Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব – ০৭
কথা দিচ্ছি! এবার আর আমি ছাড়বো না কাওকে,প্রয়োজনে আমি ওদের মা’র খাওয়াবো,তবু্ও কথা বেড় করে ছাড়বো এক একজনের মুখ থেকে।” সকালে যখন মিমের চোখ খুললো,ও নিজেকে আবিষ্কার করলো নিজের রুমে,নিজের বিছানাতে,ও যখন বিছানা ছেড়ে উঠতে চাইলো স্বর্ণা ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
– “ধীরে ধীরে নাম পায়ে লেগে যাবে!”
– “কিন্তু?”
– “কি কিন্তু? পায়ে লেগেছে তোর,হাতে ক্যানোলা লাগানো আছে,স্যালাইন চলছে,ডক্টর রিজভী প্রপার বেড রেস্ট দিয়েছে তোকে।”
– “তাহলে ইমান স্যার! সে কেমন আছে?” নীলাসা বললো,
– “কপালে লেগেছিল তার শক্ত-সামর্থ্য মানুষ একদম ঠিক আছে।” মিম তবুও কথা শুনলো না,স্যালাইন শেষ হতেই ব্যস্ত হয়ে ছুটে গেলো নিচে,তবে ইমানের কেবিনে ঢুকত গিয়ে হঠাৎ ওর সিলভানার সাথে ধাক্কা লেগে যায়,তখন কোনো ভাবে লেগে যায় সিলভানার হাতে।মিম ভয় পেয়ে সিলভানা’র কাছে ক্ষমা চাইতে লাগলো,তখন ইমান যাচ্ছেতাই বলে,অপমানজনক কথা বললো ওকে।ন্যান্সি এসে মিম’কে ধরে কোয়ার্টারে নিয়ে আসে,তারপর ব্যাপার টা খুলে বলে সবার কাছে।সারা সব টা শুনে ভ্রু কুঁচকে বললো,
– “কেমন মানুষ?”
.
– “সেটাই সামান্য কৃতজ্ঞতা বোধ নেই লোকটার মাঝে?” মারিয়া বলো উঠলো,
– “মরলে ঝাড়বাতি পরে মরতো মিম কে বাঁচাতে বলেছিল তোকে?” মিম রিল্যাক্স’ড হয়ে বললো,
– “আরে বাদদে না ভাই,ইট’স ওকে?”
– “মানে কি? কি ইট’স ওকে? ওনাকে বাঁচতে গিয়ে তোর পায়ে লেগেছে সেটা কি ভুলে গেলে হবে?” মিম বললো,
– “আরে ভাই ধরে নে না! আমার উছিলায় আল্লাহ তাআ’লা বাঁচিয়ে দিয়েছে মানুষ টা কে?” প্রিয়ম বললো,
– “তবুও! বদমেজাজি হলেও ভালো মানুষ ভেবে ছিলাম ওই মানুষ টা কে।”
– “তাতে কি? শোন না অনলাইনে অর্ডার করেছিলাম,গিয়ে দেখ না পিৎজা টা বোধহয় এতক্ষণে এসে গেছে?” তখন শফিক স্টাফ এসে মিম’কে বললো,
– “শুধু পিৎজা না মা! তোমার জন্য একটা উপহার ও এসেছে তোমার বাসা থেকে।” মিম চমকালো,লেইলা এনে বক্স টা দিলো মিমের হাতে,মিম কৌতূহল নিয়ে বক্স টা খুললো,খুলে দেখলো,খুব সুন্দর একটা গিটার রাখা আছে আর তখুনি নাফিম সাহেব ফোন করলেন মেয়ের কাছে জিজ্ঞেস করলো,
– “মা উপহার টা কেমন লেগেছে?” মিম বললো,
– “অনেক সুন্দর বাবা! অনেক অনেক ভালোবাসি তোমাকে।”
– “তুমি ঠিক আছো মা?”
.
– “ঠিক না থাকার মতো কি হয়েছে?” নাফিম সাহেব বললেন,
– “আমি জানি মা,তুমি ঠিক নেই,একদম ঠিক নেই,কষ্ট হলে চলে এসো আমাদের কাছে।আমি আমার সন্তান হারাতে চাই না।” মিম নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
– “প্লিজ বাবা! তুমি এই ব্যাপারে কিছু বলো না মা’কে।”
– “কিন্তু আমি যে দিনদিন অসুস্থ হয়ে পরছি তোমার কথা ভেবে?”
– “পরবে না বাবা! আমার বাবা তুমি,তোমাকে স্ট্রং হতে হবে।” নাফিম সাহেব হাসতে হাসতে বললেন,
– “আই এম প্রাউড অব ইউ মা! আমি জানি,তুমি পারবে এই সমস্যার গভীরে যেতে।”
– “আচ্ছা বাবা! একটা কথা বলো তো? এই ব্যাপারে কে বলেছে তোমাকে? আমি যদি বলি সারা?”
