Breaking News

গল্পঃ ভিলেন । পর্ব-০৫



সত্যি বলতে আমি ও আপনাকে পছন্দ করি না,দু’চোখে সহ্য হয় না,
তবুও বেশ ভালোই লাগছে।” ইমান হাসতে হাসতে মিমের চকলেট ওর হাতে দিয়ে বললো,
– আমি চকলেট খাই না খুকী বরং আপনি’ই আপনার চকলেট খান ঠিক আছে…?”
মিম চকলেটের খোসাটা ছাড়িয়ে হঠাৎ রিকশা থেকে নামতে নামতে ওর মুখে পুরো দিলো আর ইমান চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে রইলো মিমের দিকে…।” মিম হাসতে হাসতে ইমানের পিঠে হাত বুলোতে বুলোতে বলল,
– “দ্যাট’স লাইক মাই গুড বয় এখন আসি? আল্লাহ চাইলে আবার দেখা হবে,তবে না দেখা হওয়াই আপনার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে ঠিক আছে?” ইমান দাঁতে দাঁত চেপে রইলো ইমা মিমের হাত চেপে ধরে বললো,
– “চলো না আপু প্লিজ…! এখন ফুসকা খাও না আমাদের সাথে…?”
মিম ইমার মাথায় হাত রেখে বলল,
– “আজ আসি সোনা,আমি একটু ব্যস্ত পরে না হয় দু’জন সময় করে ঘুরতে বের হবো একসাথে…?”
ইমা খুশি হয়ে বললো,
– “দ্যাট’স গ্রেট!
তবে আমি কি করে যোগাযোগ করবো তোমার সাথে…?”
মিম নিজের একটা কার্ড পার্স থেকে বের করে ইমা কে দিলো আর তা দেখে ইমান হাসতে হাসতে বলল,
– “এবার দেখবেন এই চুন্নি আপনাকে জ্বালায় কি ভাবে…?”
ইমানের কথা শুনে ইমা ওর পায়ে পাড়া দিয়ে বললো,
– “চুপ,একদম চুপ,একদম আমার নামে বদনাম করবে না আমার আপুর মণির কাছে…।”
ইমান সাথে সাথেই চোখ কপালে তুলে বলল,
– “তোর আপু আবার মণি? কোথায় পেয়েছিস? কুড়িয়ে এনেছিস রাস্তা থেকে…?”
মাহিন আবার মিমের পেছনে লাগার উদ্দেশ্যে ইমান কে বললো,
– “আসলে ভাইয়া আমার আপু একদম ‘ইনটেক’ বাবা-মা হাসপাতাল থেকে কিনে এনে ছিল ওকে…।”
মিম আচ্ছা করে মাহিনের কান মলে দিয়ে বললো,
– “বাঁদর আমি যে তোকে নদীর তীরে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম তার কি হবে…?”
ইমা ইমান কে খোঁচা মেরে বলল,
– “জানো ভাইয়া,
.
আমি তোমাকে আল্লাহ তাআ’লার কাছে খুব দোয়া করে পেয়েছি,কেউ কি কখনো বলেনি তোমাকে…?”
ইমান বুকের ওপরে হাত বেঁধে দাঁতে দাঁত চেপে ইমা কে বললো,
– “কানের নিচে এতো জোরে দেবো না একটা,ওই তুই আমার আগে হয়েছিস না আমি হয়েছি তোর আগে…?”
– “তোমার কপালে না বউ নাই ভাইয়া আর যেটা জুটিয়েছ সেটাও যাবে…।”
ইমান হাসতে হাসতে বলল,
– “জ্বি খালাম্মা বুঝতে পারছি এবার দয়া করে বাসায় চলুন,প্রায় সন্ধ্যে ছ’টা বেজে গেছে।”
রাতে মিম সায়েন্টিস্ট আব্রাহাম চৌধুরীর পাঠানো ভিডিও ক্লিপ গুলো খতিয়ে খতিয়ে
দেখলো বেশ ভালো ভাবে আর সেখানে বেশ কিছু সুত্র ও পেয়ে গেলো যে গুলো ওর
এই লাইফ ফাউন্ডেশনের সমস্যা টা সমাধান করতে বেশ কাজে দেবে।
কিন্তু একটা জিনিস বারবার বেশ ভাবিয়ে তুলছে ওকে…।
মিম একটু চিন্তিত হয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
– “আচ্ছা সায়েন্টিস্ট আব্রাহাম চৌধুরীর লাস্ট ভিডিও ক্লিপে
বারবার “Lusi far XD” খুঁজে বের করতে বললেন কেন আমাকে?
