তুমি যদি জানতে | পর্ব -০৩
কোনো তিক্ততা মনে পুষে রেখো না মা,আমার ভুল হয়ে গেছে।” মিম হাসতে হাসতে বলল,
– “ব্যাপার না মা,হইতে পারে ইট’স ওকে আর তাছাড়া আপনি বাবা’কে ওই অবস্থায় দেখে ভয় পেয়ে গিয়ে ছিলেন সেটা হতেই পারে মা,ব্যাপার না ঠিক আছে।”
– “আমি চাইনি মা তোমাকে এভাবে কষ্ট দিতে।” ইমান মিম’কে বলল,
– “আজকের পর থেকে তুমি বাবার বাসায় থাকবে,সেখান থেকে চেম্বার করা অনেক সহজ হবে আর আমি ও থাকবো,জামাই আদর নিতে হবে না শশুর বাড়ি থেকে?” ফাইজা ছেলের হাত ধরে বললেন,
– “বাবা তুই কি রাগ করে কথাটা বলছিস আমাকে?” ইমান হ্রাস ভারী কণ্ঠে বলল,
– “কোই না তো? আমার বউয়ের ভালোমন্দ আমাকে’ই বুঝতে হবে।” মিম হাসলো বলল,
– “চিন্তা করবেননা মা! আমি কোথাও যাচ্ছি না এখান থেকে,রইলো আজ বাবার বাসায় যাওয়ার কথা,তা আর হচ্ছে না কালকে হাসপাতালে আমার একটা ইমার্জেন্সি কল আছে।” ইমান হাসলো,বলল,
– “সত্যি বলছ?”
– “মিথ্যে বলার কোনো প্রয়োজন আছে?” ইমা আর ইস্পা এসে মিম’কে পার্লারে সাজাতে নিয়ে গেলো,তারা সাজগোছ শেষ করে এলো তখন দুপুর দু’টো বাজে।
.
কিছুক্ষণ পর,সবাই বউ দেখতে এলো,সবাই কানাঘুষো করলো বউ’কে মানাচ্ছে না ইমানের পাশে।ইমান তখন হঠাৎ একটা গোলাপ ফুল নিয়ে মিমের কাছে এগিয়ে গেলো,তারপর হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
– “খুব ভালোবাসি বউ তোমাকে।” মিম হঠাৎ ইমানের এমন কাণ্ড দেখে লজ্জা পেলো,ও চুপচাপ ফুল টা নিয়ে নিলো ইমানের হাত থেকে।অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার মুখ বন্ধ হয়ে গেলো,ইমান ক্যামেরা ম্যান ডেকে বিভিন্ন পোজে ছবি তুলতে লাগলো মিমের সাথে।তখন রুহুল আমিন সাহেব এসে মেয়ে’কে বললেন,
– “আম্মু?” মিম সাথে সাথে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো বাবা’কে,রুহুল আমি সাহেব মেয়ে’কে বললেন,
– “জামাই বাবা দেখে রাখছে তোমাকে?” হঠাৎ মিমের দু’চোখের কার্নিশ বেয়ে জল গড়িয়ে পরতে লাগলো,ও বলল,
– “বাবা আমার মনে হয় আমি ডিজার্ভ করি না ওনাকে।” ইমান হঠাৎ এগিয়ে এলো,মিমের গা ঘেঁষে বসে বলল,
– “সবসময় তুমি এতো ছোটো করে দেখ কেন নিজেকে?” মিম বলল,
– “না মানে,আমাকে একটু সময় দিন? আমি চাই সবটা নতুন করে শুরু করতে আপনার সাথে।” ইমান বলল,
– “আর আমি যখন অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাবো,তখন অবশ্যই সাথে করে নিয়ে যাবো তোমাকে।” তখন ইমানের খালাতো বোন ওহি ছুটে এলো,মিম সাথে সাথে’ই দাঁড়িয়ে পরলে,দু’জনের মাঝে,ওহি একটু চমকালো,ইমান হাসতে হাসতে বলল,
– “খেতে চলো,বাবা মা’কে নিয়ে খেতে চলুন আমাদের সাথে।আপু,ভাইয়া,ভাবিদের বসিয়ে দিয়ে এসেছি আপনারা ও চলুন আমাদের সাথে।” তখন নাদিরা এসে ইমান’কে বলল,
– “ভাইয়া আসলে আমার পরিবারের সবাই ও খেতে বসতে চেয়েছিল নতুন বরবউয়ের সাথে আর তাই তাদের আপনাদের টেবিলে বসিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে এসেছি আঙ্কেল আন্টি না হয় খেতে বসবে অন্যান্য গেস্টদের সাথে?” ইমান রেগে গিয়ে বলল,
.
