ভালোবেসে ভুল করিনি । পর্ব -০১
সরি মিসেস রাই!আপনার স্বামী মাত্রারিক্ত হস্তমৈথুন
করার ফলে বিয়ের দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও
আপনার কোল আলো করে এখনো কোনো সন্তান
আসেনি।সমেস্যাটা আপনার না? সমেস্যাটা হলো
আপনার স্বামীর?কারণ তিনি যৌবন কালে পা’ দেওয়ার
পরপরই, মিছে দুনিয়ার মিছে মায়ায় আসক্ত হয়ে পিতা
হওয়ার স্বাধ চিরকালের জন্য হারিয়ে ফেলেছেন।কিচ্ছু
করার নেই অনেকটা দেরী হয়ে গেছে।
ডাক্তার এর বলা কথাগুলো শুনে আমার স্ত্রীর মুখটা
নিমিষেই কালো হয়ে যায়।পাশেই বসে ছিলাম আমি।
এই নিয়ে ৭-৮ বার ডাক্তারের কাছে আসলেও সবার
মুখে এই একই কথা!লজ্জায় আমার মাথা কাটা
যাওয়ার উপক্রম।নিজেকে সামলে নিয়ে হাজারো দুঃখ
বেদনা যন্ত্রণা নিজের ভেতরেই ধাবিত করে কিছুটা
আশ্বাস নিয়ে আমার স্ত্রী রাই ডাক্তার কে বললো……
— এখন কি কিছুই আর সম্ভব না?
—নাহ মিসেস রাই?আর কিছুই সম্ভব না।আপনার
স্বামীর একটা ভুলের কারনে আজ আপনি সন্তানহীন।
মা হওয়ার স্বাধটা ঠিক অনুভব করতে পারছেন না।
পরবর্তীতে ডাক্তারের সাথে আর কোনো কথায়
জড়ায়নি রাই।নিরবে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বাহিরে
চলে আসে।আমি একটা রিক্সা ডাক দিয়ে বাসার
গন্তব্যে যাত্রা শুরু করলাম।রাই কোনো কথা বলছে না
চুপচাপ বসে আছে।নিজে থেকে কথা বলার ইচ্ছেও
এখন আমার নেই।কেন না কোন মুখেই বা আমি এখন
রাইয়ের সাথে কথা বলবো।দীর্ঘ দিন রিলেশনের পর
বিয়ে করেছি আমরা।জাত-পার্ট বংশের নাম ডুবিয়ে
ভালোবাসার টানে আমার কাছে চলে এসেছিলো রাই।
কিন্তু কি পেলো?সন্তান না হওয়াটা একটা মেয়ের কাছে
কতটা কষ্ট-দায়ক সেটা আর যাইহোক সবাই উপলব্ধি
করতে পারবে না।
.
আহ ভুলটা আমারি ছিলো কেনই বা
খারাপ বন্ধুদের সাথে চলাফেরা করে নিজের
ভবিষ্যতকে অন্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছিলাম।আজ হারে
হারে টের পাচ্ছি আামাদের ওই সব বন্ধুদের সাথে
চলাফেরা করা উচিত না।যেইসব বন্ধুদের কাছ থেকে
অন্যায় বা পাপ কাজ ছাড়া আর কিছুই শিখা যায় না।
যৌবনে পা দিতে না দিতেই বিভিন্ন অপকর্ম কান্ডে
জড়িত ছিলাম আমি।কিন্তু পরবর্তী সময়ে রাইয়ের
ভালোবাসা আমাকে বদলে দিয়েছিল।রিক্সা সেই কবেই
বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে,সেদিকে যেন আমার
কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই।রাই পাশে নেই হয়তো বাসার
ভেতরে চলে গিয়েছে।কিছুটা বিরক্তি কর মুড নিয়ে
রিক্সা ওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে।রিক্সা ওয়ালাকে টাকা
দিয়ে নিজের ফ্লাটে চলে গেলাম।স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি
রাইয়ের কান্নার স্বর।রাইয়ের কান্না যেন আমাকে তীব্র
কষ্টের অতল সাগরে ডুবিয়ে দিচ্ছে।সত্যিই সব কিছুর
জন্য আমিই দ্বায়ী একমাত্র!রুমের কিছুটা কাছে
আসতেই আরও একজনের উপস্থিতি টের পেলাম।
আর সে হলো রোহিকা ভাবী।রোহিকা ভাবী এ বাড়ির মালিক
অর্থাৎ আমরা ভাড়াটিয়া।চুপচাপ দড়জার সামনে
দাঁড়িয়ে আছি।রোহিকা ভাবী আমার স্ত্রীর মাথায় হাত
ভুলিয়ে দিতে দিতে বলছেন,
—যা তোমার কপালে ছিলো তাই হয়েছে গো..তুমি খুব
বড় ভুল করেছো ওর মতো একটা থার্ড ক্লাস লোফার
চরিত্রহীন ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করে?এখন
দেখেছো কতটা কষ্ট পেতে হচ্ছে তোমাকে?আহারে
কাদঁতে কাঁদতে নিজের কি অবস্থায়ই’না করেছো।
এবার একটু কান্না থামিয়ে গুরুজনের কথা শুনো?
