Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব – ২৪
তবে আমার মনে হয় অনসূয়া,মিমের দিক থেকে কিছু না থাকলেও ইমানের দিক থেকে হান্ড্রেড পারসেন্ট সামথিং সামথিং আছে।” পাশ থেকে ব্রিগেডিয়ার উল্লাস বলে উঠলেন,
– “ম্যাম! আপনারা আবার প্লিজ এই আলোচনা ইমান সাহেবের সাথে বসে করবেননা নয়তো রেগে যাবে।” মেজর লাবণী বললেন,
– “লেফটেন্যান্ট নাজনীনের দেখলাম মন খারাপ,কেউ কিছু বলেছে তাকে?” কর্নেল আশরাফ মৃদু হেসে বললেন,
– “অহেতুক তর্কে জড়িয়ে এই মাএ বকা খেয়ে এলেন ইমান স্যারের কাছ থেকে।” ডক্টর অনিক বললেন,
– “ওনার খাওয়াই উচিত উনি অযথা অন্যের পারসোনাল ব্যাপারে নাক গলাবে আরে এই হলো ইমান স্যার উনি কি এমনি এমনি ছেড়ে দেবে?” প্রীতি বলল,
– “সেটাই যেখানে সবাই জানে ইমান স্যারের মিমের প্রতি সফট কর্ণার আছে।” কিয়ান বললো,
– “হুমম,সেটাই! এটা আমাদের কাছে পরিষ্কার ইমান স্যার মিম’কে হয়তো ভালোবাসে?” জেনারেল ফিদান সাহেব বললো,
.
– “হয়তো কি? সত্যি ভালোবাসে।” জেনারেল ইমাদ সাহেব সব শুনে হাসতে হাসতে বললেন,
– “যাক বাবা! একটা অগতির গতি হবে,অন্তত অনাথ ছেলেটা একটা গার্ডিয়ান পাবে আর মিম এমন মেয়ে ও নিশ্চয়ই ছেলে টা কে ভালো ভাবে সামলে নেবে।” উজান বলল,
– “হ্যাঁ স্যার,আমিও একমত আপনার সাথে! তবে এতো ভালোবাসার পরেও ইমান কখনো মেয়ে টা কে ফোর্স করেনি,ওর ক্যারিয়ার নষ্ট করার চেষ্টা করেনি এটা অনেক ভালো লাগে আমার কাছে।” জেনারেল ইমাদ বললেন,
– “শুধু কি ইমান? মিমের ও প্রশংসা করতে হবে,কারণ ও সবটা জানা সত্ত্বেও কখনো নিজেকে জড়ানোর চেষ্টা করেনি ইমানের সাথে আর ও ওর বাবা-মেয়ে মেয়ে সেটা বারবার প্রমাণ করছে এখানে এসে।” আড়াল থেকে সব শুনে এসে রাবা মিম’কে বললো,
– “মনে হচ্ছে,ওদিকে সবাই তোকে ধরে ইমান স্যারের সাথে বিয়ে দিয়ে দেবে?” মিম লজ্জা পেয়ে বলল,
– “সর দুষ্টু,অনুষ্ঠানের জন্য কি একটু ও তোরা সাজতে দিবি না আমাকে?” লেইলা বললো,
– “এতো সেজে কি করবি? এমনিতেই দু’জন পাগল হয়ে বসে আছে?” মিম গাল ফুলিয়ে বলল,
– “মাথা খাস না যা এখান থেকে।” সারা দুষ্টুমি করে বললো,
– “লাল শাড়ি পরলি কেন? তাও আবার বেনারসি? একদম বউ বউ লাগছে তোকে।” নীলার মুখ টিপে ধরে হাসতে হাসতে বলল,
– “এর মানে তোর বিয়ে কনফার্ম? দেখে এলাম ইমান স্যার সুট বুট পরে ফর্মাল জামাই সেজে অন্যান্য অফিসারদের সাথে।” মিম বলল,
.
