Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব – ১২
ইচ্ছে করছে,এই মুহূর্তে ছুটে গিয়ে ওই লোকটা কে গরম তেলের মধ্যে ফেলে দিতে! মানুষ দেখেছি,তবে এমনতরো নোংরা লোক দেখিনি আগে।” পরেরদিন ভোরবেলা জনাব তেভভিদ ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে বাহিরে এসে দেখে ইমান এবং জেনারেল ইমাদ এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।উনি কিছু বলার আগেই ইমান তার শার্টের কলার চেপে ধরে টানতে টানতে নিচে নিয়ে আসে,
এ.এস.পি সাদমান এগিয়ে এসে জেনারেল তেভভিদ’কে বলে,
– “ইউ আর আন্ডার এরেস্ট,জেনারেল!” তেভভিদ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সবার দিকে,ইমান এসে তার মুখে একটা ঘুষি মে’রে বললো,
– “লজ্জা করেনি আপনার? আপনার মনে পরেণি? বাড়িতে আপনারো দু’টো মেয়ে আছে?” তেভভিদ হাসতে হাসতে বললো,
– “কি প্রামাণ আছে আমার বিরুদ্ধে? প্রামাণ দেখাও আমাকে?” তখন ছায়া মিমের পেছন থেকে বেড়িয়ে এলো,তেভভিদ চমকে গেলো তাকে দেখে,মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “বুঝলেন স্যার! পাপ কিন্তু ছাড়ে না বাপ’কে।” জেনারেল ইমাদ সাহেব এগিয়ে এসে বললেন,
– “কখনো ভাবতে পারিনি তেভভিদ আপনি এই কাজ করতে পারেন কারো সাথে? না মানে একবারও কি আপনার রুচিতে বাঁধলো না? বাড়িতে আপনার দু’দুটো মেয়ে আছে।” পাশ থেকে ব্রিগেডিয়ার উল্লাস সাহেব বলে উঠলেন,
– “মূলত,এই মেয়ে ঘটিত কারণে বিয়ের একুশ বছর পর এসে ওনার স্ত্রী’র সাথে ডিভোর্স হয়েছে।উনি মেয়েদের কথা কি ভাববে? মেয়েরা নিজেরাই কোর্টে বাবা-মা দু’জনের মধ্যে নিজের মা কে বেছে নিয়েছে।কথা টা শুনে সবাই বেশ অবাক হলো,ইমাদ সাহেব ছিঃ,ছিঃ করতে করতে মিম’কে নিয়ে কেবিনে চলে এলো ওই মুহূর্তে আর তখন মিম চোখ বুঝে বলতে শুরু করলো,
.
– “স্যার! উনি সিনিয়র আপুদের কোনো ঝামেলা ছাড়াই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী’র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়েছে আর শুধু তাই নয়,
ছায়া আপু’র সাথে প্রথম বার শারীরিক সম্পর্কের পর উনি তার ভিডিও ধারণ করে বারংবার ওনার সাথে এক বিছানায় রাত কাটানোর জন্য ভয় দেখিয়ে ছায়া আপু’কে ব্লাক মেইল করেছে আর আপু’র মাধ্যমেই উনি রাইমা,বিথী,মিথিলা সহ অন্যান্য আপুদের সাথে একই কাজ করেছে।” ইমান এসে হঠাৎ মিমের গাল চেপে ধরে বললো,
– “তুমি কি করে জানলে এই থার্ড ক্লাস লোকটা এসব করে বেড়াচ্ছে মেয়েদের সাথে?” মিম আমতা আমতা করে বললো,
– “আমি একদিন ভিডিও কলে বা বা বাজে চ্যাট করতে দেখে ফেলেছিলাম ছায়া আপু এবং তেভভিদ স্যার’কে আর একদিন স্বর্ণা খা খা খারাপ ছবি সেন্ড করতে দেখে ফেলেছিল বিথী আপু’কে আর সেদিন ইমাদ স্যারের ঘর থেকে বেড়িয়ে আপনার কাছে আসার সময় ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখতে পাই ফরেনসিক এক্সপার্ট রিমা ম্যাম এবং তেভভিদ স্যার’কে আর রইলো মিজান স্টাফের কথা উনি কিছুদিন আগে ড্রিংক করতে করতে আবোলতাবোল গিয়ে বকছিল আপনার গাড়ির ড্রাইভার আবুল ভাইয়ার কাছে।বেচারার আবুল ভাইয়া তখন ওসব কিছুই বোঝেনি কিন্তু রনি সবটা শুনে এসে কি ভেবে সবটা জানায় আমার কাছে।
ব্যাস,তারপর আমি দুইয়ে দুইয়ে চার করে ফেললাম।অতঃপর সবটা আজ ক্রিস্টাল ক্লিয়ার আমার কাছে।” ইমান হঠাৎ হাসতে হাসতে বললো,
.
