Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব – ২৬
স্যার জানেন? আমার কেন যেন ভয় হয় নাজনীন ম্যাম’কে দেখে আর উনি না কেমন যেন হুটহাট এর-ওর পারসোনাল স্পেসে গিয়ে ঢোকে।
সেদিন উনি আমার ফোন ঘেঁটেছিলেন আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক আছে ভেবে আমি ওনার সম্পর্কে আপনার কাছে কোনো নালিশ করতে আসিনি শুধু আমার খারাপ লাগা টুকু শেয়ার করলাম আপনার সাথে।”
ইমান মৃদু হেসে তখন মিমের হাত চেপে ধরে বলল,
– “সত্যি কি কোনো সম্পর্ক নেই আমাদের মাঝে?” মিম বলল,
– “ইয়ে মানে হয়তো প্রশিক্ষক এবং প্রশিক্ষনার্থীর সম্পর্ক আছে?” ইমান হাসতে হাসতে বলল,
– “বুঝে ও না বোঝার ভান করে থাকলো,আমি বলবো আরে বেশি কিছু আছে।” মিম তৎক্ষনাৎ ইমান’কে বাহানা দিয়ে নিজের তাঁবুতে ফিরে এলো,কিছুক্ষণ পর,
শুনতে পেলো সাদিয়া চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছে,
– “আরে সাপ সাপ,কামড়ে দেবে প্লিজ কেউ এসে বাঁচাও আমাকে।” মিম সাথে সাথে বাহিরে ছুটে এসে দেখে,সাদিয়া যেখান টায় দাঁড়ানো ঠিক তার মাথার ওপরে একটা নির্বিষ সাপ কুন্ডলী পাকিয়ে বসে আছে।ও মুহূর্তেই সাদিয়ার হাত টেনে গাছের নিচ থেকে সরিয়ে এনে বলে,
.
– “আরে ভাই সাপ দেখে ইচ্ছে মতো চেঁচামেচি করলে কি হবে? গাছে নিচ থেকে সরে গেলেই হয়,তা না বাঁদরের মতো হাত-পা ছুড়ে ছুড়ে লাফাচ্ছে।” মিমের কথা শেষ হতে না হতেই ও খেয়াল করে দেখে অফিসারেরা সবাই ও কথা শুনে মুখ টিপে টিপে হাসছে।কর্নেল রায়হান সাপ টা ধরে নিরাপদ দুরত্বে ছেড়ে এলেন,তারপর মিম’কে বললেন,
– “মেয়ে তোমার অনেক সাহস আছে।” মিম বললো,
– “স্যার! আমি আমার বাবার মেয়ে,সবাই এটাই বলে আমাকে।” রায়হান জিজ্ঞেস করলেন,
– “তোমার বাবা বর্তমানো কোথায় কর্মরত আছে?” মিম বেশ গর্ব করে বলল,
– “স্যার,আমার বাবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন।রিটায়ার্ড করেছেন আমার আড়াই বছর বয়সে এখন তিনি একজন পলিটিশিয়ান আই মিন গত তিন বছর ধরে আমার বাবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গ্রামের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হচ্ছে আর তিনি অনেক সৎ এবং নির্ভীক যেটা আমাকে বারংবার সামনের দিকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে আর এছাড়াও আমার বাবার ফ্যা-মলি বিজনেস এবং আমাদের নিজেদের মাছের ঘের ও আছে।” তখন ইমান মৃদু হেসে বললো,
.
– “যাগগে ভালো’ই বিয়ের পরে বিনামূল্যে ঘেরের মাছ খাওয়া যাবে?” মিম উঠে দৌড়,রায়হান হাসতে হাসতে বলল,
– “আপনি শুধু শুধু লাগেন কেন মেয়েটির পিছে?” ইমান কাফির মগে এক চুমুক দিয়ে বলল,
– “কারণ আমি নিজেই কথা বলেছি আমার শশুড় মশাইয়ের সাথে! আর উনি নিতান্তই বেশ ভদ্রলোক,চট করে আজকাল এমন লোক দেখা যায় না রায়হান।”
– “ঠিক আছে,এর মানে যা শুনছি সব ঠিক? আপনি বেশ পছন্দ করেন মেয়ে টা কে? অবশ্য অপছন্দ করার মতো কিছু’ই নেই,নজরকাঁড়া অনেক বিষয় ওর মধ্যে আছে।” ইমান হাসলো,রায়হান বলল,
– “বিয়েতে কিন্তু দাওয়াত দিতে হবে।” ইমান বলল,
.
