Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব - ৩৬ এবং শেষ
মন্দ না অনেক অনেক ভালো হয়েছে।” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “কথা টা মন থেকে বলছ তো?”
– “কেন? কোনো সন্দেহ আছে?”
– “না মানে,ওই এমনি আর কি…! তোর যে রাগ…। আমার মাঝেমধ্যে ভয় করে।” মিম চোখ পাকিয়ে তাকালো।ইমান সে চুপ হয়ে গেছে আর আশেপাশে সবাই হাসছে দুই টোনাটুনির কাণ্ডকারখানা দেখে…অতঃপর চোখের পলকে’ই যেন তাদের বিয়ের আড়াই বছর কেটে গেছে আর তারা দু’জন দুই পুএ সন্তানের বাবা-মা।ছেলেদের নিয়ে তারা বেশ সুখেই আছে।
শত ব্যস্ততার মাঝেও নিজেদের সময় দিয়ে আজ তারা খুব সুখী কোনো ঝামেলা ঝঞ্জাট নেই দু’জনের মাঝে।তবে আজ অনেক দিন পর,ইমান কাজ থেকে একটু বিরতি নিয়ে মিম’কে বলল,
– “আজকে ফ্রী আছি…! ঘুরতে যাবে?” মিম হাসতে হাসতে বলল,
– “কেন যাবো না? বাবুদের তুমি গিয়ে রেখে আসো মিহা আপুর কাছে।” হঠাৎ মিহা দু’জন কে চমকে দিয়ে বলল,
– “কাওকে রেখে আসার দরকার নেই,আমরাই চলে এসেছি তোদের কাছে।তবে ইভান আর মিহান কে দেখতে পাচ্ছি না…!
বাবা দু’টো কোথায় গেছে? তানিয়া এসেছিলো নাকি? ওদের নিয়ে গেছে?” মিম মৃদু হেসে বললো,
– “না আপু…! দু’জনেই ঘুমায়,সবে মাএ খাইয়ে দাইয়ে ঘুম পারিয়েছি একটু আগে।” এরপর দু’জনেই ঘুরতে বেড়িয়ে গেলো,যাওয়ার আগে ইমান মিম’কে অনুরোধ করেছিল সাদা কালারের জুম শাড়ি টা পরে নিতে।
মিম সাদা কালারের জুম শাড়ি টা পরে চুল গুলো খুলে চোখে কাজল দিয়ে,দু’হাত ভর্তি মাল্টি কালারের চুড়ি।দু’ সন্তানের মা বলে দেখে মনে হচ্ছে না তাকে।ইমান সাদা পাঞ্জাবি সাথে চুল গুলো স্পাইক করে চোখের সানগ্লাস পরায় অসম্ভব সুন্দর দেখতে লাগছে তাকে।মিম এগিয়ে এসে পাঞ্জাবির বোতাম গুলো লাগিয়ে দিতে দিতে বলল,
– “এগুলো খুলে রেখেছ কেন? অন্য মেয়েদের দেখাতে?” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “তারা যতই দেখুক…! আমি শুধু তোমার এবং ভালোবাসি তোমাকে।” মিম ইমানের গলা জড়িয়ে ধরলো,ইমান বললো,
– “চলো…! বেরুনোর আগে চুমু খেয়ে নেই আমাদের ছানাপানা গুলো কে…।” তারপর দু’জনেই ছেলেদের আদর করে ঘুরতে বেড়িয়ে পরলো,ইমান মিম’কে সঙ্গে করে নিয়ে এলো টি.এস.সি তে…! এরপর সেখান থেকে অনেক গুলো বেলিফুলের মালা কিনে পরিয়ে দিলো মিম’কে….এবং তার বেশ কিছুক্ষণ পর,
মিম বুড়ীর চুল দেখতে পেয়ে তা কেনার জন্য ছুট লাগালো,ইমান ওর অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে বললো,
– “আজ আমার এই বউ টা নিশ্চিত কিছু না কিছু ঘটাবে।” তারপর নিজেই এসে মিম’কে সোহন পাপড়ি কিনে দিলো আর বললো,
.
