Breaking News

Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব – ১৪



তেমন কিছুই না ও বোধহয় কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছে?” মিম নীলাসার কথায় সায় দিলো তারপর ঝর্না ছেড়ে এসে বসে রইলো নিচে,
সকালে মিম’কে চুপচাপ দেখে ইমান একটু অবাক হলো আরো অবাক হলো মেয়ে টি কে কাশতে দেখে,তখন সারা এসে মিম’কে চায়ের কাপ টা দিয়ে বলে,
– “কি হয়েছিল তোর? এতো শীতে মাঝরাতে কে গোসল করতে বলেছিল ওকে?” মিম চা খেতে খেতে ভাঙা গলায় আস্তে আস্তে বললো,
– “তেমন কিছুনা! হঠাৎ অস্বস্তি শুরু হয়েছিল রাতে।”
– “কেমন অস্বস্তি?”
.
– “বলা যাবে না তোকে।” ইমান হঠাৎ দ্রুত পায়ে হেঁটে এসে মিমের হাত ধরে টানতে টানতে ওকে মেডিকেল রুমে নিয়ে এলো,ডক্টর কিছু ঔষধ লিখে দিলো ওকে,ইমান হঠাৎ জানতে চাইলো,
– “কি হয়েছে?” মিম কান্নায় ভেঙে পরলো সাথে সাথে।ইমান ওকে শান্ত করার চেষ্টা করলো,কিন্তু মিম কান্নার কারণ টা খুলে বললো না ইমানের কাছে।ইমান সবটা আন্দাজ করতে পারলো কিন্তু ধরা দিলো না মিমের কাছে।মিম উঠে রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো ইমান মিটিমিটি হাসতে লাগলো ওর চেহারা খানা দেখে।মিনিট খানেক বাদে,
ইমান স্পর্শীয়া’র কাছে ফোন করলো,স্পর্শীয়া বললো,
– “এখন কথা বলতে চাই না! আমার মেজাজ খারাপ আছে।”
– “কেন?”
– “এতোকিছু জানার আপনার কোনো প্রয়োজন আছে?”
– “এভাবে বলছ কেন? বিয়ে করতে চাও না আমাকে?”
– “নাঃ! রাখি? মাথাটা খারাপ হয়ে আছে।” ইমানের মন খারাপ হয়ে গেলো,একাডেমিতে সবাই চমকে গেলো দু’জন কে চুপচাপ দেখে।ইমাদ সাহেব এসে ইমান’কে বলল,
– “কি ব্যাপার? অফিসার? কি হয়েছে?” ইমান বললো,
– “কিছু না,স্যার! জাস্ট এমনি।”
– “ওকে,বাট মুড অফ কেন? বউ মা কিছু বলেছে?”
– “আপনার বউ মা রাগ উঠলে আমার সাথে কথা বলে না স্যার! ওর এই জিনিস টা আমার কাছে বড্ড বেশি খারাপ লাগে।”
.
– “কিন্তু মিম চুপচাপ কেন? ওর কি হয়েছে?”
– “খুব বেশি আকাশে উড়ছিল না? এখন ডানা খুলে পরে গেছে।”
– “মানে?”
– “মানে বোঝানোর সময় নেই স্যার আপনাকে।” ইমাদ সাহেব হাসলেন,বললেন,
– “চলো গিয়ে ঘুরে আসি রিহার্সাল রুম থেকে?” ইমান ইমাদ সাহেবের সাথে রিহার্সাল রুমে চলে এলো,হঠাৎ মিমের গলার আওয়াজ শুনতে পেলো পাশের ঘর থেকে,অতঃপর রুমে ঢুকে দু’জনে দেখতে পেলো মিম ওর টিমের সাথে নাচের মুদ্রা প্রাকটিস করছে।নীলাসা মিমের জন্য এক মগ কফি নিয়ে এলো,বললো,
– “ঝটপট খেয়েনে তোর গলা কিছুটা হলেও ছেড়ে যাবে।” মিম চুপচাপ বসে কফি খেতে লাগলো,রনি এসে বললো,
– “মিম কিছু কথা ছিল তোমার সাথে।” মিম ওকে ইশারা করে নিজের পাশে বসতে বললো,ইমান খেঁকিয়ে উঠে রনি’কে বললো,
– “তোমার কি এতো কথা মিমের সাথে?” মিম ওকে গ্রাহ্য না করে রনি’কে নিয়ে করিডরে চলে এলো,মিম ওকে বললো,
– “ডুয়েট গান টা তুমি গেয়ে নিয়ো সাদিয়া’র সাথে।” রনি মন খারাপ করে বললো,
– “আবার সাদিয়া কেন? আমি জুটি বেঁধে গান গাইতে চেয়েছিলাম তোমার সাথে।” ইমান এগিয়ে এসে রনি’কে বললো,
– “কি সমস্যা কি তোমার? দেখতে পাচ্ছ না মেয়ে টা অসুস্থ? কথা বের হচ্ছে না ওর মুখ থেকে?” মিম ফিসফিস করে বললো,
.
