ওগো বধু সুন্দরী । পর্ব -১৯
কি হলো,ওপরের রুম থেকে চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসলো কার?
—কি যে বলো না,কার চিৎকারের আওয়াজ আসবে ওপর থেকে।
এই বাড়িতে আমি আর তুমি ছাড়া আর কে আছে?
—কিন্তু আমি যে স্পষ্ট শুনতে পেলাম,
—আরে তুমি ভুল শুনেছে,না মানে ভুল বলতে হয়তো বুঝতে ভুল হয়েছে তোমার?
—কি বলছিস কি তুই?
—শব্দটা হয়তো পাশের বিল্ডিং থেকে এসেছে।কেন,সেরকম কিছু কি হতে পারে না?
—হ্যাঁ,ঠিক বলছিস।তাও হতে পারে।আচ্ছা,যাক সে কথা?এখন চলি ফ্রেশ হয়ে আসি একটু,
—-ঠিক আছে যাও,,
বাবা,এই সময়ে বাড়িতে চলে আসায় বিশাল ঝামেলায় পড়ে গেছি আমি।
একবার স্টোর রুমে নকল শ্রেষ্ঠাকে বন্দী অবস্থায় দেখতে পেলে সর্বনাশ ঘটবে।
জানিনা তখন আমি কিকরে সামাল দেবো।এই ভেবে সোফার ওপরে বসে পড়লাম আমি।
.
নাহ,একবার উপরে যেতে হবে।তখন না হয় কোনো একটা অজুহাত দিয়ে কাটিয়ে নিয়েছি নিজেকে,
কিন্তু বারবার তো আর আমার এক অজুহাত শুনবে না কেউ।
ভুলটা আমারই।ওর মুখটা বেঁধে রেখে আসলে এই ফালতু টেনশন বয়ে বেড়াতেই হতো না এখন।
উপরে গিয়ে তাই করতে হবে।যাতে ও আর ঝামেলা না করতে পারে।
এই ভেবে সোফা ছেড়ে উঠে পড়ি আমি।
উঠে দাঁড়াতেই দেখি বাবা পা টিপে টিপে এগিয়ে আসছে আমার দিকে।
উনি হয়তো ভাবতে পারে নি,আমি দেখো ফেলবো তাকে।তার ডান হাতটা
পেছনে লুকোনো,আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগলো…
আমি তার এই আচরণে বেশ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি।তার মতিগতি ঠিক বুঝতে পারছি না।
—বাবা,কি হলো কিছু বলবে?কি হলো কোনো কথা বলছো না কেন,কিছু তো বলো।
আমার কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই একেবারে আমার নিকটে
চলে আসলো সে।ওনার এই আচরণে পুরো হতভম্ব হয়ে গেছি আমি।
পেছন থেকে সে নিজের হাতটা বের করে আনলো একপর্যায়ে।
তার হাতে একটা লোহার রড!!
আমাকে কিছু বুঝে ওঠার সুযোগ না দিয়েই রডটা দিয়ে সজোরে আমার মাথায়
একটা আঘাত করলো।আঘাত করে মেঝেতে ফেলে দিলো আমায়।যদিও তখন
আর কিছু ভাবার পরিস্থিতিতে নেই আমি,তবে এইটুকু বুঝতে পারছি বাবা নিশ্চয়ই নকল
শ্রেষ্ঠাকে দেখে ফেলেছে।আর ওই হয়তো সবটা জানিয়ে দিয়েছে তাকে।এই লোহার
রডটা স্টোর রুম ছাড়া আর কোথাও থেকে পাওয়ার কথা নয়,তার মানে আমার ধারণাই সত্যি।
চারপাশটা অন্ধকার হয়ে আসতে লাগলো আমার,বুঝতে পারলাম জ্ঞান হারাতে চলছি আমি।
এরপর আর কিছু মনে নেই,,
.
