পিচ্চি চাচাতো বোন । পর্ব -২৫ এবং শেষ
জান্নাত খাবার নিয়ে এসে আমার
কাছে রেখে চেঞ্জ করতে লাগলো।
জান্নাতঃকি হলো বসে রইলি কেন?
আমি;কি করবো?
জান্নাতঃতুই নিজেই তো বললি ক্ষুধা
পেয়েছে।এখন না খেয়ে বসে আছিস কেনো?
আমিঃনিজের হাতে খেতে ভালো লাগছে না।
জান্নাতঃতো চামুচ এদে দেয়?
আমিঃতুই খাইয়ে দিবি
জান্নাতঃপারবো না
আমিঃকেনো পাড়বি না?
জান্নাতঃব্যস পাড়বো না।
আমিঃঠিক আছে,আমি তাহলে রুবি
কিংবা নুসরাতের থেকে খেয়ে নেবো।
জান্নাতঃঠ্যাং ভেঙে দেবো,আবার
যদি কখনো কোনো মেয়ের কথা বলিস
আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
আমিঃতাহলে খাইয়ে দে জান্নাতঃএখন তো আরো দেবো না।
তুই আমার সামনে বসে নিজ হাত দিয়ে খাইবি।
আমি;পারবো না জান্নাতঃতোর বাপ পাড়বে,দাড়া আমি লাঠি নিয়ে আসতেছি।
আলমারির পেছনে থাকা একটা পাইপ
নিয়ে সামনে দাঁড়ালো।এই পিচ্চিটার
মাথায় পেত্নী চাপলো নাকি।একটুতেই
রেগে বোম হয়ে গেছে।
জান্নাতঃখাচ্ছিস না কেনো?
আমিঃওটা ফেলো আগে।
জান্নাতঃতুই আগে খা
আমিঃতুমি ওটা ফেললে খাওয়া শুরু করবো।
জান্নাতঃবাব্বাহ,তুই থেকে তুমি।ঢং
করোস আমার লগে?
আমিঃবউকে তো তুমি করেই বলতে
হয়।আজ থেকে তুমিও আমাকে তুই
না করে তুমি করে বলবে।
জান্নাতঃআমার যেটা ইচ্ছা সেটা বলবো।
আর তুই খাচ্ছিস না কেনো,মেজাজ কিন্তু
আমার সেই রকম খারাপ হইয়া যাচ্ছে।
আমিঃআরে ধুর
আর কিছু না বলে আস্তে আস্তে খেতে
লাগলাম।কিছুটা খাওয়ার পর জান্নাত
প্লেটটা আমার থেকে নিয়ে খাইয়ে
দিতে লাগলো।মেয়েটার মাথাত কি
চলে কিছু বলতে পাড়বো না।কিন্তু
ওর কেয়ারিং দেখে খুব সুন্দর করে
বলতে পাড়বো পিচ্চিটা অনেক বেশিই
ভালোবাসে।তবে এখন আর পিচ্চি বলা
মোটেও ঠিক হবে না।অনেক বড় হয়ে,
এখন কিছু বললেও সবাই আমাকেই
বকা দেয়।যদিও বাসায় বেশি থাকি
না।তবে কল করে কথা যখন বলতাম
তখন আমার চাইতে জান্নাতের সাথে
বেশি কথা বলতো।সে যাই হোক,
জান্নাত আমাকে খাইয়ে দেয়ার পর
প্লেট নিয়ে বাইরে চলে গেলো।
অনেকটা সময় পর রুমে এসে জিজ্ঞাস
করলো;
জান্নাতঃকিছু কেনাকাটা করতে হবে।
আমিঃকেনো?
জান্নাতঃসবাই দেয়া লাগবে।
আমিঃটাকা নেই,তুই আগে ডাক্তার হো,
তারপর সবাইকে কিনে দিস।
জান্নাতঃশুয়োর তুই না বললি আজ
থেকে তুমি করে বলবি?
