Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব – ০৬
ফারদার একা একা এখানে-সেখানে গেলে তোমাকে গুম করে দেবো বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে।” মিম গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে রইলো,ইমান হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলো মেডিকেল রুম থেকে।
তারপর মিমের বীরত্বের কথা সব খুলে বললো এসে জেনারেল ইমাদ সাহেবের কাছে।জেনারেল ইমাদ সাহেব হাসতে হাসতে বললেন,
– “ইমান! তুমি চেখের আড়াল করো না ওকে,আমার ভয় হচ্ছে,দুশ্চিন্তা হচ্ছে ওর কথা ভবে।” ইমান ইমাদ সাহেব’কে আস্বস্ত করে বললো,
– “চিন্তা করবেননা স্যার! ও কখন কোথায় থাকে? সে সব খবর আমার নখদর্পনে আছে।”
– “তবুও ওর যে স্কেচ গুলো চুরি হলো,মনে হচ্ছে কেসের বড় একটা অংশ ওই স্কেচ গুলো সাথে জড়িয়ে আছে।” ইমান বললো,
.
– “সে গুলো ফেইক স্যার! আসল গুলো মিম,অন্য কোথাও লুকিয়ে রেখেছে।”
– “হ্যাঁ বলেছিল সেদিন,স্কেচ গুলো সম্পূর্ণ হয়নি,তাই আমার দুশ্চিন্তা বেড়ে গেছে।” মিনিট খানেক পরে,স্টাফ মিজান এসে ইমান’কে বলল,
– “স্যার! আপনার কথা মতো জুতোর ছাপ তুলে নেওয়া হয়েছে ড্রেনেজ সিস্টেমের পাশ থেকে।”
– “এক কাজ করো মিজান,ওটা ফরেনসিক টেস্টের জন্য পাঠিয়ে দাও রিমা’র কাছে।”
– “ঠিক আছে স্যার,আপনি যা চাইছেন তাই হবে।”
রাতে ইমান আনমনে বসে ছিল,তখন তার সেই নাম না জানা বান্ধবী ফোন করলো তার কাছে,ইমান ফোন রিসিভ করেই বললো,
– “কি ব্যাপার স্পর্শীয়া? আজ বোধহয় খুব মিস করছ আমাকে?” অপর পাশ থেকে মেয়েটি বললো,
– “আসলে তা না! চা,নাস্তা করেছেন? কিংবা কিছু খেয়েছেন রাতে?” ইমান বললো,
– “নাঃ! মন খারাপ,তাই কিছু খাইনি আর খিদে ও লাগেনি সকাল থেকে।” মেয়েটি বলল,
– “এ আবার কেমন কথার ধরন? আবার কি ঝগড়া করেছেন আপনার প্রেমিকার সাথে?” ইমান বললো,
– “আরে বাদদেও,আমার রিলেশন টিকবে না বোধহয় ওই মেয়ের সাথে?”
– “কেন?”
– “কেন আবার? আমাকে ঘরজামাই থাকতে বলছে,এর মানে কি বলো? আমি কি অভাবী? আমার কি টাকা-পয়সায় অভাব আছে?”
– “তবুও আপনি যে ভালোবাসেন তাকে?” ইমান বললো,
– “মনে হয় না ভালোবাসতে পারবো? তুমি তো আছো? বিয়ে করবে আমাকে?” মেয়ে টা চমকালো বলল,
– “কি বলছেন আপনি? হুমম? আপনার মাথা ঠিক আছে?” ইমান বলল,
– “চমকানোর মতো কিছু হয়নি! এটাই ফ্যাক্ট কারণ তুমি কিছু না বলতেই বুঝে যাও আমাকে।” মেয়েটি বললো,
– “আরে ধুরর বোকা,বসে কথা বলুন তার সাথে।”
– “কিন্তু?”
.
– “কোনো কিন্তু না জনাব,তবে হ্যাঁ! মাথা টা ঠান্ডা রেখে।” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “এর জন্যই বোধহয় আমি খুব ভালোবাসি তোমাকে? আচ্ছা একটু ভিডিও কল করি? আট বছরের বন্ধুত্বে আমি কখনো দেখিনি তোমাকে?” মেয়েটি বলল,
– “ইসস,আমি যেন ওনাকে দেখেছি? আর দেখতে ও চাই না আপনাকে।”
– “কেন?”
