Breaking News

Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব – ০৫



স্যার! দয়া করে আমার পারসোনাল স্পেসে ঢুকবেন না,অনুরোধ রইলো আপনার কাছে।” ইমান হাসলো,বললো,
– “হুমম হুমম,যাও যাও! নো ম্যাটার! ইট’স ওকে।” মিম দ্রুত পায়ে অডিটোরিয়ামে এসে নিজের জায়গায় বসে মনেমনে বলল,
– “কি ব্যাপার? স্যার,অদ্ভুত ভাবে কেন তাকিয়ে ছিলেন আমার দিকে? এখনো তাকিয়ে আছে কেন? কেন তাকিয়ে আছে ওভাবে লোকটা আমার দিকে?” ইমান বিড়বিড় করে বললো,
– “আশ্চর্য! আমি কি ভাবছি? এটা হতেই পারে না কোনো ভাবে,শুধুশুধু টাইম ওয়েস্ট,গলার ভয়েসে অনেক পার্থক্য আছে।” মিম গালে হাত দিয়ে বলে,
.
– “কখনো কাওকে দেখিনি এভাবে তাকিয়ে থাকতে কারো দিকে,অদ্ভুত! লোক একটা,মন চাইছে চোখ দু’টো উপরে নিতে।” কিছুক্ষণ পর,
মিম গান গাইতে স্টেজে ওঠার সাথে সাথেই মাথা ঘুরে পরে যেতে শুরু করে নিচে,তবে ইমান খুব দ্রুত ছুটে গিয়ে মিম’কে ধরে ফেলে এবং তাকে কোলে তুলে নেয় সাথে সাথে।” তা দেখে সাত্তার সাহেব মেয়ে সিলভানা’কে বললেন,
– “তুমি কি দেখে প্রেম করছ প্রিন্সেস? এই অনাথ এবং ক্লাসলেস ছেলেটির সাথে?” সিলভানা রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
– “বাবা! তুমি শুধু শুধু অহেতুক সন্দেহ করছ ওকে।” সাত্তার সাহেব বললেন,
– “প্রিন্সেস! তোমার ক্লাস টা ঠিক যায় না এই ছেলের সাথে।” ইমান মিম’কে ঝটপট নিজের বিছানায় এনে শুইয়ে দিলো,মেডিকেল অফিসার অনিক বললো,
– “ভয়ের কোনো কারণ নেই জাস্ট ওর ব্লাড প্রেশার টা কমে গেছে।” নীলাসা ভয়ে ভয়ে তখন ইমান’কে বললো,
– “স্যার! ও ক’দিন ধরে ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়া করছে না।” ইমান বলল,
– “এটাই হলো আসল রিজন,তাই মেয়ে টা অসুস্থ হয়ে পরেছে,অসুস্থ দেখতে লাগছে ওকে।” মাঝরাতে মিম একটু নড়েচড়ে উঠতেই,ইমান ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো পাশে বসে।
.
মিম তৎক্ষনাৎ ঘুমিয়ে গেলো,ইমান উঠে বারান্দায় গিয়ে ফোন করতে লাগলো তার এক নাম জানা বন্ধু’র কাছে,কিন্তু তাকে ফোনে পাওয়া গেলো না আর তাই ইমান মনখারাপ করে এসে বসে পরলো মিমের পায়ের কাছে।সকালে,
যখন মিমের চোখ খুললো,তখন ও দেখতে পেলো ইমান ওর হাত জড়িয়ে পাশেই ঘুমিয়ে আছে।ও ছিটকে দূরে সরে গেলো,তারপর একটা চিরকুট লিখে দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে গেলো ইমানের ঘর থেকে।ইমানের যখন ঘুম ভাঙলো,তখন দেখতে পেলো মিম বিছানায় শুইয়ে নেই,তবে একটা চিরকুট লিখে রেখে গেছে।ইমান সেটা হাতে নিয়ে বিছানাতে গা এলিয়ে দিয়ে দেখে তাতে ছোট্টো করে লেখা,”গ্রীন টি টা খেয়েনিন,বিছানার অপজিটে রাখা আছে।” ইমান কি ভেবে হাসলো? তারপর ঝটপট উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে এলো সে।মিনিট খানেক বাদে,সিলভানা এসে বললো,
– “রুমে চলো ইমান,কিছু কথা আছে তোমার সাথে।” ইমান এসে বলল,
– “দ্রুত বলো,সুইটহার্ট! আমার অনেক কাজ আছে।” সিলভানা বলল,
– “কি কাজ? কিভাবে সুস্থ করে তুলবে ওই মেয়ে টা কে?” ইমান বিরক্ত হয়ে বললো,
– “এভাবে কেন বলছ? ওই মেয়ে টা তোমার কি ক্ষতি করেছে?”
