Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব – ২২
কিছুই না,নিজের প্রতি যত্নশীল হও আর খেয়াল রাখো নিজের দিকে!” মিম ঝাড়ি মেরে তাকে বললো,
– কেন?”
– “কারণ কেউ একজন সবসময় তোমার ভরসায় বসে আছে।সে যাই হোক,কি অবস্থা তোমার? সবসময় একটা না একটা বিপদ-আপদ তোমার পেছনে লেগেই থাকে।”
– “হ্যাঁ তো? আপনার কি তাতে?” ইমান বিড়বিড় করে বললো,
– “আর একটু বড় হও খুকি! তারপর আমি বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে বিয়ে করবো তোমাকে।” মিম কৌতুক করে বললো,
– “কেন বাংলাদেশে কি মেয়ের অভাব আছে?” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “আমি যদি আমার মন টা খুলে তোমাকে দেখাতে পারতাম ,তাহলে বুঝতে পারতে আমার মনে তোমার জন্য ঠিক কোন জায়গা টা তুলে রাখা আছে?” মিম লজ্জ পেয়ে বললো,
– “আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি সাহেব,বাদ দিন না! ইট’স ওকে?”
– “কেন বাদদেব? তুমি কি কথা বলতে চাও না আমার সাথে?” মিম টেবিলের সাথে কপাল ঠুকে বললো,
– “আরে ভাই বললাম তো,সামনে আমার একজন অফিসার দাঁড়িয়ে আছে?” ইমান আরচোখে চেয়ে মিম’কে দেখে বললো,
– “আরে এই কি সেই লোক নাকি? যার জন্য সবসময় তোমার মেজাজ খারাপ থাকে?” মিম বলল,
– “হুমম! মাঝেমধ্যে মন চায় খুব করে ধরে পেটাই ওই মানুষ টা কে।”
– “কেন?”
– “আপনার মতোই ওনার ও মাথায় সমস্যা,ওনা কে ও আপনার সাথে একযোগে পাবনা পাঠাতে হবে।” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “তাই বুঝি? আমিও যেতে রাজি,তুমি ও চলো আমার সাথে?” মিম বললো,
– “কচু! দয়া করে ফোন টা রাখুন,বললাম সেই জল্লাদ অফিসার টা সামনে দাঁড়িয়ে আছে।” ইমান হাসি সামলে নিয়ে বললো,
.
– “আচ্ছা! ভালো থেকো আর ভুলে যেও না আমাকে।” মিম বললো,
– “কখনো না,এখন যাই? আমার কাজ আছে।” মিম ফোন টা হাত থেকে রেখে সামনে তাকিয়ে দেখে ইমান চেয়ার টেনে ওর সামনেই বসে আছে।ও চমকালো,একটু ভয় পেয়ে বললো,
– “বলুন স্যার! কিছু বলতে এসেছেন আমাকে?” ইমান বললো,
– “না তেমন কিছু না,এতক্ষণ ধরে প্রেম করছিলে জাস্ট ফ্রেন্ডের সাথে?” মিম বলল,
– “কোই? কোই না তো স্যার? এমনিই কথা বলছিলাম আমার এক স্কুল ফ্রেন্ডের সাথে।”ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– ” ও তাই বলো,আমি ভেবেছি কি না কি করছ কার সাথে?” মিম উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
– “ছিঃ! আপনি কি ওই ধরনের মেয়ে বলে মনে করেন আমাকে?” ইমান মুখ তুলে তাকিয়ে বললো,
– “না গো,তোমার ব্রান্ড’ই আলাদা,তোমার তুলনা হয় না কারো সাথে।” মিম চুপচাপ এক গ্লাস পানি খেয়ে নাকিসুরে ইমান’কে বলল,
– “আপনি কি অপমান করলেন আমাকে?” ইমান একটু স্ট্রিক্ট হয়ে মিম’কে বললো,
– “ফারদার এভাবে কারো সাথে অকারণে বকবক করলে আমি শাস্তি দেবো তোমাকে।” মিম ধীরে ধীরে পশ্চিম দিকে ফিরে হাঁটা ধরলো,এবার কে পায় তাকে? এই মুহূর্তে ইমান যেন ওর পথের কাঁটা,ও সামনে না থাকলে যেন মেয়ে টা হাফ ছেড়ে বাঁচে।দেখতে দেখতে দু’মাস কেটে গেছে,
.
মিম এখন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ইমানের তত্ত্বাবধানে ট্রেনিং জয়েন করেছে এই দু’দিন আগে…!
