Eternal love । গভীরের প্রেম । পর্ব – ০১
মাঝরাতে পানি পান করতে উঠে হঠাৎ মেয়েটি গোঙানির শব্দ শুনতে পেলো পাশের ঘর থেকে,তাই ও কৌতূহল বশত উঁকি মারতে গিয়ে দেখে কেউ একজন উলঙ্গ অবস্থায় বিছানার এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে,তবে ও কিছু বুঝে ওঠার আগেই কেউ একজন ভারী কিছু একটা জিনিস দিয়ে ওর মাথায় আঘাত করে পেছন থেকে।
সকালে গার্লস কোয়ার্টারে হুলুস্থুল কাণ্ড বেঁধে যায়,মেয়েটি’কে অজ্ঞান অবস্থায় দোতলার সিঁড়িতে পরে থাকতে দেখে।খবর পাওয়া মাএ’ই মিলিটারি একাডেমির অফিসারেরা মেডিকেল রুমে দেখা করতে চলে আসে মেয়েটির সাথে,তবে মেয়েটির জ্ঞান ফেরা মাত্রই সে ভয় পেয়ে যায় তার চোখের সামনে জাদরেল টাইপের অফিসার লেফট্যানান্ট কর্নেল ইমান’কে দেখে,ইমান কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই বুঝতে পারে মেয়েটির খুব ভয় পাচ্ছে তাকে দেখে আর তাই সে ক্যাপ্টেন প্রীতি’কে ডেকে বলে,
– “আপনি প্লিজ মেয়েটির সাথে কথা বলুন,ও বোধহয় একটু ভয় পাচ্ছে আমাকে দেখে।” প্রীতি মিমের পাশে বসে ওর হাত ধরে বললো,
.
– “ভয় পেয়ো না মা! তুমি বলো তুমি কি দেখেছিলে গতকাল রাতে?” মিম একটু দম ফেলে বললো,
– “ম্যাম! আমি একটু পানি খেতে উঠেছিলাম,ঠিক রাত বারোটা কি সাড়ে বারোটার দিকে।তারপর হঠাৎ পাশের রুম থেকে অদ্ভুত সব আওয়াজ শুনতে পেলাম আর তাই দেখতে গেলাম সিনিয়র আপুরা কি ঠিক আছে? তখন দরজা ঠেলে দেখতে পেলাম,একটা লোক অন্ধকারের মধ্যে উলঙ্গ অবস্থায় বিছানার এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।তবে আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই কেউ ভারী কিছু একটা জিনিস দিয়ে আমায় আঘাত করে পেছন থেকে।
তারপর আমার কিছু মনে নেই,যতদূর মনে পরে লোকটা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যাচ্ছিল তিন তলায় ছাঁদের দিকে আর এর পর আমার অনুমান ম্যাম লোকটা বোধহয় গার্লস কোয়ার্টার লাগোয়া নারকেল গাছ বেয়ে অতিদ্রুত নেমে যায় নিচে।প্রীতি ম্যাম বিশ্বাস করুণ,
আমি মিথ্যে বলছি না আমি এগুলোই দেখেছিলাম গতকাল রাতে।জানি আমি আমার ছায়া আপু,বিথী আপুদের সাথে সমস্যা আছে,তার মানে এই নয় যে আমি ওদের নামে মিথ্যে বলবো আপনার কাছে।” প্রীতি বললো,
-“আচ্ছা তুমি এখন বিশ্রাম করো মা,পুরো বিষয় টা খতিয়ে দেখা হবে।” ইমান আড়ালে দাঁড়িয়ে সবটা শুনে রুমের ভেতরে এলো,মিম ভয় ধীরে ধীরে কাঁপতে লাগলো তাকে দেখে।ইমান কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে মিম’কে জিজ্ঞেস করলো,
– “মেয়ে এখন কেমন আছো তুমি? তোমার শরীর কেমন আছে?” মিম শান্ত গলায় বললো,
– “আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো স্যার! শুধু মাথা টা ধরে আছে।” ইমান বললো,
– “চিন্তা করো না,পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।” কিছুক্ষণ পর,
স্টাফ মিজান এসে ইমান’কে বললো,
– “প্লিজ,বাহিরে আসুন স্যার! কিছু কথা আছে।” ইমান বললো,
– “বলো মিজান কোনো খবর আছে?” মিজান বললো,
– “হ্যাঁ স্যার,মনে হচ্ছে মিমের অনুমান টাই ঠিক আছে।কারণ আমরা কিছু ব্লাড স্যাম্পল সংগ্রহ করেছি গার্লস কোয়ার্টার লাগোয়া নারকেল গাছ থেকে।” ইমান অবাক হলো,জিজ্ঞেস করলো,
– “আর কোনো খবর আছে?” ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশরাফ এসে বললো,
– “হ্যাঁ ইমান,আমাদের মনে হচ্ছে মিম’কে খুন করার চেষ্টা করা হয়েছে আফটার অল ও হচ্ছে একমাএ আই উইথনেস আর ও সবটাই নিজের চোখে দেখেছে কারণ আমরা একটা রক্তমাখা ফুলদানি পেয়েছি যেটার গায়ে মিমের ব্লাড লেগে থাকলেও ফিঙ্গার প্রিন্ট খুবই দক্ষতার সঙ্গে মুছে ফেলা হয়েছে।”
– “স্যার আপনারা ছায়া এবং বিথীর সাথে কথা বলেছেন? ওরা কিছু বলেছে?”
– “না কিছু স্বীকার করেনি উল্টো বললো,মিম ওদের ফাঁসাতে চাইছে।”
– “তাহলে বুঝতে পারছেন স্যার এখানে কত ঘাপলা আছে?”