চোখ মেলে দেখতে পাই স্টোর রুমে হাত পা বাঁধা অবস্থায় বন্দী হয়ে আছি আমি।নকল শ্রেষ্ঠা
নেই রুমে,শুধু আমি একা।মেয়েটা আবারো ধোকা দিলো আমায়,ওকে
বিশ্বাস করাটাই ভুল হয়েছিলো আমার।যদি ওর সামান্যতম পরিবর্তন
আসতো ওর ভাবনায় আমার সাথে কিছুতেই এটা করতে পারতো না।
টের পেলাম কেউ আসছে রুমের দিকে।একটু পরে দেখলাম সে আর
কেউ নয়,বাবা এসে আমার সামনে একটা চেয়ারে বসলো।তার হাতে একটা
পিস্তল।পিস্তলটা পকেট থেকে বের আমার সামনে টেবিলের ওপরে রাখলো।
তারপরে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো।
—কি খবর,মিস্টার সৌহার্দ্য?তার মানে জ্ঞান ফিরেছে?
.
—তুমি আমার বাবা হয়ে এটা করতে পারলে আমার সাথে?বলো,
এতো বড়ো প্রতারনা কিকরে করলে আমার সাথে?
—প্রতারণা করেছি,কিসের প্রতারণা করেছি আমি?
—আবার জিজ্ঞেস করছো কিসের প্রতারনা করেছো ,তুমি পিতা
হয়ে নিজের এভাবে নিজের সন্তানকে পেছন থেকে ছুড়ি বসিয়ে দিলে,
কোনো বাবা এতো বড়ো একটা জঘন্য কাজ কিকরে করতে পারে তার ছেলের সাথে,
আমি সত্য ভেবে পাচ্ছি না।
একদম ঠিক বলেছো,কোনো বাবা তার ছেলের সাথে এমন কাজ করতেই পারে না।
আর আমি তো …
—কি তুমি…. কি হলো থেমে গেলে কেনো বাবা??
.
—এই থামো তো,বারবার কাকে এতো বাবা বলছো,
তোমার মুখ থেকে এই ডাকটা শুনে শুনে বিরক্ত হয়ে গেছি আমি।
—তুমি নিজের ছেলেকে খুন করতে চাইতেই পারো,
কিন্তু তাই বলে আমি তো আর আমাদের সম্পর্কটা অস্বীকার করতে পারি না।
—কে তোমার বাবা,কে ছেলে!!যদি সম্পর্কের এতোটাই গুরুত্ব তোমার কাছে,তবে শুনে রাখো না
আমি তোমার বাবা,না তুমি আমার ছেলে।আমার ছেলে একটাই আর সে হলো মিছিল।
আর কেউ নয়।
বাবার কথা শুনে রীতিমত চমকে গেলাম আমি,,
—কি বলছো তুমি এগুলো,আমি জানি তুমি আমাকে অনেক ঘৃনা
করো।সেকারণে এগুলো বলছো এখন,তাই না?
—যারা ঘৃনার বস্তু তাদেরকে কেবল ঘৃনাই করা যায়,আমার মনে তোমার জন্য
ঘৃনা ছাড়া আর কোনোকিছুর স্থান নেই,না কোনোদিন ছিলো।আর আমি কোনো
মিথ্যে বলছি না তোমায়, তোমার বাবা আমি নই।
—-কি বলতে চাও খুলে বলো আমায়,আর আমার প্রতি এতো কিসের ঘৃনা তোমার,সেটাও বলো?
—সত্যি শুনতে চাও তোমার প্রতি কিসের ঘৃনা আমার,সেটা জানতে পারলে দেখো
তোমার নিজেরই হয়তো লজ্জা আর ঘৃনায় মরে যেতে ইচ্ছে করবে।অবশ্য এমনিতেও তোমায়
আর বেশিক্ষণ বাঁচিয়ে রাখবো না আমি।মরার আগে এই শেষ ইচ্ছেটা পূরন করেই দেই।
—-হ্যাঁ,বলো।আমিও জানতে চাই।তুমি আমায় মারতে চাও তাই তো,মেরে ফেলো।
কিন্তু তার আগে আমাকে বলো আমার ওপর কিসের এতো রাগ তোমার,
কেন খুন করতে চাও আমায় তুমি?এই প্রশ্নের উত্তর না জেনে মরেও শান্তি
পাবো না আমি।কি অন্যায় করেছি আমি তোমার সাথে বলো,যার কারণে এমন নিষ্ঠুর আচরণ করছো,
—-অন্যায় তুমি করো নি তো…অন্যায় করেছে তোমার নষ্টা মা….আর তার পরিবার,
—মুখ সামলে কথা বলো,তুমি আমার মৃত মায়ের ওপরে এতো বড়ো
একটা আরোপ দিচ্ছো কোন সাহসে?
