Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব – ২০
মিম কথাটা শুনে বেশ লজ্জা পেলো,তারপর দু’পা পিছিয়ে গেলো ইমানের কাছ থেকে…!
এরপর দু’জনে কথা বলতে বলতে একাডেমির বাহির চলে এলো,ইমান মিমের হাত ধরে রাস্তা পার করিয়ে দিলো ওকে।
মিম কিছুটা লজ্জা পেলো,চা খাওয়ার ইচ্ছে বাদ দিয়ে ইমান’কে বললো,
– “স্যার আমার ভালো লাগছে না,এখুনি আমাকে একাডেমিতে ফিরে যেতে হবে।” ইমান জিজ্ঞেস করলো,
– “কেন? জাস্ট ফ্রেন্ড এখনো ফোন করেনি তোমার কাছে?” মিম থতমত খেয়ে বললো,
– “না স্যার,তবে আপনি কেন শুধুশুধু নিজেকে জড়াচ্ছেন এই ব্যাপার টা তে?” ইমান মৃদু হেসে বিড়বিড় করে বললো,
– “কেন জড়াবো না? আমি যে প্রথম থেকেই জড়িয়ে আছি তোমার সাথে।” মিম থেমে গিয়ে ইমান’কে জিজ্ঞেস করলো,
– “স্যার! আপনি কি কিছু বলছেন আমাকে?” ইমান বললো,
– “নাঃ! চলো দৈ-ফুচকা খাবে?” মিম একটু ইতস্তত করে বললো,
– “না স্যার! চলুন ফিরে যাই,বেড়িয়েছি সেই কখন? এখন বিকেল চারটা বিশ বাজে।”
– “তাকে কি? দেরি যখন হয়েছে আর একটু হোক,চলো দৈ ফুচকা খেয়ে আসি নায়েব ভাইয়ের কাছ থেকে…।
ওনার দৈ-ফুচকা প্লাস চটপটি দু’টোই অনেক মজার চলো আজ খাওয়াবো তোমাকে আর তাছাড়া তুমি কিন্তু ট্রিট চেয়েছিলে আমার কাছে,তবে সময় করে ট্রিট টা দেওয়া হয়নি তোমাকে।” মিম চুপ করে রইলো,বললো,
– “স্যার আপনি যে স্পেশাল জিঞ্জার গার্লিক সুপ আর স্পাইসি নাগা পিৎজা খাওয়ালেন আমাকে?” ইমান বললো,
– “সেটা আমি সবাইকেই খাইয়েছি এবার বলো তুমি আলাদা করে কি খাবে?” মিম হঠাৎ ইমানের কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,
.
– “স্যার,আপনার কি পেটুক বলে মনে হয় আমাকে?” ইমান বললো,
– “না তবুও,আজ তোমাকে ট্রিট টা নিতেই হবে মিম,চলো আমার সাথে।” মিম না করলো,তবুও ইমান ওকে জোর করে নিয়ে এলো দৈ-ফুসকা খেতে,অতঃপর ইমান মিম’কে জোর করে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে এলো এবং ওয়েটার কে ডেকে বললো,
– “ম্যামের পছন্দের ফ্রেঞ্চ ফ্রাই,চিকেন ফ্রাই,ফ্রাইড রাইস এবং স্পেশাল রোজি চিকেন পার্সেল করে দিন।”
– “জ্বি স্যার,ঠিক আছে।
– “কখন পাবো?”
– “স্যার, আপনাকে একটু অপেক্ষা করতে হবে।” ইমান মিম চুপচাপ বসে রইলো,ইমান চিকেন মিট বলের প্লাটার টা এগিয়ে দিলো মিমের কাছে।মিম বললো,
– “খেতে ইচ্ছে করছে না স্যার।” ইমান জোর করে খাইয়ে দিলো ওকে।” মিম ইমানের কান্ড দেখে বেশ লজ্জা পেলো,খেয়াল করে দেখলো ইমানের মুখে টমেটো সস লেগে আছে।
ও একটু এগিয়ে এসে টিসু দিয়ে ইমানের মুখ টা মুছে দিলো,ইমান মৃদু হাসলো মিমের যত্ন করা দেখে,এরপর আচমকা মিমের হাত চেপে ধরে বলল,
– “বলো আইসক্রিম খাবে? সামনেই আইসক্রিম পার্লার আছে।” মিম মাথায় দিলো,বললো,
– “স্যার! দেখুন প্লিজ,আমার পেট ভরে গেছে।” ইমান এগিয়ে এসে মিমের পেটের ওপরে হাত রেখে বললো,
– ” কোই দেখি? না না,এখনো দেখছি খালি আছে? চলো চলো,বাহিরে চলো,বলো কি খাবে?” মিম চোখ পাকিয়ে ইমানের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো,ইমান বললো,
.