তিনি বারবার কেন বলে যাচ্ছিলেন “Lusi far XD” খুবই বিপদজনক এবং
এটি যে কারো ক্ষতি করে দেবে?
আসলে এই “Lusi far XD” জিনিস টা কি আর এর সাথে লাইফ ফাউন্ডেশনের কি সম্পর্ক আছে…?
মনে হচ্ছে যেন আমি এই মুহূর্তে অথৈ সাগরে ভাসছি
কিন্তু “Rumour-3D” এর সাথে “Lusi far XD” এর কি সম্পর্ক আছে?
আর এদের উৎপত্তি স্থল টাই বা কোথায়? আর কারা তৈরি করেছে এই গুলো কে…?
হ্যাঁ,মানে কাদের এই কাজ? তাদের কি খারাপ কোনো উদ্দেশ্য আছে?
উদ্দেশ্য আছে নিশ্চিত কিন্তু সায়েন্টিস্ট আব্রাহাম চৌধুরী’ই বা কোথায় আছে?
.
এভাবে হাত গুটিয়ে যে আমাকে বসে থাকলে চলবে না।আমাকে এই সমস্যার মূলে পৌঁছাতে হবে।” মেয়ে কে এতো টা চিন্তিত দেখে আশরাফ এসে বললেন,
– “কি হলো মা? কি এতো ভাবছ? খাবে না? ঘড়িতে দেখেছ ক’টা বাজে…?” মিম উঠে দাঁড়িয়ে বাবাকে হঠাৎ করেই খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “আগে বলো কোন প্রশ্নের উত্তর টা আগে দেবো তোমাকে…?
না মানে কেউ এতো প্রশ্ন এক সাথে করে না কি বাবা? তুমি যে পুরোই কনফিউজড করে দিচ্ছ আমাকে…? ” মেয়ের ভাবমূর্তি দেখে আশরাফ সাহেব হাসতে হাসতে তার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললেন,
– “চলো মা! তোমায়লর মায়ের আসতে একটু লেইট হবে তাই আমি খাইয়ে দিচ্ছি তোমাকে…।” মিম খুশি হয়ে বললো,
– “আহ! কতদিন তোমার হাতে ভাত খাই না বাবা,আজ বেশ মজাই হবে…।” পাশ কাটিয়ে মাহিন নিজের ঘরে ঢুকতে ঢুকতে আশরাফ সাহেব কে বলল,
– “আহ্লাদ দিয়ে নষ্ট করো আরও বেশি নষ্ট করো তোমার এই খচ্চর মেয়ে টা কে…।” মিম মাহিন কে মারতে ছুটলো কিন্তু মাহিন দরজা লাগিয়ে ছ্যাঁকা খাওয়া গান ছেড়ে বসে আছে।
আর এদিকে আশরাফ সাহেব দু’ই ছেলেমেয়ের তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ থামাতে মেয়ে কে রাতের খাবার খাওয়ানোর জন্য ভুলিয়ে-ভালিয়ে তাকে সাথে নিয়ে নিচে চলে আসে আর এই ফাঁকে মিম কে জ্বালাতন করা বস্তু টা কে হাতেনাতে পাকড়াও করার জন্য মাহিন এসে মিমের বারান্দায় একটা কার্যকারি ফাঁদ পাতে…। আর ওদিকে আজ কেন যেন একটু ও ঘুম নেই ইমানের চোখে…।
.
