Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব – ২৫
আচ্ছা স্যার! এখন আসি? শুধুশুধু বিরক্ত করলাম আপনাকে।” নাজনীন তাঁবু থেকে বেড়িয়ে গেলো,ইমান ঝটপট কম্বল টা সরিয়ে দিলো মিমের মুখের ওপর থেকে…! দেখলো,মেয়ে ঘুমিয়ে কাঁদা কিন্তু এখনো ওর গলা খামচে ধরে ঘুমিয়ে আছে।ইমান মৃদু মৃদু হাসলো,এরপর ঝটপট লাইট অফ করে দিলো মিমের অসুবিধে হচ্ছে দেখে,
ভোর রাতে মিম ঘুম থেকে উঠে দেখে,সে নীলাসা এবং সারার মাঝখানে শুয়ে আছে।লেইলা মিটিমিটি হসে এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে বললো,
– “ডোন্ট ওয়ারি,দুলাভাই এসে দিয়ে গেলো কিছুক্ষণ আগে।” লজ্জায় মিমের মুখ টা লাল হয়ে গেলো রাবা ওকে ধাক্কা মেরে বলল,
– “ফরজ গোলস টা করে আয়! কাজ তো ঘটিয়ে ফেলেছ বিয়ের আগে।” মিম আমতা আমতা করে বলল
– “আরে তোরা এভাবে কেন ভুল বুঝছিস আমাকে?” স্বর্ণা বলল,
– “ইমান স্যারের গলায় দেখলাম নখের আঁচড়! তুই কি বলতে চাও? বিড়াল সেটা করেছে?” অতঃপর মিম সব কাহিনি ওদের কাছে খুলে বললো,
– “ওরা হাসতে হাসতে রীতিমতো মাটিতে গড়াগড়ি খেতে শুরু করেছে।” মিনিট দশেক বাদে হঠাৎ খুব বৃষ্টি শুরু হলো,ইমান এসে ওদের সবাই’কে বলল,
– “কেউ ভুলেও বের হবে না টেন্টের মধ্য থেকে।” মিম বলল,
– “আচ্ছা স্যার! মনে থাকবে।” ইমান বললো,
– “হুমম,তোমার চা টা খেয়ে নাও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।” ওমনি সবাই মিলে মিম’কে খোঁচাতে শুরু করলো,মিম বিরক্ত হয়ে বলল,
.
– “প্লিজ তোরা থাম,নয়তো আমি গেলাম এখান থেকে।’ পেছন থেকে রাবা ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “আরে ভাই ক্ষমা করে দে এতো রাগ করলে কি করে হবে?” নীলাসা মিম’কে তোয়ালে দিয়ে বলল,
– “যা ফ্রেশ হয়ে আয়! এই কান ধরলাম,ভুল হয়ে গেছে?” মিম চটপট শাড়ি টা ছেড়ে নিলো,এরপর চোরের মতো পা টিপে টিপে বৃষ্টিতে ভিজে গোসল করে এলো নদীর ঘাট থেকে।
তবে তাঁবুতে ঢোকার আগেই ইমান হাতে না তে ধরে ফেললো ওকে,মিম বেচারি ভয় পেয়ে বলল,
– “আসলে স্যার অস্বস্তি হচ্ছিল আর তাই গোসল করে এলাম নদী থেকে।” ইমান ওর কানে ফিসফিস করে বলল,
– “কেন? গোসল করার মতো কি কিছু হয়েছে আমাদের দু’জনের মাঝে?” মিম দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে লজ্জা পেয়ে পালিয়ে গেলো,ইমান মিটিমিটি হাসতে লাগলো ওর অবস্থা দেখে,অতঃপর মনেমনে বললো,
– “গোসল আমিও করেছি প্রিয়,তবে ফরজ গোসল বলে সেটাকে…! তবে আর মাএ এক বছর পাঁচ মাস, তারপর তুমি চিরজীবনের জন্য শুধু আমার হয়ে যাবে।” পেছন থেকে হঠাৎ লেফটেন্যান্ট নাজনীন বললেন,
– “কি ব্যাপার কর্নেল সাহেব? এখানে দাঁড়িয়ে খোঁজ করেছন কাকে?” ইমান কোনো উওর না করে আপন মনে হাসতে হাসতে চলে গেলো,নাজনীন খুব ইনসাল্টিং ফিল করলো ইমানের ওর প্রতি ব্যবহার দেখে,
আর তবুও সে নিজের তাঁবুতে এসে ইমানের জন্য ফাস্ট-এইড বক্স নিয়ে এলো কিন্তু এসে দেখলো ডক্টর অনিক ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছে ইমানের হাতে।ইমান তখন উঠে তাঁবুতে যাওয়া সময় শহীদ স্টাফ’কে ডেকে বললো,
– “আপনি প্লিজ একটু মিম’কে কার্ডবোর্ড গুলো নিয়ে পাঠিয়ে দিন আমার কাছে।” মিম ছাতি মাথায় লাফাতে লাফাতে এসে ইমান’কে বলল,
.