– “সিগারেট খোঁড় যেন কোথাকার? লজ্জা ও নেই এসে বকবক করছ দু’জনের কথার মাঝে।” ইমান মিম’কে কিছু বলার জন্য তৎক্ষনাৎ ছুটে গেলো কিন্তু জেনারেল ইমাদ ওকে ধরে নিয়ে এলো নিজের সাথে।ইমান হঠাৎ করেই তখন খুব রেগে গেলো,তারপর স্পর্শীয়া’র কথা ভেবে ঘরে এসে শুয়ে পরলো মেঝেতে।অতঃপর,ইমান কয়েক দফা ফ্লোরে গড়াগড়ি খেলো,তারপর তার রাগ গলে জল হয়ে গেলো মুহূর্তে।এদিকে বিকেলে,
প্যারেডের মোহরা শুরু হয়েছে।ইমান জেনারেল ইমাদ’কে সাথে নিয়ে প্রাকটিস গ্রাউন্ডে এসে দেখে অফিসার এবং স্টাফরা সবাই মিলে প্রত্যেক টি টিম কে বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছে,তখন ইমান মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সবার উদ্দেশ্য বলে,
– “ক্যাডেট আপনাদের একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে।কোনো ভুল করা যাবে না আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির সামনে বসে আর প্যারেডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ সশস্ত্র সালাম এটাও ভুল করা যাবে না,ভুল হলে আমি স্পেয়ার করবো না তাকে।” মিম ইমানের কথা গুলো শুনে মুখ ভেঙিয়ে বলে,
– “ভুল হলে আমি স্পেয়ার করবো না তাকে অথচ আমি প্যারেড করতে চেয়েছিলাম,শয়তান লোকটা করতে দিলো না আমাকে।” মিম’কে চুপচাপ মন খারাপ করে বসে থাকতে জেনারেল ইমাদ সাহেব এসে ওকে বলেন,
– “এতো ভাবছ কেন মা? তুমি ও এই অনুষ্ঠানের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে আর তাছাড়া আমি ইমানের অনুরোধ টা ফেলতে পারিনি কারণ তুমি এখনো সুস্থ হওনি পুরোপুরি ভাবে।” মিম উঠে চলে গেলো ওর মেজাজ টাই খারাপ হয়ে গেছে।রাতে ইমান মিম’কে ডেকে পাঠালো,ওর হতে একটা কাগজ গুঁজে দিয়ে বললো,
– “কবিতা টি আবৃত্তি করে শোনাও! আমাকে।” মিম বললো,
.
– “আমি কবিতা আবৃত্তি করতে পছন্দ করি না এখানে কবিতা আবৃত্তি করার লোক অনেক আছে।” ইমান বললো,
– “তোমার কথায় তো সব হবে না আর অনুষ্ঠানে আমি কবিতা আবৃত্তি করতে বলিনি তোমাকে।” মিম ইমান’কে গ্রাহ্য না করে চলে আসতে লাগলো,ইমান হঠাৎ উঠে এসে ওর পথ আটকে দিলো যেতে দিলো না মেয়ে টা কে।মিম রাগ সামলে রেখে জিজ্ঞেস করলো,
– “কি সমস্যা কি আপনার? কি চান কি আপনি আমার কাছ থেকে?” ইমান একটু ঝুঁকে বললো,
– “তুমি কি আমার কথা শুনবে? না তোমাকে যে দায়িত্ব গুলো দেবো ভেবেছিলাম,সে গুলো অন্য কাওকে দিয়ে দিতে হবে?” মিম বললো,
– “যাকে ইচ্ছে দিন,আমার রাস্তা ছাড়ুন প্লিজ যেতে দিন আমাকে।”
– “রাগ করেছ তুমি?”