সে না চাইতেও বারবার মিমের কথা ভেবে যাচ্ছে…।কেন যেন আজ সে সামলাতে পারছে না নিজেকে, অদ্ভুত সব চিন্তাভাবনা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, মনে হচ্ছে যেন মেয়েটি তার বিছানায়,তার পাশেই তাকে জড়িয়ে শুয়ে আছে।
অতঃপর সে হুট করেই বিছানা ছেড়ে উঠে পরলো,মনেমনে বললো,
– “আর কোনো ভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না এই সব নোংরা চিন্তা-ভাবনা কে…।” মাঝরাতে মিম নিজের শরীরে কারো স্পর্শ অনুভব করলো কিন্তু সে একচুল ও নড়তে পারলো না নিজের জায়গা থেকে…। মনেমনে আল্লাহ পাকের নাম ডাকতে ডাকতে বলল,
– “হায় আল্লাহ! আমি যে বেলকনির দরজা টা ভালো করেই লাগিয়ে ছিলাম,তাহলে এটা কি করে এলো আমার কাছে…?” তখন হঠাৎ ওই মানুষ টা মিমের গাল স্পষ্ট করলো,কপালে চুমু খেলো,মিম বিছানার চাদর খামচে ধরে মনেমনে বললো,
– “আচ্ছা এটা কেন এমন করছে আমার সাথে…?” এদিকে মাহিন নিজ ঘরে মনেমনে পায়চারি করতে করতে ওর বন্ধু নাসের কে বলল,
– “ভাই এভাবে যে আর থাকা যাচ্ছে না,আমার খুব ভয় করছে আপুর কথা ভেবে…।” তুই নিশ্চিত ওই লোকটা আপুর ঘরে আছে? আপুর ঘরে ঢুকতে দেখেছিস তাকে…?” মাহিন রেগে গিয়ে বললো,
– “ধুরর! ভাই আমি এতোকিছু জানি না,আমি এখুনি যাচ্ছি আমার আপুর কাছে…।” তখন হঠাৎ একটা অদ্ভুত চিৎকারের আওয়াজ মিমের ঘর থেকে শোনা গেলো,
সবাই মিমের ঘরে ছুটে এলো সাথে সাথে…। নাসের এসে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে’ই মিমের ঘরের লাইট জ্বালালো আর তখন সবাই দেখতে পেলো ফাঁদ টা খালি পরে আছে কিছু’ই আটকে নেই সে ফাঁদে…। মিম উঠে ওদের দু’জন কে বকা দিয়ে বললো,
.
– “তোরা আমাকে না জানিয়ে আমার ঘরে ফাঁদ পেতেছিস কেন? যে ছিল সে নিশ্চয়ই খুব ব্যাথা পেয়েছে…?” মাহিন মিম কে জড়িয়ে ধরে উৎকণ্ঠা নিয়ে বলল,
– “পেলে পাক,ওই জিনিস টা কেন শুধুশুধু ভয় দেখাবে বাড়িতে এসে আমার আপুকে…?” তখন মাহিনের কিছু বন্ধু হাঁপাতে হাঁপাতে এসে ওকে বললো,
– “দোস্ত ধরতে পারিনি রে বুদ্ধি করে পালিয়ে গেছে…।” মিম জিজ্ঞেস করলো,
– “কে ছিল উনি…? তোমরা কি দেখতে পেরেছিলে তার মুখ টা কে…?” দ্বীন বললো,
– “না আপু! ওনার গায়ে না অনেক শক্তি চোখের পলকে দৌড়ে পালিয়ে গেছে আর রোড লাইট ও নেই তাই তার বেশ সুবিধে হয়েছে পালাতে…।” আশরাফ সাহেব এসে মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– “ভাগ্যিস ছেলে টা কে তা দেখতে পাইনি আজ নয়তো গুলি করে ওখানেই মেরে ফেলতাম জানোয়ার টা কে…।” মিম বাবার কোলে মাথা রেখে বললো,
– “প্লিজ এভাবে বলো না বাবা! উনিও কিন্তু নিজের পায়ে মারাত্মক চোট পেয়েছে…।” মাহিন মাথা ঠাণ্ডা রাখতে না পেরে বললো,
.