– “তুমি অনেক ব্রিলিয়ান্ট মিম! সামনে তোমার একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ আছে কাজেই ওসব জাস্ট ফ্রেন্ড,বয়ফ্রেন্ড কে ভুলে যাও তোমার জন্য সেটাই ভালো হবে।” মিম লজ্জা পেয়ে দৌড়ে পালালো,ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “তোমাকে আমি আমার কলিগ হিসেবে দেখতে চাই নিজের পাশে।” মিম বললো,
– “আমি দেখতে চাই না ভাই! পারলে চিরিয়াখানার আটকে রাখতাম আপনাকে।” জেনারেল ইমাদ সাহেব হাসতে হাসতে বললে,
– “কি সমস্যা তোমাদের? শুধু খোঁচা মেরে মেরে কথা বলো একে অপরের সাথে?” ইমান বললো,
– “কি বলবো স্যার? প্রথম দিন এসে ওকে বকা দেওয়ার জন্য আমাকে নিজের শত্রু ভেবে বসে আছে।”
– “এতো শত্রুতা করে লাভ কি? বসে কথা বলে ঝামেলা মিটিয়ে নাও ভালোই হবে।” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “না স্যার! এই দুষ্টুমিষ্টি সম্পর্ক টা ভালোই লাগে।” ইমাদ সাহেব হাল্কা কেশে বললেন,
– “তা বিয়ে টিয়ে করতে চাও কবে? না কি? বিয়ের জন্য পাত্রী আমাকেই খুঁজতে হবে?” ইমান বললো,
– “স্যার! আপনি ও না? এখনো দেরি আছে।” দুপুরে মিম এসে ইমান’কে বলে,
– “এই যে গভীর জলের মাছ? সবটা জেনেও আপনি কেন তেভভিদ স্যার সম্পর্কে লুকিয়ে গেলেন আমার কাছে?” ইমান একটু ভাব নিয়ে বললো,
.
– “তুমি যেই কলেজের ছাত্রী আমি সেই কলেজের প্রিন্সিপাল ঠিক আছে? তাই নিজের ছাত্রীর একটু পরীক্ষা নিচ্ছিলাম আর সে পাশ করে গেছে।” মিম দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
– “হুমম! ফাজিল যেন কোথাকার? দেখে নেবো আপনাকে?” ইমান বললো,
– “কিভাবে দেখবে? কিছুমিছু বুক করতে হবে?” মিম বললো,
– “কেন? তেভভিদ স্যার যে ক্রিমি তে আক্রান্ত হয়েছিল আপনাকেও সেটায় ধরেছে? কি ভাই? সুতা ক্রিমি না গুড়া ক্রিমি? কোনটায় ধরেছে আপনাকে?” ইমান বিষম খেলো,জেনারেল ইমাদ,ব্রিগেডিয়া উল্লাস এসে হাসতে লাগলো ইমানের চেহারা দেখে,মিম গিয়ে ওর সেই বন্ধু’কে ফোন করলো,করে বললো,
– “কি হলো ঘন্টু সোনা? কি হয়েছে?” ভদ্রলোক চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
– “আমি দেখে নেবে! হ্যাঁ একদম বাঁশ দিয়ে ছাড়বো মেয়ে টা কে,ফাজিল কোথাকার? খেতে বসেছিলাম খেতেও দিলো না আমাকে।”
– “কেন?”
– “গুড়া ক্রিমি তার খুব ভালোলাগে।” স্পর্শীয়া চমকালো,তারপর বললো,
– “জনাব মেজাজ ঠিক করে ফোন করুন আমাকে।” ইমান ফোনের দিকে তাকিয়ে হাসলো,তারপর চুমু খেলো ওয়াল পেপার সেইভ করে রাখা স্পর্শীয়া’র আলতা রাঙা দু’হাতের ছবি টা তে।
এদিকে বন্ধু’র গুঁড়া ক্রিমির ব্যাপার টা ঠিক হজম হচ্ছিল না মিমের কাছে,তবুও সে এতো মাথা ঘামালো না,কিছুক্ষণ পরেই ইমান ডেকে পাঠালো ওকে।মিম গিয়ে ইমান’কে সরাসরি বললো,
– “স্যার! আপনি একটা ফোর টুয়েন্টি,এটা কি করে করতে পারলেন আপনি আমার সাথে? ইমান মৃদু হেসে বললো,
– “আমি কি করলাম? তুমি এসে হঠাৎ রাগ দেখাচ্ছ কেন আমার সাথে?”