আমিঃওলে আমার বউটারে,আচ্ছা
আমি সরি,তুমি করেই বলবো।
জান্নাতঃআমার ডাক্তার হতে এখনো
অনেক দেরি আছে।আর যেটা বললাম
সেটা করবা কিনা বলো?
আমিঃএখন যাবো?
জান্নাতঃহ্যা
আমিঃড্রাইভ তুমি করলে যাবো
জান্নাতঃরাজি,আমাদের সাথে আমার
বোন যাবে।
আমিঃঈশানও যাবে?
জান্নাতঃও বাসায় চলে গেছে,কি একটা
সমস্যা হয়েছে সেটার জন্য।
আমিঃওহ,নেহাকে বিয়ে দিবে না?
জান্নাতঃদেরি আছে।
আমিঃছেলে আছে কিন্তু একটা
জান্নাতঃআমি জানি তুই তোর মতো
ছ্যাঁচড়া একটা ছেলেকে দেখছিস,তাই
লাগবে না।আমি আমার বোনের জন্য
নিজেই পাত্র খুঁজে আনবো।
আমিঃছ্যাচড়া ছেলেকে বিয়ে কেন করলি?
জান্নাতঃছোটবেলার ভালোবাসা,না হলে
তোকে লাথি দিয়ে চান্দে পাঠিয়ে দিতাম।
আমিঃআমার ডায়লগ ছিলো।
জান্নাতঃনাম লেখা আছে?
আমিঃঠিক আছে,এখন রেস্ট করি।
বিছানার উপর শুতেই জান্নাত আমার
বুকের উপর মাথা রেখে চেপে ধরলো।
জান্নাতঃজানিস,তোর থেকে দূরে থাকতে
আমার অনেক বেশিই কষ্ট হতো।
আমিঃআমার এখনো হয়,তবে দূরে
থাকতে না।তোমার মুখ থেকে তুই শুনতে।
জান্নাতঃসবার সামনে তুমি,কিন্তু যখন
আমরা একা থাকবো তখন তুই।
আমিঃএকদম না
জান্নাতঃপ্লিজ,সোনা প্লিজ(থুতনি ধরে)
আমিঃওকে মানলাম।
জান্নাতঃএখন ঘুমাও
আমিঃতোমার ফোনটা দাও
জান্নাতঃকেনো?
আমিঃদেখবো কি কি করিস
জান্নাতঃটেবিলে আছে,পরে দেখে নিও।
এখন শুয়ে আছি তো।
আমিঃভালোবাসি
জান্নাতঃতোর থেকে আমি বেশি
আমিঃপাগলি
জান্নাতে জড়িয়ে ধরার কারণে মাথাটা
দেখতে পাচ্ছিলাম।তাই ওখানে একটা
চুমু দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
কতোটা সময় ঘুমিয়ে ছিলাম মনে নেই,
ঘুম থেকে উঠে জান্নাত এবং নেহাকে
সাথে নিয়ে শহরে আসলাম।সবার জন্য
কেনাকাটা করতে করতে প্রায় সন্ধ্যা
হয়ে এসেছে তবুও কিছু একটা খুঁজতে
ব্যস্ত দুবোন।
আমিঃআর কি?
জান্নাতঃতুমি গাড়িতে যাও
আমিঃআর এসব?
জান্নাতঃনিয়ে যাও,আমাদের কাছে এসব
রেখে যাবে নাকি?
নেহাঃতুমি যাও তো দুলাভাই।
আর কিছু না বলে গাড়িতে এসে বসলাম।
প্রায় ২০ মিনিট পর দুজন হাসতে হাসতে
গাড়িতে আসলো।দুজনকে পেছনে বসতে
দেখে কেমন একটা ড্রাইভার মনে হচ্ছিলো
নিজেকে।পেছন দিকে তাকিয়ে বললাম;
আমিঃড্রাইভার পেয়েছো আমাকে?
