Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব – ০৪
স্যার! আমি আপনাকে ওয়াদা করছি আজ,খুব তাড়াতাড়ি আমাদের এই সমস্যার সুরাহা হবে এবং আমি নিজে বসে ফ্রী হয়ে কথা বলবো মিমের সাথে।” ঠিক তার কিছুক্ষণ পর,
একটা তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বাজে ভাবে ইমানের ঝগড়া হয়ে যায় সিলভানার সাথে।ইমান তারপর তড়িঘড়ি করে মিলিটারি একাডেমি থেকে বেরিয়ে যায় এবং ঠিক তার দু’দিন পরে একাডেমিতে ফিরে আসে।মিমের সে নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই সে বেশ ভালোই আছে,ইমান হঠাৎ মিমের পাশে বসে ওর দিকে একটা সেভেন আপের বোতল এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
– “এখন কেমন আছো তুমি? তোমার শরীর কেমন আছে?” মিম বললো,
– “আলহামদুলিল্লাহ ভালো স্যার! আপনার কি আর কিছু জিজ্ঞেস করার আছে?” ইমান মিটিমিটি হেসে বলল,
– “রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে না তোমার? তুমি তখন তোয়াক্কা করো না কাও’কে? মুখে যা আসে বলে দাও,এরপর রিলাক্স হও,আমি এটাই বুঝলাম এতোদিন ধরে তোমাকে দেখে।” মিম প্রসঙ্গ পাল্টে ইমান’কে বলল,
– “স্যার! পুলিশ অফিসার এসেছিল গতকাল’কে,আমার স্টেটমেন্ট নিলো,তবে আমার মনে হচ্ছে আপনার কথা বলা উচিত অন্তত একবার ছায়া এবং বিথী আপু’র সাথে।” ইমান বললো,
– “বলেছি,তবে মনে হয় না ওই মেয়ে দু’টো এতো সহজে মুখ খুলবে।সবার কাছেই এক কথা বলে বেড়াচ্ছে,এতে আমাদের সন্দেহ আরো প্রবল হচ্ছে।” মিম বলল,
– “স্যার! আপনি যদি অভয় দেন,আমি তাহলো কিছু কথা বলতে চাই আপনা’কে।” ইমান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
.
– “ভয় পাচ্ছ কেন? বলো? আমি কথা শুনতেই এসেছি তোমার কাছে।” মিম একটু দম ফেলে বললো,
– “স্যার! আমার মনে হচ্ছে ওই ভদ্রলোকের সাথে ছায়া এবং বিথী আপু দু’জনের শারীরিক সম্পর্ক আছে।
না মানে ওরা অনেক বার আমাকে থ্রেড করেছে,ইনডিরেক্টলি বলছে,আমি কেন ঢুকছি ওদের পারসোনাল স্পেসে? এর মানে আমি কি বুঝবো স্যার! বলুন আমাকে? আর তাছাড়া গতকাল দুপুরে আমি ওদের ডাস্টবিন চেক করে এমন একটা জিনিস পেয়েছি যেটা ইয়ের কাজে লাগে।” ইমান অবাক হয়ে মিম’কে বললো,
– “কি’য়ের কাজে লাগে?” মিম কিছু বলতে পারছেনা দেখে ইমান উঠে আবারও ক্যাপ্টেন প্রীতি’কে পাঠিয়ে দিলো মিমের কাছে,তবে মিম লজ্জা পাচ্ছে বুঝতে পেরে ইমান মিম’কে আড়াল থেকে বলল,