– “কেন দেখবো না? আপনি যখন প্রথম থেকেই জানতেন এসব তেভভিদ স্যারের কাজ,তখন কেন এসে মিথ্যে বললেন আমার কাছে?”
.
– “বলেছি,আমার ইচ্ছে? বলবো কেন তোমাকে?”
– “আপনি একটা অসভ্য ইচ্ছে করছে আপনার কান টেনে দিতে।”
– “নিজে যেন ভালো মানুষ? বাচাল,খালি বকবক করবে কানের কাছে এসে।” মিম দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
– “খারাপ লোক একটা,দেখে নেবো আপনা’কে।” ইমান চোখ পাকিয়ে মিমের দিকে তাকিয়ে রইলো,মিম হনহন করে বেড়িয়ে গেলো ইমানের কেবিন থেকে।জেনারেল ইমাদ সাহেব দু’জনের ঝগড়া দেখে হাসতে লাগলেন,বললেন,
– “কি বলো বাবা! বিয়ের জন্য পাএী খুঁজে আনি?”
– “না স্যার! বললাম না আপনাকে?
– ” আর কতকাল আইবুড়ো হয়ে থাকবে? একবার না একবার ধরা দিতেই হবে তোমরা প্রিয়তমা’র কাছে।” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “স্যার! আমার একটা মেয়ে বেস্টফ্রেন্ড আছে আর আমি অনেক পছন্দ করি তাকে।” ইমাদ হাসলো,বললো,
– “মনের কথা টা জানিয়েছ তাকে?”
– “না স্যার! এখনো সে সুযোগ হয়নি,আসলে ভয় হয় যদি হারিয়ে ফেলি ওকে?”
– “আরে বাবা! একবার বলেই দেখ না? ভয় হচ্ছে রিজেক্টেড হওয়ার কথা ভেবে।” ইমান বললো,
– “না আসলে তা না স্যার! স্পর্শীয়া এখন চাইছে না বিয়ে-শাদি করতে।”
– “তারমানে,সে ও পছন্দ করে তোমাকে?”
– “হয়তো? কারণ আমি মজার ছলে বিয়ের কথাটা বলেছিলাম ওকে।”
– “ও বেশ সিরিয়াস হয়ে বললো,এখন বিয়ে করতে চায় না,তবে নিজের বাবা-মায়ের ঠিকানা দিতে অস্বীকার করেনি আমাকে।
.
জানেন স্যার! এই পাঁচ বছর অব্ধি আমার এবং সিলভানার সম্পর্ক টা বোধহয় ওর জন্যই টিকেছে! ও এমন একটা মেয়ে,বারবার আমাকে বুঝিয়েছে এবং মাথা ঠাণ্ডা রেখে সিলভানার সাথে বসে কথা ও বলতে বলেছে আর আমি ওকে কেন ভালোবাসবো না স্যার? ওর প্রতি ভালোবাসা আমার অনুভূতি থেকেই এসেছে,ও আমার কাছে না থাকলেও প্রতি মুহূর্ত আমি ওর উপস্থিতি অনুভব করি যেন ও আমার সাথেই আছে?
মেয়ে টা অনেক অমায়িক,সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি তার,তার মুখের কথাই যথেষ্ট আমার কাছে আর আমাদের আট বছরের বন্ধুত্বে আমি কখনো ওকে সামনা-সামনি দেখিনি,বারবার কল্পনা করেছি মেয়ে টা কে,ওর প্রতি অনুভূতি গুলো আমার জীবন্ত,আমি প্রতি মুহূর্তে অনুভব করতে পারি সে গুলো’কে এখন মনে হচ্ছে,ভাগ্যিস আমার বিয়ে টা হয়ে যায়নি,নয়তো আমি হয়তো পাগল হয়ে যেতাম ওর কথা ভেবে।” ইমাদ সাহেব ইমানের কথা শুনে হাসলো,তারপর ওকে বললো,
– “বলে দাও! লুকিয়ে রেখো না,নিজের অনুভূতি গুলো’কে।” ইমান হাসলো,বলল,
– “জ্বি স্যার! খুব শীঘ্রই বলে দেবো তাকে।” সকালে ইমান মিম’কে ডেকে বললো,
– “প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দাও! বাংলাদেশ সেনাবাহিনী’র পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সাতদিন ব্যাপি বিশাল বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে মিলিটারি একাডেমিতে।”
.
চলবে,,,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com