Breaking News

Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব – ৩১



ঠিক সাত দিন পরে তোমাকে সারাজীবনের জন্য নিয়ে আসবো নিজের কাছে।” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “আমি তো আপনার কাছেই আছি…! আর কতো টা কাছে আসতে হবে?” ইমান এগিয়ে এসে কিঞ্চিৎ ঝুঁকে টেবিলের ওপর থেকে নিজের ফোন টা হাতে নিয়ে বলল,
– “ঠিক যতোটা কাছে আসলে আমি ছুঁতে পারবো কিংবা অনুভব করতে পারবো তোমাকে?” লজ্জায় মিমের মুখ টা লাল হয়ে গেলো,তবুও ইমান’কে বললো,
– “বসে জান প্লিজ,খেয়ে জান,আমি আপনার জন্য রান্না করেছি একটু আগে।” ইমান তৎক্ষনাৎ মিমের পাশে বসে পড়লো,আবদার করে বলল,
– “একটু খাইয়ে দিতে পারবে আমাকে?” মিম ঝটপট রুই মাছের ঝোল দিয়ে ইমানের জন্য ভাত মাখিয়ে নিয়ে এলো,ইমান তৃপ্তি করে রুই মাছ দিয়ে ভাত খেলো মিমের হাতে…!
তারপর ইমান আয়েশ করে মাছের মাথাটা খেলো,শেষ পাতে মিম এক বাটি পায়েস এনে দিলো ইমানের হাতে…! ইমান পায়েস দেখে চমকে গিয়ে মিম’কে বলল,
.
– “আমি পায়েস খেতে ভালোবাসি এ কথা কখনো বলিনি তোমার কাছে।” মিম মিটিমিটি হেসে বলল,
– “বলার কি প্রয়োজন? আমি নিজ দায়িত্বে জেনে নিয়েছি রহমত চাচার কাছ থেকে।” ইমান হাসলো,বললো,
– “সমস্ত গোছগাছ সেরে নাও,আজ রাতে’ই কিন্তু আমরা দু’জন বেড়িয়ে পরবো ঢাকার উদ্দেশ্যে।” মিম বলল,
– “সব গোছগাছ কমপ্লিট,আপনি শুধু বলুন কখন বেরোতে হবে?” ইমান কম্বল মুড়ি দিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো,বলল,
– “আগে ভাতঘুম দেবো বউ! তারপর বলবো তোমাকে।” মিম বলল,
– “আচ্ছা,তাহলে আমি আসি? দেখা করে আসি সবার সাথে?” ইমান হঠাৎ মিম’কে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিলো,ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “না গো! তুমি এখন ঘুমবে আমার সাথে।” মিম চুপচাপ ইমানের পাশে শুয়ে পরলো,ইমান হাত-পা ওর গায়ে তুলে দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ওকে…! এরপর,
দু’জনেই ঘুমিয়ে গেলো,যখন চোখ খুললো তখন সন্ধ্যে ছয়’টা বাজে।অতঃপর তারা ফ্রেশ হয়ে যারযার ইউনিফর্ম পরে নিচে এসে বিদায় নিলো জেনারেল ইমাদ এবং ফিদান সহ আরো অনেকের কাছ থেকে।ইমান রওনা হওয়ার আগে সবাই’কে বললো,
– “বিয়ের দাওয়াত তো সবাই পেয়েছেন,আবার আলাদা আলাদা ভাবে সবাই’কে রিসেপশনের জন্য ইনভাইট করা হয়েছে।
.