জান্নাতঃছি: ড্রাইভার হতে যাবে কেনো?
আমিঃতো দুজন পেছনে কেন?
জান্নাতঃথাকলে সমস্যা কি?
আমিঃআমি ড্রাইভ করবো না।
জান্নাতঃআসার পথেও আমিই করছি,
কিন্তু এখন পারবো না প্লিজ অনেক
টায়ার্ড আমি।
কিছু না বলে চোখ গরম করে সামনে
তাকিয়ে ড্রাইভ করতে লাগলাম।বাসায়
আসতে আসতে প্রায় ৮টা বেজে গেলো।
বাসায় এসে কোনো করম ফ্রেস হয়ে
ব্যাগের বোঝা আমার হাতে দিয়ে
জান্নাতের সাথে নিচে আসতে হলো।
তবে জান্নাত যে একদম খালি হাতে
সেটাও কিন্তু না।কি সব গহনা কিনছে
কাদের জেনো দিবে বলে।নিচে এসে
জান্নাত বলার আগে আমিই বললাম;
আমিঃএই ব্যাগগুলো আর টানতে
পারবো না।হাত একদম ব্যথা করছে।
জান্নাতঃএতো বড় হয়েছো আর
এটুকু জ্ঞান হলো না?সোফার একপাশে রেখে দাও।
কোনো উত্তর না দিয়ে রেখে দিয়ে বসলাম।
জান্নাতঃআমার মনে হয় প্রথমে আমার
বরটার বার্থডে পালন করাই বেটার।
ভাইয়াঃহুম সেটাই ভালো হবে।
জান্নাতঃএদিকে আসো।
সবার দিকে এগিয়ে গেলাম।।সব
কিছু হয়তো আগে থেকেই রেডি
করা ছিলো
বার্থডে কেক কাটার পর জান্নাত
ছাড়া সবাইকে খাইয়ে দিলাম।
মাঝেমাঝে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে
বুঝতে পারছিলাম মেয়েটা কেমন
একটা লজ্জা পাচ্ছে।অনেক হাসি
পেলেও অনেক কষ্ট করে মুখ
চেপে ছিলাম।সবাইকে কেক খাওয়ানো
শেষ করে চাকুটা রেখে দেবো তখন
ভাইয়া বলল;
ভাইয়াঃজান্নাতকে দে
আমিঃও সরি সরি,একদম মাথায়
ছিলো না।কেকের ছোট্ট এক টুকরো
জান্নাতের দিকে এগিয়ে নিতেই বলল;
জান্নাতঃআমার শরীরটা ভালো লাগছে
না।কেক আর খাবো না।তোমাকে তো
বললামই আমি এসব কেকে খাবো
না(আমাকে কিছুই বলেনি)।
আমিঃও হ্যা,মনে পড়েছে।
ভাইয়াঃতাহলে ঠিক আছে
সবাই কেক খাওয়ার পর টিস্যু দিয়ে
পরিষ্কার করতে লাগলো।
জান্নাতঃসবার জন্য আমাদের ছোট্ট
উপহার আছে।
ছোট মাঃকিসের উপহার?
জান্নাতঃএমনি,আমরা চলে যাবো তাই।
চাচ্চুঃওহ
জান্নাতঃপ্রথমে মামা মামির জন্য
আঙ্কেলঃধন্যবাদ মা,দোয়া করি।
জান্নাতঃতারপর আমার কিউটি
মায়ের জন্য।পছন্দ হয়েছে?