– “তুমি কি ভয় দেখানোর চেষ্টা করছ আমাকে?” মিম থতমত খেয়ে বললো,
– “কো কো কোই না তো? চলুন না স্যার প্লিজ? মাগরিবের আজানের সময় হয়ে গেছে?” তখন ওয়েটার পার্সেল গুলো নিয়ে এলো,ইমান বিল মিটিয়ে মিম’কে নিয়ে চলে এলো একাডেমিতে…! কিছুক্ষণ পর,
নাফিম সাহেব মেয়ে’কে ফোন করে বললেন,
– “জানো মা? গ্রামে সবাই তোমার অনেক প্রশংসা করছে আর এদিকে তোমার আম্মু,আপুদের এবং আমার গর্বে বুক টা ভরে যাচ্ছে।
না মানে,আসলে কেউ এখানে ভাবতেই পারছেনা যে তোমার ছবি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে বেড়িয়েছে।
তারপর তোমার ওই কেস টা সবাই’কে একদম নাড়িয়ে দিয়েছে,সত্যি বলতে আমি খুব ভাগ্যবান যে আল্লাহ তাআ’লা আমাকে পাঁচ পাঁচটি জান্নাত দান করেছে।” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “দোয়া করো আব্বু! যেন আমি পারি আবারও তোমাদের মুখ উজ্জ্বল করতে।” নাফিম সাহেব খুব গর্ব করে বললেন,
– “আমার মেয়েরা যে কতটা যোগ্য সেটা তারা চোখে আঙুল দিয়ে সবাই’কে দেখিয়ে দিয়েছে।আমি এর আগে ও তোমাদের হেয় কারীদের যোগ্য জবাব দিয়েছিলাম এবার তোমরা যোগ্য জবাব দিয়েছ তাদের সবাই’কে…!!
জানো তুমি মা? তোমার জন্মের পর ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছিল তোমাকে আমার মা অর্থাৎ তোমার দাদি আমাকে বলেছিলেন,’এতো টাকা খরচ করে লাভ কি? শেষমেশ বিয়ে দিয়ে আপদ বিদায় করতে হবে।’ বিশ্বাস করো! সেদিন আমার এতো রাগ হয়েছিল না,বলেছিলাম,’আমার মেয়েরা আমার অহংকার,আল্লাহ তাআ’লা খুশি হয়ে দিয়েছেন আমাকে আর একদিন এমন নিশ্চয়ই আসবে যখন আমার পাঁচ মেয়ে প্রতি মুহূর্ত তাদের নিয়ে গর্ব করতে বাধ্য করবে আমাকে।’
.