এখন আশা করছি সবাই মিলে আমাদের বিয়েতে এবং রিসেপশনে যাবেন এবং মন খুলে আপনারা সবাই দোয় করবেন আমাদের সুখী সংসার জীবনের জন্যে।” লেফটেন্যান্ট নাজনীন কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলো কারণ মিম এসে হঠাৎ ইমানের হাত ধরে দাঁড়িয়েছে ওর পাশে।জেনারেল ইমাদ হাসিমুখে বললেন,
– “তোমরা চিরসুখী হও মা! আমি অবশ্যই উপস্থিত থাকবো তোমাদের ম্যাম’কে নিয়ে বিয়েতে…।” ইমান মিম’কে বলল,
– “তাহলে যাওয়া যাক…! ঢাকায় নিশ্চয়ই বাবা সব গোছগাছ করে ফেলেছে।” আড়াই কি তিন ঘন্টার পর মিম এবং ঢাকায় পৌঁছে দেখে,
বাসা থেকে সবাই তাদের এয়ারপোর্টে নিতে এসেছে।মিম মা’কে দেখে ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো,নাছিমা হাসতে হাসতে বললেন,
– “পাগলি মেয়ে একটা! কি হয়েছে?” মিম বলল,
– “এখন তুমি ভালো আছো আম্মু? শুনলাম হঠাৎ করেই তোমার খুব প্রেসার বেড়েছে?” নাছিমা বললেন,
– “হ্যাঁ,মা! তবে এখন ঠিক আছি,চিম্তা করতে হবে না তোমাকে।” মিম কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
– “সত্যি বলছ তুমি আম্মু?” নাছিমা হাসতে হাসতে মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
– “মিথ্যে বলবো কেন তোমাকে? চলো বাসায় চলো,মেয়ে টা আমার ওখানে থেকে থেকে ভালোমন্দ খেতে না পেয়ে শুকিয়ে একদম পাঠ কাঠির মতো হয়ে গেছে।” ইমান এগিয়ে এসে নাছিমা’কে বললো,
– “আর মা আমি?” নাছিমা ইমানের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললেন,
– “আমার ছেলেটার স্বাস্থ্য আরোও বেশি খারাপ হয়ে গেছে।মাঝখানে,একটু গোলগাল হয়েছিল এখন আবার কেমন হয়ে গেছে” নাফিম সাহেব স্ত্রী’র কথা শুনে হাসতে হাসতে বললেন,
.
– “আগে বাসায় চলো,তারপর না হয় দু’জন কে পাশাপাশি বসিয়ে খাইয়ে দেবে নিজের হাতে।” অতঃপর,
সবাই বাসায় ফিরে এলো,এসেই নাছিমা দু’জন কে খাইয়ে দিলেন সাথে সাথে।মিম খেয়েদেয়ে বাবা-মায়ের ঘরে এসে ঘুম।
ইমান মিম’কে খুঁজতে খুঁজতে এসে দেখে,মিম ঘুমিয়ে আছে।ও পাশে জায়গা খালি দেখে ঝটপট মিমের পাশে শুয়ে পরলো,
মিম সকালে উঠে দেখে,স্বামী এবং বাবা দু’জনের মাঝখানে শুয়ে আছে।নাফিম সাহেব বই টা টেবিলের ওপরে রেখে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন,
– “শুভ সকাল আম্মু।” মিম বললো,
– “হুমম! বাবা,শুভ সকাল তেমাকে…।” এরপর মিম ইমানের পাশ থেকে উঠে গেলো,ইমান ঘুম থেকে উঠে সোজা এসে সবার সামনে মিম’কে জিজ্ঞেস করলো,
– “উঠে এলে কেন বিছানা থেকে?” বেচারির মুখ টা লজ্জায় লাল,বলল,
– “এমনি! আসলে আমি রান্নার কাজে রান্নাঘরে সাহায্য করতে এসেছিলাম মা’কে।” ইমান একটু ধাতস্থ হয়ে মিম’কে বলল,
.
– “তুমি তোমার বিয়ের গহনাগাঁটি দেখেছ? শাড়ি টা কেমন লেগেছে?” মিম ইমানের হাতে কপির মগ টা দিয়ে বলল,
– “আমার হাসবেন্ড যখন এতো পছন্দ করে দুবাই থেকে নিজে গিয়ে বিয়ের শপিং করে এনেছে,তখন নিশ্চয়ই ভালো হয়েছে?” মিমের বড় দুলাভাই জায়েদ বলল,
– “বোন তুমি এতো টা শিওর হয়ে বলছ কিভাবে?” মিম বলল,
– “আমার হাতের ব্রেসলেট টা যখন আপনাদের এতো ভালো লেগেছে? তাহলে শাড়ি কিংবা গহনা পছন্দ হবে না কিভাবে?