আভাঃহ্যা ছোট মাম্মাম।
জান্নাতঃতুই নিজে থেকে কিনেছিস,
তাই ভালো মন্দ তোর।
নেহাঃহাহাহা,আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।
আমিঃএবার ভাইয়া ভাবি।
জান্নাতঃতোমাদের অনেক অনেক
ধন্যবাদ আমাদের দুজনকে এক
করার জন্য।খুব ভালোবাসি তোমাদের।
জান্নাত উনাদের জড়িয়ে ধরলো।
একে একে সবাইকে তাদের উপহার
দেয়ার পর তারা নিজেরা আমাকে
দিতে লাগলো।অনেকেই অনেক কিছু
দিচ্ছিলো তবে বেশ অবাক হলাম
যখন জান্নাত আমাকে শুধুমাত্র একটা
গিফট করছে।সেটাও মেয়েদের ব্যবহার্য।
আমিঃএটা কি?
জান্নাতঃচোখ নেই তোমার?
আমিঃবদলা নেবো আমি হু
জান্নাতঃদেখা যাবে।তো এখন ডিনার করাই
আমার কাছে ভালো মনে হয়।
চাচ্চুঃহ্যা,সবাই বসে পড়ো।
ছোট মাঃআমি আর ভাভি মিলে দিচ্ছি।
নেহাঃজ্বি না আম্মাজান,আপনার মেয়েরা
থাকতে আপনারা কেনো দিবেন?
ছোট মাঃপাগলি একটা
আম্মুঃশোনো সবাই,জান্নাত কিন্তু তোমাদের
মেয়ে না।এতোদিন তোমাদের বাসায় ছিলো
কিন্তু কাল হতেই নিয়ে যাবো।তাই নিজের
মেয়ে বলে দাবী করা ছেড়ে দাও।
আম্মুর কথা শুনে একমাত্র জান্নাত ছাড়া
সবাই হেসে দিলো।
ডিনার শেষ করে রুমে বসে টেলিভিশন
দেখছি তখন জান্নাতের সাথে নেহা আসলো।
আমিঃকিরে শালিকা,তুমি এইহানে
নেহাঃআপনাগো বাসরঘর দেখতে আসলাম।
আমিঃআমাদের ঐসব হয়ে গেছে।
জান্নাত তো এখন ৩মাসের প্রেগন্যান্ট।
নেহাঃহোয়াট
জান্নাতঃওর কথা বাদ দে।তুই শোন,
তুই কখনো অতিত নিয়ে ভাববি না।
আব্বু আম্মু যেটা বলবে সেটা করবি।
এটুকু বলতে পারবো তোকে কখনো
তারা কাজের কথা বলবে না।তুই
নিজেই থেকে হাসিমুখে কাজ করতে
চাইলে আম্মুর রান্নার কাছে হেল্প করবি।
আব্বু বাইরে থেকে আসলে কখনো
কিছু চাইবে না।কিন্তু যদিও চাই তখন
আমাকে বলতো।এখন থেকে তুই সব।
তুই তাদের একমাত্র মেয়ে এখন।
আমিঃআর আমার একমাত্র শালি।
জান্নাতঃতুই চুপ করবি?আর বোন
আমার এটুকু তো এই পরিবারের
জন্য করতে পাড়বি?
নেহাঃআপু,আমাকে বাসায় কাজ
করতেই দেয় না।তুমি শুধু টেনশন
করছো।
জান্নাতঃউম্মাহ,এখন যা(কপালে চুমু দিয়ে)
নেহা রুম থেকে চলে যাওয়ার পর
জান্নাত বিছানার উপর বসললো।
আমিঃএখন কি?
জান্নাতঃকি আবার?
আমিঃঅপূর্ণ কাজটা করে ফেলি
জান্নাতঃমানে?কিসের কাজ?
আমিঃবাসর ঘরে যেটা হয় সেটা।
জান্নাতঃশুনো মি. নিলয়, আমি
এখনো অনেক পিচ্চি ঠিক আছে।
আমি;ওলে আমার পিচ্চি রে,ঠিকঠাক
মতো সংসার করলে এতোদিন দুটো
বাচ্চা মা হয়ে যেতেন।
জান্নাতঃআইছে ঢং করতে।
আমিঃআরে আসো না।(কোলে নিয়ে)
জান্নাতঃহু
আমিঃআমাদের মাঝে কিছু রুলস
তৈরি করা উচিৎ।
জান্নাতঃকেমন রুলস শুনি?