– “লুলা হয়ে যাক শালা আমার কিছু যায় আসেনা তাতে…।” নাসের,দ্বীন ওরা বন্ধুর তালে তাল দিয়ে বলল,
– “বেজন্মা শালা! জন্মের ঠিক নেই আর তাই এসে রাতের আধারে এমন লুচ্চামি করে বেড়ায় মেয়েদের সাথে…।” মিম মাথায় হাত দিয়ে সব ক’টা কে শাসনের ভঙ্গিতে বললো,
– “এবার থামবি তোরা…? না দু’চার ঘা দেবো এক এক টা কে…?” মাহিন বললো,
– “মারো,মেরে হাসপাতালে পাঠিয়ে দাও,তবুও তোমাকে জ্বালাতে এলে ওর কপালে ঢের দুঃখ আছে…।” মিম এক একজনের চেহারা দেখে বলল,
– “আচ্ছা এবার শান্ত ‘হ’ তোরা,আমি সবার জন্য কফি নিয়ে আসছি ঠিক আছে…?” কিছুক্ষণ পর,মাসুমা খবর পেয়ে নিজের কাজ ফেলে বাড়িতে চলে এলেন কারণ মেয়ের জন্য দুশ্চিন্তা আর ভয় ধীরে ধীরে একটু একটু করে গ্রাস করে ফেলছে তাকে…।
মাসুমা বাড়িতে ফিরে এসেই মেয়ে কে আগে নিজের ঘরে নিয়ে এসে ঘুম পারিয়ে দিলেন এবং সারারাত বসে রইলেন মেয়ের পায়ের কাছে।আশরাফ সাহেব কি যেন ভাবতে ভাবতে স্ত্রী কে বললেন,
– “আশ্চর্য! লোকটা তো দিনের বেলা আমাদের বাচ্চা টা কে কোনো জ্বালাতন করে না উনি শুধুই রাতে’ই কেন আসে…?” ঘুম ঘুম চোখে মিম বিছানা ছেড়ে উঠে মা বাবা কে দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো,
– “এতো ভেবো না বাবা তোমরা,তোমাদের এই লক্ষীছানা একদম ঠিক আছে…।” আশরাফ সাহেব মেয়ের কথা শুনে হাসতে হাসতে বললেন,
.
– ‘আমি এতো শত বুঝিনা মা! তবে আমি কিন্তু নিজে গিয়ে আজ অফিসে ছেড়ে আসবো তোমাকে…।” মিম দ্বি-মত প্রকাশ করলো না বরং মা কে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “কি হলো চিন্তা মণি? তুমি যাবে না আমার সাথে…?” মাসুমা মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– “যাবো না মা! আমি বরং বাসায় ফেরার সময় নিয়ে আসবো তোমাকে…?” মাহিন এসে চিন্তিত মুখে বলল,
– “সেটাই করো আর নয়তো আমাকে বলে দাও, আমি যাচ্ছি আপুর সাথে…।” মিম হাসতে হাসতে মাহিনের কপালে চুমু খেয়ে বললো,
– “বাঁদর! তুই না নিজের চরকায় তেল দে…চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে ঠিক মতো ঘুম হয়নি তোর রাতে…?” মাহিন বলল,
– “বাদদেও না,বাদ দাও আপু। বলছিলাম,যে আজ ফর্মাল পরো না,তোমাকে ফর্মাল পরলে আরো বেশি ভালো লাগে…।” মিম মিটিমিটি হাসতে হাসতে বললো,
– “কি ব্যাপার? এতো ভালোবেসে সকাল সকাল তেল মারছিস…?
বলি উদ্দেশ্য টা কি…? পকেট মানি শেষ হয়ে গেছে…?” মাহিন হাসতে হাসতে মিম কে জড়িয়ে ধরে বলল,
– “মোটেও না আর শেষ হলেই বা কি? আমার কাছে তো জলজ্যান্ত টাকার গাছ আছে…।” মিম মাহিনের কথা শুনে আলতো করে কান মলে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
তারপর সকালের নাস্তা শেষে আশরাফ সাহেব নিজেই অফিসে পৌঁছে দিতে গেলেন মেয়ে কে আর সেখানে যাওয়ার সাথে সাথেই স্বাধীন মিম কে একটা খুশির খবর দিয়ে বললো,
.
