তীব্র ভালোবাসার অনুভূতি । পর্ব - ০৯
তুই শুধু কাল সকাল অব্ধি অপেক্ষা কর,আমি তোর চোখের সামনেই আমার নতুব বউ নিয়ে ঢুকবো এ বাড়িতে।” রিকিয়া অবাক চোখে ইমানের দিকে তাকিয়ে রইলো,ইমান দরজা লাগিয়ে এসে বসে পরলো মিমের পাশে।রিকিয়া জোরে জোরে বাহিরে দাঁড়িয়ে দরজা ধাকাচ্ছে,অবশ্য কোনো লাভ হয়নি তাতে।মিম আজিনের জামাকাপড় বদলে বিছানার চাদর টা বদলে ফেললো সাথে সাথে,তবে ছেলের গালে পাঁচ পাঁচটা আঙুলের ছাপ দেখে ইমান আজিন কে জিজ্ঞেস করলো,
– “খুব ব্যাথা করছে বাবা…? ঔষধ লাগিয়ে দিতে হবে?” আজিন বলল,
– “না…! আম্মু মণি ঔষধ লাগিয়ে দিয়েছে ড্যাড। এবার আমার ব্যাথা কমে যাবে।” মিম আজিন সহ জাবিন কে বুকে জড়িয়ে ধরলো,জাবিন মনমরা হয়ে ড্যাড কে বললো,
– “ড্যাড,তুমি কি এতো কিছুর পরেও বিয়ে করবে ওই মহিলা কে…?” আজিন নাক টানতে টানতে বলল,
– “তুমি না বলেছিলে একটা ভালো ‘মম’ এনে দেবে আমাকে আর ভাইয়া কে…!” ইমান আড়চোখে মিম কে দেখে বললো,
– “দেবো তো বাবা…! দোয়া করো,তোমার ‘মা’ যেন রাজি হয়ে যায় বিয়ে করতে আমার সাথে…।” জাবিন হঠাৎ বলে উঠলো,
– “কি…?” ইমান বললো,
– “কিছু না বাবা,শুয়ে পরো অনেক রাত হয়ে গেছে।” মিম তখন জাবিন এবং আজিনের জন্য হরলিক’স বানিয়ে আনলো,জাবিন জিজ্ঞেস করলো,
– “আম্মু তুমি কি করে বুঝতে পারো আমাদের খিদে লেগেছে?” মিম মৃদু হেসে বাচ্চাদের কপালে চুমু খেয়ে বলল,
– “মায়েরা সব বুঝে যায়…। তার সন্তানদের চেহারা দেখে।” আজিন বললো,
– “ড্যাড,তুমি আমাদের আম্মু মণি কে বিয়ে করতে পারো না?” জাবিন বলল,
– “সেটাই,অন্য কোথাও কেন তোমায় ‘মম’ খুঁজতে যেতে হবে?” ইমান মিম উভয়ে বাচ্চাদের কথা শুনে মিটিমিটি হাসতে লাগলো,মিম বাচ্চাদের ঘুম পারিয়ে দিলো প্রায় আধ ঘন্টা আগে…। তারপর ইমান অসহায় ভাবে মিম কে বলল,
.
– “বুঝতে পারছি,আমি আপনার ওপরে অনেক চাপ হয়ে গেছে।” মিম বলল,
– “চাপের কিছু হয়নি জনাব,তবে আমি ভেবে নিয়েছি আমি রাজি এ বিয়েতে…।” কথাটা শুনে ইমান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো,মিম কে জিজ্ঞেস করলো,
– “কথা টা ভেবে বলছেন তো..? কোনো দ্বিধা-দন্ধ নেই তো আপনার মাঝে?” মিম বললো,
– “না নেই,কারণ আমি যা ভাবার ভেবে নিয়েছি…! আপনি এখন শুয়ে পরুন জনাব,আমি লাইট’স গুলো অফ করে দিচ্ছি…। ঠিক আছে?” ইমান সন্তর্পণে মাথা নাড়লো,মিম লাইট অফ করে এসে শুয়ে পরলো বাচ্চাদের মাঝে।
সকালে ইফতি সাহেব ঘুম থেকে উঠে ইতি কে বললেন,
– “ইমান কে দেখতে পাচ্ছি না।বাচ্চাদের দেখতে পাচ্ছি না।ওরা কোথায় গেছে?” ইমা বেরোতে বেরোতে বললো,
– “মিম আপু বাচ্চাদের সাথে স্কুলে আর ভাইয়া ভোরবেলা কিছু জরুরী কাজের জন্য অফিসে গেছে…।” ইফতি সাহেব বললেন,
– “যাক ভালোই,ছেলেটার মন মেজাজ ভালো হয়ে যাবে কিন্তু মিম স্কুলে ও যায় বাচ্চাদের সাথে?” তখন ইতি বলল,
– “হ্যাঁ,যায় এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে?” ইফতি সাহেব কোনো কথা বাড়ালেন না,জেইদা কে বললেন কফি করে দিতে…। কিছুক্ষণ পর,.