ইমান এবং বেশ কয়েকজন অফিসার মিলে ওকে আবারও তৈরি করে তুলছে নতুন ভাবে।
তবে এর মধ্যে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো,
ইমান খুব স্ট্রিক্ট মেয়েটির সাথে,ভালোবাসার মানুষ হলেও ভুল করলে এক চুল ছাড় দিচ্ছে না
মেয়ে টা কে আর তাই আজ সামান্য একটু ভুল করায় ইমান মিম’কে ঠান্ডার মধ্যে মহিলা
অফিসারদের তাঁবু পাহারা দিতে বলেছে।যদিও মেজর অনসূয়া ওকে একা
পাহারায় রাখতে চায়নি,তিনি বললেন,
– “ইমান স্যার! বলা তো যায় না,বিপদ আপদ কোন দিক থেকে আসে? আর
তাছাড়া এটা জঙ্গল,আমার কেন যেন দুশ্চিন্তা হচ্ছে ওর কথা ভেবে।
” তবুও ইমান নিজের জেদ বজায় রেখে বললো,
– “দেখুন! অনসূয়া,আমি শাস্তি দিয়েছি ওকে।” অনসূয়া ইমানের মুখের ওপরে কথা বলতে
পারলেন না,তাই চুপচাপ শান্ত ভাবে নিজের তাঁবু তে ফিরে এলেন মেজর
লাবণী কাছে।লাবণী কথায় কথায় বলল,
– “ইমান স্যার! এমনিতে বেশ ভালো মানুষ,তবে তার কিছু কাজকর্ম দেখলে
আমার গায়ে রাগ উঠে।” অনসূয়া বললেন,
– “আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছে,কারণ এই জঙ্গলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ আছে।” প্রীতি বলল,
– “চিন্তা করবেন না! মিম অনেক বুদ্ধিমতী মেয়ে আর তাছাড়া বিপদ
বুঝতে পারলে ও সবাই’কে সাবধান করে দেবে।” লাবণী বললো,
– “হুমম! আর তাছাড়া মিম একা তো নয়,মেইল ক্যাডেটরা আছে ওর সাথে
আর আমি যতদূর ইমান স্যার’কে চিনেছি।
আমার মনে হয় না উনি এতো সহজে নজর ছাড়া করবেন না মেয়ে টা কে।
” কথা টা শুনে অনসূয়া বলেই ফেললো,
– “আমার কেন যেন মনে হয় আমাদের কর্নেল সাহেব মিম’কে একটু অন্য
নজরে দেখে?” পেছন থেকে ক্যাপ্টেন মহিমা হাসতে হাসতে বললেন,
.
– “হুমম,রোজ দেখতেই তো পাচ্ছি বকা দেওয়ার মাঝে বেশি আদর করে মেয়ে টা কে…! আর কেন যেন সবসময় আগলে আগলে রাখতে চায়,এই ব্যাপার টা ঠিক হজম হচ্ছে না আমার কাছে?”
– “হ্যাঁ! এমন ও হতে পারে,মিমের চাকরি হওয়ার পর বিয়ের সম্বন্ধ পাঠালো কর্নেল সাহেব ওর বাবা-মায়ের কাছে?
না আসলে বিয়ের কথা উঠলেই জনাব বলেন,সে এখনো ছোটো,পরিপক্বতা এখনো আসেনি তার মাঝে।” অনসূয়া’র কথা শুনে প্রীতি বললেন,
– “এটা হতেই পারে ইমান স্যার পছন্দ করে ওকে! আই মিন,না পছন্দ করার মতো কিছুই নেই কারণ মেয়েটি অনেক গুণী ওর অনেক গুণ আছে।” তখন লেফটেন্যান্ট নাজনীন তাঁবুতে ঢুকতে ঢুকতে বলেন,
– “বলি আমরা কর্নেল সাহেব’কে কথার মাধ্যমে বিয়ের আসরে পাঠালে তো হবে না তাকেও রাজি থাকতে হবে।” তখন হঠাৎ তারা সবাই শুনতে পেলো,বাহিরে কেউ বা কারা যেন বলাবলি করছে,
– “দেখে এলাম,ইমান স্যার! খাবার খাওয়ানোর জন্য জোরাজুরি করছে মিমের সাথে।” কথা টা শুনেই লেফটেন্যান্ট নাজনীন বাহিরে এসে দেখেন,ঠিক যা শুনেছে তাই,ইমান মিম’কে খাবার খাওয়ানো জন্য জোরাজুরি করছে।মিম বললো,
.
– “স্যার,আপনি জান না প্লিজ! আমি খেয়েছি,মাংস ভাত খেয়েছি সন্ধ্যা ছয়টার দিকে।” ইমান চেয়ার টেনে মিমের সামনে পায়ের ওপরে পা তুলে বললো,
– “কখন খেয়েছ? কোই আমি তো খেতে দেখিনি তোমাকে?”