– “থামবি তোরা? শোন,আমি কিন্তু এ ঘর থেকে বেরুচ্ছি না সন্ধ্যে নামার আগে।” জারিন বললো,
– “ইসস,বউ টা লজ্জা পেয়েছে! চল আমরা ঘোমটা দিয়ে ঢেকে দেই নয়তো নজর লেগে যাবে?” মিম জারিনের গায়ে আয়না ছুড়ে মেরে বললো,
– “বজ্জাত কোথাকার যাবি এখান থেকে?” নীলাসা বলল,
– “জারিন ভুল কি বললো?” মিম উঠে দৌড়ানি দিয়ে তাঁবু থেকে বের করে দিলো সব ক’টাকে,তবে ওরা ফিসফিস করতে করতে ইচ্ছে করে ইমান’কে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো,
– “আজ খুব সুন্দর লাগছে আমাদের স্যারের হবু বউ টা কে।” সবার কথা শুনে ইমান মিটিমিটি হাসলো,তবে বকা দিয়ে বললো,
– “তাঁবুতে ফিরে যাও! অনুষ্ঠান শুরু হবে রাতে।” অতঃপর ওরা এসে পা টিপে টিপে চোরের মতো তাঁবুতে ঢুকে পরলো,মিম একটা দাণ্ডা হাতে নিয়ে তৈরি হয়ে ছিল সবক’টা কে…স্বাগতম জানাতে! সারা এসে মিম’কে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “সরি! প্লিজ ক্ষমা করে দে,এই অনাহারী গুলো’কে…?” লেইলা,নীলাসা মিমের হাত থেকে দাণ্ডা টা কেড়ে নিয়ে বলল,
– “চল না তোর ফেভারিট গেইম ট্রুথ আর ডেয়ার খলবো আজকে?” মিম চটপট রাজি হয়ে গেলো,তারপর পাঁচজন মিলে খেলতে বসে গেলো একসাথে।” নীলাসা নিলো ট্রুথ,মিম ওকে বললো,
– “বল এতোদিন ধরে প্রেম করেছিস কয়জনের সাথে?” নীলাসা বলল,
– “ডজন খানেক তবে আট নম্বর টা রানিং আছে।” রাবা ডেয়ার নিলো,সারা বললো,
– “যা গিয়ে পানি ফিকে মা’র রায়হান স্যারের মুখে।” রাবা বললো,
– “আমি প্রাণ হারাবো,মরে যাবো ফাজলামো করো না আমার সাথে।” মিম উঠে বলল,
– “বিশ বার কান ধরে ওঠবস কর নয়তো দাণ্ডার বদলে আমি ঝাঁটা পেটা করবো তোকে।” রাবা ঝটপট কান ধরে ওঠবস করতে লাগলো,নীলাসা সারা’কে বললো,
– “বল আজ অব্ধি ক’বার মার খেয়েছিস আন্টির হাতে?” সারা হাসতে হাসতে বললো,
– “এই তো সেদিন একাডেমিতো আসার আগেও খেলাম,জুতো ছুড়ে মেরে ছিলো আমার দিকে।” রাবা হাসতে হাসতে লেইলা’কে বললো,
.
– “কি রে? চুল ছিঁড়তে চেয়েছিলি না? গিয়ে চুল ছেঁড় নাজনীন ম্যামের ভালোই হবে।”লেইলা বললো,
– “আমি এর মধ্যে নেই প্লিজ ক্ষমা কর আমাকে।” নীলাসা মিম’কে বলল,
– “তোমার ডেয়ার তাই তো? এখুনি ফোন করে আই লাভ ইউ বলো আর চুমা খাও আমাদের ইমান স্যার দুলা ব্রো’কে…!” মিম চোখ কাপলে তুলে বলল,
– “কি? কখনো সম্ভব না,এর চেয়ে ভালো তোরা আমাকে ব্যাগ পএ গুছিয়ে বাসায় পাঠিয়েদে।” সারা বলল,
– “কেন? কেন? জামাই’কে আই লাভ ইউ বলতে লজ্জা কিসের? বল না বল? দেখ সবাই কান পেতে আছে।”
– “ধুরর,এই তোরা কি জ্বালিয়ে মারবি আমাকে?”