– “ব্যাপার না! তুমি একটা চিঠি লিখে বরং পাঠিয়ে দিও তোমার বিশ্বস্ত কারো হাতে।আমি বুঝতে পারছি তোমার হয়তো কিছু কথা মুখে আনতে অসুবিধে হচ্ছে,তবে লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু হয়নি তাতে।” মিম তখন ঝটপট একটা চিঠি লিখে প্রীতির হাত দিয়ে পাঠিয়ে দিলো ইমানের কাছে।
রাতে,ইমান চিঠি টা পড়তে বসলো,পড়ে বুঝতে পারলো মিম কেন লজ্জা পাচ্ছিল আর ভয় পাচ্ছিল কথা গুলো বলতে ওর কাছে।অতঃপর ইমান সকালে মিম’কে বলল,
– “তুমি যে জিনিস গুলো ডাস্টবিন থেকে পেয়েছে,তা কি ফেলে দিয়েছ না আছে তোমার কাছে?” মিম ঝটপট একটা শপিং ব্যাগ ইমানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে দৌড়,ইমান মিটিমিটি হাসলো ওর পালিয়ে যাওয়া দেখে,মনেমনে বলল,
– “মেয়েটি লজ্জা ও পায়? অথচ আজ অব্ধি আমি অন্য রূপে দেখেছি তাকে।” রাতে সিলভানা নিজের বাবা’কে অনুষ্ঠানে নিয়ে এলো,ইমান’কে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে।তারা পাশাপাশি বসে গল্প করছিল তখন মেজর কিয়ান বললো,
.
– “আজ মিম’কে দেখলাম অনেক সুন্দর লাগছে।” কথা টা শুনে ইমান পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখতে পায় মিম একটা সাদা শাড়ি পরে হাল্কা সাজে রাতের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এসেছে।
ও যখন এসে নিজের সিটে বসলো,পাশ থেকে লেইলা বলল,
– “একটা কালো টিপ পারলে অসম্ভব সুন্দর লাগতো তোমাকে।” মিম দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বললো,
– “আরে ধুরর,মনে ছিলনা! যাগগে এভাবে কি খারাপ লাগছে? আর এমনি তেও কপালে ব্যান্ডেজ বাঁধা এতো সেজেগুজেই বা কি হবে?” তখন রানু এসে মিমের গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
– “কেন জুনিয়র? তোমার তো সাজতে খুব ভালো লাগে?” ওমনি সারা নিজের বটুয়া থেকে একটা বক্স বের করে বলে,
– “এর জন্যেই আমার ব্যাগে সবকিছু থাকে,দাঁড়াও বান্ধবী এখুনি সাজিয়ে দিচ্ছি তোমাকে।” মিম হাসলো,সারা একটা কালো টিপ পরিয়ে দিলো ওকে,প্রিয়ম মিম’কে আই লাইনার পরিয়ে দিলো ঠিক তখন নাফিম সাহেব ফোন করলেন মেয়ের কাছে,নীলিমা ফোন রিসিভ করে লাউডস্পিকারে রাখলো,নাফিম সাহেব অভিমান করে মেয়ে’কে বললো,
– “আম্মু তুমি ভিডিও কলে কেন কথা বলতে চাও না আমাদের সাথে? তোমার আম্মু আপুরা মন খারাপ করছে,আমার অস্থির অস্থির লাগছে,রাতে ঘুম হচ্ছে না ক’দিন থেকে।” মিম বললো,
– “ওয়েট বাবাই! আমি এখুনি ভিডিও কল করছি ঠিক আছে?” সবাই হয়ে তাকিয়ে রইলো মিম মাথায় হাত দিয়ে উজান’কে বলল,
– “ভাই তোর টুপি টা কিছুক্ষণের জন্য ধার দে আমাকে।” উজান নিজের টুপি টা খুলে মিম’কে দিলে,মিম ভিডিও কল দিয়ে বলল,
.