– “আপনার কি তাতে? যা ইচ্ছে করুণ প্লিজ জনাব একটু শান্তি দিন আমাকে।” ইমান হাসলো,বললো,
– “কথা না শুনলে আমি যেতে দেবো না তোমাকে আর শান্তি তো দুরস্ত কবিতা টি আগে আবৃতি করে শোনাও আমাকে।” অগ্যতা মিম রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে কবিত আবৃতি করে শোনালো ওকে,তারপর ইমান তাকে ছেড়ে দিলো মিম ঘরে এসে গাল ফুলিয়ে মেঝেতে বসে আছে।কিছুক্ষণ পর,
ইমান স্পর্শীয়া’কে ফোন করে বললো,
– “কি ব্যাপার? মেজাজ বোধহয় ঢং এ উঠে বসে আছে?” মিম ইমান’কে ঝাড়ি মেরে বললো,
– “ফোন টা রাখুন,নয়তো সব রাগ আপনার ওপরে ঝাড়বো।”
– “ঠিক আছে,আই ডোন্ট মাইন্ড! বলে কি হয়েছে?” মিম বললো,
– “ওই লোকটার মাথায় সমস্যা,কি জানি কি হয়েছে? ওটার প্রেমিকা কে অনেক দিন ধরে দেখতে পাচ্ছিনা নিশ্চিত বয়ফ্রেন্ডর এমন অবস্থা দেখে পালিয়ে গেছে।” ইমান হঠাৎ বললো,
– “আই লাভ ইউ।”
– “আমি ভালোবাসি না আপনাকে! বললাম না রাগ ঝাড়বো সব? চুপ করে আমার কথা শুনুন আগে।”
– “আচ্ছা বুঝলাম,তোমার কেন এতো রাগ হয়েছে?”
– “হুহহ! ফোন টা রাখুন,কথা বলার কোনো ইচ্ছে নেই আপনার সাথে।”
– “তুমি এমন করছ কেন?”
– “আই লাভ ইউ বললেন কেন আমাকে?”
– “না মানে আমি আসলে….!”
– “ভালোবাসেন আমাকে? আপনার মন কত বড়? এক মনে দু’জন থাকে?”
– “স্পর্শীয়া আমার কথা শোনো?”
– “বলুন কি হয়েছে?”
– “সন্ধ্যায় নাস্তা পানি করেছ কিছু?”
.
– “আশ্চর্য! নাস্তা পানি করার কথা উঠছে কোথা থেকে? এই আপনি প্লিজ ফোন টা রাখুন,নয়তো বন্ধুত্ব এখানেই শেষ বলে দিলাম আপনাকে।” ইমান চমকে উঠলো,ফোন টা রেখে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ মনে হলো তার কাছে,অতঃপর মনেমনে বললো,
– “ওই লোকটার সমস্যা কি? শুধুশুধু কেন রাগীয়ে দেয় মেয়ে টা কে? কোনো ক্লাস নেই লোকটার? শিং ভেঙে এসে বাছুরের দলে ঢুকতে চাইছে?” পাশ থেকে ইমাদ সাহেব বলে উঠলেন,
– “মনে হচ্ছে লোকটা বউ মায়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে?” ইমান বললো,
– “প্লিজ স্যার এভাবে বলবেন না! আমার টেনশন দশগুণ বেড়ে যাচ্ছে।” ওদিকে মিমের মেজাজ খারাপ দেখে সারা,নীলাসা বাদে সবাই ওকে এড়িয়ে যাচ্ছে।
তখন প্রায় রাত ন’টা বাজে আর মিম হঠাৎ অফিসারদের কোয়ার্টারে এসে দরজায় নক না করেই ইমানের রুমে ঢুকে জিজ্ঞেস করে,
– “আপনি কেন আমাকে চুমু খেলেন গতকাল রাতে?” ইমান পুরোটা অস্বীকার করে গেলো কিন্তু মিম বললো,
– “আমার কাছে কিন্তু প্রমান আছে।” ইমান এগিয়ে এসে মিমের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,
– “ট্রুথ আর ডেয়ার খেলছিলাম আমি তোমার সাথে।”
– “আপনার মনে হয়নি স্যার! এটা একটু বেশিই বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে?” ইমান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
– “কেন হবে?” মিম বললো,
.
