Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব – ৩৫
বুঝতে পারছি তোমার মাথা টা গেছে।” মিমের কথা শুনে হাসতে হাসতে ইমান বললো,
– “স্বাভাবিক…! কারণ আমার মনে হচ্ছে ডক্টর মাহির তোমাকে ভালোবাসে।” পাশ থেকে তানিয়া বললো,
– “ইমান তোমার ধারণা কিন্তু ভুল না,এই কিন্তু সেই দোকানী চাচার ছেলে বোঝা গেছে?” তানিয়ার কথা শুনে ইমানের চক্ষু চড়কগাছ।মিম বলল,
– “ডোন্ট ওয়ারি…! সে যদি ভালোবেসেও থাকে।আমি কিন্তু ভালোবাসি না তাকে।আমি বরাবর তাকে ভাইয়ের নজরে দেখতাম,কে জানতো এই ভাই আমাকে অন্য নজরে দেখে?” ইমান মিটিমিটি হেসে বললো,
– “তোমার যেখানে সেখানে ঘুরতে যাওয়া বন্ধ…! তুমি শুধু আমার সাথে’ই ঘুরতে বের হবে।” বাহিরে হঠাৎ চিৎকার চেঁচামেচি শুনে মিম বললো,
– “কি ব্যাপার আম্মু…? কি হয়েছে?” মেয়ের উৎকন্ঠা দেখে নাছিমা হাসতে হাসতে বললেন,
– “যাও ইমান’কে নিয়ে তৈরি হয়ে আসো গ্রামে সবাই তোমাদের দু’জন কে দেখতে এসেছে।” মিম ইমান’কে নিয়ে তৈরি নিচে এসে দেখে,নাফিম সাহেব বাগানে চা খাচ্ছেন এবং গল্প করেছেন মেম্বার সাহেবের সাথে বসে।মেয়ে জামাই কে দেখেই তিনি হাসিমুখে উঠে দাঁড়িয়ে মেয়ে’কে জিজ্ঞেস করলেন,
.
– “আম্মু! এখন তোমার শরীর কেমন আছে?” মিম এগিয়ে এসে নাফিম সাহেব কে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “ভালো আব্বু…! তুমি নাকি তৈরি হয়ে নিচে আসতে বলেছিলে আমাদের দু’জন কে?” নাফিম সাহেব বললেন,
– “জ্বি আম্মু…! আসো আজ গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাবো তোমাদের দু’জন কে।” অতঃপর নাফিম সাহেব মেয়ে জামাই কে নিয়ে গ্রাম ঘুরতে বেড়িয়ে পরলেন এবং পুরো গ্রাম ঘুরিয়ে দেখালেন মেয়ে জামাই কে…এরপর ইমান নিজে থেকে গ্রামের লোকজনের সাথে কথা বলতে লাগলো,মিম’কে বললো,
– “জানো,গ্রামের এই সহজসরল লোক গুলোর সাথে মিলেমিশে আমার খুব ভালোই লেগেছে” মিম হাসতে হাসতে বলল,
.
– “তা কি বুঝলে?”
– “বুঝলাম বাবার অনুশাসনের তারা বেশ ভালোই আছে আর বাবা তাদের খুব পছন্দের মানুষ সবাই বাবার এবং তোমাদের অনেক প্রশংসা করছে।” মিম বলল,
– “চলো? বাবা কে সাথে নিয়ে বাসায় ফিরে যাবে? মনে হচ্ছে যেন তোমার দাঁড়িয়ে থেকে থেকে কষ্ট হয়ে যাচ্চে?” ইমান বললো,
– “না গো তেমন কিছুই না,এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালোই লাগছে।” এরপর বাসায় ফিরে এসে নাফিম সাহেব ইমান’কে বললেন,
– “কিছু মনে করো না বাবা…! কষ্ট দিলাম তোমাকে।ইমান বলল,
– ” আমার কষ্ট মনে হয়নি বাবা বরং ভালোই লেগেছে তারপর আপনি যে ধর্ষণ কেসের শালিসি টা করলেন সেটাও আমার যথার্থ বলেই মনে হয়েছে।না মানে,যে ধর্ষক তার সাথে ধর্ষিতার বিয়ে হলে তার জীবন টা কি করে সুখের হবে? যেখানে নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে মেয়েরটির জীবন আগেই ওই ধর্ষক ছেলেটি দূর্বিষহ করে তুলেছে? আমি খুব খুশি হয়েছি বাবা…!
.
