Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব – ১৬
শাড়ি পরে দৌড়াদৌড়ি করছ? সাবধানে হাঁটাচলা করো,লেগে যাবে,নয়তো আবার আজকাল মেয়ে দেখতে আসলে পাত্রপক্ষ কত কি দেখে?”
মিম ইমানের কথা কানে তুললো না,অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেলো মিনিট দশেক বাদে,
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি তাদের বক্তব্য রাখলেন এবং ইমাদ সাহেব ও নিজের বক্তব্য পেশ করলেন নতুনদের উদ্দেশ্যে,তারপর ইমান বক্তব্য রাখলো….!
অতঃপর নেহার কোরআন তেলাওয়াত এবং ইন্দ্রশীষের গীতা পাঠ দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পঞ্চাশ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে।কিছুক্ষণ পর,
আবেদ এসে একটা কবি আবৃতি করলো,তারপর রনি একটা গান গাইলে স্টেজে এসে,এরপর মিম’কে ডাকা হলো একক নৃত্য পরিবেশন করতে।মিম দেশাত্মবোধক গানে নাচলো,তার গান এবং নাচ দু’টোই খুব ভালো লাগলো সবার কাছে।
তারপর রনি এবং সাদিয়া মিলে ডুয়েট গান টা গাইলো,কিছুক্ষণ পর,
আরাব এসে একটা কবিতা আবৃতি করলো সবার উদ্দেশ্য…!
অতঃপর চমক হিসেবে রাখলো মুক্তিযুদ্ধের এক অংশ,যে নাটক দেখে রীতিমতো সবার চোখে জল এসে গেছে।নাটক শেষে মিম হঠাৎ গায়ের বধূ সেজে স্টেজে উঠলো,ইমান চমকে গিয়ে ইমাদ সাহেব’কে বললো,
– “স্যার! এ আবার কি চমক দিতে এসেছে?” ইমাদ সাহেব মিটিমিটি হাসলো,মিম হঠাৎ চিৎকার করে করে কাঁদতে লাগলো মেঝেতে গুটিশুটি মেরে বসে।তখন আচমকা পাশের রুম থেকে সারা এসে মিমের গায়ে মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললো,
.
– “আরে ভাবি মরা কান্না কাঁদছেন কেন? কি হয়েছে?” মিম কাঁদতে কাঁদতে হঠাৎ থেমে গিয়ে বললো,
– “আমি কাঁদছি কেন ভাবি? কি হয়েছে ছিল আমার? বলবেন আমাকে?” সারা চমকে গিয়ে বললো,
– “আমি কি করে বলবো ভাবি? আমি জানি না তো কি হয়েছে?” মিম হঠাৎ সারা’ক চড় মেরে বললো,
– “জানো না কেন তুই বেয়াদব? কেন এসেছ তুই আমার কাছে? তোর দোষ,তোর জন্য আমি ভুলে গেছি কেন কাঁদছি? বেরিয়ে যা,আরে দূর ‘হ’ আমার চোখের সামনে থেকে।” সারা চমকে গালে হাত দিয়ে মিমের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো,অডিটোরিয়ামে যারা কাঁদছিল সবাই হাসতে লাগলো দু’জনের নাটক দেখে,সারা হঠাৎ পায়ের স্যান্ডেল খুলে হাতে নিয়ে মিম’কে দৌড়ানি দিলো,বললো,
– “তোর কান্না শুনে,তোকে থামাতে এলাম আর তুই কি করে মারলি আমাকে?” মিম ও মা গো,বাবা গো বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে করতে নেমে গেলো স্টেজ থেকে।
ইমান নিজের পেট চেপে ধরে হাসতে লাগলো,বেচারার এখন কষ্ট হচ্ছে হাসতে হাসতে শ্বাস নিতে।মেজর কিয়ান এক গ্লাস পানি ইমানের দিকে এগিয়ে দিলো,হাসতে হাসতে বললো,
– “বড় ভাই এর আগে কখনো এতো হাসতে দেখিনি আপনাকে।” ইমান নিজেকে সামলে নিয়ে কিয়ান’কল বললো,
– “আন্দাজ করেছিলাম! মিম যখন স্টেজে উঠেছে,তখন কিছু একটা ঘটাবে।” ব্রিগেডিয়ার উল্লাস হাসতে হাসতে বললেন,
.
– “শুধুশুধু ঝগড়া কি করে করতে হয় ওদের কাছ থেকে শিখতে হবে? লাইক সিরিয়াসলি? এটাও হয়? প্লিজ বোঝান আমাকে?” ইমান বললো,
– “চড় টা হঠাৎ করে যেভাবে মারলো আর সারা যে দৌড়ানি দিলো,দু’টোই বেশ ভালো লেগেছে।” এদিকে মেকআপ রুমে এসে সারা মিম দু’জনেই হাসতে হাসতে শেষ,সারা বলল,
– “দেখ! চড় খেয়ে আমার গাল জ্বলে গেছে।” মিম ওর গালে চুমু খেয়ে বললো,
– “সরি! সোনা,বুঝতে পারিনি,রাগ করিস না প্লিজ?”
