্যি। অয়ন আমি চাই না তোমার কিছু হোক। প্লিজ তুমি চলে যাও। প্লিজ
— সরি। আমি একা যেতে আসিনি। আমার সাথে তুমিও যাবে। জোড় করে নিতে পারবো না আমি। সো প্লিজ নিজে থেকে চলো।
— অয়ন
ঈশাকে থামিয়ে দিয়ে অয়ন চিৎকার করে বলল
— যদি এখনও আমার সাথে না তাও তবে সত্যি বলছি আমার আর কোনো খবর তুমি পাবে না। এখান থেকে যাবার পর আমার মৃতদেহ ছাড়া আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। এবার তোমার ইচ্ছে।
— অয়ন এসব কি….
— শাট আপ। আমি চলে যাচ্ছি। লাশ দেখতে চাইলে চলে এসো।
* অয়ন ঈশার সামনে থেকে চলে আসতে লাগলো। ঈশা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে অয়নের দিকে। পিছন থেকে ঈশা অভিমানী সূরে বলতে লাগলো
— ওই মিস্টার এতো রাগ কেনো? আসছি তো আমি। যা হবার এক সাথে দেখে নিবো।
অয়ন পিছন ফিরে মুচকি হেসে বলল
— চলুন তা হলে। আপনি পরে দেখবেন আমি আগে দেখবো।
 ঈশা অয়নের হাত ধরে নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। অয়ন ঈশাকে নিয়ে চলে আসে অয়নের বাড়িতে। অয়ন বাড়িতে আসতেই ভিশন চমকে যায়। অয়নের বাবা মা আর অনু অয়ন আর ঈশাকে এক সাথে দেখে
.
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com