তারে ভালোবাসি বলে । পর্ব-১৭
হঠাৎ করেই রুমের বাহিরে প্রচন্ড চিৎকার চেঁচামেচি শব্দ আসতে থাকলো। অয়ন একটু অবাক হলো বটে। এতো রাতে হঠাৎ চিৎকার শুনে দুজনেই চমকে উঠে। ঈশা বিচলিত কন্ঠে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অয়ন বাহিরে এতো চিৎকার চেঁচামেচি হচ্ছে কেনো? কিছু কি হয়েছে?
— সেটা কি করে বলবো বলো? চলো গিয়ে দেখে আসি।
অয়ন বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ঈশা আর অয়ন একসাথে বাহিরে চলে যায়। বাহিরে আসতেই অয়ন দেখতে পেলো তার বাবা তাদের রুমের দিকে এগিয়ে আসছে। ওনাকে দেখে ভিশন চিহ্নিত দেখাচ্ছে। অয়ন তার বাবাকে প্রশ্ন করলো
— বাবা কি হয়েছে? তোমাকে এতো চিহ্নিত দেখাচ্ছে কেনো? সব ঠিক আছে তো?
অয়নের বাবা ভিশন হতাশার কন্ঠে বলল
— না কিছু ঠিক নেই অয়ন। অনুর অবস্থা মোটেও ভালো না। হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
অয়ন কথাটা শুনে ভিশন অবাক হয়ে যায়। অয়ন বিষন্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অনুর কি হয়েছে বাবা? ও ঠিক আছে তো?
.
— নারে অনু হাতের শিরা কেটে ফেলেছে। প্রচুর ব্লাডিং হচ্ছে। কি করবো বুঝতে পারছি না।
তুই চল আমার সাথে।
অয়ন ঈশার দিকে তাকালো। ঈশা অয়নকে কিছু বলল না।
ঈশা অয়নকে ফেলে ছুটে গেলো অনুর কাছে। আসলে ঈশা কারো বিপদ হলে সবার আগে সেখানে যায়।
এটা ওর একটা স্বভাব। ঈশা অনুর রুমে গিয়ে দেখতে পেলো সত্যি অনুর অবস্থা মোটেও সুখকর নয়।
হাত থেকে রক্ত পরছে। অয়নকে উদ্দেশ্য করে ঈশা বলল
— অয়ন তারাতাড়ি কিছু একটা করো।
এভাবে রক্ত বেরিয়ে গেলে ওকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।
.
অয়ন কিছু বলল না। অনুকে কোলে তুলে নিলো সে।
খুব শীঘ্রই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে অনুকে।
অয়ন গাড়িতে অনুকে বসিয়ে ঈশা সহ বেরিয়ে যায় হসপিটালের
উদ্দেশ্যে। অয়নের সাথে অনেকে যেতে চাইলেও অয়ন বারন করে।
তাই আর কেউ তাদের সাথে এলো না।
পথি মধ্যে ঈশা অনেকবার অনুকে সজাগ করার চেষ্টা করলেও কোনো লাভ হলো না।
অনুকে হসপিটালে নিয়ে যেতেই ডক্টররা তাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করতে লাগলো।
অয়ন আর ঈশা অপারেশন থিয়েটারের সামনে অপেক্ষা করছে।
ঈশার বোধগম্য হচ্ছে না অনু কেনো এমনটা করলো? অয়ন কিছুটা হলেও আঁচ
করতে পারছে অনু কেনো এমনটা করেছে। কিন্তু এসব করে কি লাভ হবে?
অনু কেনো বুঝতে পারছে না আমার জীবনের সব কিছু ঈশাকে নিয়ে।
ও সব কিছু জানার পরেও কি প্রয়োজন ছিলো এসবের?
আনমনে কথা গুলো ভাবছে অয়ন। ঈশা অয়নের দিকে দৃষ্টিপাত করলো।
— অয়ন অনু নিজের শিরা কেটে ফেললো কেনো? কি জন্য এমন পাগলামি করলো অনু?