আপনি উৎসাহ প্রদান করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার’কে…। আপনি রেইপ কেস করতে বলেছেন,শাস্তির আওতায় আনতে বলেছেন অপরাধী’কে।” নাফিম সাহেব হাসতে হাসতে বললেন,
– “স্বাভাবিক বাবা…! কারণ আমারো পাঁচটি মেয়ে আছে আর কেউ আমার মেয়ের ক্ষতি করতে চাইলে আমি যেমন তাকে শাস্তি দিতাম কিংবা শাস্তির আওতায় আনতাম,ঠিক সেটাই ভয় না পেয়ে আমি করতে বলেছি ভুক্তভোগীর পরিবার’কে…। এবং আমি আমার দিক থেকে পুরোপুরি ভাবে চেষ্টা করবো মেয়ে টিকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতে আর কেউ যাতে মেয়েটি কে কিংবা তার পরিবারপরিজন’কে নিয়ে অশালীন মন্তব্য না করে,এই নিয়ে একদিন আমি বসবো গ্রাম বাসির সাথে।” ইমান নাফিম সাহেবের কথা শুনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে হাসলো,বললো,
– “বাবা এখনো অনেক জিনিস শেখার আপনার কাছ থেকে,আমি নিত্য নতুন জিনিস শিখছি এবং নিজের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করছি আপনাকে দেখে।” তখন নাছিমা হাসতে হাসতে ইমান’কে বললেন,
– “বাবা তোমাদের বাপ-ছেলের দেখাদেখি শেষ হলে খেতে চলে আসো।দু’জনেই না খেয়ে আছো সকাল থেকে।” খেতে বসে ইমান খুব চমকালো,দেখলো,বাটিতে বাটিতে ওর পছন্দের মাছ,মাংস এবং শাকসবজি রাখা আছে।নাছিমা নিজে পাত পেরে বসিয়ে ইমান’কে খাইয়ে দিলো,ইমান বলল,
– “মা আমার আম্মুর কথা খুব মনে পরে যাচ্ছে।” নাছিমা বললেন,
– “আমি কি তোমার মা নই? এক মা নেই তো কি হয়েছে? অন্য আরেক মা তো আছে?” ইমান বললো,
– “আপনারা সবাই অনেক ভালো মা! আর তাই আমার মিম এতো ভালো মানুষ হয়েছে।” মিম বললো,
– “হুমম,বুঝেছি…! আর পটাতে হবে না কাওকে এক এক জনের চেহারাসুরত দেখে মনে হচ্ছে এখুনি কেঁদে ফেলবে।” মিমের কথা শুনে ওর দুলাভাইয়েরা সব হেসেই ফেলেছ তা দেখে মিম মুখ বাঁকিয়ে বললো,
– “দাঁতের দোকান গুলো দয়া করে বন্ধ করুন…! নয়তো মশা-মাছি কিছু একটা ঢুকে যাবে।” এবার সবাই চুপচাপ নেয়না বললো,
.
– “একদম ঠিক হয়েছে।” দেখতে দেখতে,মিমের বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তে যোগ দানের সময় এসে গেছে মিম ইমানের আন্ডারে জয়েন করে বেশ ভালোই আছে,
তবে একদিন মিটিং শেষ করে মিম কনফারেন্স রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে হঠাৎ মাথা ঘুরে পরে যায় সেখান থেকে…।
সাথে সাথেই ওকে সাভার সেনানিবাসের মেডিকেল রুমে নিয়ে আসা হয়।ডক্টর আসাদ মিমের চেকআপ করে বলেন,
– “আমি এই মুহূর্তে দেখা করতে চাই ওনার হাসবেন্ডের সাথে।” ইমান তৎক্ষনাৎ খবর পাওয়া মাএই ছুটে এসে ডক্টর আসাদ কে জিজ্ঞেস করে,
– “জনাব আমার ওয়াইফের কি হয়েছে?” আসাদ মৃদু হেসে বললেন,
– “বিয়ের ক’মাস?” ইমান প্যানিক’ড হয়ে বললো,
– “সবে আড়াই মাস…! কিন্তু ওর কি হয়েছে? ” ডক্টর আসাদ হাসতে হাসতে ইমানের কাঁধে হাত রেখে বললেন,
– “খুশির খবর স্যার…! আপনাদের সন্তান আসতে চলেছে।” কথা শুনেই ইমান হাসিমুখে চোখেজল নিয়ে ছুটে যায় মিমের কাছে।মিমের জ্ঞান ফিরতেই ইমানের চোখ,নাক,মুখ লাল দেখে জিজ্ঞেস করে,
– “কি ব্যাপার? কি হয়েছে?” ইমান চোখের ইশারায় ওকে কিছু একটা বোঝালো,বেচারির নাক এবং মুখ মুহূর্তেই লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।
.
ও কিছু না ভেবেই ইমানের বুকে ঝাপিয়ে পরেছে সাথে সাথে।ইমান ওকে নিজের বাহুডোর যত্ন করে আগলে নেয়,আলতো করে নিজের ডান হাত রাখে মিমের পেটে।অতঃপর,মুচকি হেসে বললো,
– “আমার আর কিছু’ই চাই না! আমাদের সন্তান যেন সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে আমাদের কোল আলো করে আসে।” এদিকে মেয়ের প্রেগ্ন্যাসির খবর পেয়ে নাফিম সাহেব নাছিমা’কে সাথে করে নিয়ে আসেন ঢাকাতে।
এখন প্রতি মুহূর্তে মিম’কে বিশেষ যত্নে রাখা হচ্ছে।ইমান খুব সাবধানে রাখছে ওকে,নাছিমা তিন বেলা মেয়ের পছন্দের খাবার করে পেট পুরে খাইয়ে দিচ্ছে তাকে আর নাফিম সাহেব রোজ বিকেল বেলায় মেয়ে’কে হাঁটতে নিয়ে আসছেন পার্কে।নেয়না কাজের ফাঁকে ছুটি পেলেই এসে বোনের কাছে এসে থাকছে,মিহার ফ্ল্যাট মিমের ফ্ল্যাটের কাছাকাছি হওয়ায় শত ব্যস্ততার মধ্যে ও সে এসে ছোটো বোন কে দেখে যাচ্ছে।তানিয়া চাকরি সুত্রে দূরে থাকা সত্ত্বেও রোজ তিন বেলা করে ভিডিও কলে বোনের খোঁজখবর নিয়ে যাচ্ছে।সাবিহা দু’মাসের ছেলে নিয়ে ব্যস্ত থাকার পরেও মাঝেমধ্যে বোন’কে এসে সময় দিচ্ছে।
.