– “মিম! জানো কিছু তুমি…? তোমাকে তোমার গত এক বছরের কাজের জন্য ‘বর্ষ সেরা জার্নালিস্ট’ হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে…?” আফজাল সাহেব আহ্লাদে আধখানা হয়ে মিমের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
– “অনেক বড় হও মা তুমি,তুমি এই টাইটেল টা জিতলে আমাদের চ্যানেলের নাম আরো অনেক বেশি উজ্জ্বল হবে…।” মিম খুশিতে আশরাফ সাহেব কে জড়িয়ে ধরলো,আশরাফ সাহেব মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বললো,
– “আই এম প্রাউড অব ইউ মা,তুমিই সত্যি একদিন আকাশ সমান বড় হবে…।” রুবেল এসে বলল,
– “সেটাই আঙ্কেল,যারা এই টাইটেলের জন্য মনোনয়ন পেয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী আমাদের মিম’ই হবে…।” আফজাল সাহেব মিম কে বললেন,
– “প্রস্তুতি শুরু করে দাও মা,কারণ এই শনিবার বাংলাদেশ জার্নাল এসোসিয়েশনে অনেক বড় করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।” মিম এ খবর পেয়ে খুশিতে পাগল প্রায় অবস্থা আর এদিকে আনিকা আর আরাব খুব কষ্ট পাচ্ছে ছোটো বোনের আওর্য়াড ফাংশনে থাকতে পারবে না দেখে,
কিন্তু সবাই মিলে একটা পথ বের করে ফেললো,মাহিন বলেছিল ভিডিও কলে পুরো অনুষ্ঠান টি দেখাবে…।
দেখতে দেখতে সেই আওর্য়াড ফাংশনের দিন এসে গেছে,মিম বাসা থেকে জার্নাল এসোসিয়েশনে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই চিফ গেস্টের দায়িত্ব এসে পরলো তার কাঁধে,মিম জার্নাল এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আবদুর সাদেক কে বললেন,
– “চিন্তা করবেন না স্যার! আমি সামলে নেবো,কোনো ত্রুটি থাকবে না আমার দিক থেকে…। কিন্তু এখানে আমার বাবা-মা ও চিফ গেস্ট হিসেবে ইনভাইটেড তাই আমি চেয়েছিলাম একটু বিশেষ ভাবে তাদের দিকে নজর দিতে…।” সাদেক সাহেব বললেন,
– “তুমি টেনশন ফ্রী থাকো মিম একদম চিন্তা করো না…।”
– “ঠিক আছে…।”
.
অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার দশ মিনিট আগে মিম চিফ গেস্ট কে রিভিস করতে চলে এলো ছাঁদে দেখলো সে টা ইমান আর মনেমনে বললো,
– “সাভার থেকে শান্তিনগর পর্যন্ত আসতে পারসোনাল হেলিকপ্টার নিয়ে আসা লাগে…? আল্লাহ একটু হেদায়েত দান করুণ এই বদ্ধ উন্মাদ টা কে কিন্তু পাশের টা (অবন্তী) কে দেখে জংলী বলে মনে হচ্ছে দূর থেকে…।
ইসস,সুন্দরবনের পাতি বাগ না কি…? অদ্ভুত দেখতে লাগছে কেন এই মেয়ে টা কে…?” ইমান অবন্তীর হাত ধরে বেশ ভাব নিয়ে মিমের মুখোমুখি হেঁটে এসে বলে,
– “কি ব্যাপার? আপনি কখনো হ্যাপি কাপেল দেখেননি এক সাথে…?” মিম মিটিমিটি হেসে বললো,
– “না স্যার! আমি অন্ধ,চোখে ছানি পরলো এই মাএ আপনাকে দেখে…।” ইমান বেশ ভাব নিয়ে বললে,
– “জ্বি,আমি জানি আমি খুব হ্যানসাম! সেটা বারবার মনে করাতে হবে না আপনাকে…।” অবন্তী ইমানের হাত জড়িয়ে ধরে বললো,
– “ওহ! মাই হানি…? চলো না গিযে ছবি তুলি? কত ক্যামেরা ম্যান প্লাস মিডিয়ার লোকজন আছে…।” ইমান হাসিমুখে মিমের পাশ কাটিয়ে গিয়ে পোজ দিয়ে অবন্তীর সাথে দাঁড়ালো,তবে মিম ইমানের পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বললো,
– “ইসস,সুগার ড্যাডি বলে মনে হচ্ছে আপনাকে…।” ইমান রেগে গিয়ে অবন্তী কে ফেলে মিমের পিছুপিছু চলে এলো তারপর বিড়বিড় করে বলল,
– “দাঁড়াও! এখুনি মজা দেখাচ্ছি তোমাকে…।” তার বেশ কিছুক্ষণ পর খবর এলে যে ফাইজার,মর্ডানা এবং সিনোফার্ম অর্থাৎ ভেরোসেল টিকা পাওয়া লোকেরা সবাই বসবে আলাদা আলাদা ভাবে,এতে মিম একা পরে গেলো কারণ সে ভোরোসেল নিয়েছিল পিরোজপুর থেকে…।
.