– “এতো স্ট্রিট ফুড খেলে তোমার শরীর খারাপ হবে।” মিম ইমান’কে চোখ রাঙিয়ে বললো,
– “সবসময় একটা বাবা বাবা ভাব নাও কেন? তুমি আমার জামাই ঠিক আছে?” ইমান মিটিমিটি হেসে বলল,
– “না ঠিক নেই…! জামাই বলে তোমায় শাসন করতে পারবোনা কোথায় লেখা আছে?” মিম কোমরে শাড়ি আঁচল গুঁজে দিয়ে বলল,
– “এরকম বোকাসোকা শাসন কে করতে বলেছে তোমাকে?” ইমান হাসতে হাসতে মিম’কে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “তোমায় শাসন করবো না তো কাকে শাসন করবো? আমার জীবনে তুমি ছাড়া আর কে আছে?” মিম ইমানের গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
– “কি ব্যাপার? খুব পটানোর চেষ্টা করছ এসে থেকে? কি মতলব কি তোমার? যদি একটু বলতে আমাকে?” ইমান হাসতে হাসতে মিমের হাত ধরে রাস্তা পার হতে হতে বললো,
– “আমাকে সামনের বিবাহবার্ষিকী’তে আর একটি সন্তান উপহার দেবে?” মিম লজ্জা পেয়ে দ্রুত রিকশায় চড়ে বলল,
– “নির্লজ্জ লোক একটা…! রাস্তাঘাটে ও কিচ্ছু আটকা না তার মুখে।” ইমান মিম’কে জাপ্টে ধরে উচ্চশব্দে হাসতে লাগলো,মিম লজ্জায় মিশে রইলো ইমানের বুকের সাথে।অতঃপর রিকশা তার আপন গতিতে চলতে লাগলো,তবে কিছুটা দূরেই একটা মহিলা বেশ অবাক চোখে তাকিয়ে ছিলো ইমানের দিকে।কিছুক্ষণ পর,সেই মহিলা ইমান’কে ফোন করে বললো,
– “আমরা কি একবার দেখা করতে পারি তোমার বাড়িতে?” ইমান বললো,
– “হ্যাঁ,সিলভানা…! বাড়িতে চলে আসো আমার কোনো সমস্যা হবে না তাতে।” সকাল হতে না হতেই সিলভানা ইমানের বাড়িতে এসে হাজির,ও বেশ অবাক হয়েছে মিম’কে দেখে…! ইমান সেটুকু আন্দাজ করে সিলভানা’কে বলল,
– “আমার ওয়াইফ এবং দু’ সন্তানের মা,খুব যত্ন করে ও আগলে রেখেছে সবটা’কে…!” সিলভানা চমকালো,মিম হাসিমুখে বললো,
– “আপনারা বসে গল্প করুণ…! আমি এখুনি আসছি কিচেন থেকে।” সিলভানা ইমান’কে জিজ্ঞেস করলো,
– “তোমার সেই বান্ধবী?” ইমান বলল,
– “এ বাড়িতেই আছে।” সিলভানা কৌতূহলী হয়ে এদিক-সেদিক তাকাতে লাগলো,ইমান সাথে সাথে স্পর্শীয়া বলে সম্বোধন করলো মিম’কে…। সিলভানা অবাক হয়ে মিমের দিকে তাকিয়ে রইলো,পরক্ষণেই ছেলেদের দেখে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
– “তাহলে দু’জনেই বেশ সুখ আছো একসাথে?” ইমান মিমের হাত থেকে খাবারের ট্রে নিয়ে টেবিলের ওপরে রেখে বললো,
– “হ্যাঁ,সে কি দেখে তুমি বুঝতে পারছনা আমদের দু’জন কে…?” সিলভানার কেন যেন দম বন্ধ হয়ে আসলো,ও ইমান কে বলল,
.