– “দেখেছ বাবা? তোমার মেয়ে একদম ঠিক আছে?” পাশ থেকে নাছিমা বলল,
– “তুমি সত্যি ঠিক আছো মা? ক’দিন ধরে আমার খুব অস্থির অস্থির লাগছে।” মিম হাসিমুখে বলল,
– “আই এম ফিট এন্ড ফাইন মা! তুমি শুধুশুধু ভয় পাচ্ছ? আরে কাঁদছ কেন এভাবে? বলেছি তো? আমি ক’দিন ধরে প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যস্ত,তাও এমন করছ কেন তোমরা আমার সাথে?” নাছিমা হাসতে হাসতে বলল,
– “আচ্ছা ঠিক আছে মা,সাবধানে থেকো,তবে তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।” মিম বলল,
– “বাবার রাগ পরেছে? বাবা’কে আই লাভ ইউ বলে দিয়ো মা আমার তরফ থেকে।” নাছিমা মেয়ের কথা শুনে হাসলেন বললেন ঠিক আছে।তারপর মিম ফোন রেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো,ইমান মিম’কে বলল,
– “এতো বড় মিথ্যে টা বললে তুমি বাবা মায়ের কাছে?” মিম বলল,
– “আমার বাবা-মা তো? আমি জানি,এতো ভাবতে হবে না স্যার আপনাকে।” তখন ইমাদ সাহেব এলো,মিমকে অনুরোধ করে বলল,
– “মা আজ একটা গান গেয়ে শোনাবে আমাদের সবাই’কে?” মিম বলল,
– “একট গিটার হলে ভালো হতো স্যার! গিটার বাজিয়ে গান গাইতে খুব ভালো লাগে।” ইমান মিম’কে নিজের গিটার টা আনিয়ে দিলো,মিম সেটা নিতে চাইলো না ওর কাছ থেকে।ইমানের এটা খুব গায়ে লাগলো,মনে হলো যেন মিম অপমান করলো তাকে? কিছুক্ষণ পর,
.
মিমের কাছে একটা ফোন এলো,সাথে সাথে মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠলো তার ঠোঁটের পাশে।ও কল টা রিসিভ করে অডিটোরিয়ামের বাহিরে চলে গেলো,অপর পাশ থেকে লোকটা বলে উঠলো,
– “সরি অঘোষিত বউ! বেশ ক’দিন ধরে ব্যস্ত ছিলাম বিভিন্ন কাজে।” মিম হাসতে হাসতে বলল,
– “তাতে কি হয়েছে জনাব? আপনার গালফ্রেন্ড জানলে আপনাদের ডিভোর্স ফাইনাল হয়ে যাবে।” ওপর পাশ থেকে মানুষ টা হাসতে হাসতে বলল,
– “আচ্ছা তুমি কি রাগ করোনি আমার সাথে?” মিম বলল,
– “না রাগ করব কেন? আচ্ছা এখন রাখি? আমি একটা অনুষ্ঠানে মধ্যে আছি।”
– “ঠিক আছে,তবে জানো কি? খুব মিল আছে তোমার আমার মাঝে?”
– “মানে?”
– “মানে,আমিও একটা অনুষ্ঠানে আছি,এই ফ্রী হয়ে একটু কথা বলে নিলাম তোমার সাথে।” মিম বললো,
– “আচ্ছা রাখি ভালো থাকবেন আর সাবধানে চলাফেরা করবেন রাস্তাঘাটে।”
– “বিশ্বাস করো,যদি এভাবে আমার প্রেমিকা আমাকে বলতো না? আমি ধন্য হয়ে যেতাম,নিজেকে উৎসর্গ করে দিতাম তার কাছে।” অতঃপর কল কেটে মিম পেছনে ফিরে দেখে,ইমান ফোন হাতে নিয়ে অদ্ভুত ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মিম ওর পাশ কাটিয়ে যেতে লাগলেই ইমান ওকে জিজ্ঞেস করে,
– “তোমার কি বয়ফ্রেন্ড আছে?” মিম বললো,
– “স্যার! দয়া করে আমার পারসোনাল স্পেসে ঢুকবেন না,অনুরোধ রইলো আপনার কাছে।”
.
চলবে,,,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com