আর এদিকে ইমান মহাব্যস্ত মানুষ…! পারলে মিমের কাজ গুলোও সেই করে দিচ্ছে এরপর সে যে সময় টুকু পায় সেটুকুও মিমের,
তাই সারাক্ষণ ও কে কি করে হাসিখুশি রাখা যায় তাই ভেবে যাচ্ছে।বিভিন্ন বই পড়ে পড়ে ডক্টরের সাথে আলোচনা করে মিম’কে প্রেগ্ন্যাসি কালিন কিছু শরীর চর্চা করাচ্ছে।
আর কাজের ফাঁকে সুযোগ পেলেই মিম’কে নিয়ে হুটহাট বাড়ি থেকে গায়েব হয়ে যাচ্ছে।প্রথম প্রথম এসব নিয়ে বাড়িতে সবার দুশ্চিন্তা হলেও এখন তা গা সওয়া হয়ে গেছে।আরাব গ্যারেজে ইমানের বাইক না দেখতে পেয়ে ঘরে এসে বলে,
– “নির্ঘাত খালু আজও আম্মি’কে ঘুরতে নিয়ে গেছে।” তা শুনে ইসমাইল হাসতে হাসতে নেয়না কে বলে,
– “এই লোক বুঝি বিয়ের আগে প্রেমট্রেম করেনি কোনো মেয়ের সাথে?” নেয়না মুখ ভেংচে বললো,
– “সবাই তো তোমার মতো? নিজের মতো মনে হয় না কি সবাই কে?” ইসমাইল চুপ,তখন হাসির শব্দ শুনতে পেয়ে সবাই সামনে তাকিয়ে দেখে,ইমান উচ্চশব্দে হাসতে হাসতে মিম’কে নিয়ে বাড়িতে ঢুকছে,কিন্তু মেয়েকে চুপচাপ দেখে নাফিম সাহেব ইমান’কে জিজ্ঞেস করলেন,
– “আব্বু,ওর কি হয়েছে?” ইমান বললো,
.
– “বাবা তোমার মেয়ে’কে নিয়ে আর পারি না,মানা করা সত্ত্বেও সে ওই রাস্তার আনহাইজেনিক ফুসকা খেতে চাইছে।” নাফিম সাহেব তা শুনে মেয়ে কে বোঝাতে লাগলেন কিন্তু মিম রাগে গজগজ করতে করতে এসে ঘরের দরজা লাগিয়ে বসে আছে,তবে প্রায় আধঘন্টা ধরে ইমানের কোনো খোঁজ নেই আর তাই সে অস্থির হয়ে ঘরের দরজা খুলে রেখে ধীর পায়ে নিচে চলে আসে।তখন হঠাৎ পেছন থেকে নিহান মিমের চোখ চেপে ধরে বলে,
– “চুপচাপ যেখানে নিয়ে যাচ্ছি,সেখানে চল বুড়ী তোর জন্য আজ একটা সারপ্রাইজ আছে।” মিম চুপচাপ নিহানের সাথে চলে এলো,নিহান ওর চোখের ওপর থেকে হাত সরাতেই দেখলো ইমান সামন ফুসকার প্লেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।পাশ থেকে তানিয়া বললো,
– “এবার একটু হেসে দে বুড়ী…! ছেলেটা আজ তোর জন্যে অনেক খেটেছে।” মিম কোনো কথা না বলেই ইমান’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,ইমান ওর গালে চুমু খেয়ে বলল,
– “কি ব্যাপার? পছন্দ হয়নি? স্ট্রিট ফুড খেতেই হবে?” মিম হঠাৎ ইমামের গালে আলতো করে কামড়ে দিয়ে বলল,
– “বজ্জাত লোক একটা! আমাকে টেনশন দিয়ে দিয়ে শেষ করে ফেলবে?” ইমান মিমের কথার মানে বুঝতে পেরে হাসতে হাসতে ওর গালে আবারও চুমু খেলো,মিম আয়েশ করে ফুসকা খাচ্ছে।ইমান ওর পেটের ওপরে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো,
– “কেমন?” মিম ওর গালে একটা ফুসকা পুরে দিয়ে বললো,
– “মন্দ না অনেক অনেক ভালো হয়েছে।”
.
চলবে,,,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com