– “এখন উঠি? আসলে আজকে হাসবেন্ডের সাথে একটা পার্টিতে যেতে হবে,তবে তোমাদের বাচ্চা গুলো অনেক সুন্দর,মানে আরকি বাবার মতো হয়েছে।” তারপর ইমান মিম দু’জনেই হাসিমুখে ওকে বিদায় জানালো,সিলভানার চোখের কার্ণিশে জল জমতে লাগলো কিছু একটা ভেবে…! ও ইমান কে কিছু একটা বলতে চেয়েছিল কিন্তু সে বলতে পারেনি চুপচাপ চলে এলো ইমানের বাড়ি থেকে।সিলভানা যেতে না যেতেই ইমান মিম’কে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “আচ্ছা! তুমি কি রাগ করেছ আমার সাথে?” মিম ইমানের কপালে চুমু খেয়ে বলল,
– “কোই না তো? কেন? হঠাৎ তোমার এমন কেন মনে হয়েছে?” ইমান বলল,
– “জানি না…! তবুও খুব অপরাধ বোধ কাজ করছে নিজের মাঝে,যেন মস্ত বড় কোনো অপরাধ করে ফেলেছি আমি ঠকিয়েছি তোমাকে।” মিম হাসতে হাসতে ইমান’কে বলল,
– “জান নামাজ পড়ে আসুন! সবটা ঠিক হয়ে যাবে।” ইমান মিমের কথা মতোই ওজু করে নামাজ পড়ে নিলো,তারপর উঠে দাঁড়িয়ে সিলভানার নম্বর টা ব্লক করে রাখলো সাথে সাথে,তবে সিলভানা তার অন্য আরেকটি নম্বর থেকে ইমান’কে ম্যাসেজ করে বললো,
– “আই লাভ ইউ।” ইমান ওকে রিপ্লাই দিয়ে বললো,
– “সরি,আমি আসলে কখনোই ভালোবাসিনি আপনাকে…! আর হ্যাঁ,আমি আমার স্ত্রী’কে খুব ভালোবাসি,তাই যারতার জন্য আমি কখনোই ছাড়তে পারবোনা তাকে এবং সে আমার দুই সন্তানের মা আর আমরা অনেক সুখে আছি এক সাথে।কাজেই আর কখনো দয়া করে আমাদের বিরক্ত করার চেষ্টা করবেননা,নয়তো এর ফলাফল খুব খারাপ হবে।” তবুও সিলভানা ইমানের কাছে ফোন করলো,ফোন রিসিভ হচ্ছে না দেখে বুঝতে পারলো ওর নম্বর ব্লাকলিস্টে আছে।তারপর আর ও কখনোই ইমান’কে জ্বালাতন করার চেষ্টা করেনি কারণ ইমানের যা বলার ছিল,বলে দিয়েছে তাকে।এভাবেই আজ তাদের সংসার জীবনের তেইশ বছর পার হয়ে গেছে আর আজ ইমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধান হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছে।ইমান দায়িত্ব গ্রহনের পর প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় একজন সাংবাদিক নিজের কৌতূহল থেকে ইমান’কে জিজ্ঞেস করলো,
– “স্যার…! আপনার এই কৃতিত্বের ক্রেডিট আপনি দিতে চান কাকে?” ইমান হাসিমুখে মিমের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
.