.
ইফতি সাহেবের কিছু বন্ধুরা বাসায় এলেন,জয়নাল সাহেব কথায় কথায় বন্ধু কে বুঝিয়ে বললেন,
– “আরে ভাই আমরা বললে কি লাভ হবে…? তুই যা বলছিস অহেতুক কথাবার্তা,আমাদের ছেলেই তো পছন্দ করে না মেয়ে (রিকিয়া) টা কে।” রিকিয়া জয়নাল সাহেবের কথা শুনে বললো,
– “আঙ্কেল আপনারাই আমার শেষ ভরসা,প্লিজ…। আপনারা এভাবে ভুল বুঝবেন না আমাকে…।” তখন হঠাৎ জাবিন এবং আজিন দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বাড়িতে ঢুকে হাসিমুখে সবাই কে বলতে লাগলো,
– “কোথায় সবাই? কোথায় সবাই? বাড়িতে বউ এসেছে,বউ এসেছে…।” বাচ্চাদের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে সদর দরজার দিকে তাকালো,দেখলো,
মিম নববধূর সাজে ইমানের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।ইমান রিকিয়ার চোখে চোখ রেখে ধূর্তের ন্যায় হাসলো,ইতি বরণ ডালা সাজিয়ে এনে হাসিমুখে বরণ করলেন নিজের পছন্দের বউ মা কে…।” মিম বাড়িতে ঢুকেই তাকে সহ বয়োজ্যেষ্ঠ সবাই কে সালাম করলো,রিকিয়া হঠাৎ এগিয়ে এসে চড় মারতে গেলো ওকে…।
ইমান সাথে সাথে দু’জনে মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো,রিকিয়া কে বলল,
– “সাবধান,আমি কিন্তু আমার বউয়ের অসম্মান সহ্য করবো না এ বাড়িতে…। আর আপনি ও এই বাড়ির বউ কাজেই নিজের সম্মান বজায় রাখুন ঠিক আছে?” ইফতি সাহেব ছেলে কে কিছু বলতে চাইলেন,তখন ইমান বলল,
– “বাবা…! কথা দিয়ে কথা রাখার কথা তুমি ভুলে গেলে কি ভাবে?”
– “না মানে…?”
.
– “আঙ্কেলদে’র কে তুমি ডেকে এনেছ আমাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে এই ফালতু মেয়ে টার সাথে বিয়ে দিতে?” জয়নাল সাহেব ইমান কে বললেন,
– “শান্ত হও বাবা! যা হওয়ার হয়ে গেছে এতো রাগারাগি করেই বা কি হবে…? বাড়িতে নতুন বউ নিয়ে এসেছ,তাকে সময় দাও,দেখবে সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।” ইমা তখন হাসতে হাসতে এগিয়ে এসে বললো,
– “আমি ও একমত জয়নাল আঙ্কেলের সাথে,প্রমী তুই ভাবিকে তার বেড রুমে নিয়ে যা…। আজিন জাবিন?
– “হ্যাঁ,ফুপি…।”
– “যাও বাবা,তোমরা ও ঘরে চলে যাও তোমাদের আম্মুর সাথে।” জাবিন এবং আজিন হাসিমুখে মিমের হাত ধরে তাকে ইমানের বেড রুমে নিয়ে এলো আর তখন রিকিয়া চিৎকার করে বললো,
– “আমি মানি না,মানি না তোমাদের এই বিয়ে টা কে…।” ইমান হাসতে হাসতে বলল,
– “আপনি না মানলে আমার কি…? আমার কিছু যায় আসে? আমি আমার বেড রুমে গেলাম…। সবাই এখানে ড্রামা এনজয় করো বসে বসে।” ইফতি সাহেব ইমান কে বললেন,
– “বাবা,আমার কথা শোন…?” ইমান বললো,
– “বাবা আমার তোমাকে যা বলার আগেই বলা হয়ে গেছে…। প্লিজ,আর দয়া করে ওই মেয়ে টার হয়ে আমার কাছে সাফাই গাইতে এসো না,নিজেকে নিচে নামিয়ো বাবা।বিশ্বাস করো,
.
