Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব – ১৭
প্লিজ চলুন স্যার! সবাই আপনাকে খুঁজছে আর তাছাড়া দু’জনকে একসঙ্গে দেখলে আবার কেলেংকারী ঘটে যাওয়ার সম্ভবনা আছে আর তাই আমি চাই না স্যার নিজের সাথে সাথে আপনার মতো একজন মানুষকে বিপদে ফেলতে।” ইমান হঠাৎ শক্ত করে মিমের হাত চেপে ধরলো,বললো,
– “কেমন মানুষ আমি মিম? প্লিজ বলো আমাকে?” মিম ওকে রেখেই চলে এলো স্টেজে,বেলা তখন একটা,
দুপুরে লাঞ্চ করার জন্য ত্রিশ মিনিটের ব্রেক দেওয়া হলো সবাই’কে….!
এই ফাঁকে সবার ফটোসেশান হচ্ছিল,ছবি তোলার সময় জেনারেল ইমাদ সাহেব নিজে ডেকে পাঠালেন মিম’কে…!
মিম এসে অফিসারের সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে ছবি তুলে নিলো এই সুযোগে।কিছুক্ষণ পর,
নাফিম সাহেব মেয়ে’কে ফোন করে হাসিমুখে বললেন,
– “জানো আম্মু তোমাকে টিভিতে দেখাচ্ছে?” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “হুমম,আব্বু একটু আগেই শুলনলাম! বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলে এই অনুষ্ঠান টি সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে।”
– “হ্যাঁ,মা! আমি তোমার মেম্বার চাচার মুখে শুনলাম,কিছুক্ষণ আগেই এসে আমাকে বললো,’জানেন চেয়ারম্যান সাহেব! আম্মাজান কে টেলিভিশনে দেখাচ্ছে।” আমি খুব চমকে গেলাম পরক্ষণেই টিভি ছেড়ে দেখলাম সত্যি বলছে কিন্তু একটা কথা জানো মা তুমি?”
– “কি আব্বু?”
– “জানো মা, আজ আমার খুব গর্ব হচ্ছে! আই এম সো সো প্রাউড অব ইউ।”
– “খুব ভালোবাসি বাবা তোমাকে,আচ্ছা বাবা রাখি? এখন যেতে হবে,আমাকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমান খান স্যার ডাকছে।”
.
– “আচ্ছা মা! সাবধানে থেকো।”
– “হুমম! তুমি ও থেকো আর একটু খেয়াল রেখো আম্মুর দিকে।” অতঃপর মিম ফোন টা রাখতেই ব্রিগেডিয়ার উল্লাস এসে ওর হাত ধরে বললেন,
– “একটু এদিকে আসো মা! বিভিন্ন চ্যানেলের সাংবাদিকেরা তোমার এবং ইমান সাহেবের ইন্টারভিউ নিতে চাইছে।” মিম অবাক হয়ে বললো,
– “কিন্তু কেন স্যার?”
– “গেলেই দেখতে পাবে?” এরপর ভোরের আলো,সহ অন্যান্য পত্রিকার নিউজ রিপোর্টেরা জিজ্ঞেস করলো,
– “মিম,আপনি কি করে বুঝতে পারলেন? কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়ার মর্মান্তিক ঘটনায় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির সাবেক উপ-পরিচালক জেনারেল তেভভিদ রহমানের যোগসাজশ আছে?” মিম একটু দম ফেলে বলতে শুরু করলো,
– “প্রথম থেকেই জেনারেল তেভভিদ রহমানের আচার-ব্যবহার বেশ অদ্ভুত লাগত আমার কাছে আর তাছাড়া আমি বেশ কয়েকবার অ-পৃতিকর অবস্থায় দেখেছি তাকে।
তার ওপর আমার ওপরে যে রাতে প্রাণঘাতী হামলা হলো সে রাতে জ্ঞান হারানোর আগে আমি দু’মুখো সাপের ট্যাটু টা দেখতে পেয়েছিলাম,উনি উলঙ্গ অবস্থায় অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিছানার এক পাশে এর পর বাদবাকি টা লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমান খান বলবেন,কারণ উনি ছিলেন এই কেসের ইনচার্জে।” ভোরের আলো পত্রিকার সংবাদিক আতাউর রহমান ইমান’কে জিজ্ঞেস করলেন,
.