ভালো সেটাই হবে,তুমি যদি শাহরিয়ার কে ডিবোর্স
দিয়ে দেও।যে তোমাকে মাতৃত্বের সুখ দিতে পারে না
তার সাথে সারাজীবন থাকার কি মানে?ওর সাথে
থেকে নিজের জীবনটা নষ্ট করার চেয়ে তোমার বাবা
মায়ের কাছে চলে যাও।একটা গেলে আরেকটা আসবে
মেয়েদের জীবনে ছেলেদের কোনো অভাব হয়না বা
পড়ে না।
.
বাহ বাহ কি উস্কানি দিচ্ছে আমার স্ত্রীকে।অন্তত
রোহিকা ভাবীর থেকে এটা আশা করিনি।এতদিন
ওনাকে গুরুজন ভেবে সম্মান দেওয়াটাই আমার ভুল
ছিলো।এমনিতেই আমার আর রাইয়ের সম্পর্ক টানা-
হেচরার মধ্যে পড়ে আছে তার মধ্যে যদি কেউ এমন
উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে তাহলে আমাদের
সম্পর্কটা ভাঙতেই বা আর কতক্ষণ?রোহিকা ভাবীর
হাসবেন্ড তাকে ডিভোর্স দিয়ে ছেড়ে চলে গিয়েছেন।
নিজের সংসারটা তো আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এখন আমার যা মনে হচ্ছে তিনি পরের সংসার ভাঙ্গার
জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন।এতক্ষন দারজার সামনে
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রোহিকা ভাবীর কথাগুলো শুনছিলাম।
আমি যে এখানে দাঁড়িয়ে আছি তা হয়তো কেউ এখনো
টের পায়নি।হাল্কা একটা শুকনো কাশি দিয়ে রুমের
ভেতরে প্রবেশ করলাম আমি।আমাকে দেখে রোহিকা
ভাবী রাইয়ের পাশ থেকে উঠে চলে গেলেন।অতঃপর
আমি রাইয়ের কাছে যেতেই রাই আমার থেকে কিছুটা
দুরত্ব বজায় রেখে বলল,…..
—খবর-দ্বার!তুমি আমার কাছে আসার বৃথাই চেষ্টা
করবে না?তোমার ওই পাপী হাত দিয়ে,আমাকে স্পর্শ
করবে না?
.
—রাই প্লিজ আমার কথাটা একটু শুনো…..
—না আমি আর তোর কোনো কথাই শুনতে চাইনা?
আজ আমি বলবো,তুই শুধু কান দিয়ে শুনবি?সব কিছু
ছেড়ে তোর মতো একটা দু’টাকার অনাথ ছেলের সাথে
পালিয়ে এসেছিলাম আমি।কিন্তু সেটাই আমার
জীবনের বড় ভুল ছিল।ফরমালিন যুক্ত শাক-সবজি
যেমন উপর থেকে ভালো এবং ভেতর থেকে পঁচা থাকে
ঠিক তেমনি তুইও উপর থেকে ঠিকি সবার সামনে
ভালো মানুষের মুখোস পড়ে থাকিস কিন্তু ভেতরটা
তোর দুর্গন্ধময় পঁচা?প্রত্যেকটা ডাক্তারের কথা গুলো
আমার হৃদয় কে তিলে তিলে ভেঙ্গে দিয়েছে।সন্তান না
হওয়ার অন্য কোনো প্রবলেম থাকলে আমি মুখ বুঝে
নিজের ভাগ্যকে সদরে বরন করে নিতাম।কিন্তু এমন
সমেস্যা আমি কি করেই বা মেনে নিবো যে সমেস্যার
জন্য আজ তুমি নিজেই সবচেয়ে বড় দ্বায়ী।আজ খুব
ভালো করেই বুঝতে পাচ্ছি রিলেশনে থাকা কালিন তুই
কেনোই বা বার বার আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক
করতে চাইতি?তুই শুধু আমার দেহটিকে চাইতি,
আমাকে নয়?সেদিন যদি তুই আমার দেহটাকে
পেতি তাহলে হয়তো সেই কবেই আমাকে ছেড়ে চলে যেতি?