– “কিন্তু স্যার…আমি খেয়েছি,আমি কেন মিথ্যে বলবো আপনাকে?” ইমান বলল,
– “বলতেই পারো! এমন ও হতে পারে তুমি রাগ করেছ আমার সাথে?” মিম মনেমনে ওপরে হাত তুলে বললো,
– “হে আল্লাহ,তুমি আমাকে রক্ষা করো,এই লোকটির হাত থেকে…!
উনি এমন কেন? নিজেই শাস্তি দিবে আবার নিজেই এসে ঔষধ লাগিয়ে দেবে নিজের হাতে।” মিমের চেহারা দেখে লেফটেন্যান্ট নাজনীন এসে বললেন,
– “ওকে যেতে দিন কর্নেল সাহেব! ওর পানিশমেন্ট পালন করতে দিন মেয়েটি কে….
আমরা না হয় এখানে বসে গল্প করি? আগুনের তাপ নিতে নিতে।” সাথে সাথেই ইমান বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো,
– “আমার দায়িত্ব-কর্তব্য কি আপনি বুঝিয়ে দেবেন আমাকে? মিম আমার দায়িত্বে আছে মানে ওর দেখাশোনা ও যত্ন সহকারে আমাকেই করতে হবে।” নাজনীন বললো,
– “আপনার মনে হয় না কর্নেল সাহেব,আপনি একটু বেশিই যত্ন করছেন ওই মেয়ে টা কে…!”
– “তা নিয়ে আপনার কোনো মাথা ব্যাথা থাকার কথা না,মিম! তুমি চলো আমার সাথে।” মিম ভয়ে ভয়ে ইমান’কে বললো,
.
– “স্যার! আপনি এভাবে কেন আমাকে নিয়ে এলেন নাজনীন ম্যামের সামনে থকে?” ইমান বলল,
– “চুপচাপ এই খাবার গুলো খেয়ে নাও,নয়তো তোমার কপালে শনি নাচছে ঠিক আছে?” মিম চুপচাপ ফল গুলো ওভার কোটের পকেটে ঢুকিয়ে নিলো,ফিসফিস করে ইমান কে বললো,
– “খিদে পেলে খেয়ে নেবো স্যার!”
– “ঠিক আছে।” তারপর মিম তাঁবু পাহারা দিতে তাঁবুর সামনে টুল নিয়ে বসে পরলো,নাজনীন এসে রাগী গলায় মিম’কে বলল,
– “তোমাকে ব্রিগেডিয়ার আনোয়ার ম্যাম ডাকে।” মিম ব্রিগেডিয়ার আনোয়ারা কাছে এলো,উনি বলল,
– “তুমি এখানে বসে পাহারা দাও! এখানে আগুন ও আছে।” মিম টুল নিয়ে চুপচাপ তাঁবুর সামনে বসে পারলো,কিছুক্ষণ পর,
পরিবেশ একদম শান্ত হয়ে গেছে ও কি ভেবে উঠে কাঁটাবনের দিকে এগিয়ে গেলো?
তখন কেউ একজন ওর মুখ চেপে ধরলো পেছন থেকে…! এরপর ওকে তাঁবুতে এনে ফেলে দেওয়া হলো,মিমের চোখ যখন খুললো,দেখতে পেলো ইমান ওর দিকে কিঞ্চিৎ ঝুঁকে আছে।ও কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইমান বলল,
– “চুপ! এখন ঘুমাও,জানো কত রাত হয়েছে? আর যে ঠান্ডা পরছে তাতে আর পাঁচ মিনিট বাহিরে থাকলে তুমি জমে কুলফি হয়ে যাবে।” মিম বললো,
.
– “হুমম তো? আপনার কি তাতে?” ইমান মিম’কে জড়িয়ে ধরে বলল,
– “আরে ঘুমাও,ঘুমাও! আমার মতো করে বোধহয় কেউ কখনো ভালোবাসেনি তোমাকে?
” মিম রেগে গিয়ে চুপচাপ চোখবুঁজে ইমানের কোলের মধ্যে শুয়ে রইলো,ইমান নিজের চোখবুঁজে ফেললো স্বস্তিতে…! তবে পরক্ষণেই,
একটা পাগল করা মিষ্টি গায়ের গন্ধ মাতাল করে তুললো মেয়ে টা কে…! মিম এগিয়ে এসে ইমানের গলা জড়িয়ে ধরে ওর গায়ের গন্ধ নিতে লাগলো,ইমান মিটিমিটি হেসে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ওকে।মিম ঘুমিয়ে গেলো,যখন ও চোখ খুললো,তখন প্রায় সাড়ে চার টা বাজে।
.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com