Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব – ১৩
প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দাও! বাংলাদেশ সেনাবাহিনী’র পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সাতদিন ব্যাপি বিশাল বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে মিলিটারি একাডেমিতে।” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “জানি! গত দেড় বছর ধরে আছি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে এবং এটা আমার সৌভাগ্য,যে আমি যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছি,এই অনুষ্ঠানের একটা অংশ হয়ে থাকতে।” ইমান বললো,
– “তাই বুঝি! আজ বুঝি? তোমার জাস্ট ফ্রেন্ড ফোন কারেনি তোমাকে?”
– “তাতে আপনার কি? আপনার জাস্ট ফ্রেন্ড পাত্তা দেয় আপনাকে? দেখে মনে হচ্ছে যে আপনি তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন অথচ সে কখনো এ ধরণের ইঙ্গিত দেয়নি আপনাকে।” ইমান দু’পা এগিয়ে এসে বললো,
– “আমার পারসোনাল স্পেসে কে ঢুকতে বলেছে তোমাকে?”
– “আপনি কেন আমার স্পেসে ঢুকছেন? কৈফিয়ত দিন আমাকে?” ইমান বললো,
– “ইচ্ছে করছে,এই মুহূর্তে তোমার ঘাড় টা মটকে দিতে।”
– “কেন? আপনি কি ব্রহ্মদৈত্য নাকি? যদিও আমার খুব ইচ্ছে করছে আপনার গলাটা টিপে দিতে।”
– “খুন করবে তুমি? খুন করতে চাইছ আমাকে?” মিম মাথায় হাত দিয়ে বললো,
– “হে আল্লাহ? তুমি এই কার পাল্লায় এনে ফেলেছ আমাকে? এর চাইতে আমার জাস্ট ফ্রেন্ড অনেক ভালো,ভদ্রলোক আপনার জানেন তো অনেক কিছু শেখার আছে তার কাছ থেকে।”
– “হুমম! আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ও অনেক ভালো মেয়ে,যদি বলো তো তার পা ধোঁয়া পানি এনে দেই তোমাকে?” মিম গাল ফুলিয়ে বলল,
.
– “ইসস? এতো ঢং আপনার কোই থেকে আসে?” ইমান চোখ রাঙালো,মিম মুখ ভেংচে চলে গেলো সেখান থেকে,
রাতে অনুষ্ঠানে মিম আসার পর ইমাদ সাহেব ওকে বললো,
– “আম্মু আজ তুমি একটা ডুয়েট গাও ইমানের সাথে।” মিম হাসতে হাসতে বোকাবোকা মুখ করে বলে,
– “ডুয়েট কি স্যার? ডুয়েট বলে কাকে?” অফিসারেরা সবাই হাসতে লাগলো,ইমান মিম’কে ঝাড়ি মেরে বললো,
– “আমি গান গাই না যারতার সাথে।” মিম বললো,
– “আমার ক্ষেত্রেও সেইম জনাব! আমি আসি? আল্লাহ হাফেজ?”
– “ঠিক আছে।” ব্রিগেডিয়ার উল্লাস দু’জনের কাণ্ড দেখে হাসতে হাসতে ইমান’কে বললে,
– “আরে ভাই,তুমি কেন পায়ে পা বেঁধে ঝগড়া করো ওর সাথে?” মিম পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বললো,
– “বাড়িতে বউ নেই তো? তাই শুধুশুধু ঝগড়া করতে ইচ্ছে হয় কচিকাঁচা দেখে!” মিমের কথা শুনে ইমান বড়বড় চোখ করে তাকালো,মিম সাথে সাথে কেটে পরলো ওখান থেকে।জেনারেল ইমাদ সাহেব হাসতে হাসতে ইমান’কে বললেন,
– “তুমি যে ওকে না জানিয়ে সবটা করেছ,তাই তার একটু গোস্বা হয়েছে।” ইমান ভ্রু কুঁচকে বললো,
– “আমি কি ওর জামাই লাগি স্যার! যে সবটা বলে করবো ওর কাছে?”
– “দেখ বাবা! কেস তোমরা দু’জনে মিলে সল্ভ করেছ,তাই একটু অন্তত তুমি বলতে পারতে ওকে?” ইমান মিটিমিটি হেসে বললো,
.
– “হ্যাঁ, স্যার! আমি ওর জামাই,বলে নেওয়া উচিত ছিলো ওর কাছে।ইসস,বউ টা আমার কত কষ্ট পাচ্ছে?” ইমানের কথা শুনে ব্রিগেডিয়ার উল্লাস হাসতে হাসতে জেনারেল ইমাদ সাহেব কে বললেন,
– “দিন দিন ছেলেটার ছেলেমানুষী বেড়ে যাচ্ছে।” ইমান উঠে হাঁটতে হাঁটতে নিজের ঘরে চলে এলো,ছাঁদে পায়চারী করতে করতে সিগারেট টানছে।মিম আনমনে ছাঁদে বসে পা ঝোলাচ্ছ আর ওর সেই বন্ধুর কথা ভাবছে।হঠাৎ তার নাকে সিগারেটের তীক্ষ্ণ গন্ধ টা এসে লাগতেই,সে দু’হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে বিরক্তির ভাব নিয়ে বলে,
– “আরে এই ছাইপাঁশ কে খাচ্ছে?” ইমান হঠাৎ ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে এসে মিমের কথার উওরে বলে,
– “আমি খাচ্ছি তোমার কি সমস্যা হচ্ছে?” মিম বললো,
– “আপনার তাতে কি? আপনার তো জেনে-বুঝে মরার শখ জেগেছে?” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “আমি মরলে আমার জন্য কাঁদার কেউ নেই হয়তো আমার বান্ধবী টা কষ্ট পাবে?” পাশাপাশি ছাঁদ হওয়ায় মিম এগিয়ে এসে ইমানের হাত থেকে আচমকা সিগারেট নিয়ে ফেলে দিয়ে বলে,
– “আপনার হঠাৎ কি হয়েছে?”
