Breaking News

Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব – ১০



অসহ্য কর লোক একটা! ইচ্ছে করছে আলতো হাতে গলাটা টিপে দিতে।” কিছুক্ষণের মধ্যেই দু’জনে এসে ধীমানের চেম্বারে পৌঁছালো,ধীমান হঠাৎ চমকে গেলো দু’জন’কে এক সাথে দেখে,ইমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ধীমান’কে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “কি রে বন্ধু? মিম’কে নিয়ে চেম্বারে আসতে বলেছিলি না আমাকে?” ধীমান কিছু একটা আন্দাজ করে বললো,
– “হুমম! চলো মিম,তোমার ক্ষতটা চেকআপ করতে হবে।” কেবিনে এসে ধীমান বললো,
– “কি ব্যাপার বন্ধু? কেউ আবার ফলোটলো করছে না কি তোদের দু’জন কে?”
– “আর বলিস না! সে আরেক ঝামেলা,এবার আমাদের দু’জন কে আলাদা বসে কথা বলার জন্য ব্যবস্থা করে দে।” ধীমান হাসলো,তারপর নিয়ে গেলো দু’জন কে পাশের ঘর টা তে,মিম ইমানের চেহারা দেখে বলল,
– “স্যার! আপনার কি কোনো কারণে মন খারাপ? কি হয়েছে?” ইমান মেকি হেসে বললো,
– “তেমন কিছু না,এবার বলো কি বলতে চাও আমাকে?” মিম একটু দম ফেলে ইমান’কে বলতে লাগলো,
– “স্যার! আমার মনে হচ্ছে ফরেনসিক টেস্টের রিপোর্ট গুলোর মাধ্যমে আপনাকে মিস গাইড করা হচ্ছে,আই মিন! আপনি শর্ট নোটিশে অন্য কোনো ল্যাব থেকে টেস্ট গুলো পূনরায় করান,কারণ আমার মনে হচ্ছে কেউ এপাশে-ওপাশে দু’পাশেই ভারসাম্য বজায় রেখে খেলছে।সে হোক আপনার বিশ্বস্ত,তবে টাকার কাছে এগুলো কিছুই নয়।”
– “ঠিক আছে! কিন্তু?”
– “কোনো কিন্তু নয় স্যার! আজ প্রায় দু’দিন ধরে আমার করা স্কেচ গুলো আপনার কেবিনের সেকেন্ড ড্রয়ারে পরে আছে।”
– “মানে?”
– “মানে অপরাধী যেই হোক,সে বুঝতে পারছে তার বিরুদ্ধে একটা জোড়ালো প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে এবং তাই আজ আর সে বসে নেই আমাদের পেছনে নিজের বিশ্বস্ত সব লোক গুলো’কে ছেড়ে রেখেছে আর রইলো স্কেচের কথা!
.
গত কাল রাতেও ছায়া,বিথী এবং মিথিলা আপু এসে ও গুলো আমার ঘরে খুঁজেছে।যদিও আমি কায়দা করে সে গুলো আপনার কেবিন রেখে এসেছি কারণ আমি জানতাম,
ও গুলো শুধুমাত্র নিরাপদ আপনার কাছে আর হ্যাঁ স্যার আরেক টা জিনিস।গার্লস কোয়ার্টারে দোতলায় একশো দশ এবং তিন তলার দুইশো বারোর রুমের মেয়েরা নিয়মিত গর্ভ নিরোধক পিল খাচ্ছে।” ইমান চমকালো,জিজ্ঞেস করলো,
– “কি বলছ তুমি? এসব কবে থেকে চলছে?” মিম একটু বিষ্ময় সূচক হাসি দিয়ে বললো,
– “যবে থেকে আমাদের নতুন উপ-পরিচালক হিসেবে তেভভিদ স্যার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে।”
– “মানে?”
– “আপনার তালিকায় ও সেও আছে,এতো অবুঝ বালক সাজছেন কেন আপনি? যেন কিছুই জানেন না?