আমিঃকেউ যখন রেগে যাবে তখন
আরেকজন চুপচাপ সব শুনবে।
জান্নাতঃকিন্তু তোমার প্রতি তো আমার
রাগ আসেই না।
আমি;যদি কখনো আসে।
জান্নাতঃঠিক আছে,তবে কোনো
মেয়ের সাথে বেশি কথা বলা যাবে না।
বলছি না একদমই বলবা না।বলবা
তবে লিমিট রেখে।
আমিঃরাজি
জান্নাতঃছুটির দিনে ঘুরতে নিয়ে যাবে।
আমিঃআর কি?
জান্নাতঃআমাকে কখনো কাঁদানো যাবে না।
আমিঃতুমি যদি ইচ্ছা করে কাঁদো সেখানে
আমার কি দোষ?
জান্নাতঃতোমার জন্য জেনো না কাঁদি
আমিঃওকে,দশটা না পাঁচটা না একটা
মাত্র বউ।তাকে কি কাঁদানো যায়..!
জান্নাতঃমনে থাকে জেনো।
আমিঃতাহলে অপূর্ণ কাজটা?
জান্নাতঃহ্যা
আমিঃসত্যি
জান্নাতঃদাত ক্যালানোর কি আছে?
আমি;তুমি একটু বসো
জান্নাতঃকেনো?
কোনো উত্তর না দিয়ে রুমের মধ্যে
লাঠি খুঁজতে লাগলাম।আগের ভুলটা
একদম করতে চাই না।যদি এই মেয়ে
আবার মাথায় মেরে চলে যায়।অনেকটা
সময় নিয়ে খুঁজাখুঁজি করছি কিন্তু কিছুই
খুঁজে পাচ্ছি না।
জান্নাতঃকি খুঁজো?
আমিঃলাঠি
জান্নাতঃকেনো?
আমিঃযদি আগের বারের মতো মারো
জান্নাতঃহাহাহা,শয়তান।আমার জীবনের
সব থেকে ভুল ছিলো ওটা।সেই ভুল কি
আর কখনো হবে নাকি,আসো।
আমিঃহুম
জান্নাতের কাছে এগিয়ে লাইট বন্ধ
করে দিলে আমাকে নিয়ে ভালোবাসার
এক অচিনপুরে নিয়ে গেলো।যেখানে
শুধুমাত্র ভালোবাসা আর ভালোবাসা।
পরেরদিন,,,,,,
ঘুম থেকে উঠে দেখলাম জান্নাত বুকের
উপর শুয়ে আছে।সেই নিষ্পাপ চেহারা
যেটার মধ্যে নেই কোনোপ্রকার রাগ,
অভিমানের ছিটেফোঁটা।শীতের দিন
তাই বোঝা যাচ্ছে না ঠিক কয়টা বাজে।
কপালে চুমু দিয়ে আবার ঘুমাতে যাবো
তখন ভাবি বাইরে থেকে বলল;বাইরে যেতে।
আমিঃজান্নাত..(হালকা নাড়িয়ে)
জান্নাতঃহ্যা
আমিঃসবাই ডাকছে
জান্নাতঃএতো সকালে?
আমি;১১টা বাজে(ঘড়ি দেখে)
জান্নাতঃকিহ?(তাকিয়ে)
আমিঃহুম,বাসায় যেতে হবে।
জান্নাতঃসেখানে দুদিন থেকে
আবার চলে যেতে হবে।
আমিঃহুম
জান্নাতঃআচ্ছা চলো শাওয়ার নেয়।
আমিঃতুমি আগে নাও
জান্নাতঃদুজন একসাথে
আমিঃলজ্জা লাগে মোর
জান্নাতঃআমি মেয়ে হয়ে লজ্জা পায়
না,আর তুমি খাটাশ ছেলে হয়েও
লজ্জা পাও,হাত সরিয়ে চলো।
আমিঃএকটুও ভালোবাসে না।
জান্নাতঃসারারাত তাহলে কি হয়েছে?