– “কারণ অন্যের জিনিস দেখে ভালো লেগে গেলে আল্লাহ তাআ’লা পাপ দেবে,জিনা হবে।” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “বুঝেছি বুড়ী! আমি কথায় পারবোনা তোমার সাথে।” মেয়েটি বলল,
– “আচ্ছা এখন রাখি? কিছু জরুরী কাজ আছে।” ইমান বলল,
– “আল্লাহ হাফেজ,নিজের মোনাজাতে রেখো আমাকে।” মেয়েটি খিলখিল করে হাসতে লাগলো,অতঃপর ফোন টা হঠাৎ করে কেটে গেলো ভুল করে ইমানের হাতের আঙুলে চাপ লেগে,ইমানের কেন যেন মন খারাপ হয়ে গেলো? সামনা-সামনি খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল তার মেয়ে টা কে।” এদিকে,মিম’কে হাসিখুশি দেখে নীলাসা,প্রিয়ম এসে বললো,
– “কি ব্যাপার? আজ বোধহয় তোর হয় কথা হয়েছে আমাদের দুলাভাইয়ের সাথে?” মিম বললো,
– “আরে,সে আমার জাস্ট ফ্রেন্ড,তোরাও না,শুধুশুধু এসে বকবক করছিস আমার কানের কাছে।” সারা এসে মিটিমিটি হেসে বললো,
– “হুমম,বুঝি বুঝি এমন জাস্ট ফ্রেন্ড আমাদের ও আছে,নতুন শেখাচ্ছ বুড়ি? কি মতলব বলো বলো? খুলে বলো আমাদের কাছে?” মিম এক লাফে বিছানায় উঠে গিয়ে বলে,
– “সর এই সর,একদম কাতুকুতু দিবি না আমাকে।” মিমের অবস্থা দেখে লেইলা আর স্বর্ণা ওরা হাসতে হাসতে বলে,
– “বুঝি না বাপু,বিয়ে-শাদি হলে তোর জামাই কি রে তোকে দিয়ে নিজের শখ আহ্লাদ মেটাবে?” সারা মুখ টিপেটিপে হাসতে হাসতে বলল,
.
– “দুলাভাই তার বউ’কে স্পর্শ করার আগে দশবার পারমিশন নিবে।” মিম চোখ কপালে তুলে বললো,
– “বিয়ে আমি করছি না,তোমরা সেই আশায় বসে থেকো না,ঠিক আছে?” লেইলা সারা’কে ডেকে বললো,
– “আরে কোই তোরা? মিম আবার কোথায় চলে গেলো রুম থেকে?” মিম চুপিচুপি ছাদে এসে দেখে অফিসারেরা সবাই মাঠে বসে আছে,কিয়ান ইমান’কে বললো,
– “বড় ভাই একটা গান ধরেন,অনেক দিন গান শোনা হয় না আপনার মধুর কণ্ঠে।”
ইমান প্রথমে না না করলেও ফেলতে পারেনি কিয়ানের অনুরোধ টা কে আর তাই পিয়ন অনুজ’কে দিয়ে নিজের গিটার টা আনালো।তারপর গলা ছেড়ে গান গাইতে শুরু করলো সে,
গান শেষ করেই ইমান ওপর তাকিয়ে দেখে প্রতিদিনের মতো মিম পা ঝুলিয়ে ছাঁদে বসে আছে কিন্তু হঠাৎ দু’জনের চোখে চোখাচোখি হতেই মিম দৌড়ে পালিয়ে যায় ছাঁদ থেকে আর তা দেখে ইমান রেগে গিয়ে বলল,
– “এই ফাজিল মেয়ে টা কে যেটা মানা করবো,ও সেটাই করবে! তাও আমার চোখের সামনে বসে।আজ ওর একদিন কি আমার একদিন,আজ একটা শাস্তি দিতেই হবে ওকে।” হঠাৎ রাত বারোটায় ইমান’কে গার্লস কোয়ার্টারে দেখে মেয়েরা সবাই ভয় পেয়ে গেছে,ইমান লেইলা’কে করিডোরে দেখে জিজ্ঞেস করে,
– “মিম কোথায়? ও কি করছে?” লেইলা কিছু বলার আগেই ইমান সোজা রুমে ঢুকে দেখে মিম পায়ের ওপরে পা তুলে বসে কার্টুন দেখছে,মিম ইমান’কে দেখেই হঠাৎ ভয় পেয়ে বলল,
.