– ” না মানে! তুমি আসলে চকমকের ওপরে চমক দিচ্ছ আমাকে।”
– “তাতে কি? আরো কিছু শুনতে চান? তাহলে শুনুন! ফরেনসিক টেস্টের ফেইক রিপোর্ট আপনার টেবিল পৌঁছানোর আগে,জনাব তেভভিদের টেবিলে পৌঁছেছে এখন যদি আপনার আমাকে বিশ্বাস না হয়,তাহলে তুলে নিন স্টাফ মিজান’কে আর রইলো ছায়া ও বিথীর মুখ থেকে কথা বের করার কথা? তাহলে কান টা পাতুন,সবটা খুলে বলছি আপনাকে।” ইমান মিমের সব প্ল্যান শুনে বললো,
– “তুমি আসলেই হুররাম সুলতান! আমি দিনদিন অবাক হচ্ছি তোমার বুদ্ধিমত্তা দেখে।” মিম হাসলো,হেসে বললো,
– “ইসস! আপনি প্রশংসা করলেন আমার?” ইমান বললো,
– “এতো উড়ো না প্লিজ,ঝোড়ো হাওয়ায় নিচে পরে যাবে।” মিম পেট চেপে ধরে বললো,
– “খুব খিদে লেগেছে! এই আপনি কিছু খেতে দিবেননা আমাকে?” ইমান হাসিমুখে মিমের হাতে শপিং ব্যাগ দিয়ে বললো,
.
– “থ্যাংক’স! সেদিন তুমি নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ও বাঁচিয়েছ আমাকে।” মিম কিছু বলতে যাবে,তখন ধীমান এসে দু’জন কে কফির মগ দিয়ে বললো,
– “কথা শেষ হলে! দু’জনে খেয়ে বলো কেমন হয়েছে?” মিম বললো,
– “ওয়াও চকলেট কফি! থ্যাংক’স ডক্টর আপনাকে।” ধীমান হাসতে হাসতে বললো,
– “তুমি যেহেতু মেয়ে? তাই আন্দাজ করেছিলাম চকলেট কফি টা পছন্দ করবে!” ইমান দু’জনের চেহারা দেখে ধীমান’কে খোঁচা মে’রে বললো,
– “ভুলে যাস না,বাড়িতে তোর বউ বাচ্চা আছে।” ধীমান তার উত্তরে হাসতে হাসতে বললো,
– “বন্ধু,মিমের জন্য চকলেট কফি টাও তোর ভাবি’ই বানিয়েছে।” কিছুক্ষণ পর ধীমানের এসিস্ট্যান্ট সাফওয়ান এসে ওকে বলল,
– “স্যার! মিনিট দশেক আগে,একজন লোক এসে জিজ্ঞেস করলো ইমান কেন মিম’কে এখানে নিয়ে এসেছে? আমি বলেছি,মেয়েটি স্যারের পেসেন্ট,স্যার তাকে আসতে বলেছে।” ইমান অবাক হলো,বললো,
– “তার কোনো ছবি আছে?”
– “না স্যার! মুখ টা চাদর দিয়ে ঢাকা ছিলো,বুঝতে পারিনি সেভাবে।” তখম ধীমানের স্ত্রী ডক্টর নয়না এসে ইমান’কে বললো,
– “কি ভাইয়া? ভাবিকে নিয়ে এখানে থেকে যাওয়ার ইচ্ছে আচ্ছে?” ইমান সাথে সাথেই বিষম খেলো আর মিম লজ্জা পেয়ে তাকিয়ে রইলো নিচের দিকে।অতঃপর তারা একাডেমির জন্য রওনা হলো কিন্তু হঠাৎ প্রবল ঝড়বৃষ্টি শুরু হলো মাঝপথে।কিছুদূর এসে হঠাৎ ইমানের গাড়ি টা খারাপ হয়ে গেলো এবং তারা চিন্তায় পরে গেলো এই ঝড়বৃষ্টির রাতে কোথায় যাবে?
.