তুই একটা চরিত্রহীন শাহরিয়ার!তোর মতো মুখোস
দ্বারী মানুষ কে ভালোবাসাটাই আমার বৃথা ছিলো।
—হ্যা আমি মানছি বাজে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে আমি
একটু বিপথে চলে গিয়েছিলাম।এমনকি তোমাকে
অনেক বার শারীরিক সম্পর্ক করার কথাও বলেছিলাম
কিন্তু বিশ্বাস করো তোমার ভালোবাসা আমাকে সম্পূর্ন
বদলে দিয়েছিলো।সব কিছু মিথ্যে হলেও আমার
ভালোবাসাটা মিথ্যে না রাই?আমি তোমাকে সত্যিই
অনেক ভালোবাসি।তুমি ছাড়া, যে আমার জীবনটা
অচল!
—-চুপ কর!দোহাই লাগে?তোর মুখ দিয়ে আমি আর
কোনো কথাই শুনতে চাইনা?তুই রুম থেকে বের হ
এখনি,আমি একটু থাকতে চাই একা?
—-রাই…….
.
অতএব রাই আমাকে জোড় করে রুম থেকে বের করে
দিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।দরজায় কান পাতলেই
আমার বুকের ভেতরটা যেন কুকরে উঠে।রাইয়ের
কান্নার কন্ঠ আমার কান দিয়ে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি।
মেয়েটা হয়তো অনেক কষ্ট পেয়েছে।সব কিছুর জন্য
আমিই একমাত্র দ্বায়ী।দরজার একটু পাশেই দেয়ালের
সাথে পিঠ ঠেকিয়ে কান্নায় চোখ ভিজিয়ে,কখন যে
নিদ্রা আমাকে তার দেশেতে নিয়ে গেলো হঠাৎ কারও
কোমল স্পর্শে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়।রাত ঠিক ১ টা
হবে,সামনে তাকিয়ে দেখি রাই?রাইকে দেখা মাত্রই
আমি ওকে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে
ধরে বললাম,প্লিজ রাই আমাকে ভুল বুঝও না?আমাকে
তুমি ক্ষমা করে দেও।প্লিজ রাই তুমি আমাকে ছেড়ে
যেওনা?আমি তোমাকে মা হওয়ার সুখ না দিতে
পারলেও,তোমাকে আমি বুক ভরা ভালোবাসা অন্তত
তীব্র আকারে দিতে পারবো।নিজের সর্বোচ্চ ভালোবাসা
দিয়ে তোমাকে আমি আগলে রাখবো?
শাড়ীর আঁচল দিয়ে আমার চোখের জল গুলো মুছে
দিয়ে রাই বলল……..
—ধুর বোকা তোমাকে ছেড়ে আমি কোথায়ই বা যাবো?
ছেড়ে যদি যাওয়ারই ছিলো তাহলে সেই কবেই চলে
যেতাম!’এতকিছুর পরেও কি তোমার সাথে একি
ছাদের নিচে থাকতাম?জানি না কেন?তোমাকে ছাড়তে
মনে চায় না আমার।তুমি এত ভুল করার পরেও আমি
শেষ-মেশ সব কিছু মেনে নিয়েছি।কিন্তু আর ভুলেও
কোনো করিয়ো না ভুল তাহলে কিন্তু আমাকে আর
পাবে না!চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলবে?এখন চলো
খাবার খাবে?
.
—না আমার এখন আর খিদে নেই?
—চুপ!চলো বলছি?আমিও কিন্তু খাইনি?
—হুম তাহলে আর কি” চলো?