– “আরে আমরা লিপকিস করতে বলিনি,আই লাভ ইউ বলে শুধু কয়েকটি হামি খাবি তাও মোবাইল ফোনে…!”
– “এর পর যে শাস্তি পেতে হবে? তার বেলায়?
– “আরে স্যার শাস্তি দেবে না তোকে।” মিম চুপচাপ ফোন করে ইমান’কে বললো,
– “আই লাভ ইউ।” কথা টা শুনেই ইমান যেন স্থির হয়ে গেছে হঠাৎ মিম একটু থেকে বলল,
– “গাল টা পাতুন।” কোনো কথা যেন বের হচ্ছে না ইমানের মুখ থেকে,পরক্ষণেই মিম ফোনের স্ক্রিনে কত গুলো চুমু খোলো,ইমান নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
.
– “আজ,তোমার খবর আছে।” বেচারি চুপচাপ,সবাই জানতে চাইলো কি হয়েছে? মিম তখন দাণ্ডা নিয়ে তাড়া করলো,ওরা যত দ্রুত সম্ভব বাহিরে চলে এলো তাঁবু থেকে।
রাতে অনুষ্ঠানে ইমান খেয়াল করে দেখলো,মিম একটু তাকাচ্ছে না ওর দিকে…! ও এদিক-সেদিক তাকিয়ে এর ওর সাথে গল্প করছে,কিন্তু আজ যেন চিনতেই পারছেনা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টা’কে…! তাই দেখে ইমান বলল,
– “একটু ওদিকে চলো,কিছু কথা আছে তোমার সাথে।” মিম বলল,
– “আমি এখন যেতে পারবো না স্যার! পরে কথা বলবো আপনার সাথে?” ইমান রাগ করে একটা চেয়ার লাথি মেরে ফেলে দিয়ে চলে গেলো,মিমের খুব খারাপ লাগলো তা দেখে তবে কিছুক্ষণ পর মিম অফিসারদের মুখে শুনতে পেলো,তারা বলাবলি করছে,
– “হাতে ব্যাথা পেয়ে ইমান স্যার! কোনো খাবার খাননি সকাল থেকে।” মিমের কেন যেন খারাপ লাগলো,সে দ্রুত পায়ে এসে ঢুকে পরলো তাঁবুতে,এরপর প্লেট নিয়ে খাবার নিতে রান্নাঘরে ছুটে এলো স্টাফ আকবর’কে বলল,
– “তাড়াতাড়ি খাবার দিন বেশি করে দেবেন স্টাফজি।”
– “ঠিক আছে,তবে তরকারি?”
– “বেশি বেশি দিতে হবে।”
– “না মানে,বুড়ী আজ কি আপনার পেটে রাক্ষস ঢুকেছে?”
– “না,সারপ্রাইজ! পরে জানাবো একদিন সময় করে আপনাকে?” আকবার হাসলেন,বললেন,
– “আচ্ছা এখন জান! তৃপ্তি করে খান।”
.