আমি;মনে আছে তাহলে।
জান্নাতঃহ্যা সোনা,এখন চলো।
দুজন মিলে শাওয়ার নিয়ে রেডি
হয়ে বাইরে আসলাম।নাস্তা করে
সবাই মিলে বাসার উদ্দেশ্য রওনা
দিলাম।তবে জান্নাত কান্না করেনি।
করবেই বা কি করে বিয়ে তো আজ
হয়নি।সে যায় হোক বাসায় এসে
সবার সাথে খুব আনন্দে দুদিন
পাড় করে নিলাম।কিন্তু জান্নাতের
পড়াশোনার জন্য যেতেই হতো।
নেহা এখন চাচ্চুদের বাসায় থাকে।
সেখান থেকে পড়াশোনা করে।
*****কিছুদিন পর*******
জান্নাতঃআমাদের কিছু ফ্রেন্ডদের নিয়ে
একটা পার্ট দিলে কেমন হয়?
আমিঃআমি এটাই বলতে চাইছিলাম।
জান্নাতঃতাহলে কবে করা যায়?
আমিঃতুমিই ঠিক করো।
জান্নাতঃকাল করি?
আমিঃকাল?
জান্নাতঃহ্যা,কোনো সমস্যা?
আমি;একটু কাজ ছিলো
জান্নাতঃতবুও কাল
আমিঃঠিক আছে।
সবাইকে কল দিয়ে জানিয়ে দিলাম।
আজ আর অফিসে গেলাম না।দুজন
মিলে বাসাটা পরিষ্কার করতে লাগলাম।
এই বাসাতে জান্নাতের পছন্দমত অনেক
কিছুই কেনা হয়েছে।সব কিছু ঠিকাঠাক
করে নিলাম।বাসা গোছাতেই পুরোটা
দিন পার হয়ে গেলো।রাতে জান্নাতকে
শক্ত করে ধরে শুয়ে আছি,তখন বলল;
জান্নাতঃবাসায় কিছু ফুল দরকার
আমিঃফুল কেন?
জান্নাতঃফুল পবিত্র তাই।
আমিঃকাল বিকেলে বের হবো।
জান্নাতঃতোমার ফ্রেন্ডসরা আসবে কখন?
আমিঃসন্ধ্যায়
জান্নাতঃঠিক আছে।
আমিঃএখন কি একটু আদর পাবো?
জান্নাতঃজ্বি না মশাই
আমিঃকেনো?
জান্নাতঃজানোনা আদর পেতে পেতে
মানুষ বাদর হয়।
আমিঃসে যেটাই হই,তুমি করবে এখন।
জান্নাতঃসব সময় জেদ করতেই হবে
তাই না?(কাতুকুতু দিয়ে)
আমিঃতোমার সাথে করবো না তো
কার সাথে করবো শুনি?
জান্নাতঃআজ অনেক টায়ার্ড সোনা
আমিঃকারো কিছু হয় না বলে আজ
আদর পেলাম না,বেদনা
জান্নাতঃচুপ লুচু,উঠো এখন
আমিঃকেনো?
জান্নাতঃছেলেটাকে বাদর করবো তাই
আমিঃহিহিহিহি
রাতে আমাদের কি হয়েছে সেটা আপনাদের
জানা লাগবে না।
পরেরদিন বিকেলে…..
বাজার থেকে অনেকগুকো ফুল
কিনে বাসায় ফিরছি তখনি নিলা
মাফির কল আসলো।
আমিঃহ্যা বল
মাফিঃএকটু হাসপাতালে আসবি?
আমিঃকেনো?