সেদিন আমি তোমাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসিনি,গ্রাহ্য করিনি আমার মায়ের ওই সব বাজে কথা গুলো’কে কারণ একি সঙ্গে তোমার মেঝো চাচার ছেলের অসুস্থতা নিয়ে তোমার দাদির উৎকন্ঠা দেখে আমি খুব অবাক হয়েছিলাম,ভাবতে লাগলাম, সে এই অপ্রিয় কথা গুলো কি করে বলতে পারলো আমাকে? তোমার মা,আমার স্ত্রী আমার হাতে হাত রেখে বলেছিল,’আমি পাঁচ পাঁচটি রত্নগর্ভা,তুমি শুধু উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিয়ো এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মানুষের মতো মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার পথ তৈরি করে দিয়ো ওদের’কে….।” আমি কিছু বলতে পারিনি,শুধু কথা দিয়ে ছিলাম তোমাদের মা’কে আর আজ তাকে কথা দেওয়া কথার ফল আমি হাতেনাতে পাচ্ছি,খুব গর্ব অনুভব করছি বাবা হিসেবে।” মিম নিজের চোখের জল মুছে বললো,
– “কেঁদো না বাবা প্লিজ? আমার কষ্ট হচ্ছে।” নাফিম সাহেব মেয়ে’কে হাসতে হাসতে বললেন,
– “ইউ হ্যাভ টু বি স্ট্রং মা! তোমাকে অনেক শক্ত থাকতে হবে।” মিম হাসলো,বললো,
– “আচ্ছা বাবা! ঠিক আছে।” পরেরদিন প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে মিমের শরীর টা একটু খারাপ লাগছে,তা বুঝতে পেরে অনসূয়া মিম’কে বললো,
.
– “যাও তুমি গিয়ে রেস্ট নাও! বুঝতে পারছি,তোমার শরীর টা একটু খারাপ লাগছে।” মিম কোয়ার্টারে ফিরে কাঁথা কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলো,ওর চোখ দু’টো লেগে গেলো সাথে সাথে…। দুপুর দু’টো নাগাদ মিম ঘুম থেকে উঠে দেখে,
ওর বেড সাইডের টেবিলের ওপরে সকালের নাস্তা নাশতা সহ,দুপুরের লাঞ্চ রাখা আছে।ও চটপট ফ্রেশ হয়ে এসে চুপচাপ খেয়েদেয়ে নিচে চলে এলো,তারপর প্রশাসনিক ভবনের তিন তলায় ছুটে চলে গেলো শুটিং প্যাকটিস করতে।শুটিং শেষ করেই পেছনে ফিরে ইমান’কে দেখে চমকে গেলো,ইমান বললো,
– “ভূত দেখার মতো চমকে কেন তুমি তাকিয়ে আছো আমার দিকে?” মিম কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললো,
– “আসলে স্যার! রইফেলের কিছু যন্ত্রাংশের নাম আমি ভুলে গেছি তাই এটা এডজাস্ট করার চেষ্টা করছিলাম এখানে এসে।” ইমান তৎক্ষনাৎ মিম’কে বকা দিল,বললো,
– “আমাকে ডেকে পাঠালেই হতো,এতো ব্যস্ত হতে কে বলেছিল তোমাকে?”
– “না মানে?”
– “আচ্ছা এদিকে দাও,আমি রাইফেলের খুটিনাটি খুলে বলছি তোমাকে।” তারপর ইমান রাইফেলের প্রতিটি অংশ খুলে মিম’কে দেখাতে লাগলো।মিম রাইফেলের প্রতিটি খুটিনাটি বুঝে নিলো ভালো ভাবে।”
এরপর ইমান মিম’কে বললো,
– “আমাকে রাইফেলের বিষয় প্রতিটি খুটিনাটি বুঝিয়ে বলো এবং শুটিং রেঞ্জে দাঁড়িয়ে শুট করে দেখাও আমাকে।” মিম রাইফেল হাতে নিয়ে,শুটিং রেঞ্জের কাছে এগিয়ে এলো,তারপর শুট করলো কার্ড বোর্ডে।ইমান তা দেখে বললো,
– “তোমার নিশানা কখনো মিস হয় না,আজও হয়নি,তবুও আর ক’টা দিন প্রাকটিস করলে ঠিক হয়ে যাবে।” মিম হাসলো,বললো,
– “স্যার এখন আসি? আমাকে যেতে হবে।” মিম চুপচাপ ধীর পায়ে নিজের রুমে চলে এলো,লেইলা ওকে জিজ্ঞেস করলো,
.
