Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব – ০৩
বান্ধবী,তোর এলেম আছে।” সারা,প্রিয়ম ওরা হাসতে হাসতে বলল,
– “হ্যাঁ,দেখ গিয়ে ছেলে দু’টো চিৎপটাং হয়ে বিছানায় পরে আছে। মিম বললো,
– ” একবার খবর পাই কাদের কাজ? তারপর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার জন্য আমাদের ইমাদ স্যার আছে।” তখন জাহিন মিমের সামনে থেকে হেঁটে যাচ্ছিল,মিম ওর সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
– “ব্রো! আপনার থোবড়া খানা ফুলে গেলো কিভাবে?” জাহিন ঘাবড়ে গিয়ে থতমত খেয়ে মিম’কে বললো,
– “তেমন কিছু না জাস্ট কেমনে যেন লেগে গেছে?” মিম ধূর্ত হাসলো,ইমান হঠাৎ মিমের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো,
– “বকবক না করে যাও,গিয়ে তৈরি হয়ে আসো।তোমাকে নিউরোসার্জনের কাছে যেতে হবে।” মিম তৈরি হয়ে এসে বললো,
.
– “তার নাম কি? নাম বলুন আগে।”
– “সে আমার ছোটো বেলার বন্ধু,বাংলাদেশের নাম করা নিউরোসার্জনের মধ্যে একজন গেলেই দেখতে পাবে।” মিম মনেমনে বললো,
– “আপনার বন্ধু যখন,তখন আপনার মতোই তার মাথা খারাপ কিংবা মাথা ভাঙা হবে?” ইমান বলল,
– “কি এতো বিড়বিড় করছ? যাও গিয়ে বসে পরো ব্যাক সিটে।” গাড়িতে বসার পর ইমান খেয়াল করে দেখে মিম ধীরে ধীরে কাঁপছে ওকে দেখে,ইমান মনেমনে বলল,
– “এই নাকি আমাকে ভয় পায় না? এখন যে খুব ভয় পাচ্ছে আমাকে দেখে?” নীলাসা মিম’কে ধরে দু’জনের মাঝে বসে আছে।তবে নিউরোসার্জন ধীমান চৌধুরীর চেম্বারে আসার পর উনি মিম’কে দেখেই বলে,
– “আগে ওর সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে।” ধীমানের এ্যাসিস্ট্যান্ট সাফওয়ান মিম’কে সাথে করে টেস্টের জন্য ল্যাবে নিয়ে যায় নিজের সাথে,নীলাসা ও ছিল,কারণ ওর একা একা বসে থাকতে ভালো লাগ ছিলনা ধীমান চৌধুরী এবং ইমানের সাথে।ধীমান উঠে এসে প্রিয় বন্ধু’র পিঠে হাত রেখে বলে,
– “কি রে ভাই বিয়েটিয়ে করবি কবে?” ইমান মৃদু হেসে বললো,
.
– “খুব শীঘ্রই! কথা বলতে যাচ্ছি সিলভানার বাবা-মায়ের সাথে।আসলে মেয়েটা বড্ড লাজুক,তাই ও এখনো আমার কথা বলে উঠতে পারেনি ওর বাবা কিংবা পরিবারে কারো কাছে।” ধীমান একটু চিন্তিত হয়ে বলল,
– “তোর কি মনে হয় ভাই ও বিয়ে করবে তোকে? গত পাঁচ বছর ধরে মেয়েটা তোকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে আর তুই কি করে চোখ বন্ধ করে অন্ধ বিশ্বাস করতে পারিস মেয়ে টা কে?” ইমান বললো,
– “এতো ভাবিস না ভাই তুই,তুই শুধুশুধু ভুল বুঝিস না মেয়ে টা কে।” মিমের সমস্ত টেস্ট রিপোর্ট দেখে ধীমান বলে,
– “ভয়ের কোনো কারণ নেই বন্ধু,মেয়েটি একদম ঠিক আছে।তবে যেহেতু মাথা শরীরের একটি সেনসিটিভ অংশ,তাই এই শীতের দিনে একটু কষ্ট হবে আর ক্ষত টা তেমন গভীর না,তাই এক দেড় মাস রেস্ট করলেই সুস্থ হয়ে যাবে।” মিম বলল,
– “ডক্টর আমি কি ট্রেনিং এ ফিরতে পারবো না?”