অতঃপর রাই আমাকে নিজের হাতে খাবার খাইয়ে
দিলো।পরের দিন সকাল সকাল রাইয়ের হাতে আবার
খাবার খেয়ে তার কপালে একটা চুমু একে দিয়ে
অফিসের জন্য বেড়িয়ে পড়লাম।শুনেছি বউয়ের
কপালে চুমু দিলে নাকি দিন কাল ভালো কাটে’যাইহোক
অফিসে এসে প্রচুর কাজের মোকাবেলা করতে
লাগলাম আমি।রাত ৮ঃ৩০ মিনিট,অফিস ছুটির পর
বাসায় এসে এদিক ওদিক সব জায়গায় রাইকে খুঁজেও
পেলাম না।শেষ-মেস ফোন দিয়ে ও কোনো লাভ হয়নি
করণ রাইয়ের ফোন সুইচ স্টপ।পরিশেষে হতাশ হয়ে
সোফায় বসার সময় আমার চোখের নজর কেঁড়ে নেয়
সামনের টেবিলে পড়ে থাকা নীল রঙের একটা কাগজ।
খুব আগ্রহ নিয়ে ভয়ে ভয়ে কাগজটা হাতে তুলে নিয়ে
প্রতিটা বাজ খুলে পড়তে লাগলাম,
প্রিয় শাহরিয়ার,যানিনা কি ভাবে বলবো,তাই চিঠিতে
লিখে গেলাম।কথা একটাই’ আমি তোমার সাথে এভাবে
দিনের পর দিন সন্তানহীন ভাবে প্রতিনিয়তো কষ্ট গুলো
বুকে ধারন করে ধুকরে ধুকরে মরতে পারবো না?তাই
না বলে নিরবে তোমায় ছেড়ে চলে গেলাম নিজের
আপন ঠিকানায়।যদি আমার জন্য তোমার
ভালোবাসাটা সত্যিই হয়’ তাহলে সেই ভালোবাসার
কসম করে বলছি,দয়াকরে আমায় আর খুজঁও না।ভুলে
যাও আমাকে?মনে মনে ভেবে নেও আমি বলে কেউ
তোমার ছিলোই না!ভালো থেকো”’
.
চিঠিটা পড়ে ধপাস করে চোখে কান্নায় জড়জাড়িত হয়ে
ফ্লোরে পড়ে গেলাম।কালকে রাতে তো আবার সব ঠিক
হয়েই গেছিলো কিন্তু আজ কি হলো?কষ্টে বুক ফেটে
যাচ্ছে আমার।চোখের জলগুলোও তীব্র আকারে
পড়তে পড়তে চোখ দুটো আজ জল শুন্য হয়ে যাওয়ার
উপক্রম।আজ চারটা দিন ধরে রুমের এক কোণে পড়ে
আছি।বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই আমি হারিয়ে ফেলেছি।
রোহিকা ভাবী অনেকবার দড়জা নক করলেও তাকে
প্রতিবার ব্যার্থ হয়েই আমার ফ্লাটের সামনে থেকে
ফিরতে হয়।রাত যখন গভীর হয়, ‘তখন আমি নিজের
ফ্লাট থেকে বের হয়ে ছাঁদের সিমানার প্রায় দাড় প্রান্তে
চলে যাই আর এক পা বাড়ালেই মৃত্যু আমাকে
চির-দিনের জন্য তার সাথে করে নিয়ে যাবে।বাঁচার
কোনো ইচ্ছে নেই আমার।রাইয়ের সাথে কাঁটানো মুহুর্ত
গুলো মনে পড়লেই কষ্ট আমাকে চির চির করে খায়।
আজ আমার ভুলের জন্যই রাই মা হতে পারেনি।তাই
চলে গেছে,আমায় ছেড়ে আজীবনের জন্য।আমি পাপী
আমার জন্যই রাইয়ের জীবনটা নষ্ট হয়েছে।তাই আমি
চলে যাচ্ছি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে।কারন আমি
চাইনা আমার জন্য পরবর্তীতে রাইয়ের কোনো প্রবলেম
হোক!রাই খুশি থাকুক নুতুন মায়ায়,নতুন মানুষের নতুন
খাচায় বন্ধি হয়ে।আমি হেরে গেছি,ভেঙ্গে চুরমার হয়ে
গেছি।আমি আর বাঁচতে চাইনা,বাচার ইচ্ছে আকাঙ্খা
আমার মধ্যে আর নেই।আমি বাঁচবো না,বাঁচতে চাইনা?
আমি জাহান্নামি,”চিরকাল জাহান্নামের আগুনে জ্বলে
পুড়ে মরবো….অতঃপর আর কিছু না ভেবে আমি ছাদ থেকে লাফ.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com