– “এতো মাতব্বরি করতে কে বলেছে তোমাকে? শোনো নাদিরা আজকে তোমার ফ্যা-মলি ম্যান্ডাটরি নয় বরং আমার শশুর বাড়ির সবাই এখানে চিফ গেস্ট ঠিক আছে?” ইয়াসিন এসে তখন হাসতে হাসতে বললো,
– “ভাইয়া আঙ্কেল আন্টি অন্য কোথাও গিয়ে বসলে কি হবে?”
– “তোর বিষয়ে আমি কখনো নাক গলিয়েছি? এতো কি সমস্যা তোর আমার সাথে? অনুষ্ঠান যখন আমাকে নিয়ে আমি যা চাই তাই হবে।” অতঃপর ইমান রুহুল আমিন সাহেব এবং অরুণিমা’কে সাথে নিয়ে খেতে বসে পরিবারের সবার সাথে।তবে ইমানের মাছ বাছতে কষ্ট হচ্ছে দেখে মিম মাছ বেছে এক গ্রাস তুলে দেয় তার মুখে,তা দেখে ক্যামেরা ম্যান মিমের দিকে ক্যামেরা ফোকাস করে আর মিম লজ্জা পেয়ে মুখ টা আড়াল করার চেষ্টা করে সাথে সাথে।ইমান তা দেখে হাসলো,ক্যামেরা ম্যান’কে বলল,সরে যেতে।পরক্ষণেই,
ইমান মিমের মুখে গ্রাস তুলে দিলো,তা দেখে ইয়াসিন কেন যেন উঠে চলে গেলো খাবার টেবিল থেকে?
রাতে সব ধকল শেষ করে দু’জনে সকাল সকাল শুয়ে পরলো,কিন্তু ইমান অস্থির অস্থির করছিল হঠাৎ মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে।মিম তখন ইমান’কে কি ভেবে জড়িয়ে ধরলো? ইমান আদর করতে লাগলো ওকে,মিম ইমানের চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে ঘুম পারিয়ে দিলো।
.
এদিকে আজ কেন যেন ঘুম নেই ইয়াসিনের চোখে? মনেমনে বললো,
– “তবে কি আমি আজও ভুলতে পারিনি ওকে?” নাদিরা এগিয়ে এসে ইয়াসিনের বুক মাথা রাখলে,ইয়াসিন কাজের কথা বলে বিছানা ছেড়ে উঠে গেলো সাথে সাথে।”
ভোররাতে, ডাইনিং রুমে পানি নিতে এসে হঠাৎ জিনিসপত্রের ঠুকঠাকঃ শব্দ ফাইজার কানে ভেসে আসে আর সে রান্নাঘরে এসে রীতিমতো চমকে যায় মিম’কে দেখে,মিম বলল,
– “আসলে মা সকালে একা হাতে এতো কাজ করতে আপনার কষ্ট হবে,তাই ভাবলাম আমি কিছুটা করে রেখে যাই? আমার আবার চেম্বার ও আছে।” ফাইজা বিষ্ময়ের চোখে মিমের দিকে তাকিয়ে থেকে ওর কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– “মা তার জন্যে কত কাজের লোক আছে?”
– “তাতে কি হয়েছে মা? সংসারের কাজ করলে তৃপ্তি লাগে।”
– “তাহলে চল মা,আমি হাতে হাতে এগিয়ে দিচ্ছি তোকে?”