মাফিঃআব্বা অসুস্থ।
আমিঃকোথায় এখন?
মাফিঃমোরের বাম পাশেরটায় আছি।
আমিঃতুই থাক আমি আসছি।
কল কেটে দিয়ে জান্নাতের দিকে
তাকালাম।পুরোপুরিভাবে বুঝতে
না পারলেও আন্দাজ করে নিয়েছিলো
আমাকে যেতে হবে।
আমিঃজান্নাত তুমি বাসায় গিয়ে সবটা
রেডি করো আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো।
জান্নাতঃযাবে কোথায়?
আমিঃএসে সব বলবো সোনা।
কপালে চুমু দিয়ে একটা সিএনজি নিয়ে
দ্রুত হাসতাপালে আসলাম।
আমিঃকি হয়েছে?
মাফিঃস্টক করেছেন
আমিঃডাক্তার কি বলল?
মাফিঃভিতরে আছে
আমিঃকিছু হবে না,বস এখানে।
মাফি আমার ছোট বেলার বন্ধু।
হয়তো খুব একটা যোগাযোগ
হয় না,কিন্তু মাফিও জয় এবং
রাফির মতোই আপন।আঙ্কেল
টিচার একজন।ট্রান্সফার হয়ে
বিভিন্ন জায়গাতে যেতে হয়।তবে
মাফির সাথে আমার যোগাযোগটা
থেকেই গেছিলো।মাফির বড় বোন
ড্রাগ নেয়,সেটা তিনি সহ্য করতে
না পেরে মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে
পরেন।জানিনা এবার কি কেনো হয়েছে।
এদিকে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হতে চলেছে।
কিছু সময় পর ডাক্তার বের হয়ে আসলো।
মাফিঃস্যার আমার বাবা?
—অনেকটাই আশঙ্কা মুক্ত,তবে এটাই
কিন্তু তার শেষ সুযোগ।আর একবার
যদি এমন হয় তাকে বাচানো সম্ভব না।
মাফিঃদেখা করতে পারবো?
—না,ঘুমের ইনজেকশন দিছি।জাগলে
দেখা করতে পারবেন।
মাফিঃধন্যবাদ
ডাক্তার চলে যাওয়ার পর মাফিকে
বিদায় জানিয়ে আমিও চলে যাবো
কারণ অনেকটা রাত হয়ে গেছে।তখন
দেখলাম মাফির বড় বোন আসছে
আমিঃউনাকে মারতে আসছেন?
সিমিঃমারতে আসবো কেনো?
আমিঃআপনি খুব ভালো করেই
জানেন,শুধুমাত্র আপনার জন্য
তিনি এমন অসুস্থ।আপনি ভালো
হলে এতোদিনে আপনি স্বামী সংসার
নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন।
সিমিঃদেখ ভাই জ্ঞান দিস না।
আমিঃআপনি যদি আমার বড় না
হতেন,কসম কি করতাম নিজেও জানিনা।
মাফি আমি গেলাম।
মাফিঃসাবধানে যাস
দেরি না করে বাসায় চলে আসলাম।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম প্রায়
১০টা বেজে গেছে।কয়েকবার
কলিংবেল বাজানোর পর রিতা
খুলে দিলো।তবে অনেক বেশি অবাক
হলাম তখন দেখলাম বাসার সব কিছু
ভেঙে মাটিতে পরে আছে।জয় এবং
রাফিকে উদ্দেশ্য করে বললাম;
আমিঃবাসায় কি ভূমিকম্প আসছিলো?
রাফিঃ…….(চুপ করে আছে)
আমিঃজান্নাত কোথায়?জান্নাত…
একটা রুম থেকে জান্নাত এবং
তার কিছু ফ্রেন্ডস বের হয়ে আসলো।
আমিঃকি হয়েছে,রেগে আছো কেনো?