– “ঠিক আছে।” তখন হঠাৎ ইমান এসে মেকআপ রুমে ঢুকলো,সারা’কে চোখের ইশারা করে বললো বেড়িয়ে যেতে।মিম গায়ের বধূর বেশ ছেড়ে শাড়ি পরে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে দেখে ইমান পায়ের ওপরে পা তুলে সোফায় বসে আছে।তাতে ও কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললো,
– “স্যার! কিছু বলতে এসেছেন আপনি আমাকে?” ইমান হঠাৎ করেই হাসতে হাসতে বললো,
– “তোমাদের নাটক টা খুব ভালো ছিলো।আচ্ছা তুমি কি রাগ করেছ আমার সাথে?”
– “কোই না তো স্যার? আপনার হঠাৎ এমন কেন মনে হলো?”
– “কারণ তুমি গতকাল থেকেই ইগনোর করছ আমাকে।” মিম বললো,
– “তেমন কিছু না স্যার! সারা আবার কোথায় গেলো? আমাকে তৈরি হয়ে অডিটোরিয়ামে যেতে হবে।” ইমান বললো,
– “তৈরি তুমি হয়েই আছো,সাজুগুজু করে নাও আয়নার সামনে বসে।”
– “না মানে স্যার! আসলে…”
.
– “কি আসলে? চলো সবাই তোমার অপেক্ষা করে আছে।” মিম স্টেজে উঠলো,যৌথ নৃত্য পরিবেশন করতে ডেকে পাঠালো আধরা,লামিয়া,লেইলা এবং রাবা’কে ওরা স্টেজে ওঠার পর মিম সাইডের সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগলো,তখন হঠাৎ শাড়ির কুঁচি গুলো খুলে গেলো বেচারির পায়ে বেঁধে।ব্যাস! এইটুকুনি ইমানের নজরে পরতেই ও উঠে এসে মিম’কে ধরে সবার অগোচরে নিয়ে এলো ব্যাক স্টেজে।অতঃপর ফিসফিস করে বললো,
– “তাড়াতাড়ি শাড়ির কুঁচি গুলো ঠিক করে নাও,আমি ধরে দিচ্ছি কুঁচি গুলো’কে আর এখনে কেউ আসবে না,ভয় পেয়ো না,ঠিক আছে?” মিম মাথা নাড়লো,ইমান পায়ের কাছে বসে ধরে দিলো কুঁচি গুলো’কে।
ও ঝটপট কুঁচি গুলো গুঁজে নিলো যখন, ইমান তখন ব্যস্ত হয়ে পরেছিল অন্য দিকে তাকিয়ে ফোন ঘাটতে।তবে এই সুযোগে মিম চলে আসার চেষ্টা করতেই ইমান ওর পথ আটকে দাঁড়িয়ে বললো,
– “আমি জানি তুমি খুব কষ্ট পেয়েছ আমার এই রূপ দেখে,তবে বিশ্বাস করো তুমি! মিম আমি তখন ছিলাম না নিজের মাঝে।” মিম বললো,
.
– “হুমম! বুঝলাম স্যার,প্লিজ এবার যেতে দিন আমাকে?” ইমান বললো,
– “যদি না দেই?”
– “তাহলে কি জোর ধরে রাখবেন আমাকে?” ইমান কিছু বলতে পারলোনা,দেখলো ধীরে ধীরে জল গড়িয়ে পরছে মিমের চোখ থেকে।মিম চলে যেতে চাইলো,ইমান হঠাৎ বুকে জড়িয়ে ধরলো ওকে।মিম কাঁদতে লাগলো,ইমান বললো,
– “ক্ষমা করে দাও! প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমাকে।” মিম বললো,
– “দিয়েছি!”
– “তাহলে কাঁদছ কেন এভাবে?’
– ” জানি না।”
– “ওহ! তাহলে তুমি ভয় পাচ্ছ,তোমার জাস্ট ফ্রেন্ড শুনলে রাগ করবে তোমার সাথে? প্রয়োজনে আমি তোমাকে বিয়ে করবো,যদি চাও এখুনি বিয়ে করে নেবো তোমাকে।” মিম হঠাৎ ইমানের মুখ চেপে ধরে বললো,
– “পাগল আপনি? প্লিজ স্টেজে চলুন! সবাই খুঁজছে আপনাকে।” ইমান মিমের চোখের জল মুছে দিলো,মিম খেয়াল করে দেখলো এই মানুষ টার চোখ দু’টো লাল হয়ে গেছে।তবুও আমতা আমতা করে বললো,
– “প্লিজ চলুন স্যার! সবাই আপনাকে খুঁজছে।”
.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com