তুমি কি কিছু জানো?
অয়ন ঈশার প্রশ্ন শুনে কিছু মুহূর্ত ঈশার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
অয়নের উত্তরটা অজানা নয়। তবে এই মুহূর্তে এই উত্তরটা দেয়া যাবে না। অয়ন একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল
— আমি কি করে জানবো কেনো ও এইসব করেছে!
ঈশা একটু মলিন হয়ে বলল
— হুম তাও তো ঠিক। মেয়েটা সত্যিই অৎভূত।
ঘন্টা খানেক পর অপারেশন শেষ হলো। ডক্টর অয়নকে জানালো
— অনুর হাতের শিরা কাটেনি। অল্প আঘাত পেয়েছে মাত্র। ভয়ের কিছু নেই। দু এক দিনে ঠিক হয়ে যাবে।
অয়ন ও ঈশা দুজনি একটু শান্তি পেলো খবরটা শুনে। অয়ন কেবিনে চলে যায় কনুর সাথে দেখা করতে। অনু বেডে শুয়ে আছে। অয়ন অনুর পাশে বসতেই অনু চোখ মেললো। অয়নকে দেখতেই অনুর মনের মধ্যে শান্তি চলে এলো। তবে ঈশাকে অয়নের পাশে দেখে একটু বিরক্ত বোধ করলো অনু। উদ্দেশ্য সফল হবার প্রশান্তি। অনু অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
.
— তোমরা এখানে কেনো? আজ না তোমাদের বাসর রাত?
অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আর বলল
— আর রাত। তোমার এই অবস্থা কি করে হলো?
স্বাভাবিক গলায় অনু বলল
— আর বলো না ফল কাটতে গিয়ে হাতে লেগে গেছে। তারপর আর মনে নেই।
— একটু সাবধানে কাটতে পারলে না। যদি কিছু হয়ে যেতো তখন কি হতো? জানো আমরা কতটা দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম।
— কি হতো? বেশি কিছু হলে মরে যেতাম। এটাই তো চাই আমি। এ পৃথিবীতে আমার আপন বলতে কেউ নেই। আর না আছে আমার জন্য চোখের জল ফেলার মতো কোনো মানুষ।
অনুর কথা শেষ হতেই ঈশা বলে উঠলো
— কেউ নেই মানে? আমরা সবাই আছি তোমার পাশে। শোনো অনু ভূলেও আর কখনও এই কথা বলবে না। জেনে রাখো তুমি কেউ তোমার পাশে না থাকলেও আমি আর অয়ন সব সময় তোমার পাশে আছি।
— হুমম
ঈশা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল আচ্ছা অয়ন তুমি বরং বাসায় চলে যাও। আমি এখানে থাকি অনুর পাশে। বলা তো যায় না রাতে যদি আবার কোনো প্রয়োজন হয়। কাউকে তো এখানে থাকতে হবে। তাই না?
— হুম। কিন্তু তুমি একা থাকলে হবে না। আমিও আছি।
— ওকে।
.