– “স্যার! আমার কাজ শেষ,সাথে আপনার জন্য একটা গ্রিটিং কার্ড আছে।” নাজনীন ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
– “কোই দেখি?” ইমান বলল,
– “আপনার না দেখলেও চলবে।” নাজনীন দ্বিতীয়বারের মতো ইমানের কাছে অপমানিত হলো,ইমান মিম’কে তাঁবুতে নিয়ে এলো নিজের সাথে।” মিম আস্তে আস্তে নিজের সাথে একটা লুকিয়ে আনা বক্স বের করে ইমানের সামনে রাখলো,ইমান বলল,
– “কি আছে এটাতে…?” মিম মিষ্টি হেসে বললো,
– “খুলে দেখুন! আপনার নিশ্চয়ই জিনিস টা খেতে ভালো লাগবে?” ইমান কৌতূহল বশত বক্স টা খুলে দেখল,বক্সের মধ্যে কালো জাম মাখা আছে।ইমান বেশ খুশি হলো,হাসিমুখে মিম’কে জিজ্ঞেস করলো,
– “জাম পেলে কোথা থেকে?” মিম আমতা আমতা করে বলল,
– “গাছে চড়ে ছিলাম,যখন গোসল করতে গিয়ে ছিলাম নদীর ঘাটে।” ইমান চোখ রাঙিয়ে মিম’কে বলল,
– “পাগল তুমি? যদি লেগে টেগে যেতো? তখন কোথায় নিয়ে যেতাম আমি তোমাকে?” মিম উল্টো ইমান’কে চোখ রাঙিয়ে বলল,
– “লাগেনি তো…? তাহলে এতো দুশ্চিন্তা কে করতে বলেছে আপনা’কে?” ইমান হঠাৎ মাথা গরম করে ওকে বলল,
– “যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াও আর আমি বকা দেবো না তোমাকে।” মিম হঠাৎ ইমানের মুখে কালো জাম ঠুসে দিলো,ইমান থেকে চুপচাপ তাকিয়ে রইলো মিমের দিকে…!
মিম সাথে সাথেই ইমানের মুখের ওপর থেকে চোখ সরিয়ে নিলো,ইমান এগিয়ে এসে বলল,
– “বিয়ের পর এভাবে’ই কি খুনসুটি করবে আমার সাথে?” মিম ফিক করে হাসতে হাসতে বলল,
– “স্যার! আপনি কি শিওর? আমার বিয়ে টা হচ্ছে আপনার সাথে?” ইমান ধূর্ত হেসে কৌতুক করে বলল,
– “হুমম! বাড়ি থেকে লোক পাঠিয়েছি,এতোদিনে বোধহয় সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে?” মিম বিষয় টা নিয়ে মাথা না ঘামিয়েই বলল,
.
– “বুঝতে পারছি স্যার! আপনার মাথার ঘিলু লড়ে গেছে।” নাজনীন তখন ইমানের তাঁবুতে এলো,ও বেশ রেগেই গেলো মিম’কে দেখে…!
যদিও মিম ওর বানানো কার্ড বোড গুলো ইমান’কে দেখাচ্ছিলো,ইমানের বেশ ভালো লেগেছে আর তাই ইমান মিমের প্রশংসা করে নাজনীন’কে বলল,
– “বুঝলেন ম্যাম? মেয়েটির অনেক গুণ আছে আর কোনো কাজ’ই অসম্ভব না যদি চেষ্টা থাকে!
তবে মিম এই কার্ডবোড গুলো বানাতে চায়নি কারণ ও কার্ডবোড কখনো বানায়নি এর আগে।” নাজনীন বললো,
– “তাই বুঝি? আমি ভাবলাম কি না কি অসাধ্য করে ফেলেছে?” মিম বলল,
– “স্যার! আমি আসি?” ইমান বললো,
– “না না যেও না,আমার কিছু কাজ আছে তোমার সাথে।” নাজনীন মিমের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে রইলো,মিম বলল,
– “স্যার! আমি আসি? দেখে এলাম অনেকের তাঁবুতে পানি ঢুকে যাচ্ছে তাই অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে।” ইমান বলল,
– “সে সব তদারকি করা নিশ্চয়ই তোমার দায়িত্ব না,নাজনীন ম্যাম! আপনি এসে,এই দায়িত্ব টা ঘাড় পেতে নিয়েছিলেন না আমার কাছ থেকে?
তাহলে ক্যাডেটদের সুবিধা-অসুবিধা না দেখে এখানে কেন বসে আছেন? জান গিয়ে নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করুণ আগে।” নাজনীন রেগে গিয়ে হনহন করে ইমানের তাঁবু থেকে বেড়িয়ে গেলো,মিম বললো,
– “স্যার জানেন? আমার কেন যেন ভয় হয় নাজনীন ম্যাম’কে দেখে আর উনি না কেমন যেন হুটহাট এর-ওর পারসোনাল স্পেসে গিয়ে ঢোকে।
সেদিন উনি আমার ফোন ঘেঁটেছিলেন আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক আছে ভেবে আমি ওনার সম্পর্কে আপনার কাছে কোনো নালিশ করতে আসিনি শুধু আমার খারাপ লাগা টুকু শেয়ার করলাম আপনার সাথে।
.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com