– “পারবে,তবে সুস্থ হতে নিজেকে একটু সময় দিতে হবে।” মিম হাসপাতাল থেকে ফেরার পর একদম চুপচাপ,মন খারাপ করে বসে আছে,ইমাদ সাহেব এসে মিম’কে আশ্বস্ত করে বললেন,
– “মা ভয়ের কোনো কারণ নেই,তোমাকে আলাদা ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।” মিম হাসলো,একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
– “আচ্ছা স্যার, ঠিক আছে।”
রাতে,জেনারেল ইমাদ চৌধুরী সমস্ত অফিসারদের ডেকে পাঠালেন জরুরী ভিত্তিতে,বললেন,
– “আপনারা থাকতে এতো বড় গাফিলতি কি করে হয়? তাও আবার গার্লস কোয়ার্টারে মেয়েদের সাথে?”
– “স্যার!”
.
– “কি স্যার? বোকাবোকা মুখ করে তাকিয়ে আছেন কেন আপনারা সবাই আমার মুখের দিকে? মিম কি ভুলে বলেছিল? বরং আমাদের ভুল গুলো মেয়েটি ধরিয়ে দিয়েছে গতকাল হাতেনাতে আর ইমান!
কালকেই দু’টো ক্যামেরা লাগাবে,বিশ্বস্ত সব লোকজন ডেকে পাঠাও একাডেমিতে।আমি আর কোনো অভিযোগ শুনতে চাইনা,দায়িত্বে গাফিলতি বরদাস্ত করবো না কোনো ভাবে।” সাথে সাথে সবাই নিচু স্বরে বলে উঠলো,
– “জ্বি,স্যার! ঠিক আছে।” রাতে ইমান দেখতে পেলো মিম একা একা ঘুরঘুর করছে ছাদে আর তখন হঠাৎ ছায়া এবং বিথী এসে মিম’কে বলল,
– “তুমি শুধুশুধু কেন ঝামেলায় জড়াচ্ছ আমাদের সাথে?” মিম দৃঢ় গলায় বলল,
– “আপু তোমরা শুধুশুধু সময় নষ্ট করছ আমার সাথে কারণ আমি এতো সহজে বিষয় টা কে যেতে দেবো না।
তাই আমার রাস্তা ছেড়ে দাও নিজেদের ভদ্রতা বজায় রেখে।” কিছুক্ষণ পর, স্টাফ শাহিন এসে ইমান’কে বললো,
– “স্যার ফরেনসিক রিপোর্ট এসেছে একটু আগে।ফুলদানির গায়ে লেগে থাকা ব্লাড মিমের,তবে নারকেল গাছের গায়ে লেগে থাকা ব্লাড হামলাকারীর কিংবা তার সঙ্গী সাথীর হবে?” ইমান বললো,
– “এমন কি হতে পারে? যে ওই লোকটা শারীরিক সম্পর্ক করতে এসেছিল মেয়েদের সাথে? মিম বলেছিল,উলঙ্গ অবস্থায় দেখেছিল,তবে কি শুধু এটাই কি তার উদ্দেশ্য? না কি অন্যকিছু? কি চায় ওই লোকটা মেয়েদের কাছ থেকে?”
– “আমি বলি কি স্যার? আপনি মিমের সাথে কথা বলে দেখুন,ও আপনা’কে ধীরে ধীরে অনেক তথ্য দেবে আর যেহেতু ও বলছে কিছু ক্লু মিস হয়ে যাচ্ছে? ও ডেফিনিটলি নিজের তরফ থেকে রহস্য উদঘাটনের পুরোপুরি চেষ্টা করছে?”
.
– “তবুও শাহিন এখানে একটা ‘কিন্তু’ আছে? মিম এবং ওর রুমের মেয়েরা বাদে সবাই বেশ রিল্যাক্সড। তার মানে কি তারা সবাই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছে? এতো দিন বিষয়টি মিমের কিংবা কারো চোখে পরেনি,তাই সবটা ধোঁয়া সায় রয়ে গেছে?”