– “হ্যাঁ মা! আমি জোড়াজুড়ি করেছিলাম সারা মা’কে।” মিম চোখ পাকিয়ে সারা’কে বললো,
– “পেট পচা আজ তোর হচ্ছে” সারা ছুটে গিয়ে বাথরুমে দরজা লাগিয়ে বলে,
– “আমি কিছু জানি না,আঙ্কেল নিজেই সন্দেহ করে আমাকে ক’দিন ধরে জিজ্ঞেস করছে।” ওপাশ থেকে নাফিম সাহেব হাসতে হাসতে মেয়ে’কে বলেন,
– “থাক মা! তুমি বকা দিয়ো না ওকে।” মিম বললো,
– “আচ্ছা বাবাই! তুমি প্লিজ কিছু বলতে যেও না মা’কে।”
– “সাবধানে থেকো মা! আর একা কোথাও যেও না।”
– “আচ্ছা বাবা! ঠিক আছে।” তারপর ফোন টা বালিশের পাশে রেখে নাফিম সাহেব স্ত্রী’র মুখের দিকে তাকালেন,নাছিমা মৃদু হেসে তার কাঁধে মাথা রেখে বললেন,
– “মেয়ে টা একদম তোমার মতো হয়েছে।” নাফিম সাহেব বললেন,
– “ভয় পেয়ো না,ভরসা রাখো,ওপরে আল্লাহ তাআ’লা আছে।” তারপর নাছিমা বেগম উঠে তাহাজ্জুদের নামাজ টা পড়ে নিলেন,কেননা তার খুব ভয় হচ্ছে মেয়ের কথা ভেবে।মোনাজাতে দু’হাত তুলে তিনি আল্লাহ তাআ’লা কে বললেন,
.
– “আল্লাহ তুমি আমার মেয়ে টা কে ভালো রেখো,কোনো কষ্ট পেতে দিয়ো না ওকে,ওর সমস্ত বিপদ-আপদ কাটিয়ে ওঠার শক্তি তুমি ওকে দিয়ো,সবসময় হাসিখুশি রেখো আমার চঞ্চল স্বভাবের মেয়ে টা কে।” নাফিম সাহেব নামাজ শেষ করে উঠে এসে স্ত্রী’র পাশে বসে বললেন,
– “এভাবে কাঁদছ কেন তুমি? কাঁদলে কি সমস্যার সমাধান হবে?
– ” তুমি কি বুঝতে পারছনা আমাদের মেয়ে টা অসুস্থ? ও ওখানে অযত্নে আছে?”
– “নাছিমা শান্ত হও,আমার কথা শোনো,ভেঙে পোড়ো না এভাবে।” নাছিমা চোখের জল মুছতে মুছতে বললেন,
– “আমি আমার মেয়ের সাথে কথা বলতে চাই,এখুনি কথা বলতে চাই আমি ওর সাথে।” মাঝরাতে বাবার ভিডিও কল দেখে মিম চমকালো,সাথে সাথে ফোন রিসিভ করে জিজ্ঞেস করলো,
– “বাবা মা ঠিক আছে?” নাছিমা অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে হাসিমুখে বলল,
– “জ্বি,মা! শুধু খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোমাকে,কত দিন ধরে দেখি না,বুকে জড়িয়ে নেই না তোমাকে।” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “আমি একদম ঠিক আছি মা! এতো অস্থির অস্থির লাগছে কেন তোমাকে?”
– “তেমন কিছু না বাবা!”
– “দুঃস্বপ্ন দেখেছিলে রাতে?”
– “হুমম,ভয় পেয়ো না মা! সব ঠিক হয়ে যাবে।” নাছিমা খুশি মনে বললেন,
– “জ্বি,মা! ঘুমাও তুমি কত রাত হয়ে গেছে।” মিম বললো,
– “লাভ ইউ মা!”
.
– “হুমম,মা! খুব ভালোবাসি তোমাকে।” নাফিম সাহেব ফোন টা রেখে নাছিমা’কে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– “আরে মেয়ের সাথে কথা বলেও শান্তি হয়নি? এখনো কাঁদছ এভাবে?” নাছিমা বেগম বললেন,
– “তুমি তো আর পেটে ধরনি? তুমি কি করে বুঝবে কেমন লাগে?” হঠাৎ নাফিম সাহেবের চোখ দু’টো লাল হয়ে গেলো,বলল,
– “এর মানে এই নয় যে আমি ভালোবাসি না ওকে,ও আমার সন্তান।”
– “ক্ষমা করে দাও আমার ভুল হয়ে গেছে।” নাফিম সাহেব হাসতে হাসতে বললেন,
– “আরে বাদদেও,ঘড়িতে দেখেছ ক’টা বাজে? মেয়েটা আজ বাড়িতে থাকলে এসে দু’জন কে বকা দিতো।”
– “হুমম,তারপর এসে শুয়ে পারতো আমাদের কাছে।” সকালে যখন মিমের চোখ খুললো,দেখতে পেলো,ইমান কাইছেই বসে আছে,জিজ্ঞেস করলো,
– “কেমন আছো তুমি?”
– “আল্লাহ তাআ’লা যেমন রেখেছে আমাকে।”
– “আমি কেস রিলেটেড কিছু কথা বলতে এসেছিলাম।”
– “তবে আমি বলতে চাই না আপনার সাথে,আপনি কি চান? কিছুই আমার বোধগম্য হচ্ছে না এমন নয় তো আপনি জড়িয়ে আছেন এই পুরো নোংরা খেলাটির সাথে?” ইমান কিছুটা ঝুঁকে মিমের খুব কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,
– “আমি হলে আর বাঁচিয়ে রাখতাম না তোমাকে।”
.
চলবে,,,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com