– “হুমম,ঠিক আছে।” অতঃপর মিম পিছনের রাস্তা থেকে ইমানের তাঁবুতে এসে ঢুকে পরলো,দেখতে পেলো ইমান চোখ লাল করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।মিম চুপচাপ এসে ইমানের পাশে বসলো,ওর মুখ তুলে জিজ্ঞেস করলো,
– “কেন আপনি না খেয়ে আছেন সকাল থেকে?” ইমান কিছু বলল না,চুপচাপ লাইট অফ করে কম্বল গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পরলো বিছানাতে…! নাজনীন ইমানের জন্য খাবার এনে দেখলো লাইট অফ তাই ফিরে গেলো তাঁবুর কাছ থেকে,তবে মিম নাছোড়বান্দা সে চুপচাপ এসে ইমানের কোলের মধ্যে ঢুকে পরেছে,কি ভেবে আহ্লাদী কণ্ঠে ইমানের চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বলল,
– “আমি খাইয়ে দেই? নিশ্চয়ই আপনার খুব খিদে লেগেছে?” অতঃপর ইমানের পেটের ওপরে হাত রেখে বলল,
– “আপনার পেট যে পেট নেই একদম মিশে গেছে।” ইমান চোখ বুঝে রইলো,মিম ওর ব্লেজারের কয়েকটি বোতাম খুলে দিলো নিজের হাতে।
.
ইমান হঠাৎ বিছানা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পরলো,মিম ওর হাত টেনে জোর করে বিছানায় বসিয়ে দিলো ওকে,ইমান আবারও উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু মিম ওর কোলে চেপে বসলো সাথে সাথে।ইমান মুখ ভার করে রইলো,মিম লাইট জ্বালিয়ে এক রকম জোর করে খাইয়ে দিতে লাগলো ওকে,ইমান চুপচাপ এক প্লেট মাংস ভাত খেয়ে নিলো,মিম পেটে চিমটি কেটে বললো,
– “বাব বাহ! এত্তো খিদে ছিলো আপনার পেটে?” ইমান বলল,
– “তোমার কি? কেন এসেছ? আমাকে চরিত্রহীনতার দায়ে ফাঁসাতে?” মিম হঠাৎ ইমান’কে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “ক্ষমা করে দিন! আমি আর কখনোই ট্রুথ আর ডেয়ার খেলবো না আপনার সাথে।” ইমান খেয়াল করে দেখলো মিম কাঁদছে,ও চোখের জল মুছে দিতে দিতে বলল,
– “কেঁদো না প্লিজ! আমার মতো অনাথ’কে ভালোবাসে?” মিম হঠাৎ ইমানের শার্টের কলার খামচে ধরলো,কেন যেন সে কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলো না ছেলে টা কে…!
তবে তখন হঠাৎ পায়ের শব্দ শুনতে পাওয়া গেলো,ইমান মিম’কে জড়িয়ে কম্বল গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পরলো বিছানাতে…! লেফটেন্যান্ট নাজনীন বললেন,
– “স্যার! আসবো?” ইমান বলল,
– “হুমম আসুন,বলুন কি হয়েছে?” নাজনীন বললো,
– “না মানে স্যার! আপনার জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলাম।”
– “কিন্তু আমার যে ডিনার করা হয়ে গেছে।”.
– ” কখন?”
– “তার কৈফিয়ত কেন আমি দেবো আপনাকে?”
– “না আসলে স্যার? ওটা কি?” ইমান মিম’কে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “কেন আমার কোলবালিশ! আজকে আনিয়েছি একাডেমি থেকে।” নাজনীন ইমানের কথা শুনে হাসলো,মিম মনেমনে বলল,
– দাঁড়া ব্যাটা! কোলবালিশ আমি আজ দেখাচ্ছি তোকে।” অতঃপর ইমান গলায় হাল্কা ব্যাথা অনুভব করলো,মিটিমিটি হাসতে লাগলো মিমের কাণ্ড দেখে,নাজনীন হাসিমুখে বললেন,
– “আচ্ছা স্যার! এখন আসি? শুধুশুধু বিরক্ত করলাম আপনাকে।” নাজনীন তাঁবু থেকে বেড়িয়ে গেলো,ইমান ঝটপট কম্বল টা সরিয়ে দিলো মিমের মুখের ওপর থেকে…! দেখলো,মেয়ে ঘুমিয়ে কাঁদা কিন্তু এখনো ওর গলা খামচে ধরে ঘুমিয়ে আছে।
.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com