– “না থাক মা,আপনি বাবার কাছে জান।আমি সামলে নেবো কোনো সমস্যা হবে না তাতে।” ফাইজা ঘরে এসে মন খারাপ করে ফাহিম সাহেবের পাশে বসে রইলেন,ফাহিম সাহেব বললেন,
– “তোমার কি অযথা ঝামেলা করতে খুব ভালো লাগে?” ফাইজা বলল,
– “কষ্ট হচ্ছে আমার,আমি প্রথম দিনেই কত কষ্ট দিয়ে কথা বলেছি মেয়ে টা কে।”
– “এখন থেকে সবদিক বিবেচনা করে কথা বলবে,তোমার এই আচরণ একটু ও ভালো লাগেনি ছেলের কাছে।
ও ছেলে তো বিয়েই করতো না,এখন নিজের পছন্দ বিয়ে করেছে সেটা কি ভালো লাগছে না তোমার কাছে? ও মনে করছে আমরা ওর বিয়ে টা মেনে নিতে পারছিনা,তাই রেগে রেগে কথা বলছে সবার সাথে আর ইয়াসিনের সাথে বড় বউ মায়ের যে সম্পর্ক ছিল তা চুকেবুকে গেছে আরো এক বছর আগে।কাজেই বড় বউ মা’কে এসব নিয়ে কখনো কথা শুনিয়ো না,তাহলে কিন্তু চরম বোকামো হবে।”
– “কিন্তু নাদিরা যে বলল?”
.
– “শুধু নাদিরার কথা শুনলে হবে? ভুলে যেও না ফাইজা একটা মুদ্রা’র এ পিঠ না ও পিঠ ও আছে।আমরা শুরু নাদিরার কথা শুনেছি,বড় বউ মা কি বলে চেয়েছিল? তা কিন্তু শুনিনি তার মুখ থেকে কাজেই শুধুমাএ একজনের মুখের কথা শুনে বড় বউ মা’কে বিচার করতে যেও না,তাহলে মস্ত বড় ভুল হবে।” তখন ইস্পা এবং ইমা এসে বলে,
– “মা আমরাও কিন্তু একমত বাবার সাথে।বড় ভাবি বাড়িতে আসার পর থেকে এমন কিছু করেনি যে আমরা শুধু শুধুই কথা শোনাবো তাকে আর রইলো কালকের ঘটনা,সব ইমার মুখ থেকে শোনো,ছোটো ভাবি নিজেই বলেছে ভাইয়ার কাছে।”
সকালে ইমান নিচে এসে দেখে বিভিন্ন ধরনের স্ন্যাক্স ওর জন্য সেন্টার টেবিলের ওপরে সাজিয়ে রাখা আছে।মিম হাসপাতালের জন্য তৈরি হয়ে এসে ইমান’কে বললো,
– “ধীরে সুস্থে খেয়ে উঠুন আমি হাসপাতালে গেলাম একটা ইমারজেন্সি কল আছে।” ইমান মিমের হাত টেনে ধরে বলল,
– “একটু বসে যাও, আমি হাসপাতালে দিয়ে আসবো তোমাকে।” মিম হঠাৎ ইমানের কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– “তার সময় এখন নেই সোনা! দুপুরে না হয় লাঞ্চ করবো এক সাথে?” ইমান মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে সায় দিলো,ফাইজা দূরে দাঁড়িয়ে হাসতে লাগলো দু’জন কে দেখে,কিছুক্ষণ পর,
নাদিরা এসে ইমান’কে বলল,
– “এতো বড়লোক বাড়ির বউ সে বাড়ির গাড়ি ফেলে রিকশায় করে গেলো কি ভেবে?” ইমান বিরক্তি’র ভাব প্রকাশ করে বলে,
.
– “সারাদিন তুমি হিন্দি সিরিয়াল দেখ নাকি? কি সমস্যা কি তোমার আমার বউয়ের সাথে?” ইয়াসিন হাসপাতালে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিচে এসে বলে,
– “ভাই তুই এভাবে কথা বলছিস কেন নাদিরার সাথে?”
