Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব – ৩০
তার কিছুক্ষণ পর,বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র জাপানের কমান্ডার অফ দ্যা জাপানিজ
আর্মড ফোর্সেস আর্মি চিফ ইউসান অ্যালবার্ট সহ আরো বেশ কয়েকটি দেশের দূতাবাসের
কূটনৈতিকগণ,সংসদ সদস্যগণ,উচ্চপদস্থ সামরিক এবং অসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ,স্থানীয়
গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সদ্য কমিশন প্রাপ্ত অফিসারগণদের পিতা-মাত
এবং অভিভাবকবৃন্দ উপস্থিত থেকে এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান উপভোগ করেছে।
অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর,
বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় নারী ব্যাটালিয় সিনিয়র আন্ডার
অফিসার হিসেবে মিমের “সোর্ড অব অনার’ পাওয়ার বিষয়টি প্রচারিত হচ্ছে।
মিম অডিটোরিয়াম থেকে গার্লস কোয়ার্টারের দিকে যাচ্ছিলো,তখন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক
এসে মিম’কে ঘিরে ধরেছে।দৈনিক ভোর এর রিপোর্টার সালমান সাদিদ মিম’কে জিজ্ঞেস করলেন,
.
– “ম্যাম! আপনার ‘সোর্ড অব অনার’ প্রাপ্তির পর এখন কেমন অনুভূতি হচ্ছে?”
মিম নিজের ‘সোর্ড অব অনার’ প্রাপ্তির অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলে,
– “বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে…!
দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সবচেয়ে সম্মান ও গৌরবের প্রতীক ‘সোর্ড অব অনার’।
এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
এই পথচলায় সিনিয়রদের কাছ থেকেও আমি সর্বাত্মক সহযোগিতা পেয়েছি,
দক্ষ প্রশিক্ষকরা প্রশিক্ষণকালীন প্রতিটি বিষয় আমাকে হাতে কলমে শিখিয়েছেন
এবং আমার ছোটো-ছোটো ভুল গুলো’কে তারা শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
তাদের ঐকান্তিক সহযোগিতায় আজকের এই সফলতা আর তাছাড়া এক্ষেত্রে আমার
বাবা-মায়ের ও বিশেষ ভূমিকা আছে।তাদের সহযোগিতা না পেলে এ অর্জন সম্ভব হতো না
এবং আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।
কেননা তিনিই সশস্ত্রবাহিনীতে নারীদের যোগদানের সুযোগ করে দিয়েছেন,নারীদের
নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের একটা সুযোগ করে দিয়েছেন।” তখন সাদমান বললো,
– “ম্যাম বলছিলেন যে আপনার বাবা-মায়ের এই ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা আছে,
যদি একটু এই ব্যাপারে বিস্তারিত বলতেন আমাদেরকে…!” মিম তখন বলতে শুরু করলো,
.
– “বাবার কর্মস্থলের সুবাদে ছোটবেলায় আমি ছিলাম যশোর সেনানিবাসে আর সেখানেই
অনেক সেনাসদস্যদের প্রশিক্ষন নিতে দেখেছি স্ব-চক্ষে আর তাছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
সম্পর্কে জানার অদম্য আগ্রহ দেখেই বাবাও খুব আগ্রহের সঙ্গে সময় পেলেই এ সম্পর্কিত
জ্ঞানার্জনে সাহায্য করতেন আমাকে।প্রশ্ন করা ছিল আমার পছন্দের কাজের মধ্যে একটি
আর বাবাও খুব ধৈর্যের সঙ্গে আগ্রহ নিয়ে সব শেখাতেন আমাকে।সময় পেলেই বাবার
বইগুলো পড়তাম আর এই বিষয়ে বরাবরই আমি উৎসাহ এবং প্রেরণা পেয়েছি আমার
মায়ের কাছ থেকে।আজকের এই স্পর্শীয়া মিমিয়া মিম তৈরি হওয়াও আমার মায়ের স্বপ্ন
দেখা,মায়ের স্বপ্ন পূরণের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা,বাবার সহযোগিতা আর বড়বোনেদের সহচার্যে
দেশের সেবা করার অদম্য ইচ্ছাই আমাকে একজন কার্যকরী ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার
অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে এবং আমার বাবা-মা ছেলেমেয়ে পার্থক্যের
ন্যূনতম মানসিকতা কখনোই আমার মধ্যে আসতে দেয়নি।এ কারণেই আমি সবসময়ই বিশ্বাস
করতাম স্থির সংকল্প,ধৈর্য আর কঠোর পরিশ্রম যে কোনো মানুষকে পোঁছে দিতে পারে সফলতার চরম শিখরে।
এছাড়া ও ছোটবেলায় ইভেন বড় হয়ে ও বাবা’কে তার রাইফেল
নিয়ে প্রাকটিস করতে দেখে ভাবতাম এটা কবে আমার হাতে আসবে?