– “কারেনি,তবে তুমি কেন ছুটে গিয়ে কোলে তুলে নিতে গেলে ওই মেয়ে টা কে?”
– “সিলভানা ও অসুস্থ ছিল?”
.
– “হ্যাঁ তো? তোমার কি তাতে? তুমি কেন ওকে সারারাত এই ঘরে পাহারা দিতে গেলে? কেন তুমি ওর ব্যাপারে জড়াচ্ছ নিজেকে?” ইমান মেজাজ খারাপ করে বলল,
– “এতো সংকীর্ণ মন নিয়ে তুমি কি করে ছিলে গত পাঁচ বছর ধরে আমার সাথে? আমার যে প্রফেশন তাতে কি এইসব অকল্পনীয় কিছু নয় সিলভানা।”
– “ঠিক আছে,তাহলে এক কাজ করো! এই চাকরি টা ছেড়ে দাও।তারপর আমাদের কোম্পানি জয়েন করে নাও ভালোই হবে,সারাজীবন ঘরজামাই হয়ে থাকবে,টাকা-পয়সার অভাব চোখে দেখতে হবে না তোমাকে।” ইমান সিলভানা’কে ঝাড়ি মেরে বলল,
– “তোমার কি মনে হয়? আমার টাকা-পয়সার অনেক অভাব আছে? জানো বর্তমানে আমি যে বেতন পাই তা দিয়ে প্রতি মাসে কয়েক হাজার লোকের মুখে তিনবেলা খাবার তুলে দেওয়া যাবে?” সিলভানা নিজের জেদ বজায় রেখে ইমান’কে বললো,
– “আমাকে পেতে হলে তোমাকে আমার বাবার সমস্ত আবদার মেনে নিতে হবে।” ইমান কোনো ভণিতা না করে সোজাসুজি সিলভানা’কে বলল,
– “তাহলে আসসালামু আলাইকুম! আপনি এখন যেতে পারেন এখান থেকে,কারণ আমি কাও’কে ভালোবেসেছি বলে এই নয় যে নিজের দাসখত লিখে দিয়েছি তাকে।” সিলভানা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বেড়িয়ে গেলো,ইমান মনেমনে বললো,
.
– “তবে আমি এতদিন ভুল জেনে এসেছি তোমাকে?” তখন রফিক স্টাফ এসে ইমান’কে বলল,
– “স্যার! একটু নিচে আসুন,ইমাদ স্যার আপনাকে নিচে ডেকে পাঠিয়েছে।” ইমান যখন নিচে আসলো,তখন মিম এসে হঠাৎ আই লাভ ইউ বলে পালিয়ে গেলো সেখান থেকে।ইমান খুব চমকালো কিন্তু আবার রেগেও গেলো মিমের স্পর্ধা দেখে,ইমাদ সাহেবের সাথে দেখা করে ইমান মিম’কে ডেকে পাঠালো,সরাসরি জিজ্ঞেস করলো,
– “তুমি আই লাভ ইউ বললে কেন আমাকে?” মিম খুব ভয় পেয়ে গেলো,এতোদিন যে শক্তি সঞ্চয় করে ছিল তা যেন ফুরিয়ে গেছে? ইমান মিম’কে হঠাৎ ঝাড়ি মারলো,ও কাঁদতে কাঁদতে বলল,
– “সরি স্যার! আসলে ট্রুথ আর ডেয়ার গেইম খেলছিলাম সবার সাথে আর আমার ডেয়ার ছিল আপনা’কে আই লাভ ইউ বলা,প্লিজ স্যার ক্ষমা করে দিন আমাকে?” ইমান সব শুনে প্রচন্ড রেগে গিয়ে মিম’কে বললো,
– “যার সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করছ,তার সাথে গিয়ে শুয়ে পরো মজা দেবে তোমাকে।” মিম ফ্যাল ফ্যাল করে ইমানের দিকে তাকিয়ে রইলো,ইমান চেয়ার লাথি মেরে ফেলে দিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে।
নিজের কেবিনে বসে ইমান কিছু কাজ করছিল,তখন খেয়াল করে দেখলো নতুন একটা ফরেনসিক রিপোর্ট ওর টেবিলের ওপরে রাখা আছে।ও সেটা খুলে রিপোর্ট টা পড়ে দেখলো,রিপোর্টে তিন জন পুরুষ মানুষের সিমেন ট্রেস পাওয়ার কথা উল্লেখ করা আছে।ও কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফরেনসিক এক্সপার্ট ডক্টর রিমা এসে বলে,
– “স্যার! মিম যে জিনিস গুলো কালেক্ট করে দিয়েছে আপনাকে,এই আলাদা আলাদা ভাবে সিমেনের ট্রেস গুলো সেই প্রটেকশন গুলো তে পাওয়া গেছে।” ইমান চমকালো,বলল,
.