– “জ্বি,স্যার! কিছু বলবেন? কি হয়েছে?” ইমান হেঁচকা টান দিয়ে মিমের হাত ধরে ওকে বিছানা থেকে নামলো,ইশারা করে বললো,কান ধরতে।মিম কান ধরলো না,উল্টো চোখ,নাক,মুখ উল্টে মাথায় হাত রেখে বললো,
– “স্যার! আমার খুব মাথা ব্যাথা করছে।” ইমান বললো,
– “আমার সামনে কান ধরে ওঠবস করবে? না অন্য কোনো শাস্তি দিতে হবে তোমাকে?” মিম চুপচাপ কান ধরে ওঠবস করলো,ইমান যেতে যেতে বললো,
– “আজকের পর থেকে সাবধান হয়ে যাও,নয়তো তোমার কপালে ঢের দুঃখ্য আছে।” মিম রাগ সামলে রাখতে চুপচাপ গাল ফুলিয়ে বসে রইলো।কিছুক্ষণ পর, ওর সেই বন্ধু ফোন করলো ওর কাছে।মিম কল টা রিসিভ করেই বলল,
– “জানেন আমার স্যার টা কত অসভ্য? প্রেমিকার সাথে ঝগড়া করে এসে আমার ওপরে রাগ দেখাচ্ছে? অপর পাশের মানুষ টা হাসতে হাসতে বললো,
– ” এ গুলো সব কাপুরুষের বাচ্চা! যার রাগ তার ওপরে না ঝেড়ে অন্যের ওপরে ঝাড়বে।” মিম বললো,
– “নিজে যেন সু-পুরুষ? আপনি ও নির্ঘাত এমন করে বেড়ান সবার সাথে।” অপর পাশে মানুষ টা অট্টহাসি দিতে দিতে বলল,
– “কি করবো? বলো? রাগ উঠলো কন্ট্রোলে থাকে না যে?” মিম মৃদু হেসে বলল,
– “ফ্লোরে গড়াগড়ি খাবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।” ভদ্রলোক হাসতে হাসতে বললো,
– “বলি! তাহলে আমার নোংরা জামাকাপড় গুলো কি তুমি ধুয়ে দেবে?”
– “জানি না? আর জানলেও দিতাম না ভাই! আমি আপনার বউ না।”
– “হবে?”
.
– “না গো,চিরকুমারী থাকার ইচ্ছে আছে! আচ্ছা এখন রাখি? নাহলে ম্যাম এসে বকা দিবে।”
– “তুমি ঠিক আছো?”
– “হুমম।”
– “ওকে।” সকালে মিম একটু ও কথা বললো না ইমানের সাথে,ইমান মিমের হাবভাব দেখে মনেমনে বলে,
– “রাতে কান ধরানোর জন্য ওই দুষ্টু মেয়ে টা এখন প্রতিশোধ নিচ্ছে আমার কাছ থেকে? দেখি কতক্ষণ তুমি আমার সাথে কথা না বলে থাকো? তোমার কত এলেম আছে?” দুপুরে,লেইলা,নীলাসা,সারা ডাইনিং এরিয়ায় ঘুরঘুর করছে মিমের আশেপাশে।মিম এক একজনের হাবভাব দেখে বলে,
– “কি চাই তোদের? এমন ভিলেন মার্কা লুক নিয়ে তাকিয়ে আছিস কেন আমার দিকে?” প্রিয়ম এসে গম্ভীর মুখ করে বললো,
– “আজকে আমরা কয়জন সেইম কালারের শাড়ি পরবো,লেইলা ফরমান জারি করেছে।” মিম মুখ টিপেটিপে হাসতে বললো,
– “তোরা এমন ভাব করছিস? যেন সে রাষ্ট্রপতির জন্য মনোনয়ন পয়েছে?” সারা কপালে হাত তুলে লেইলা’কে বললো,
.