জানেন? আমার ব্রেসলেট এবং রেগুলার ইউজের আংটি দু’টো আমার হাসবেন্ড কিনেছে।আমার পরনের শাড়ি,ব্লাউজ টাও তার পছন্দের আমার যখন কোনো সমস্যা নেই,তখন আপনাদের এতো সমস্যা হচ্ছে কোথা থেকে?” কেউ কোনো কথা বললো না সবাই চুপ করে আছে,তখন মিমের দূরসম্পর্কের এক ফুপু বলল,
– “নাক,কান,গলা খালি কেন তোমার? তোমার জামাইয়ের অকল্যান হবে।” মিম অবাক হয়ে ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো,ইমান হাসতে হাসতে বলল,
– “ফুপি! এধরনে কথা কে বলেছে আপনাকে? এগুলো আমি বিশ্বাস করি না,শুধু শুধু আপনি কেন ভয় পাইয়ে দিতে চাইছেন মেয়ে টা কে?” মিম কিছু গ্রাহ্য না করে দ্রুত পায়ে রুমে চলে এলো আর আর কানের দুল,গলার চেইন পরে ফেললো সাথে সাথে বড় বোন নেয়না’কে বলল,
– “আপু তুমি কিন্তু আজ অফিস থেকে ফিরে এসে আমাকে পার্লারে নাক ফোঁড়াতে নিয়ে যাবে।” নেয়না বোনের কথা শুনে হাসলো,ইমান এসে বললো,
.
– “আপু আপনি একটু জান! আমি কথা বলছি আপনার বোনের সাথে।” নেয়না হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলো,ইমান দরজা লাগিয়ে দিয়ে বলল,
– “আমি এগুলো বিশ্বাস করি না প্লাস আমি ও এগুলো মানি না মন থেকে আর তোমাকেও মানতে হবে না কারণ এগুলো ভিত্তিহীন আমি এই ধরনের কথাবার্তা কখনো শুনিনি আমার বাবা-মায়ের মুখে…। ” মিম চোখের জল মুছে বলল,
– “ফুপি যে বলল…!” ইমান বলল,
– “তাই বলে বিশ্বাস করতে হবে? আমার কথা শোনো,আমার কথা ভেবে তুমি কিছু পরবে না,কিছু পরতে হবে না তোমাকে যেখানে জন্ম-মৃত্যু সব আল্লাহ তাআ’লার হাতে সেখানে নাক ফুল,কানের দুল রক্ষাকবচ কি করে হয়? একটু বোঝাও আমাকে?।” মিম সাথে সাথেই ছুটে এসে ইমান’কে জড়িয়ে ধরলো,ইমান বলল,
– “আমি সত্যি বলছি,প্লিজ বিশ্বাস করো আমাকে।নাক ফোঁড়াতে হয় পরে ফোঁড়াও আমি বরং তখন ফরএভার মার্কের একটা ডায়মন্ড নোজ পিন কিনে দেবো তোমাকে? মিম ইমান’কে জড়িয়ে ধরে ওভাবেই বসে রইলো,ইমান বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রুমের বাহিরে নিয়ে এলো ওকে,তখন নিগার ভাইঝি’কে দেখে বললেন,
– ” এ কি? তোমার নাক,কান,গলা খালি কেন? কি চাও কি তুমি? ছেলেটার জন্য অকল্যান বয়ে আনতে এই বাড়ি থেকে?” ইমানের মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো,একটু রেগে গিয়েই বলল,
– “আপনার সমস্যা কি? আপনি কি বোঝায় চান ওকে? নাক ফুল,কানের দুল,হাতের চুড়ি যখন এতোটাই ম্যান্ডাটরি…!
.