– “অবশ্যই জনাব,বউ বাচ্চা নিয়ে উপস্থিত থাকতে হবে।” রায়হান হাসলো,বলল,
– “জ্বি,কোনো সন্দেহ নেই তাতে।” মিম গিয়ে ওর বন্ধুদের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করতে লাগলো,তবে হঠাৎ একটা জিনিস মিমের নজরে আসে আর ও দ্রুত ছুটে এসে নাজনীন’কে বলে,
– “ম্যাম! আমি একটা রাসেল ভাইপার’কে ঢুকতে দেখেছি আপনার তাঁবুতে।” নাজনীন রেগে গিয়ে বলল,
– “ফাজলামো করছ তুমি? যাও এখান থেকে।” স্টাফ জয়নাল শুনে বলল,
– “এটা অসম্ভব কিছু নয় ম্যাম! আপনি এখানে আসেননি এর আগে,তাই হয়তো বুঝতে পারছেননা। এটার গুরুত্ব,এই জঙ্গলে কিন্তু সত্যি রাসেল ভাইপার আছে।” নাজনীন ঝাড়ি মেরে জয়নাল’কে বলল,
– “আপনি কি যাবেন এখান থেকে?” স্টাফ জয়নাল মিম’কে নিয়ে চলে এলো,বলল,
– “সাবধান করার আর কোনো প্রয়োজন নেই ওনা’কে।” প্রীতি বলল,
– “হুমম! সেটাই,তুমি কেন শুধু শুধু তার বকা খেতে যাবে?”
– “কিন্তু ম্যাম যদি কামড়ে টামড়ে দেয়?” ইমান,রায়হান শুনে জিজ্ঞেস করলো,
– “কে কামড়ে দেবে কাকে?” মিম তখন এক এক করে সবটা দু’জনের কাছে খুলে বললো,ইমান এবং রায়হান দু’জন স্টাফ’কে তৎক্ষনাৎ পাঠিয়ে দিল লেফটেন্যান্ট নাজনীনের কাছে উনি আকবর এবং শহীদ স্টাফ’কে যা তা বলে অপমান করে পাঠিয়ে দিলো,বিষয় টা ইমানের কর্ণগোচর হাতেই বললো,
– “ছেড়ে দিন,পরে দেখা যাবে।” রায়হান বলেই ফেললেন,
– “ওই মহিলার এতো অহংকার আসে কোথা থেকে? দু’বার বিয়ে করেও স্বামীর সংসার করা হয়নি কারণ উনি না কি কম্প্রোমাইজ করতে পারবেনা কোনো ভাবে।
.
মানে কি? আর ওনার ফ্যা-মলি মেয়ের এই পদক্ষেপ গুলো কে সাপোর্ট করে কিভাবে? আর কোন ছেলেই বা নিজের বাবা,মা,ভাই,বোন এবং আত্মীয়স্বজন ছেড়ে শুধু বউ নিয়ে পরে থাকতে চাইবে?” অনসূয়া মুখ ফসকে বলেই ফেললো,
– “তবে কি এর জন্য উনি খুব পছন্দ করে আমাদের ইমান স্যার’কে? না মানে,স্যারের কোনো পিছুটান নেই,সে ছোটো বেলা থেকেই কাজের লোকের কাছে মানুষ হয়েছে।” ইমান হাসতে হাসতে অনসূয়া’কে বলল,
– “হ্যাঁ আমার কোনো পিছুটান নেই,তবে নতুন করে তৈরি হয়েছে আর তাকে ভুলে থাকা অসম্ভব,কোনো কিছুর বিনিময় আমি ভুলে থাকতে পারবোনা তাকে।” মিম কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল,ইমানের কথা গুলো শুনে বেশ লজ্জা পেয়েছে কিন্তু জেনারেল ইমাদ সাহেব খবর পেয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলেন,
.
– “আগে উনি সাপটা দেখুক! তারপর না হয় একটা ব্যবস্থা নেওয়া যাবে? দেখুন আমরা কিন্তু আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে কোনো গাফিলতি করছি না,গাফিলতি টা আসছে ওনার দিক থেকে কাজেই আমাদের দোষারোপ করার কোনো পথ নেই,উনি চেষ্টা করে ও পারবেননা ঠিক আছে?” ইমান,রায়হান,কিয়ান সবাই জেনারেল ইমাদ সাহেবের সাথে সহমত হলো কিন্তু মিম ইমান’কে বলল,
– “স্যার! আপনি প্লিজ একটু ব্যক্তিগত ভাবে দেখুন এই বিষয় টা কে।” তবে ইমান নাকচ করে দিলো আর বলল,
– “এবার সময় মতোই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” রাতে হঠাৎ লেফটেন্যান্ট নাজনীনের তাঁবু থেকে চিৎকারের শব্দ শোনা গেলো,মুহূর্তেই সবাই ছুটে এলো তার কাছে।নাজনীন কর্নেল রায়হান’কে টেবিল স্ট্যান্ড দেখিয়ে বলল,
– “দেখুন স্যার! একটা সাপ কুন্ডলী পাকিয়ে বসে আছে।” রায়হান বলল,
.