জান্নাতঃতো কি করবো?(চিৎকার করে)
আমিঃআস্তে কথা বলো
জান্নাতঃকোথায় ছিলি তুই?(জোরে)
আমিঃবলছি না আস্তে কথা বলতে
জান্নাতঃতুই বলবি কোথায় ছিলি।
আমিঃবলবো না
জান্নাতঃছিলি তো মেয়ের সাথে,না
জানি কোথায় কোন মেয়ের সাথে
নষ্টামি করি আসছিস।
আমিঃজান্নাত আস্তে কথা বলো
জান্নাতঃকেনো বলবো আস্তে হ্যা?
আমিঃআমার কথাটা শুনো একবার
জান্নাতঃতোর কোনো কথা…(ধাক্কা দিলো)
রিতাঃজান্নাত রুমে চল
আমিঃতুমি কাজটা ঠিক করছো না
জয়ঃনিলয় আমাদের সাথে আয়।
আমিঃএক মিনিট,তুমি আমাকে
ভালোবাসলে তুমি আমাকে বুঝতে।
জান্নাতঃতোকে আমি ভালোবাসি না?
আমিঃআস্তে কথা বলো,সবার সামনে
এমন সিনক্রিয়েট করছো কেনো?
জান্নাতঃতুই প্রমিজ করছিলি আমাকে
কষ্ট দিবি না,আর আজ তুই অন্য….
আমিঃসমস্যা হয়েছিলো আমার
জান্নাতঃএকদম মিথ্যা বলবি না
আমিঃমেজাজটা খারাপ করে দেয়।
জয়ঃরিতা তোমরা ওকে রুমে নিয়ে
যাও,আমরা নিলয়কে দেখছি।
জান্নাতকে নিয়ে যাওয়ার সময়টাতেও
চিল্লাতে চিল্লাতে রুমে নিয়ে গেলো।
রাফিঃকি হয়েছিলো?
আমিঃ….(সব বললাম)
জয়ঃওকে বলিস নাই তাই হয়তো
এসব উল্টাপাল্টা বলছে।তুই থাক
আমি বলে আসছি।
জয় চলে যাওয়ার অনেকটা সময় পর
জান্নাত রুম থেকে বের হয়ে এসে
আমার সামনে বসে কান্না করে দিলো।
জান্নাতঃআমাকে মাফ করে দাও,আমার
মাথা একদম ঠিক ছিলো না।প্লিজ
আমাকে মাফ করে দাও(কান ধরে)
আমিঃ……….
জান্নাতঃপ্লিজ মাফ করে দাও,আর
কখনো এমন করে রাগ করবো না।
তুমি যেটা বলবে যেটাই করবো।তার
থেকে বাইরে একটুও যাবো না।প্লিজ
এবারের মতো আমাকে মাফ করে দাও।
দাও না মাফ করে(হাত ধরে)
বসে না থেকে দাঁড়াতেই জান্নাত নিজেও
দাঁড়িয়ে গেলো।
আমিঃশুধুমাত্র তোমাকেই ভালোবাসি।
জান্নাতঃসরি আমি(জড়িয়ে ধরে)
আমিঃহিংসা করো ঠিক আছে,তবে
সেটার কারণ জানবে তারপর
জান্নাতঃসরি বললাম তো।
আমিঃহুম
অনেকটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
ভালোবাসার বাঁধন ছিরে যায় না।
কারণ সেটা বিনি সুতার বাঁধন। যতোই
ছিরে যেতে চায় না কেনো,পরিশেষে
মোটা রশি বের হবেই দুজনকে বেধে
রাখার জন্য।জান্নাতের কপালে ভালোবাসার
পরশ একে দিয়ে জান্নাতকে ছাড়তে
বললাম কিন্তু কিছুতেই ছাড়ছে না।
আমিঃপাগলি একটা।
জান্নাতঃশুধুমাত্র তোমার জন্য।
<>সমাপ্ত<>
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com