.
বাবার জন্য সরকারি দপ্তর থেকে অনেক অনেক চিঠি আসতো,তা দেখে ভাবতাম আমার জন্য এই চিঠি গুলো কবে আসবে? এসব দেখে আমার মনের কোণে উঁকি দিত আমিও একজন সৈনিক কিংবা অফিসার হবো আমার দেশের জন্য কিছু করতে হবে আমাকে।
আর এখানে যোগদানের মাধ্যমে আমার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে।স্বপ্ন পূরণে সত্যিই আমি আজ অনেক আনন্দিত যা মুখের ভাষায় প্রকাশ করতো পারবো না আপনাদের সবার কাছে,তবে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে আমাকে একজন প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে সামরিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি একজন সুনাগরিক সর্বোপরি ভালো মানুষ হওয়ার প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে।সাদমান আবার ও বললেন,
– “ম্যাম প্রশিক্ষণকালীন সময় এবং স্মরণীয় মুহূর্ত সম্পর্কে আমরা কিছু জানতে চাই আপনার কাছ থেকে।” মিম বলল,
– “আমি বলতে চাই,এ সময়টা ছিল খুব কঠিন ছিল আমার কাছে আর এ কঠিন সময়কে জয় করে এবং তা কাজে লাগিয়ে কিভাবে কার্যকরী করা যায় তা শিখিয়েছেন ব্যাটালিয়ন প্রধান কর্নেল ইমান খান স্যার এবং প্রশিক্ষক মেজর কিয়ান স্যার।এই প্রশিক্ষকদ্বয়ের উৎসাহ আর কঠোর প্রশিক্ষণই আমাকে সদ্য কমিশন প্রাপ্ত অফিসার হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে এবং পরিশেষে,
.
আমি বলতে চাই আমার জীবন সঙ্গী কর্নেল ইমান খানের সম্পর্কে।
মানুষ টা বরাবর আমাকে আমার মায়ের মতোই উৎসাহ দিয়েছে এবং প্রেরণা জুগিয়েছে,
যতই বাধাবিপত্তি থাকুক তার কথা ছিল,’ভয় কিসের?
তুমি পারবে আর কোনো কিছুই তোমার দ্বারা করা অসম্ভব নয় যদি তোমার চেষ্টা থাকে।’ আমি বলবো,
এই মানুষ টা সারাক্ষণ বটবৃক্ষের ন্যায় আমাকে আগলে রেখেছে নিজের কাছে আর আজ
এক বছর পাঁচ মাস আমাদের বিয়ের বয়স অথচ আমার ট্রেনিং এর
জন্য আমরা এখনো জড়াতে পারিনি স্বামী স্ত্রী’র পবিত্র সম্পর্ক টা তে,
তবুও আমাদের মাঝে আন্ডারস্ট্যান্ডিং টা প্রচুর।শরীরের সম্পর্ক না থাকুক,মনের
সম্পর্ক টা ঠিকই আছে একে অপরের সাথে।” মিমের কথা শেষ হাতে না হতেই
ইমান হাসিমুখে এগিয়ে আসে মিমের কাছে,সাদমান ইমান’কে অনুরোধ করে বলল,
– “স্যার! আপনি কিছু বলেন আপনার মিসেস সম্পর্কে?” ইমান মিমের কপালে
চুমু খেলো,মিটিমিটি হেসে বলল,
– “হাজার শব্দ দিয়েও আমি সঠিক ব্যাখা দিতে পারবোনা আমার স্ত্রী সম্পর্কে…!
শুধু বলবো,সে অনেক পরিশ্রমী,তার চেষ্টা টা মন থেকেই আসে।ইনফ্যাক্ট ওর যে পারফরম্যান্স,
.
আমি শিওর ছিলাম হয়তো “সোর্ড অব অনার” নয়তো “
সেনাবাহিনী প্রধান স্বর্ণপদক” ও পাবেই পাবে এন্ড হেয়ার ইট ইজ!
খুব গর্ব হচ্ছে হাসবেন্ড হিসেবে।” পাশ থেকে মিম মৃদু হেসে বললো,
– ‘আমি ও স্ত্রী হিসেবে গর্বিত কারণ আমার হাসবেন্ড “সোর্ড অব অনার”
এবং “সেনাবাহিনী প্রধান স্বর্ণপদক” দু’টোই এক সঙ্গে লাভ করেছিলেন
তার কোর্স শেষে।” অতঃপর দু’জনের একসঙ্গে একটা ইন্টারভিউ নেওয়া হলো,
ইন্টারভিউ শেষে দু’জনে খেতে চলে ডাইনিং এরিয়ারতে…!
আর তখন রায়হান এসে ইমান’কে বললে,
– “আরে ভাই আপনি এনগেজমেন্ট খাইলাম,কাবিন খাইলাম এবং
বিয়ে টাও খাইতে চাই এখানে বসে।” ইমান বলল,
– “না ভাই তা আর হচ্ছে না,এবার বিয়ে টা সেরে বউ টা
কে চটজলদি নিয়ে আসতে চাই নিজের কাছে”
– “মানে?”