– “ডেফিনিটলি,তবে আমার মেয়ে টা কে নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে।
– “হুমম,আমারো জনাব,এমন তো কখনো হয়নি এর আগে।দেখা যাবে শেষে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে যাবে।”
– “হ্যাঁ,তবে আপাতত মিম’কে অনেক সিকিউরিটি’র মধ্যে রাখতে হবে।” জেনারেল তারিখ মৃদু হেসে বললেন,
– “মনে হচ্ছে তার কোনো প্রয়োজন হবে না স্যার! মেয়েটি অনেক বুদ্ধিমতী,সে জানে কখন কি করতে হবে? এই মাএ শুনলাম প্রীতি’কে বলছিল,সে নাকি কোয়ার্টারেই থাকবে আর আর আসল অপরাধী’কে বামাল সমেত হাতেনাতে ধরবে।আমি যদিও না করেছিলাম,তাও মেয়েটি অনেক অনুরোধ করলো আমার কাছে।” ইমান বললো,
– “বাহ! এতো অসুস্থতার মধ্যে ও এতো বুদ্ধি মেয়েটি মাথায় রাখে?” পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় প্রীতি বলল,
– “মিম’কে ওর কোয়ার্টারে পাঠিয়ে দিয়েছি স্যার,ও এখন ভালোই আছে।”
সকালে মিম’কে খালি পায়ে ঘাসের মধ্যে হাঁটতে দেখে,ইমান এসে জিজ্ঞেস করে,
– “এখন কেমন আছো মেয়ে তুমি? রেস্ট নিতে পারতে কোয়ার্টারে বসে? মিম আনমনে পায়চারী করতে করতে বলল,
– ” স্যার! আমি প্রতিটি বিষয় খতিয়ে খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি,মানে কোনো ক্লু কি আমার চোখের আড়ালে রয়ে গেছে?” ইমান বললো,
– “এতো ভাবতে হবে না যাও তুমি এখানে এইসব নিয়ে মাথা ঘামানোর জন্য অনেক লোক আছে।” মিম হঠাৎ মুখ তুলে ইমানের দিকে তাকালো,মিম ওকে দেখা মাএই দৌড়ে পালালো সেখান থেকে।ইমান ওর অবস্থা দেখে মনেমনে বললো,
– “কি অবস্থা মেয়েটির? এতো কেন ভয় পায় আমাকে?” মিম সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে মাথা ঘুরে পরে গেলো আর তখন কেউ একজন ধরে ফেললো তাকে।অতঃপর ওর যখন ঘুম ভাঙলো,দেখলো ইমান ওর সামনে পায়ের ওপরে পা তুলে দু’হাত ভাঁজ করে বসে আছে।ইমান চোখ গরম করে মিম’কে শাসনের ভঙ্গিতে বলল,
– “এই মেয়ে? নাচানাচি করতে বারণ করেছিনা তোমাকে? চুপচাপ সুস্থ হয়ে বসতে পরো না? না আল্লাহ তাআ’লা চুপচাপ বসতে বলেছি তোমাকে?” মিম মাথা নত করে চুপচাপ বসে রইলো,ইমান উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
– “নীলাসা আমার ভিজিটিং কার্ড টা রাখো তোমার কাছে,ও আবার লাফালাফি,নাচানাচি শুরু করলে তৎক্ষনাৎ জানাবে আমাকে।” নীলাসা মিটিমিটি হেসে বলল,
– “স্যার! আপনি দেখতেই পাচ্ছেন ও কত চঞ্চল,চটপটে? আপনি রুমের বাহিরে পা রাখলেই ম্যাডাম নাচতে নাচতে লাফাতে লাফাতে বাহিরে চলে যাবে।”
– “যায় যাক! জাস্ট একটা ফোন করবে আমাকে,আমি এসে ঠ্যাং ভেঙে বসিয়ে দিয়ে যাবো সারাজীবন আর নড়তে পারবে না নিজের জায়গা থেকে।” মিম মনেমনে বলল,
– “অসহ্য কর ডেভিল,ডায়নোসর লোক একটা কখন থেকে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে যাচ্ছে কানের কাছে? আরে ভাই আমি আমার মর্জির মালিক,তুমি কেন বেড়ি পরিয়ে রাখতে চাইছ আমাকে?” ইমান যেতেই নীলাসা মিম’কে বললো,
– “বাহিরে যাস না প্লিজ,নয়তো স্যারের কাছ থেকে শাস্তি পেতে হবে।” মিম বললো,
– “আরে ভাই তোরা চল না,ছাঁদে যাবো।
স্যার অন্তত এই বিষয় নিয়ে বকবে না আমাকে?” সারা এসে বললো,
– “এই মেয়ের মাথা খারাপ,জলজ্যান্ত শয়তান চেপেছে ওর কাঁধে।” ইমান ফ্রেশ হয়ে ড্রেসিং রুমে জামাকাপড় চেঞ্জ করছিল,খেয়াল করে দেখতে পেলো মিম একা একা পা ঝুলিয়ে ছাঁদে বসে আছে।ও কোনো মতে ট্রাউজার টা পরে দরজা খুলে ছাঁদে এলো,দেখতে ভালো করে দেখতে পেলো নীলাসা,পিয়াস,সারা ও আছে।মিম ইমান’কে খালি গায়ে দেখে তাড়াতাড়ি নেমে পারলো রেলিং থেকে,ইমান কে শুনিয়ে শুনিয়ে বন্ধুদের বলল,
– “প্লিজ আমাকে ধরে রুমে নিয়ে চল না! মাথা বেশ ধরেছে।” ইমান মনেমনে বলল,
– “এই মেয়ে আমার কথা এমনি এমনি শুনবে না,একে ভয় দেখাতে হবে।”
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com