দেখতে খুব খারাপ লাগে আর মিম কে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করো বাবা…।
অন্তত আমার এবং তোমার নাতিদের কথা ভেবে…!
ওর কিন্তু কোনো দোষ নেই বাবা,ওকে আমি বেছে নিয়েছি নিজের স্ত্রী এবং দু’ই সন্তানের মা হিসেবে…।
আমার সন্তানেরা মা হিসেবে ওকেই জানে,দু’জনেই মা বলে ডাকছে ওকে।
আমার জাবিন কে বুঝ হওয়া অব্ধি মন খুলে কখনো হাসতে দেখিনি,মন খুলে মিশতে দেখেনি বাচ্চা টা কে। ও সব সময় আমার এবং আরিশফার ঝগড়া দেখে বড় হয়েছে ছোটো বেলা থেকে…।
আমি মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করলেও আরিশফা সেটা করেনি,
বাচ্চাদের কথা একবারের জন্য ভেবে দেখেনি সে আর বাবা
হিসেবে আমি আমার সন্তানদের হাসিখুশি দেখতে চাই,সুন্দর একটা জীবন উপহার
দিতে চাই ওদের দু’জন কে…। একজন মা উপহার দিতে চাই,এমন একজন মা
,যে আমি থাকি আর নাই থাকি,সারাজীবন নিজের মনে করে ওদের দু’জন কে
আগলে রাখবে নিজের বুকে।” ইফতি সাহেব ছেলের সাথে আর কোনো কথা
বাড়ালেন না,এস্ত পায়ে হেঁটে এলেন হল ঘরের দিকে।তখম আবেদ হোসেন
এসে বন্ধু কে বোঝাতে বোঝাতে বললেন,
– “নতুন বউ মা অনেক লক্ষী,তুমি মেনে নাও মেয়ে টা কে…।” রিকিয়া রাগে
কাঁপতে কাঁপতে এসে আবেদ সাহেব কে বললো,
– “আঙ্কেল আপনারা সবাই ওই মেয়েটির হয়ে মামার সাথে কথা বলছেন,একবার ভেবে দেখেছেন আমার কি হবে?
আঙ্কেল আমার ভবিষ্যত কি? আমি কেনই বা পরে থাকবো এ বাড়িতে?” প্রমী তখন সবাই কে সকালের নাস্তা দিতে দিতে বললো,
– “আশ্চর্য! এ বাড়িতে কে পরে থাকতে বলেছে তোমাকে? ইমাম ভাইয়া মারা যাওয়ার পর ও কিন্তু আমরা তোমাকে ফেলে দেইনি ভাবি…।
কারণ আমরা সবাই ভালোবাসি তোমাকে,কিন্তু বাড়িময় অশান্তি যে তুমিই করে বেড়াচ্ছ,তুমি কি দেখতে পাচ্ছ না ভাইয়া ভালোবাসে না তোমাকে…।” জয়নাল সাহেব বললেন,
– “হ্যাঁ,সেটাই তো…। এবার ও তো আমাদের ইমান মুখ ফুটে বললো না,যে সে ভালোবাসে তোমাকে…। তুমি শুধুশুধু কেন বাড়িতে অশান্তির সৃষ্টি করছ,তোমার শশুর কে সবার সামনে ছোটো করছ কি ভেবে…?”
– “কিন্তু আঙ্কেল…?”
.