—তো কি বলবো আর,সে মহিলা বিয়ের আগে কোনো পরপুরুষের
সন্তান গর্ভে ধারণ করে যে নষ্টা না তো,কে নষ্টা??আমার প্রশ্নের উত্তর তুমি…..
—-কি বলছো কি তুমি এগুলো, আমার মা এমন কাজ করতে পারে আমি
মরেও গেলেও বিশ্বাস করি না তোমার কথা,নিজের দোষ ঢাকার জন্য আমার
মৃত মাকে অপবাদ দিচ্ছো তুমি।আর সে তো শুধু আমার মা নয়,তোমারো
স্ত্রীও সে….।অবশ্য তোমার মতো মানুষের পক্ষে সব সম্ভব, এইটুকু বুঝে গেছি আমি।
—তুমি যা বোঝার বুঝে নাও,কিন্তু তাই বলে সত্যিটা পাল্টে যাবে না।
—-সত্যি, কিসের সত্যি?
—যখন তোমার মায়ের সাথে বিয়ে হয় আমার,তুমি তার গর্ভে প্রতিপালিত
হচ্ছো,তখন ঠিক মাত্র চার মাসের অন্তঃস্বত্তা তোমার মা।
—আমি এখনো জানি না তোমার কথা কতোটুকু সত্যি,যদি ভুলেও তাই হয়ে
থাকে তবে আমার আসল বাবা কে বলো,কার ঔরসে জন্ম হয়েছিলো আমার…
—-কার ঔরসে জন্ম হয়েছে…. (হাহাহাহাহা)এই বলে বাবা হোহো করে হাসতে লাগলো….
—-কি হলো, হাসছো কেন তুমি….
—-(হাহাহাহাহা)সেটা তো নিজেও জানিনা না আমি….
শুধু আমি কেন,পৃথিবীর কেউ জানে না তোমার বাবা আসলে কে,এমনকি তোমার মাও না !
—-মানে…??
—মানে কি শুনলে ,নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারবো তো?
তুমি তো একেবারেই বিশ্বাস করো না আমায়,
—বলো,,
—মানে হলো এটাই,তোমার জন্ম সাধারণভাবে হয় নি।কারোর ধর্ষণের ফলে জন্মেছো তুমি!!তোমার মায়ের ওপর একদল পশু হামলা চালায়..সেই নরপশুদের ভেতর থেকে কারো একজনের অংশ থেকে যায় তোমার কুমারী মায়ের ভেতরে,আর আজ সেই অংশটা আর কেউ নয় তুমি নিজেই।যার না আছে কোনো পরিচয়,কোনো ধর্ম,কোনো বংশ।তবে বুঝে নাও কে তুমি…,তুমি তো কোনো মানুষের পর্যায়েই পড়ো না।রাস্তার পশু আর তোমার ভেতরে কি তফাত আছে একটু বলবে আমায়?এখনো জিজ্ঞেস করবে কেন ঘৃনা করি তোমায় আমি,,
বাবার কথাগুলো লোহার শেলের মতো বাঁধছে আমার বুকে,মনে হচ্ছে সেই শেলের আঘাত বুকটাকে রক্তাক্ত করে দিচ্ছে আমার,,,জীবনের এই পর্যায়ে এসে এতো বড়ো একটা তিক্ত সত্যের মুখোমুখি হবো কখনো ভাবতে পারি নি।অশ্রুসিক্ত চোখে আবারো বাবাকে প্রশ্ন করি,
—আমার মায়ের এতো বড়ো সর্বনাশ হলো কিকরে,কি ঘটেছিলো সেই দিন তার সাথে?বলো আমায়…
.
চলবে,..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com