– “তুমি আজকের অনুষ্ঠানে কি পরবে রাতে?” মিম বললো,
– “এখনো ডিসাইড করিনি,তবে শাড়ি পরার একশো শতাংশ সম্ভাবণা আছে।” লেইলা মুচকি হাসলো,তারপর চলে গেলো সেখান থেকে…! রাতে,মিম তৈরি হয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আসার পর খেয়াল করে দেখে সবাই কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে মিমের দিকে।মিম স্টেজের কাছে এগিয়ে আসতেই সারা বললো,
– “বাহ! নীল শাড়িতে আজ অনেক সুন্দর লাগছে তোকে।” ইমান কিয়ানের সাথে কাজের কথা শেষ ছকরে স্টেজ থেকে নেমে মিম’কে শাসনের ভঙ্গিতে বললো,
– “একা একা আসতে গেলে কেন? এখানে কি কোনো মেয়ে আছে?” মিম বলল,
– “সারা ছিল স্যার!”
– “কোই? কোথায় সে? এখন তো দেখতে পাচ্ছি না তাকে? তোমাকে না এর আগেও বলেছি অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পর আসবে সবার সাথে?” মিম ভয় পেয়ে বললো,
– “জ্বি স্যার! আমি চলে যাচ্ছি,ক্ষমা করুণ ভুল হয়ে গেছে।” ইমান স্থীর হয়ে তাকিয়ে ছিল, নীল শাড়িতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে মেয়ে টা কে এর সাথে আবার মাথায় বেলিফুলের খোপা,দু’হত ভরা রেশমি চুড়ি,ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক যে কোনো পুরুষ হয়তো মুহূর্তেই মেয়েটিকে দেখে প্রেমে পরে যাবে।অতঃপর হঠাৎ স্লিপ করে মিমের পায়ে লেগে যায় লোহার রডে।ইমান এসে মিম’কে ধরে বললো,
.
– “তোমার পায়ে কি লেগেছে খএব? দেখাও আমাকে।মিম বললো,
– ” তেমন কিছু হয়নি স্যার! লাগেনি সে ভাবে।” ইমান মিমের কথা শুনলো মা,সবার সামনে থেকে কোলে করে মেডিকেল রুমে নিয়ে এলো তাকে।” ডক্টর প্রিয়া আহমেদ মিমের পায়ে স্প্রে করে দিয়ে ইমান’কে বলল,
– “ব্যাপার না স্যার! ঠিক হয়ে যাবে।” ইমান চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
– “কি করে ঠিক হবে? আপনি দেখতে পাচ্ছেন না ডক্টর? ওর পায়ের পাতা টা লাল হয়ে গেছে?” মিম বললো,
– “থামুন স্যার! উনি একজন সার্টিফাইড ডক্টর,উনি কেন ভুল চিকিৎসা দিতে যাবেন আমাকে?” ডক্টর প্রিয়া হাসতে হাসতে মেডিকেল রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,মিম ইমান’কে ধরে বসালো নিজের পাশে।ইমান মিমের পায়ে যত্ন করে হাত বুলোতে লাগলো,মিম ইমানের মুখ তুলে ওকে জিজ্ঞেস করলো,
– “কি হয়েছে?” ইমান কোনো উওর করলো না বরং হঠাৎ এগিয়ে এসে চুমু খেলো মিমের ঠোঁটে।বেচারি ইমানের এমন অবস্থা দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো!ইমান এগিয়ে এসে আবারও চুমু খেতে লাগলো ওর ঠোঁটে,মিম ইমান’কে বাঁধা দিলো না বরং ও নিজেই ইমানের পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরলো শক্ত হাতে।কিছুক্ষণ পর,
হঠাৎ পায়ের শব্দ শুনতে পাওয়া গেলো,ইমান সাথে সাথে সরে দাঁড়ালো মিমের কাছ থেকে…! মিম সাথে সাথেই নিজেকে সামলে নিলো,মনেমনে বললো,
– “কি হয়েছিল আমার? আমি কেন আটকাতে পারিনি মানুষ টা কে?” তখন জেনারেল ইমাদ সাহেব এসে ওর মাথায় হাত রেখে বললেন,
– “কি হয়েছে আম্মু? এতো চিন্তিত লাগছে কেন তোমাকে?” মিম ইমানের দিকে তাকিয়ে বললো,
– “তেমন কিছু না স্যার! শুধু মাথাটা একটু ঝিমঝিম করছে।মনে হচ্ছে,রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।
.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com