– “তোমার কি?”
– “না বলুন আমাকে?”
– “বলবো না! সিগারেট টা কেন ফেলে দিলে আমার হাত থেকে?”
– “ধূমপান মৃত্যুর কারণ।” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “মৃত্যুর ভয় কার আছে? সবাই জেনেই সিগারেট খাচ্ছে,কেউ অজানা নয় মিম।”
– “ঠিক আছে,কিন্তু আপনি….? আপনি কেন অবুঝ হয়ে থাকছেন?।
– “কৈফিয়ত দিতে আমি বাধ্য নই তোমাকে।” মিম চুপ করে তাকিয়ে রইলো,ইমান পকেট থেকে আরেকটি সিগারেট বের করে ধরিয়ে ফেললো সাথে সাথে,
মিম লাইটার সহ তখন সিগারেট টা ইমানের হাত থেকে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয় ওপর থেকে।ইমান উচ্চশব্দে হাসতে লাগলো,মিম রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেলো নিচে।কিছুক্ষণ পর,
মেজর কিয়ান এসে ইমান’কে নিচে নিয়ে এলো,ও আমতা আমতা করে বললো,
– “বড় ভাই,আমার মনে হয় মিম পছন্দ করে আপনাকে।” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “পছন্দ করে,সে তো আমিও করি ওকে কিন্তু সে আমাকে ভালোবাসে না,ভালোবাসে না আমাকে।” কর্নেল বিহান,ইমানের বন্ধু বললো,
.
– “চল! আজ ট্রুথ আর ডেয়ার খেলবো সবাই মিলে এক সাথে বসে।” ইমান ঝটপট রাজি হয়ে গেলো,তারা সবাই মিলে খেলতে বসে গেলো মাঠে।অবশেষে ইমানের সময় এলো,তারা সবাই মিলে ওকে ডেয়ার দিলো মিমের ওড়না চুরি করে নিয়ে আসতে হবে।ইমান রাগে কাঁপতে কাঁপতে বিহান’কে বললো,
– “তোর পিটুইটারি গ্লান্ডে টিউমার ধরা পেরেছে?” বিহান মিটিমিটি হেসে বললো,
– “আরে ভাই তুই ডেয়ার বেছে নিলি আর এখন কথা শোনাচ্ছিস আমাকে?” কিয়ান চোরচোর ভাব করে ইমান’কে বললো,
– “বলছি ভাই,এই চক্করে আপনার প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে যাবে।না মানে,আপনাকে যা ইচ্ছে তাই বলে দেয়,আপনি ভালো মানুষ কিছু বলেননা ওই দুষ্টু মেয়ে টা কে?” ইমান সবার কথা শুনে রাগে ফুঁসতে লাগলো আর তাই রাজি হয়ে গেলো কি ভেবে?কিছুক্ষণ পর,
ইমান দেখতে পেলো,মিম অডিটোরিয়াম থেকে বেড়িয়ে ধীর পায়ে এক পা একা পা করে এগিয়ে যাচ্ছে গার্লস কোয়ার্টারের কাছে।তবে মিম যখন ফুল বাগানের কাছে এলো,তখন হঠাৎ কেউ চেপে ধরে ফুল বাগানের মধ্যে নিয়ে এলো তাকে।মিম অন্ধকারে ভয় পেয়ে ছটফট করতে লাগলো,তখন কেউ ওর ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলো এই সুযোগে।মিম নিজেকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু লোকটা ওকে খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে।অতঃপর মিম হাল ছেড়ে দিলো লোকটা,ওকে ছেড়ে ছিটি বাজাতে বাজাতে চলে গেলো পূব দিকে।মিম রুমে এসে আয়নার সামনে গালে হাত দিয়ে বসে রইলো,মনেমনে বললো,
– “এমন খারাপ কাজ টা কে করলো আমার সাথে?” এদিকে ইমানের কাছে কোনো ওড়না না দেখতে পেয়ে বিহান বললো,
.
– “কি ব্যাপার? কিছু না নিয়েই চলে এলি মেয়েটির কাছ থেকে?” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “আমি ইভটিজার নই ভাই,একটু ভেবেচিন্তে কথা বল আমার সাথে আর ও একটা বাচ্চা মেয়ে,আমি কি করে লজ্জায় ফেলতে পারি তাকে?” বিহান বিড়বিড় করে বললো,
– “এটাও সম্ভব? কিন্তু অবিশ্বাস করার উপায় নেই ছেলে টা কে।” মিম’কে চুপচাপ দেখে সারা বললো,কি করে দু’দিন পর থেকেই অনুষ্ঠান শুরু তোর হঠাৎ কি হয়েছে? মিম কাওকে কিছু বললো,চুপচাপ কাঁথা কম্বল মুড়ি দিয়ে বিছানার এক কোণে পরে আছে।মাঝরাতে হঠাৎ ও এক লাফে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো,তখন লেইলা জিজ্ঞেস করলো,
– “তোমার কি হয়েছে?” নীলাসা মিমের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল,
– “তেমন কিছুই না, ও হয়তো কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছে!”
.
চলবে,,,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com