– অল ক্রেডিট গোজ টু মাই ওয়াইফ,মাই লাইফ…!মানে আমার চার সন্তানের মা কে কারণ এই মানুষটি সারাজীবন আমাকে উৎসাহ প্রদান করে গেছে আর তিনি কখনো আমাকে ভেঙে পারত দেননি বরং আমার শক্তি হয়ে আমার সাথে থেকেছে আর একই প্রফেশনে থাকার দরুন,বউ কম আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কিংবা প্রিয় বন্ধু ছিলো সে।” ইমানের কথা শুনে সব নিউজ রিপোর্টার মিমের দিকে ক্যামেরা ধরে দাঁড়িয়েছে মিম লজ্জ পেয়ে বিড়বিড় করে বললো,
– “এই যে আপনার কি কোনো কাজ নেই? সব জায়গায় শুধুশুধু ফাঁসান কেন আমাকে?” ইমান মিমের কপালে চুমু খেয়ে বললো,
– “ফাঁসালাম কোথায়? আমার বউ আমার জন্য যেটা করে সেটাই বলছি সবার কাছে।” তখন তখন তেরো বছর বয়সী ঈশানী এসে বাবাকে শাসনের ভঙ্গিতে বললো,
– “তুমি আবার ও মা কে নিয়ে বিদেশে ঘুরতে যাওয়ার ধান্দায় আছো এই খুশিতে?” মেয়ের কথা শুনে ইমানের ঠোঁটের হাসি মিলিয়ে গেলো পাশ থেকে মাদিদ বললো,
– “লাভ নেই বাবা দুবাইয়ে’র পাসপোর্ট কিন্তু বোনের হাতেই পরেছে।” মিম মিটিমিটি হেসে বললো,
– “লজ্জ নেই না আপনার? বড়বড় ছেলেমেয়ের সামনে কিচ্ছু আটকায় না আপনার মুখ?” ইমান চার ছেলেমেয়ে মাঝে দাঁড়িয়ে মিম’কে ফ্লাইং কিসস ছুঁড়ে মে’রে বলে,
– “অল ফর ইউ বেইবে….!” মিম আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সবাই ওর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে।ও লজ্জ পেয়ে ও পালিয়ে আসতে পারেনি কারণ লোকে কি বলবে? সকালে ঈশানী ঘুম থেকে থেকে উঠে ইশান’কে এসে জিজ্ঞেস করে,
.
– “ভাইয়া বাবা-মাকে দেখছি না কোথায় গেছে?” মিহান হাসতে হাসতে বলল,
– “কোথায় আবার? পাসপোর্ট হাপিশ করে দিয়ে মা’কে হাইজ্যাক করে নিয়ে গিয়ে প্লেনে উঠেছে,আরে তুই তে বাবা’কে চিনিস…!
শুধু মায়ের সাথে নিরিবিলি কোথাও গিয়ে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে চায় সে..!” ঈশানী গাল গোল ফুলিয়ে পাঁচ মিনিট বসে থেকে হঠাৎ হাসতে হাসতে বলে,
– “তাই বলে এভাবে? না মানে বাবার কি আমাদের সাথে ঘুরতে ইচ্ছে করে না? সারাজীবন দেখলাম মায়ের সাথে শুধু একাই সময় কাটাবে,তাও ভালো যতই রাগারাগি করি না কেন আমি কিছু খুব ভালোবাসি আমার বাবাকে।” তখন হঠাৎ ঈশানীর মাথায় একটা চাটি পরলো,ও পেছনে ফিরে দেখলো বাবা দাঁত বের করে হাসছে,মিম মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বললো,
– “কি হয়েছে বাবা?” ঈশানী মা’কে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “ভাইয়ারা ভালোই আমাকে বোকা বানিয়েছে।” মেয়ের কথা শুনে ইমান হাসতে লাগলো,তারপর মিম’কে বলল,
– “ঘরে চলো কাজ আছে।” মিম বলল,
– “আপনার কাজ মানে যে কি? আমার সেটা ভালো করেই জানা আছে।” কথা শেষ করে মিম লজ্জা পেয়ে এদিক-সেদিক তাকিয়ে দেখলো,ছেলেমেয়েরা কেউ নেই ইমান এগিয়ে এসে বলল,
– “চলো,কাজে চলো আমার সাথে।” মিম বললো,
– “যদি না যাই?” ইমান হঠাৎ মিমকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,
– “তাহলে এভাবেই তুলে নিয়ে যাবো তোমাকে।” মিম লজ্জ পেলো,ইমান ফিসফিস করে ওর কানে কানে বললো,
– “সারা জীবন এমন’ই থেকো আর অনেক ভালোবেসো আমাকে।” মিম ইমান’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,ইমান হাসিমুখে পা বাড়ালো ঘরের দিকে।
.
<>সমাপ্ত<>
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com