– “আমাদের ইমান তো আর বিয়ে করবে বলে কোনো আশ্বাস দেয়নি তোমাকে…।” ইমান ইমার ঘর থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে বলল,
– “সেটাই আসল কথা আঙ্কেল কিন্তু এই সব কে বোঝাবে এই মাথামোটা মহিলা টা কে…?” রিকিয়া চোখের জল মুছতে মুছতে বললো,
– “মামা কথা দিয়েছিলেন আমাকে…।” ইমান মেজাজ খারাপ করে বলল,
– “লাইক সিরিয়াসলি ড্যাড…? একবার জিজ্ঞেস করার কোনো প্রয়োজন মনে করলে না আমাকে…?” ইফতি সাহেব ছেলের প্রশ্নের কোনো উওর দিতে পারলেন না,শুধু অসহায় ভাবে তাকিয়ে রইলেন ছেলের মুখের দিকে…।” তখন ইফতি সাহেবের বোন মিথিলা এসে তাকে বললেন,
– “আপনি কথা দিয়ে কথা রাখতে পারলেন না ভাই? বিধবা বলে খরচের খাতায় ফেলে দিলেন আমার মেয়ে টা কে…?” ইমাম এগিয়ে এসে মিথিলা কে বললো,
– “কথা দিয়ে কথা রাখবে মানে? তোমার কি দেখে জড়বস্তু বলে মনে হচ্ছে আমাকে? না কি আমি চয়েস এতো খারাপ যে বিয়ে বসবো নিজের মরহু ভাইয়ের বউয়ের সাথে।” মিথিলা ইমানের প্রশ্নের জবাব দিতে না পেরে উল্টো ওকে বোঝাতে লাগলো,
– “বাবা…! ইসলামে একাধিক বিয়ে সুন্নাত,তুই চাইলে তোর দ্বিতীয় বউ করে রাখতে পারো রিকিয়া কে…।” রিকিয়া বলল,
– “সরি মা,আমি কোনো ফেলনা নই…! কাজেই আমাকে বিয়ে করতে হলে ওকে মিম কে ডিভোর্স দিতে হবে।” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “আমি মিম কে জীবনে ডিভোর্স দেবো না আর না জীবন বিয়ে করতে চাই আপনাকে…। নিজেকে কি মনে করেন আপনি? পুরোই ভ্যালুলেস আপনি আমার কাছে।” রিকিয়া আরো কিছু বলতে চাইলে,মিথিলা মেয়ে কে থামিয়ে ইমান কে বললো,
.
– “বাবা তোর তো একাধিক বউ রাখার ক্ষমতা আছে।” ইমান হাসতে হাসতে বলল,
– “হ্যাঁ,ঠিক যেমন তোমার জামাইয়ের তুমি বাদেও আরো চার টা বউ এটাই বলতে চাইছ আমাকে…? সরি,আমার সক্ষমতা থাকতেই পারে,তার মানে এই নয় ফুফু যে আমাকে একাধিক বিয়ে করতে হবে।কারণ জানো?
কারণ আমি এক নারীর এক পুরুষ,কাজেই একাধিক স্ত্রী দিয়ে কি হবে? আমি আমার এক স্ত্রী কে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকি,তুমি বরং তোমার এই মেয়ের অন্যত্র বিয়ের ব্যবস্থা করো ঠিক আছে।” ভাইপোর কথা শুনে মিথিলা চুপ করে গেলেন কারণ কথায় কিংবা যুক্তিতে,তিনি পেরে ওঠেননি ইমানের সাথে।মিম জামাকাপড় না ছেড়েই রান্নাঘরে বাচ্চাদের জন্য খাবার বানাতে এলো আর দেখে ইতি বললেন,
– “মা আমি না রান্নাঘরে ক’দিন আসতে বারণ করেছি তোকে?” মিম বলল,
– “কিন্তু মা?”
– “কি কিন্তু…? যা ঘরে গিয়ে বস বাচ্চাদের কাছে।” মিম চুপচাপ লক্ষী মেয়ের মতো ঘরে চলে এলো এবং দেখতে পেলো ইফতি সাহেব খেলছেন তার নাতি দের সাথে।মিমের উপস্থিতি অনুভব করে ইফতি সাহেব পেছনে ফিরে তাকালেন বললেন,
.