– “স্যার! আপনি কি করে বুঝতে পারলেন,আসল কালপ্রিট তেভভিদ সাহেব? তার বিরুদ্ধে কি কি প্রমাণ এসেছিল আপনার হাতে?” ইমান গলা খাকড়ি দিয়ে বলতে শুরু করলো,
– “আসলে ওনার ওপরে সহকর্মীদের হ্যারাসমেন্টের বেশ কয়েকটি অভিযোগ এসেছিল আমাদের কাছে।ইনফ্যাক্ট,ওনার ওপরে গৃহপরিচারিকার শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছিল প্রায় বছর দুয়েক আগে।তবে সেটা প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি পর্যাপ্ত পরিমাণে তথ্য,প্রমাণ এবং সাক্ষীর অভাবে কাজেই আমার নজর টা প্রথম থেকেই ছিলো ওনার দিকে আর ঠিক এই কারণে জেনারেল ইমাদ স্যার! পুরো বিষয় টা গোপন রাখতে বলেছিলেন আমাকে কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি আমার কিছু বেইমান ভরসা যোগ্য লোকের কারণে,
তবে মাস্টার প্ল্যান টা মিমের ছিলো আর ওই আমাকে বলেছিল মেয়েদের মধ্যে যে-কোনো একজন’কে তুলে নিতে,
এরপর বাকি টা আপনারা জানেন,তবে আমি বলবো পঁচিশ টা মেয়ের জীবন এই লোকের কারণে নষ্ট হয়ে গেছে আর হ্যাঁ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কিংবা বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি এমন কোনো ছেলেখেলার জায়গা না যে….!
যে-কেউ পাড় পেয়ে যাবে আর রইলো চাকরির কথা। এখানে আসতে হলো নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেই আসতে হবে তাছাড়া এখানে আসার কোনো বিকল্প প্রন্থা নেই,তবে কেউ বললে তাকে নিছক দালাল কিংবা ঠকবাজ হিসেবে ধরে নিতে হবে এবং পরিশেষে বলতে চাই,
.
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কিংবা বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে আসতে হলে সবাই’কে এই সম্পর্কে কিছুটা হলেও জেনে আসতে হবে।” ইমানের কথা শেষ হতে না হতেই করতালির শব্দ শোনা গেলো পেছন থেকে।
কিছুক্ষণ পর,খবর এলো একটা জরুরী কাজের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির মিলিটারি একাডেমিতে থাকা হচ্ছে না তারা রওনা হবেন মিনিট দশেক বাদে আর তাই ইমান’কে ডেকে পাঠানো হলো,
তখন জেনারেল ফিদান সাহেব এসে ইমানের কাঁধে হাত রেখে বললো,
– “ইমান,আপনার নতুন দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়ার সময় হয়ে গেছে।” ইমান চমকালো,হাসিমুখে জেনারেল ইমাদ সাহেব এগিয়ে এসে বললো,
– “তুমি সহ আমাদের আরো কিছু অফিসার’কে পদোন্নয়ন দেওয়া হয়েছে।” ইমান অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো,পাশ থেকে মিম ফিসফিস করে বললো,
– “আমাকে ট্রিট দিবেন কবে?” ইমান হাসলো,বললো,
– “তুমি খেতে চাও কবে?” মিম হাসতে হাসতে পাশ কাটিয়ে গিয়ে স্টেজে উঠলো,তারপর ফুল দিয়ে বরণ করে নিলো পদোন্নয়ন প্রাপ্ত সকল অফিসার’কে এরপর মননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিজের হাতে র্যাঙ্ক পরিয়ে দিলো পদোন্নয়ন প্রাপ্ত সকল অফিসার’কে…!
.
ইমান হাসিমুখে স্টেজ থেকে নেমে এলো,মিম’কে বললো,
– “স্টেজে আসুন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাইছে।” মিম কথাটা শুনে চমকালো,তার হার্টবিট খুব দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে।অতঃপর সে চমকালো,স্টেজে উঠে শুনতে পেলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি দু’জনেই ওর সাহসের অনেক প্রশংসা করছে।
তারপর মিম এগিয়ে এসে দু’জন কেই আলাদা আলাদা ভাবে সালাম দিলো,জেনারেল ইমান মিম’কে পরিচয় করিয়ে দিলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে।মহামান্য রাষ্ট্রপতি মিমের অনেক প্রশংসা করলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বললেন,
– “তোমাকে খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে হবে,তুমি এবং তোমার মতো দেশের ভবিষ্যত যারা তারা অসুস্থ হয়ে পরে থাকলে কি করে হবে?” মিম হাসিমুখে বললেন,
– “দোয়া করবেন ম্যাম! যেন আমি পারি আমার বাবা-মা সহ আমার দেশের নাম উজ্জ্বল করতে।” মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হাসলেন,বললেন,
– “অনেক বড় হও তুমি তোমার সামনে একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যত আছে।” মিম হাসলো,তারপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে বিদায় জানতে চলে এলো ইমান এবং জেনারেল ইমাদ সাহেবের সাথে।
.
চলবে,,,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com