– “মানে নিশ্চয়ই আপনি আমার অবস্থা টা বুঝতে পারছেন?” বউ ছেড়ে আমার
জীবন টা মরুভূমির ন্যায় হয়ে গেছে।” ইমানের কথা শুনে সবাই হাসছে,হাসতে হাসতে শেষ,কিয়াল বলল,
– “বড় ভাই বাসর টা সেরে নিলেই হয় আজ রাতে?”
মিম কিছু টা দূরে বন্ধুদের সাথে হাসাহাসি করছে,ইমানের নজর তার দিকে,মিটিমিটি হেসে বললো,
– “না থাক! আর সাত টা দিন অপেক্ষা করা কোনো কষ্টের নয় আমার কাছে।
” এদিকে সারা,লেইলা ওরা মিম’কে বলল,
.
– “কি ব্যাপার? আজ থেকে পারমানেন্টলি ঘুমবি না স্বামী’র কাছে?” মিম বলল,
– “কি জানি? যাই একটু দেখে আসি মানুষ টা কে।”
মিম এক ছুটে ইমান’কে এসে জড়িয়ে ধরলো,ইমান সাথে সাথেই চুমু খেলো
মিমের কাঁধে।মিম এতে কিছুটা লজ্জা পেয়ে আবারো বন্ধুদের কাছে ফিরে আসে।
তখন কর্নেল রায়হান ইমান’কে বলল,
– “ভাই বিশ্বাস করেন আর নাই করেন,আপনাদের দু’জন কে দেখে আমার হিংসে লাগে।
না মানে,স্বামী স্ত্রী কি সুন্দর এক পেশাতে আবার এক সাথে তা ছাড়া
আপনার মিসেস আপনার আন্ডারে নেক্সট মান্থে চাকরি জয়েন করতে চলেছে।
হাউ কিউট? সারাজীবন কি আপনাদের এভাবেই কেটে যাবে?” কিয়ান বললো,
– “কিছু হোক আর নাই হোক,রোমান্স চলতে থাকবে স্মুথ ভাবে আর
আমরা ‘হা’ করে দেখতে থাকবো আর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলবো যে যার কেবিনে বসে।
” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “তাহলে বুঝুন মাথাটা খাটাইলাম কিভাবে? বউ,চাকরি,প্রেম,
রোমান্স সব এক সাথে।” রায়হান উঠে হঠাৎ ইমানের হাত চেপে ধরে বললো,
– “ভাই এদিকে তাকান,একটু নিজের অপয়া কপাল টা কে ঘষে নেই আপনার
সোনা দিয়ে বাঁধানো কপাল টার সাথে।
না মানে আপনার আসলেই কপাল,খুব ভাগ্য নিয়ে আপনি জন্মেছিলেন পৃথিবীতে।” ইমান বলল,
– “হুমম,আসলেই ভাগ্য আমার! বিয়ের পরেও বউয়ের সাথে এক
বিছানায় শুয়ে দেখলাম না কেমন লাগে?” কিছুক্ষণ পর,শহীদ স্টাফ এসে ইমান’কে বললো,
.
– “স্যার! আপনি একটু কোয়ার্টারে জান,কেউ একজন দেখা করতে এসেছে আপনার সাথে।
” ইমান কৌতুহল বশত কোয়ার্টারে চলে এলো,রুমে ঢুকে দেখলো,
মিম ওর অগোছালো এবং নোংরা রুম টা খুব যত্ন সহকারে নিজের হাতে’ই গুছিয়ে দিচ্ছে।
ও চুপচাপ এসে মিম’কে বলল,
– “তুমি কি ডেকে পাঠিয়েছ আমাকে?” মিম এগিয়ে এসে ইমানের ইউনিফর্মের
বোতাম খুলে দিতে দিতে বলে,
– “জান ফ্রেশ হয়ে আসুন…! আপনার গা থেকে ঘামের গন্ধ আসছে।
” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “তা কি এক্সপেক্ট করেছিলে তুমি? ফুলের গন্ধ আসবে?” মিম মিটিমিটি হেসে বললো,
– “কোই না তো? দেড় বছর হয়ে গেলো অথচ মানুষ করতে পারলাম না আপনাকে।” ইমান বলল,
– “কেমনে করবে? কয় রাত থেকেছ তুমি আমার কাছে?”
– “রাতে থাকা জরুরী হলে বলতেই পারতেন?
না হয় একটু স্যাকরিফাইস করতাম নিজেকে?” ইমান হঠাৎ দু’হাত দিয়ে মিম’কে
জড়িয়ে ধরে কানে ফিসফিস করে বললো,
– “ঠিক সাত দিন পরে তোমাকে সারাজীবনের জন্য নিয়ে আসবো নিজের কাছে।”
.
চলবে,,,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com