– “ভেবো না আমি এতো সহজে মেনে নেবো তোমাকে…!” মিম মৃদু হেসে বলল,
– “আপনি একদিন না একদিন আমাকে মেনে নেবেন বাবা…! আর মন থেকেই মেনে নেবেন আমাকে…।” ইফতি সাহেবের কেন যেন মিম কে দেখে খুব মায়া হলো,তবে মায়ায় জড়ানোর আগেই তিনি বেড়িয়ে এলেন ঘর থেকে…। ইমাম ইতির কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে মিম এবং বাচ্চাদের সাথে দেখা করতে ঘরে এলো,ঘরে ঢুকেই দেখলো ছেলেরা অনেক গল্প করছে তাদের মায়ের সাথে,জাবিন মিম কে জিজ্ঞেস করলো,
– “আম্মু! মম,মা না আম্মু কোনটা বলে ডাকবো তোমাকে?” মিম হাসতে হাসতে বলে,
– “যেটা ইচ্ছে সেটাই বলে ডাকো,আমার ছেলেরা যা চাইছে তাই হবে।আজিন এবং জাবিন সাথে সাথেই আম্মুর গলা জড়িয়ে ধরলো।” ইমান হাসতে হাসতে হালকা কেশে বলল,
– “সবাই দুপুরের খাবার টা খেয়েনিন,মা পাঠিয়েছে।” মিম ইমানের গলা শুনে মাথায় তৎক্ষনাৎ শাড়ির আঁচল তুলে দিলো,ইমান মিটিমিটি হাসতে লাগলো তা দেখে,অতঃপর এগিয়ে এসে মিমের পাশে বসলো,ফিসফিস করে বললো,
– “আপনার অনুমতি না নিয়ে আমি কখনো স্পর্শ করবো না আপনাকে…!” জাবিন হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো,
– “কেন ঘুরতে নিয়ে যাবে না ড্যাড! তুমি ভালোবাসো না আম্মু কে…?” ছেলের কথা শুনে ইমান হাসতে হাসতে বলল,
– “ঘুরতে নিয়ে যাবো তো বাবা! যদি তোমার আম্মু যেতে চায় আমার সাথে।” আজিন বলল,
– “কেন যাবে না,আমার আম্মু মণি খুব ঘুরতে যাবে তোমার সাথে।” মিম ছেলেদের খাইয়ে দিতে দিতে ইমান কে জিজ্ঞেস করলো,
– “আপনি খেয়েছেন?” ইতি এসে বলল,
– “না ভাবি,ভাইয়া বলেছে তোমার সাথে খাবে।” মিম উৎকণ্ঠা নিয়ে বলল,
– “কিন্তু তোমার ভাই যে খিদে চেপে রাখতে পারে না।” প্রমী হাসতে হাসতে বলল,
– “সে তুমি বুঝে নাও তোমার স্বামীর সাথে।” মিম চোখ পাকিয়ে তাকালো,ইমান মুচকি হেসে বললো,
– “আপনার সাথে খেতে খেতে এখন আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।” মিম তখন ইমানের মুখে গ্রাস তুলে দিলো,ইমান খেয়ে নিলো সাথে সাথে।
.
আড়াল থেকে দু’জনের এতো মিলমিশ দেখে মিথিলা মেয়েকে শান্তনা দিয়ে বললেন,
– “চিন্তা করিস না মা…! আমি ও দেখবো ওদের এতো মিলমিশ ক’দিন থাকে…? আর তোর বড় মামা রয়েছেন আমাদের হাতে এরপর শুধু তোর মামী কে হাত করতে পালেই হলো বাকি কাজ টা আমাদের জন্য খুব ইজি হয়ে যাবে…। পেছন থেকে ইতি সব শুনে ও না শোনার ভান করে এগিয়ে এলো ননদের কাছে,হাসিমুখে এটা-সেটা নিয়ে গল্প করতে ইতি মিম কে বললেন,
– ” মা কালকে কিন্তু তোর বউ ভাত…! অনেক মেহমান আসবে আমাদের বাড়িতে,তবে রান্নাবান্না কিন্তু সব তোকেই করতে হবে নিজের হাতে।” মিম মৃদু হেসে বললো,
– “কোনো সমস্যা নেই মা..। তুমি শুধু আমাকে বলে দাও কি কি রান্না করতে হবে?” ইতি বললেন,
– “তুই তোর ইচ্ছে মতো রান্নাবান্না করিস,জেইদা ওরা সব হাতে হাতে তোর কাছে এগিয়ে দেবে।” মিমের খুশি দেখে রিকিয়া হাসতে হাসতে মনেমনে বলল,
– “রান্না করবে না তুমি? রান্না আমি কাল করাচ্ছি তোমাকে…।” মেয়ের হাবভাব দেখে মিথিলা মেয়ে কে বললেন,