– “আমি যাচ্ছি লিখিত অভিযোগ দেবো ইমাদ স্যারের কাছে।” ইমান হাসলো,মিম হঠাৎ বিশ্রী হাসি বললো,
– “স্যার জানেন? আপনার এখন একূল ওকূল দু’কূল যাবে?” ইমান অবাক হয়ে বলল,
– “মানে?” মিম তখন ইমানের আইফোন টা ছুড়ে মারলো ওর কাছে,বললো,
– “আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড কে আপনার ব্যাপারে সব জানিয়ে দেবো স্যার! তার ফোন নম্বর টুকে ফেলেছি এক ফাঁকে।” ইমান সাথে সাথে মিম’কে দৌড়ানি দিলো কিন্তু মেয়েটি পালিয়ে গেলো সুযোগ বুঝে।” এদিকে,
ইমানের চোখে ঘুম নেই দুশ্চিন্তায় ছেলে টা ছটফট করছে রাতে,তার ওপরে স্পর্শীয়া ফোন রিসিভ করছে না তাহলে কি ও সব জেনে গেছে?” ভোরের আলো ফুটে উঠতেই ইমান মিম’কে ডেকে পাঠায়,তবে মিমের খুব আনন্দ হচ্ছে ওর চোহারা দেখে।ইমান একটু থেমে বললো,
– “তুমি কি স্পর্শ’কে সব বলে দিয়েছে? ও ফোন ধরেনি আমার গতকাল থেকে।” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “আমি তাকে কিছুই বলিনি স্যার! তবে আমি আপনাকে শাস্তি দিতে চাই অন্য ভাবে।” ইমান অবাক হয়ে বললো,
– “মানে কি চাই তোমার বলো আমাকে?” মিটিমিটি বললো,
– “কান ধরুন আগে আপনি সবার সামনে বসে।”
– “এ কেমন শাস্তি?”
– “শাস্তি কি আপনি বলে দেবেন আমাকে?”
– “না আসলে?”
.
– “আসলে নকলে কিচ্ছু শুনতে চাইনা আমি আপনার কাছ থেকে।” ইমান বললো,
– “তাহলে অন্য কোনো শাস্তি দাও?”
– “শপিং করিয়ে দিতে পারবেন আমাকে?” ইমান ঝটপট রাজি হয়ে গেলো,তারপর মিম’কে নিয়ে এলো মার্কেটে,মিম অনেক কিছু কেনাকাটা করলো, অতঃপর শপিং ব্যাগ গুলো ধরিয়ে দিলো ইমানের হাতে।ইমান চোখ কপালে তুলে মিম’কে বললো,
– “তোমার কি কুলি বলে মনে হয় না কি আমাকে?” মিম শাড়ির আঁচল দিয়ে ইমানের কপালের ঘাম মুছে দিয়ে হাসতে হাসতে হঠাৎ ইমানের গালে চুমু খেয়ে বললো,
– “না গো,শুধু আজকের জন্য হাসবেন্ড হিসেবে ভাড়া করেছি আপনাকে।” ইমান চমকালো,গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো মিমের দিকে,মিম বললো,
– “কি হলো চলুন? এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন আমার দিকে?” ইমান চুপচাপ চোরে মতো মিমের পেছন পেছন হাঁটতে লাগলো,মিম রেস্টুরেন্টে খেতে নিয়ে এলো ওকে,ইমান নিজের কৌতূহল থেকে মিম’কে জিজ্ঞেস করলো,
– “তুমি কেন কিছু জানালে না ওকে?” মিম হাসিমুখে বললো,
– “আমি জানি স্যার,বুঝতে পারি আপনি অনেক ভালোবাসেন ওই মেয়ে টা কে আর তাছাড়া আপনি সিলভানা ম্যাম’কে হারিয়েছেন আমি চাই না এবার আপনি হারিয়ে ফেলেন আপনার এই বন্ধু টা কে।” ইমান অবাক হয়ে মিমের দিকে তাকিয়ে রইলো,মিম খাবারের পার্সেল নিয়ে বেড়িয়ে গেলো রেস্টুরেন্ট থেকে।

চলবে,,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com