– “আল্লাহ না করুক তারা আবার মিমের ক্ষতি করার চেষ্টা করলো স্যার! তখন কি হবে? ইমান ঘোড়ার আড়াই কোটের চাল দিতে দিতে বললো,
– ” এতো ভেবো না শাহিন,ইমান খান এতো কাঁচা কাজ করে না।
– “জ্বি,স্যার! ঠিক আছে!” সকালে ইমান বেরিয়ে পরলো তার একটা জরুরী কাজে,কাজ শেষ করে একাডেমিতে ফিরে এসে দেখে মিম যেন কি একটা ভাবছে? আর চুপচাপ একা একটা নির্জন জায়গায় বসে আছে।হঠাৎ ও কি ভেবে প্রিয়ম’কে ফোন করে বলে,
– “তাড়াতাড়ি খাতা,পেন্সিল আর রাবার নিয়ে আয় আমাকে কিছু স্কেচে’স তৈরি করে দেখতে হবে।” মিমের আঁকিবুঁকি শেষ হতেই হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন এসে জিজ্ঞেস করলো,
– “এই স্কেচ গুলোতে কি বিশেষ কিছু কিংবা কেস রিলেটেড কিছু আছে?” মিম ঘাড় ঘুরিয়ে ইমান’কে বলল,
– “এখন এই মুহূর্তে সিওর হয়ে কিছু বলতে পারছিনা,কারণ আমাকে এই কেস টা নিয়ে স্টাডি করতে হবে।”
সকালে ইমান নিচে এসে দেখে সেই স্কেচ
.
গুলো নিয়ে মিম জেনারেল ইমাদ সাহেবের কাছে বসে আছে।ইমান সেগুলো দেখতে চইলো,মিম বলল এখনো কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।ইমান অবাক হলো,মনেমনে বলল,
– “মেয়েটা কি ইগনোর করছে আমাকে?” মিম ইমাদ সাহেব’কে হাসিমুখে বলল,
– “এখন উঠে স্যার? পরে কথা হবে আপনার সাথে?” মিম যেতে ইমান খুব আগ্রহের সাথে জেনারেল ইমাদ সাহেব’কে জিজ্ঞেস করে,
– “প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড স্যার! মিম কি বলে গেলো আপনাকে?” জেনারেল ইমাদ হাসিমুখে বললেন,
– “কেন? তোমাকে বলেনি সে? এই কথা গুলো তোমার এসে আমাকে বলার কথা ছিল ইমান! যাগগে মিম নতুন দু’টো সি.সি.টিভি লাগাতে বারণ করেছে।”
– “মানে?”
– “এই বিষয়টি মিম কোনো ভাবে এড়িয়ে যেতে বলছে,যাকে বলে ধামাচাপা দেওয়া নাহলে আমরা ধরতে পারবো না আসল অপরাধী’কে।”
– “আপনার কি মনে হয় স্যার!”
.
– “অনেস্ট ওপেনিয়ন চাইলে বলবো,মিম একদম ঠিক বলেছে,মেয়েটি অনেক বুদ্ধিমতী,নিজে এতো অসুস্থ থাকা স্বত্বেও আমাদের সাথে পুরোপুরি কোয়াপারেট করছে।” ইমান বললো,
– “স্যার ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী ফুলদানির গায়ে লেগে থাকা ব্লাড মিমের ছিল,তবে নারকোল গাছের গায়ে লেগে থাকা ব্লাড অন্যকিছু ইঙ্গিত করছে?”
– “হুমম! বুঝতে পারছি ইমান বাবা,তবে এখন আমাদের সাবধানে এগোতে হবে,কারণ মিমের বিপদ এখনো কাটেনি ওকে অনেক সাবধানে রাখতে হবে এখন পর্যন্ত মিমের ফ্যা-মলি কে এই ঘটনা সম্পর্কে জানানো হয়নি কারণ মিমের মনে হয় ওর আব্বু আম্মু এই সব শুনলে অসুস্থ হয়ে যাবে।”
– “খুব আদরের বুঝি বাবা-মায়ের?”
– “সব সন্তান আদরের হয় বাবা-মায়ের কাছে,ওরা পাঁচ বোন,সবাই খুব আদরে বড় হয়েছে ছোটোবেলা থেকে আর তাছাড়া বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি মতো জায়গায় এমন একটি ঘটনা? এটা কি এক্সপেক্টেড কারো কাছে?” ইমান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
– “স্যার! আমি আপনাকে ওয়াদা করছি আজ,খুব তাড়াতাড়ি এই সমস্যার সুরাহা হবে এবং আমি নিজে বসে ফ্রী হয়ে কথা বলবো মিমের সাথে।”
.
চলবে,,,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com