– “ওকে রান্না করতে দে মা…! আমরা খেলা দেখাব অন্য জায়গায়।”
– “ঠিক আছে।” মিম রাতে বাচ্চাদের ঘুম পারিয়ে দিলো,বাচ্চারা বাসর রাতেও ছিল বাবা-মায়ের কাছে।মিম বাচ্চাদের ঘুম পারিয়ে রেখে সারারাত ইমানের সাথে গল্প করে কাটালো,ভোর হতে না হতেই সে এসে রান্নাঘরে ঢুকে পরলো জেইদা কে নিয়ে নিজের সাথে।
তারপর সবার জন্য চা,জল,খাবার বানালো।ইমানের জন্য আলাদা নাস্তা বানিয়ে সে নিজেই নিয়ে গেলো তার কাছে।ইমান কফির মগে এক চুমুক দিয়ে এগিয়ে এসে মিমের ছোটো ছোটো চুল গুলো ওর কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বলল,
– “এতক্ষণ পর আপনার আমার কথা মনে পরেছে…?” মিম বলল,
– “না মানে…।” ইমান ওর হাত চেপে ধরে বললো,
– “কি মানে? হুমম…! মিসেস খান,এই অনুষ্ঠান টা কিন্তু আপনার জন্য হচ্ছে।” মিম মৃদু হেসে বললো,
– “বুঝলাম,তাই বলে কি আমি অতিথিদের রান্না করে খাওয়াতে পারি না নিজের হাতে?” ইমান এগিয়ে এসে মিমের কপালে চুমু খেয়ে বলল,
.
– “খাওয়ান,কিন্তু আমার জিনিস গুলো শুধু আপনাকেই গুছিয়ে রাখতে হবে।
” ইমানের চোখের চাওনি আর ভাবভঙ্গি দেখে মিম লজ্জা পেয়ে কোনোরকমে পালিয়ে এলো
ঘর থেকে।নিজের হাতে হরেক রকমের রান্নাবান্না করলো,তারপর নিমন্ত্রিত
অতিথিদের আপ্যায়ন করতে লাগলো নিজের হাতে।রিকিয়া হাসিমুখে সব টা
দেখছিল,তাকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন সে সবটাই মেনে নিয়েছে মন থেকে…।
তবে খাবার টেবিলে মিম যখন সবাইকে চিকেন সার্ফ করছিল,তা দেখে সে
মিটিমিটি হাসে।ইফতি সাহেব চিকেন যখন মুখে দিলেন,তখন আবেদ সাহেব মিম কে বললেন,
– “মা…। তোমার সব রান্না খুব ভালো হয়েছে।” তখন একে একে সবাই মিমের হাতের রান্নার প্রশংসা করলে মিথিলা এবং রিকিয়া উভয়ের মুখ কালো হয়ে গেছে।” মিম এগিয়ে এসে ইমানের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
– “আসলে অল ক্রেডিট গোজ টু মাই হাসবেন্ড,উনিই আজ আমার মানসম্মান ধরে রেখেছে।” সবাই মিমের কথা শুনে বেশ অবাক হলো,মিম দম নিয়ে বললো,
– “আসলে লবণ খুব বেশি পরে গিয়েছিল চিকেনের মধ্যে,উনি সে খবর শুনে ঝটপট বেশ কয়েকটি বড় আলু ছিলে চিকেনের মধ্যে দিয়ে দিলো,ব্যাস বাড়তি লবণ টুকু আলু গুলো শুষে নিয়েছে।” মিমের কথা শুনে সবাই বিচলিত না হয়ে বরং খুশি হলো,জয়নাল বললেন,
– “মা, তোমরা সারাজীবন এভাবেই মিলেমিশে থেকো একে অপরের পাশে।” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “ডেফিনিটলি থাকবো আঙ্কেল…! দোয়া করবেন প্লিজ আমাদের দুজনের জন্যে।” আর তখন ইমা দুষ্টুমি করে ইমান কে বলল,
– “ভাইয়া তুমি এভাবেই সারাজীবন আলুর মতো থেকো আমার ভাবির পাশে।” ইমার কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো,ইমান মিমের পেটে খোঁচা মেরে বললো,
– “কি হলো? খেতে দিবেন না আমাকে?” মিম হাসতে হাসতে বলল,
– “বাচ্চাদের ডেকে নিয়ে আসি…? তারপর আপনাদের তিন জন কে খেতে দিচ্ছি এক সাথে।”
.
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com