* ঈশা অয়নের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। কিছু সময় অনুর পাশে বসে থাকার পর অয়ন ঈশাকে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। আসলে রাত অনেক হয়ে গেছে। তাছাড়া আজ অনেক ধকল গিয়েছে অয়ন আর ঈশার উপর দিয়ে। তাই অতিরিক্ত ক্লান্ত লাগছে দুজনের। ক্লান্তি দূর করতে অয়ন ঈশাকে নিয়ে যায় বাহিরে। একটু হাঁটা চলা করলে শরীরটা ভালো লাগবে। সাথে কফিও খাওয়া যাবে। অয়ন ঈশাকে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতেই অনু বেডে ঠিক মতো উঠে বসে। অনুর ঠোঁট জোড়ায় উঁকি দিচ্ছে রহস্যজনক হাঁসি। এ হাসির কারন কি? তা অজানা। অনু আনমনে বলছে
— ঈশা চৌধুরী। নামের পাশে টাইটেলটা ঠিক নিয়ে গিয়েছিস তবে মানুষটাকে নিতে পারলি না। ওপস সরি নিতে দেইনি। খুব শখ ছিলো না অয়নকে নিজের করে রাখবি? তোর এই শখ আমি কখনও পূরণ হতে দিবো না। কতই না স্বপ্ন ছিলো আজকের রাত নিয়ে। তবে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো। কতই না কষ্ট করতে হলো আমায়। এই পরিস্থিতি তৈরি করতে! এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করে দিলাম যাতে করে অয়ন আর তোর মাঝে পূর্ণতা বলতে কিছুই আসলো না। আর কখনও আসবেও না। অন্তত পক্ষে আমি থাকা সত্ত্বে তো নয়ই। তোমাদের একসাথে থাকতে দেখে যতটা কষ্ট হচ্ছে তার দিকে থেকে আজকের আঘাতটা সামান্য। আমি এর থেকেও বেশি কিছু করতে পারি তোমাকে পাবার জন্য অয়ন। এর থেকেও অনেক খারাপ কিছু।
.
* অয়ন ঈশার হাত শক্ত করে ধরে আছে। ঈশা আড় চোখে তাকাচ্ছে অয়নের দিকে। ঈশার কাছে এ দৃশ্য নতুন নয়। যখনি তারা দুজন পাশাপাশি এক সাথে চলে। তখন অয়ন নিজে থেকেই ঈশার হাত শক্ত করে ধরে থাকে। একদিন ঈশা এর কারন জানতে চায়। অয়ন তখন বলে
— যদি হারিয়ে যাও! তখন কি হবে? কষ্ট করে খোঁজার থেকে ধরে রাখা ভালো।
ঈশা অয়নের কথা শুনে অবাক হয়েছিলো সে দিন। নিজের শহরের প্রতিটা গলি তার চেনা। সেই শহরে কি করে হারিয়ে যাবে সে? পরক্ষনেই ঈশা বুঝতে পারলো এটা অয়নের একটা অজুহাত মাত্র। আসল কথা হলো অয়ন ঈশার স্পর্শ চায়। অনুভব করতে চায় ঈশার হাতের কোমল ছোঁয়া। অয়নের এসব পাগলামো গুলো ভিশন ভালো লাগে ঈশার।
* ঈশা পিছনের রঙ্গিন দিন গুলোর কথা ভাবতেই হেসে ফেললো। অয়ন কৌতুহলি মন নিয়ে জ্বিগাসা করলো
— ওই হাসছো কেনো তুমি?
— উহু, এমনিতেই হাসছি।
— জ্বি না। এমনি এমনি তো কেউ হাসে না। কোনো কারন তো নিশ্চয়ই আছে।
— আরে ধূর এমনি হাসছিলাম। আচ্ছা বাদ দাও। হসপিটালে ব্যাক করবে না?
— হুম করবো।
.
— হুম। আচ্ছা অয়ন দেখেছো একটা জিনিস রাস্তাঘাটে কোনো মানুষ নেই। কেমন যেনো নিঃস্তব্ধ পরিবেশ।
ঈশার কথার ইশারা অয়ন ঠিক বুঝতে পেরে গেছে। অয়ন একটু বাঁকা হেঁসে বলল
— হুম। এই পরিবেশটা একটা জিনিস ইশারা করছে।
ঈশা মুখে কৌতুহলি ভাব এনে জ্বিগাসা করলো
— কি সেটা?
অয়ন ঈশার প্রশ্নের উত্তরের বদলে তাকে কোলে তুলে নিলো। ঈশা শক্ত করে অয়নের গলা জরিয়ে ধরে আছে। অয়ন ঈশার চোখের দিকে তাকাতেই ঈশা অয়নের বুকের ভিতর মুখ লুকিয়ে ফেলে। অয়ন মুচকি হাসলো ঈশার কান্ড দেখে।
— পাগলিটা এখনও আমায় লজ্জা পায়।
আপন মনে বলল কথাটা। অতঃপর ঈশা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— এই ছেড়ে দাও আমায়। এই রাস্তার মধ্যে এসব করতে লজ্জা করে না তোমার?