– “আমি এর থেকে ভালো ব্যবহার ওর সাথে করতে পারছিনা,কারণ ও এতো ভালো ব্যবহার ডিভার্ভ করে না ঠিক আছে? আর রইলো রিকশায় চড়ার কথা? আমার বউয়ের রিকশায় চড়তে ভালো লাগে,তাতে তোর বউয়ের কোনো সমস্যা? জিজ্ঞেস কর তার কাছে? যতসব ছোটোলোকি বিহেভিয়ার,দেখলেই বিরক্ত লাগে।” নাদিরা রেগে গিয়ে ইয়াসিন’কে বলল,
– “তুমি কিছু বলবে না ভাইয়া’কে?” তখন ফাহিম সাহেব বলে উঠলেন,
– “ছোটো বউ মা তোমার কি এতো সমস্যা? কেন ঝামেলা করো তুমি ওদের সাথে?” নাদিরা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের ঘরে চলে আসে,ইমান রেডি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে যায় বাড়ি থেকে,দুপুরে,
ইমান’কে হাসপাতালে দেখে মিমের এক কলিগ বলে ওঠে,
– “আরে এতো পুরোই ইংলিশ ফিল্মের হিরো? কি কিউট? আমি আজি প্রপোজ করবো তাকে।” পাশ থেকে প্রভা বলে লাভ নেই দিয়া সিট খালি নেই আগেই বুকড আছে।
– “মানে কি?”
.
– “একটু অপেক্ষা করো এখুনি দেখতে পাবে।” মিনিট পাঁচেক বাদে মিম রাউন্ড থেকে ফিরতেই ইমান দ্রুত পায়ে হেঁটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে তাকে,এতে মিম বেশ লজ্জা পেয়ে য়ায় দিয়া হা করে তাকিয়ে থাকে।অতঃপর নিজেই নিজেকে চিমটি কেটে বলে,
– “এটা মিমের স্বামী? ভাবতেই অবাক লাগে আর এই সুন্দর ছেলে গুলো’র রুচি এতো খারাপ কেন? বিয়ের সময় কালো আর শ্যামলা মেয়ে গুলো কেই তাদের চোখে বাঁধে?” প্রভা হাসতে হাসতে বলল,
– “আরে ভাই মন টাই আসল,মন টা দেখতে হবে।” ইয়াসিন অপারেশন শেষ করে বাহির এসে দেখে মিম ইমান’কে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।ইমান হাসতে হাসতে বলল,
– “শুনলাম তোমার আজকে হাফ ডে? চলো বাবা-মা কে দেখে আসি তারা খুশি হবে।” মিম হাসিমাখা মুখ নিয়ে বলল,
– “আরে যেতে হবে না বাবা মা আজকে আমার বড় ফুফির বাসায় ফুফি’কে দেখতে গেছে।” ইমান বললো,
– “চলো তাহলে লাঞ্চ করতে যাওয়া যাক? তুমি নাকি? না খেয়ে সকালে বেড়িয়েছ বাড়ি থেকে?”
– “কে বলল?”
.
– “মা! কেন তুমি না খেয়ে আছো সকাল থেকে? চলো চলো কাছের রেস্টুরেন্টে খেতে চলো অলরেডি সব অর্ডার দেওয়াই আছে।” মিম ইমানের সাথে রেস্টুরেন্টে খেতে চলে এলো,কিছুটা দূরেই ইয়াসিন বসে আছে।ইমান মিম’কে মুখে তুলে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে,মিম ও গ্রাস তুলে দিচ্ছে ইমানের মুখে।অতঃপর কোনো একটা বিষয় নিয়ে দু’জনের মাঝে বেশ হাসাহাসি শুরু হলো,ইমান বলল,
– “স্বামী কম,তোমার প্রিয় বন্ধু,তোমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু হতে চাই আমি তোমার কাছে।” মিম চুপচাপ ইমানের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো,তারপর হঠাৎ জড়িয়ে ধরলো তাকে।ইমান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মনেমনে বলল,
– “বুঝিনা,ইয়াসিন কি করে ভুল বুঝলো তোমার মতো লক্ষী একটা মেয়ে’কে? তবে আমার ভালোবাসা যে ধীরে ধীরে পূর্নতা পাচ্ছে সেটাই অনেক আমার কাছে।”
.
চলবে,,,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com