– “আজ্ঞে মহামান্য রাষ্ট্রপত্নী সালাম আলাইকুম! আপনার আদেশ কপালে ধার্য ঠিক আছে?” মিম হাসতে হাসতে বিষম খেয়ে বললো,
– “আরে বলদী,শিরোধার্য হবে।” এদিকে অফিসারেরা সবাই হাসাহাসি করছে ওদের সবার কাণ্ডকারখানা দেখে,নীলাসা মিম’কে বলল,
– “এই তুই একটা মমতাজের গান গাইতিস না? ওঠা গেয়ে শোনা না আজকে?” মিম একবার আড়চোখে ইমান’কে দেখে বলে,
– “ভাই সেটা অনেক রোমান্টিক একটা গান,কখনো দরজা লাগিয়ে শোনাবো তোদের সবাই’কে,আপাতত ব্রেইন ঠিকঠাক কাজ করছে না।”
– “ঠিক আছে,তবে সেটা যে কি একটা গান লোকের শুনলে হাসতে হাসতে মূর্ছা যাবে।” মিম বললো,
– “আমি যাচ্ছি মূর্ছা! সেটা কি পরছে না তোমাদের চোখে?” সারা কিছু বলতে চাইলো,মিম ওর চেপে ধরে কোয়ার্টারে নিয়ে এলো ওকে।
রাতে ইমান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এসে দেখে,মিম সাজুগুজু করে ছবি তুলছে সিঁড়ি তে বসে।তখন হঠাৎ রনি এসে মিম’কে বলে,
– “সাইড দাও আমাকে স্টেজে উঠতে হবে।” মিম ভ্রু কুঁচকে বললো,
– “সাইডে ছেলেদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা আছে,সেটা কি পরছে না আপনার চোখে? নাকি খুঁজে খুঁজে মেয়েদের গায়ের মধ্যেই এসে ঢুকতে হবে?”
– “মানে কি? তুমি কি মনে করো নিজেকে?” ইমান এসে রনির শার্টের কলার ধরে বললো,
– “বেয়াদব ছেলে? এতো বড় সাহস কে দিয়েছে তোমাকে?”
– “কিন্তু স্যার?”
.
– “তুমি দেখতে পাচ্ছনা? স্টেজে ওঠার জন্য,তোমাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা আছে?” মেজর রোমেল বললো,
– “ছেড়ে দিন ভাই! ভুল করেছে,স্টেজ আসুন কাজ আছে।” ইমান স্টেজে উঠলো,মিমের হঠাৎ নজর গেলো বড় ঝাড়বাতি টার দিকে আর ও আচমকা ইমান স্যার বলে চিৎকার করে ছুটে গিয়ে ওকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো নিজেও পরে গেলো সাথে সাথে আর তখুনি ঝাড়বাতি টা খুলে পরে গেলো এমন ঘটনায় সবাই বেশ অবাক হয়ে গেছে আর ইমানের যখন হুঁশ ফিরলো,ও দেখতে পেলো মিম জ্ঞান হারিয়ে ওর পাশেই পরে আছে।ও মুহুর্তেই মিম’কে বুকে জড়িয়ে নিলো,হাসপাতালে নিয়ে এলো ওকে,ডক্টর ইমানের কপালে ব্যান্ডেজ করে দিলো,ও ইমাদ সাহেব কে জিজ্ঞেস করলে,
– “মিম কেমন আছে?” ডক্টর রিজাভী এসে বললেন,
– “ভয়ের কোনো কারণ নেই,তবে মেয়েটির পায়ে সামান্য কাঁচ ফুটেছে।” ইমান বললো,
– “আমি ওকে একবার দেখতে চাই।” মেজর কিয়ান ধরে নিয়ে এলো ওকে,ইমান নিজের উৎকণ্ঠা থেকে ডক্টর’কে জিজ্ঞেস করলো,
– “ওর মাথায় কি আবারো লেগেছে?” ডক্টর ইমান’কে নির্ভয় নিয়ে বললেন,
– “না,শুধু ব্যান্ডেজ টা চেঞ্জ করে দিতে হয়েছে।” ইমান কেবিনে ঢুকে হঠাৎ মিমের হাত শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
– “কথা দিচ্ছি! এবার আর আমি ছাড়বো না কাওকে,প্রয়োজনে ওদের মা’র খাওয়াবো,তবু্ও কথা বের করে ছাড়বো এক একজনের মুখ থেকে।”
.
চলবে,,,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com