অতঃপর অনেক ভেবে ইমান মিম’কে গাড়িতে রেখে থাকার জন্য একটা জায়গা খুঁজতে বেড়িয়ে পরলো এবং পেয়েও গেলো কিছুক্ষণ হেঁটে।তারপর গিয়ে মিম’কে একটা ভাঙাচোরা পোড়োবাড়িতে নিয়ে এলো,মিম তখন বৃষ্টির পানিতে পুরোপুরি ভিজে গেছে।ইমান একবার আড়চোখে চেয়ে মিম’কে দেখে বললো,
– “তুমি তোমার জামাকাপড় চাইলে চেঞ্জ করে নিতে পারো,শপিং ব্যাগে একটা শাড়ির সাথে ম্যাচিং ভেলভেট চাদর আছে।” মিম চুপ করে রইলো,ইমান অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,
– “বদলে ফেলো,নয়তো ঠাণ্ডা লেগে যাবে।” মিম ঝটপট শাড়ি পরে চাদর টা গায়ে জড়িয়ে নিলো,ইমান এবার চোখ তুলে তাকালো মিমের দিকে,মনেমনে বললো,
– “শাড়ি টা স্পর্শীয়া’র জন্য কিনে ছিলাম কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যেন সেই আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে? তবে তা কি করে সম্ভব? আমি কখনো স্ব-চোখে দেখিনি ওই হুরপরী টা কে?” মিম লজ্জা পেলো,খুব লজ্জা করছে তার ইমানের চাওনি দেখে,ইমান সাথে সাথে মিমের ওপর থেকে চোখ সরিয়ে নিলো,মিম এগিয়ে এসে ইমানের হাতে নিজের স্কার্ফ টা দিয়ে বললো,
– “মুছে নিন স্যার! আপনার ও ঠাণ্ডা লেগে যাবে।” ইমান হাসলো,বললো,
– “না না! সমস্যা নেই ঠিক আছে।” মিম গিয়ে চুপচাপ ভাঙা দেওয়ালে পাশে বসলো,ইমান নিজের ওভার কোট আর শার্ট টা খুলে শুকোতে রেখে দিলো এক পাশে তারপর ইমান ওর লাইটার দিয়ে আগুন ধরালো,তারপর দু’জনে বসে পরলো আগুনের তাপ নিতে দু’পাশে।হঠাৎ একপাশ থেকে পানি পারছে দেখে মিম ইমান’কে বললো,
– “স্যার! আপনি এসে আমার পাশে বসুন! নয়তো ভিজে গেলে আপনার জ্বর এসে যাবে।” ইমান এসে মিমের পাশে বসে পরলো,বলল,
.
– “তোমার নিশ্চয়ই অনেক খিদে লেগেছে? আমি জানি,এই অবস্থায় তোমার অনেক যত্নের প্রয়োজন কিন্তু….”
– “ব্যাপার না স্যার! ঠিক আছে।” তারপর মিম ওর ব্যাগ প্যাক থেকে শুকনো খাবার বের করলো,ইমানের দিকে চিপসের প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল,
– “খেয়ে নিন স্যার! না খেয়ে আছেন সকাল থেকে।” ইমান বললো,
– “তুমি ও তো খাওনি? খাও? তোমার নিশ্চয়ই অনেক খিদে লেগেছে?” মিম হঠাৎ নিজের হট ওয়াটার বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল,
– “কফি খান স্যার!”
– “তুমি?” অন্য বোতল টা তে গরম চা আছে।” ইমান হাসলো,মিম চা বিস্কুট খেয়ে শুয়ে পরলো এক পাশে।ইমান এসে দূরত্ব বজায় রেখে মিমের পাশে শুয়ে পরলো,মিম ইমান’কে ঘুম ভেবে চাদরের কিঞ্চিৎ অংশ দিয়ে ঢেকে দিলো তাকে।ইমান কি ভেবে মিটিমিটি হাসতে লাগলো? তারপর অপর পাশে ফিরে জড়িয়ে ধরলো মেয়ে টা কে,মিম খুব লজ্জা পেলো,তবুও চুপচাপ মিশে রইলো ইমানের বুকের সাথে।সকালে যখন ইমানের যখন চোখ খুললো,দেখলো মিম তখনো ঘুমিয়ে আছে।ও ধীরে ধীরে মিম’কে ঘুম থেকে ডেকে তুললো,তারপর দু’জন রওনা হলো একাডেমির উদ্দেশ্য,একাডেমি তে পৌঁছে জানতে পারলো ছায়া’কে না কি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না গতকাল দুপুরের পর থেকে।মিম বিস্ফোরিত চোখে ইমানের দিকে তাকিয়ে বললো,
– “এটা কি করে সম্ভব? কে এতো সিকিউরিটি থাকা সত্ত্বেও কিডন্যাপ করে নিয়ে যেতে চাইবে ছায়া আপু’কে? তাহলে এই লোক টাই কি সেই লোক? স্যার,যে সেদিন আপনার ওপর হামলা করেছে এবং আমাকেও মে’রে ফেলার চেষ্টা করেছে?”
.
চলবে,,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com