– “এটা রাসেল ভাইপার! অনেক বিষাক্ত একটা সাপ,আবার কামড়ে টামড়ে দেয়নি তো আপনাকে?” নাজনীন বলল,
– “নাঃ!”
– “ঠিক আছে।” তবে কিছুক্ষণ পর, স্টাফ আকবর এসে সাপ টা ধরে নিয়ে গেলো সবার চোখের সামনে থেকে।নাজনীন কিছু টা ভয়ে পেয়ে ইমানের কাছে ছুটে চলে এলো কিন্তু ইমান তখুনি চলে এলো ওখান থেকে।অতঃপর নাজনীন রেগে গিয়ে উল্টোপাল্টা বকতে লাগলো,সব শুনে জেনারেল ইমাদ সাহেব তাকে বকা দিয়ে বলল,
– “আপনি এতো কেয়ারলেস হন কিভাবে? যেখানে মিম প্রথমেই বলেছিল,সেখানে আপনি কেন চুপ করে ছিলেন বলুন আমাকে?” নাজনীন বলল,
– “আসলে স্যার! মিমের কথা আমার বিশ্বাস যোগ্য বলে মনে হয়নি আর তাছাড়া ওই মেয়ে টা একটা ছবি তুলে এনে দেখাতে পারতো আমাকে।” ইমান এবার রেগে গিয়ে বলল,
– “আপনার কি মনে হয়? ছবি তোলার জন্য সাপটি পোজ দিয়ে বসে ছিল আপনার তাঁবুর কাছে?” ইমানের কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো,ইমান থেমে বলতে লাগলো,
– “ফাজলামোর একটা লিমিট আছে,নিজের দায় আমাদের ঘাড়ে চাপাবেননা আর ওই বাচ্চা মেয়ে টা কেও দোষারোপ করবেননা কোনো ভাবে কারণ ওর কথা শুনেই আমরা বেশ কয়েকবার স্টাফ পাঠিয়েছিলাম কিন্তু আপনি যা নয় তাই বলেছেন ওই মানুষ গুলো’কে।” এবার রায়হান বিরক্ত হয়ে বলল,
– “আপনি কি ছবি দেখলেই বুঝতেই? ওটা বিষাক্ত সাপ না অন্য কিছু? এতো বড় বড় কথা বলেন কিভাবে?
আরে ভাই উনি সাপই চেনে না কাজেই ছবি দেখে বোঝার প্রশ্নই ওঠে না কোনো ভাবে।” মিম ভীরু পায়ে এগিয়ে এসে বলল,
.
– “স্যার! আমার সব গুলো তাঁবু চেক করেছি,কোনো সাপ পাইনি তাঁবু থেকে।” ইমান বলল,
– “সাবধানে চলাফেরা করবে।”
– “ঠিক আছে।”
– “আর হ্যাঁ একা একা রাতে ঘোরাফেরা করবে না,কারণ সাপে কাটার ভয় আছে।” রায়হান বলল,
– “হুমম,দেখতেই পাচ্ছ! একজন প্রায় মরতে মরতে বেঁচেছে।” মিম বলল,
– “স্যার! আপনারা চিন্তা করবেনা না,কারণ আমি সাবধান করে এসেছি সবাই’কে এখন আর কেউ একা একা কোনো প্রয়োজন ছাড়া তাঁবুর বাহিরে বের হবে না আর বের হলেও দুই বা তিন জন এক সাথে যাবে অত্যন্ত কোনো এমারজেন্সি হলে তারা একে অপরকে সাহায্য করতে পারবো।
কিংবা সাহায্যের প্রয়োজন জলে বেইজ ক্যাম্পে চলে আসতে পারবে।” মিমের কথা শুনে জেনারেল ফিদান সাহেব হাসতে হাসতে বলল,
– “এতোটুকু বাচ্চা মেয়ে টা কতকিছু ভাবে?” ইমান মৃদু হেসে বললো,
– “Beauty with Brain,মানতেই হচ্ছে।” রায়হান বললেন,
– “ওর ওই ব্রেইন টাই বোধহয় আপনাকে বারবার ওর প্রেমে পরতে বাধ্য করছে?” ইমান বলল,
– “She is too mature but enough childish.”
– “হুমম! স্যার দেখেই বোঝা যায় ওকে।” ইমান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো,তারপর মনেমনে বললো,
– “হুমম,জানি তো! তাই সারাক্ষণ আগলে আগলে রাখছি ওকে।”
.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com