— ওমা লজ্জার কি আছে? আমি তো শুধু মাত্র কোলে তুলেছি। আর কি করেছি যে লজ্জা পাবো?
— ছিঃ অসভ্য লোক একটা। মুখে কিছুই আটকায় না তোমার!
— না ভাই আমার মুখে কিছুই আটকায় না। যা মুখে আসে তাই বলি।
ঈশা এবার অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আচ্ছা হয়েছে হয়েছে নামিয়ে দাও আমায়। আমার কিছু কথা আছে।
— কথা পরে বলিও। এখন চুপ করে থাকো তো।
— এই না প্লিজ। কথাটা খুব ইম্পটেন্ট প্লিজ
অয়ন ভিশন বিরক্তি নিয়ে ঈশাকে নামিয়ে দিলো। অয়নের ঈশাকে নামিয়ে দিয়ে। বিরক্তির সুরে বলল
— বলো তোমার ইমপোটেন্ট কথা।
— রেগে যাচ্ছো কেনো? বলছি তো!
— না আমি রাগবো কেনো?
আমার রাগ আছে নাকি? তবে হ্যাঁ নেক্সটাইম আর কোলে ওঠার স্বপ্ন ভূল করেও দেখো না।
.
— ওই অয়ন রাগ করে না। আচ্ছা শোনো অনুর কথাটা কি তোমার বিশ্বাস হয়েছে?
— বিশ্বাস না হওয়ার কি কারন আছে?
— না কেনো জানি আমার না ওকে বিশ্বাস হচ্ছে না। ওর প্রত্যেকটা কথাতেই আমি শেষে প্রশ্ন বোধক চিহ্ন পাই।
— এটা তোমার মনের ভূল আর কিছু না।
— হুম তাও হতে পারে। আচ্ছা অয়ন একটা কথা বলি রেগে যাবে না তো?
— না বলো, রাগবো না।
— তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কোনো সুন্দরী নারীর প্রতি কি কখনও আকৃষ্ট হতে পারবে? মানে হবে? আসলে কি করে তোমায় বুঝিয়ে বলি আমি সত্যি বুঝতে পারছি না।
অয়ন ঈশাকে বিচলিত দেখে একটু মুচকি হেসে দিলো। অতঃপর অয়ন ঈশার কাঁধের উপর দু হাত রেখে ঈশার দিকে হালকা ঝুঁকে ঈশার চোখের সাথে চোখ মিলিয়ে বলল
— যদি কোনো অপ্সরার আসে না ঈশা সেও তোমার রূপের কাছে পরাস্ত হবে। আর আমি একে আসক্ত। তুমি ছাড়া আমি অনবরত কারো কথা কখনও কল্পনা করতে পারি না। তবে হুম আমাকে যদি আদর করতে না দাও তো আমি অন্য মেয়েদের খুঁজে নিবো। বলে দিলাম
ঈশা অয়নের শার্টের কলার চেপে ধরে রাগি কন্ঠে বলল
— চোখ তুলে হাতে ধরিয়ে দিবো আমি ছাড়া অন্য কারো দিকে নজর দিলে হু
অয়ন ঈশাকে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের সাথে এক করে নিয়ে বলতে লাগলো
— সেটা তো তোমার হাতে হুমমমম
— ফাজিল ছেলে একটা।
* ঈশা আর অয়ন একটু সময় কাটিয়ে হসপিটালে চলে আসে। কেবিনের সামনে আসতেই অয়ন যা দেখতে পেলো তা দেখে অয়ন বেশ অবাক হয়ে যায় সাথে রেগেও যায়। অয়ন দেখতে পেলো অনুর কেবিনে অনু ছাড়াও অন্য একজন আছে। এই অন্য জনের চেহারাটা অয়নের বেশ চেনা। অয়ন দেখতে পেলো অনুর কেবিনে অনুর সাথে…
.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com