তখন আপনার স্বামী হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলো কিভাবে? আপনি সেদিন নাক ফুল,কানের দুল,হাতের চুড়ি খুলে সারারাত ধরে বসে ছিলেন স্বামীর কাছে?” নিগার চুপ করে গেলো,ইমান মিম’কে হাত ধরে নিয়ে এলো নিচে।দেখতে দেখতে মিমের গায়ে হলুদের দিন এসে গেছে,
ও আজ একটা সিম্পল হলুদ রঙের সিল্ক জামদানী শাড়ি পরে সেজেছে নিজের গায়ে হলুদে…।
দু’হাত ভর্তী মেহেদী তার,মেয়ে টা কে দেখতে একদম অন্য রকমের সুন্দর লাগছে।ইমান বারবার আরচোখে চেয়ে চোখ বুলিয়ে নিজের বউ টা কেই দেখছে।
ইমানের গায়ে হলুদ শেষ করে মিম’কে হলুদ দেওয়া হয়েছে।মিমের হলুদ শেষে সবাই ওকে ধরাধরি করে ওর ঘরে নিয়ে এলো,তখন ইমান এসে বলল,
– “আমি একটু দেখা করতে চাই মিমের সাথে।” ইমানের হাবভাব দেখে সবাই বলাবলি করতে লাগলো,
– “নতুন জামাই! বউ না দেখে থাকতে’ই পারছেনা সে…!” নাছিমা এসে মিটিমিটি হেসে ইমান’কে মিমের ঘরে নিয়ে এলো,মিম দরজা খোলার শব্দ শুনতে পেয়ে ঘোমটা টেনে মুখ ঘুরিয়ে বসে পরলো অন্য দিকে।ইমান মিটিমিটি হাসতে হাসতে বললো,
– “বলছি,আমার গ্রে কালারের ট্রাউজার আর আকাশি কলারের টি-শার্ট টা খুঁজে দেবে?” মিম নিচের দিকে তাকিয়ে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বললো,
– “হুমম! একটু সরে দাঁড়ান ক্লোজেটের কাছ থেকে।” ইমান ক্লোজেটের কাছ থেকে একটু সরে দাঁড়ালো,মিম ক্লোজেট খুলতেই একটা সবুজ রঙের সাপ এসে পরলো ওর পায়ের কাছে।মিম হঠাৎ সাপ দেখে ভয় পেয়ে এক লাফে ইমানের কোলে চড়ে গেলো,ওর চেঁচামেচি শুনে বাড়ি শুদ্ধো সবাই ছুটে এসেছে।তখন নেয়না’র বড় ছেলে রাফসান হাসতে হাসতে বললো,
.
– “দেখো দেখো সবাই দেখো,আম্মি ভয় পেয়েছে।” ইমান মিটিমিটি হাসতে হাসতে বললো,
– “দেখো সোনা! ওটা প্লাস্টিকের সাপ! আসল সাপ আসবে কোথা থেকে?” নেয়না ছেলের কান টেনে ধরে বললো,
– “রুমে চলো তুমি! আজ মজা আমি দেখাচ্ছি তোমাকে।” ইমান মিমের গায়ে হাত বুলোতে লাগলো,নাফিম সাহেব বলল,
– “মেয়ে টা আমার খুব ভয় পেয়েছে।” নাছিমা বললো,
– “কাছেই তো মসজিদ আছে,পরা পানি নিয়ে আসেন তাতেই হবে।” ইমান মিম’কে জড়িয়ে কতক্ষণ বিছানায় ওর কাছে বসে রইলো,মিম ফিসফিস করে বললো,
– “আপনার সব জিনিস গুছিয়ে আমি ট্রলি ব্যাগে রেখে দিয়েছি অনেক আগে।” ইমান বলল,
– “হুমম,বুঝলাম! এখন কি খুব ভয় করছে? বলো আমায়? বলো আমাকে?” মিম তারপর একটু স্বাভাবিক হয়ে ইমান’কে বিদায় দিলো,ইমান বললো,
– “কালকেই নিতে আসবো তোমাকে,এরপর আর কখনো ভয় পেতে হবে না সারাক্ষণ সামলে রাখবো তোমাকে,তবে তোমার সেই বন্ধু?” মিম অবাক হয়ে বলল,
– “হ্যাঁ তার কি হয়েছে?” ইমান দুষ্টু হাসি দিয়ে যেতে যেতে বলল,
– “আফসোস! এখনো চিনতে পারলে না আমাকে?” মিম অবাক হয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো,পাশ থেকে ওর ছোটো বোন সাবিহা বললো,
.
– “আপু! ভাইয়া কিন্তু সেই,তোমার সেই বন্ধু…! আমরা সব শুনেছি তার মুখে।” মিম সাথে সাথেই অস্থির হয়ে দৌড়ে রুমে চলে এলো আর ফোন করলো সেই পুরনো নম্বর টা তে…। ইমান মুহূর্তে ফোন রিসিভ করে বলল,
– “একদম কান্নাকাটি করবে না।”
– “ঠিক আছে,কিন্তু আপনি আগে কেন আমাকে বলেননি?”
– “তাই বলে মারবে না কি আমাকে?”
– “জানি না,তবে কাল রাতে আপনার খুব খবর আছে আর হ্যাঁ নো ব্যাচেলর পার্টি।” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “আশ্চর্য! আমি ব্যাচেলর ছিলাম কবে? আমি গত সাড়ে নয় বছর ধরেই শুধু তোমার ছিলাম,শুধু তুমিই চিনতে পারোনি আমাকে।”
.
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com