– “আর ইউ সিরিয়াস রিমা? তোমার কি মাথা ঠিক আছে?” রিমা বললো,
– “স্যার! সন্দেহের বশে আরো তিন বার টেস্ট করেছি,তবে রেজাল্ট বারবার একই এসেছে! এখন বিশ্বাস না করে উপায় নেই,ডেফিনিটলি বড়সড় কোনো ঘাপলা আছে? আর তাছাড়া একটু আগে মিমের সাথে দেখা হলো,ও নিশ্চয়ই আরো কিছু জানতে পেরেছে? কারণ আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
– “ম্যাম জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল,একটা মেয়ের জন্য কতটা ইফেক্টিভ হবে?” ইমান বলল,
– “দেখুন, গিয়ে বোধহয় নিজে খেতে চাইছে?” রিমা হাসতে হাসতে বলল,
– “মোটেও না স্যার! দেখলাম ও মিলিটারি একাডেমি’র ড্রেনেজ সিস্টেমের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে এখন কেসের এই অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে,কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পরার সম্ভাবনা আছে?” ইমান কিছু বললো না,হঠাৎ হাওয়ার বেগে বাহিরে বেরিয়ে এলো নিজের কেবিন থেকে,যতদ্রুত সম্ভব মিলিটারি একাডেমির ড্রেনেজ সিস্টেমের কাছে চলে এলো,এসে দেখলো,মিম জ্ঞান হারিয়ে পাশেই পরে আছে।
ও সাথে সাথেই মিম’কে আবারও কোলে তুলে নিলো,মিমের জ্ঞান ফিরতেই জিজ্ঞেস করলো,
– “স্যার,আমার স্কেচ গুলো কোথায়? কার কাছে?” ইমান বলল,
.
– “কোথায় স্কেচ? গিয়ে দেখি তুমি জ্ঞান হারিয়ে পরে আছো ড্রেনেজ সিস্টেমের কাছে।” মিম বললো,
– “যাক সমস্যা নেই স্যার! আমার প্ল্যান যেভাবেই হোক একভাবে কাছে লেগে গেছে।” ইমান অবাক হয়ে বললো,
– “কি প্ল্যান করেছ তুমি? বলনি কেন আগে?” মিম আমতা আমতা করে বললো,
– “বললে,যে আপনি আছোলা বাঁশ দিয়ে দিতেন আমাকে।”
– “আমি বাঁশ কেন দেব তোমাকে?” মিম মিটিমিটি হেসে বলল,
– “এখন বলবো না স্যার! আপাতত এটা সারপ্রাইজ থাক ঠিক আছে?” ইমান মিম’কে ঝাড়ি মেরে বললো,
– “ওই মেয়ে ওই? তুমি কি আবারো ফাজলামো করে ট্রুথ আর ডেয়ার খেলছ আমার সাথে?” মিম ইমানের কানে ফিসফিস করে বললো,
– “বেশি কিছু না স্যার! আমার ফেইক স্কেচ গুলো চুরি হয়ে গেছে।” ইমান জিজ্ঞেস করলো,
– “তবে?”
– “তবে আমাদের কাছে একটা প্লাস পয়েন্ট আছে,নিশ্চয়ই ড্রেনেজ সিস্টেমের ওখানে কাদামাটিতে আমরা দু’জন বাদে তৃতীয় কিংবা চতুর্থ জনের পায়ের ছাপ পরে আছে? দেখুন স্যার! আমরা অপরাধি’কে এই মুহুর্তে নাই বা শনাক্ত করতে পারলাম তবে কাদামাটি থেকে ছাপ তুলে নিয়ে অন্তত তার পায়ের জুতোর মাপ টা বোঝা যাবে?” ইমান চমকে নিজের গালে হাত দিয়ে মিম’কে বললো,
– “এতো বুদ্ধি নিয়ে ঘুমাও কেমনে রাতে?” মিম কিছু বলতে যাবে,তখন ইমান বলে,
– “ফারদার একা একা এখানে-সেখানে গেলে তোমাকে গুম করে দেবো বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে।”
.
চলবে,,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com