যাহ হোক সে মন খারাপ করে আলাদা হয়ে বসে রইলো সবার কাছ থেকে…মিনিট দুয়েক পর ইমানের মতিগতি দেখে মিম বুঝতে পারলো কাজ টা ওর তাই মনেমনে বললো,
– “অসভ্য! ইচ্ছে করছে এই ব্যাটার ধর থেকে থেকে মুণ্ড টা আলাদা করে দিতে…।” মিম কে রাগতে দেখে ইমান মনেমনে বেশ প্রশান্তি অনুভব করলো,আনমনে বলল,
– “আর কখনো সুগার ড্যাডি বলবেন আমাকে…?” মিমের প্রথমে খুব খারাপ লাগলেও আশরাফ সাহেব এসে মেয়ে কে নিজের সাথে নিয়ে এলেন,মাসুম নিজের জায়গা ছেড়ে দিলেন মেয়ে কে…। মিম বাবা-মা কে জোর করে বসিয়ে দিলো,তারপর সে বলল,
– “শোনো আমি ব্যাক-স্টেজে যাচ্ছি আমার কিন্তু ওপেনিং পারফরম্যান্স আছে…।” অনুষ্ঠানের শুরুটা মিমের নাচ দিয়েই হলো,ওকে নাচতে দেখে ইমান অনেক টা মুগ্ধ হয়ে গেছে।
মিম নাচ সেরে ওভাবেই স্টেজে চলে ওলো,ওর কলিগেরা ওর প্রশংসা করে বললো,
– “মিম! তুমি দেখছি ফাটিয়ে দিয়েছ আজকে…।” মাহিন বললো,
– “আমার ভিডিও ডান আমি অলরেডি পাঠিয়ে ও দিয়েছি ভাইয়া আর বড় আপুকে…।” মিম মাহিনের কথা শুনে হাসতে লাগলো,ইমান বিমোহিত হয়ে তাকিয়ে রইলো সেই হাসির দিকে…। ধীরে ধীরে এক এক করে টাইটেল ঘোষণা হতে লাগলো,ইমান এবং উপ-সহকারি পরিচালক () অর্থাৎ মিমের বাবা আফিফ আশরাফ সাহেব স্টেজে গিয়ে উঠলেন এক সাথে আর এই বার চার জনের মধ্যে যে-কোনো একজনের বর্ষ সেরা জার্নালিস্ট ঘোষণা হওয়ার পালা সবাই যেন থমকে গেছে।
.
ইমানের হাতে বর্ষ সেরা জার্নালিস্ট’র ট্রফি এবং গোল্ড মেডেল টা আশরাফ সাহেবের হাতে।মিম একদম শান্ত এবং চুপচাপ তারপর হঠাৎ আশরাফ সাহেব এবং ইমান মিলে বর্ষ সেরা জার্নালিস্ট’র নাম ঘোষণা করে এক সাথে…। বাবার মুখে এভাবে নিজের নাম শুনে মিম কেঁদেই ফেললো,সবাই উঠে এসে বোঝাতে লাগলো তাকে…। মাসুমা মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে চোখের জল মুছে দিয়ে বললেন,
– “যা মা! এতো খুশি বোধহয় আমরা কখনো হইনি এর আগে…।” মায়ের কথা শুনে মিম ধীর পায়ে কাঁপতে কাঁপতে স্টেজে চলে এলো আশরাফ সাহেব মেয়ে কে গোল্ড মেডেল টা পরিয়ে দিলেন নিজের হাতে।
ইমান এগিয়ে এসে মিষ্টি করে হেসে মিমের হাতে ট্রফি টা দিলো মিম কেঁদে ফেললো সাথে সাথে…। আশরাফ সাহেব মুহূর্তেই মেয়ে কে বুকে জড়িয়ে নিলেন আর বললেন,
– “এভাবে কেঁদো না আম্মু! তোমার মেক-আপ নষ্ট হয়ে যাবে…।” মিম বাবার কথা শুনে গাল ফুলিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলো পাশ থেকে ইমান হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
– “বুঝলেন আঙ্কেল আমিও কিঞ্চিৎ একমত আপনার সাথে…।” মিম রেগে গিয়ে ইমানের দিকে তেড়ে গেলো,তবে এ যাত্রায় আশরাফ সাহেব ইমান কে বাঁচিয়ে নিলেন মেয়ের হাত থেকে আর সেটা বুঝতে ইমানের বাকি রইলো না,তবু্ও মিম কে খেপাতে বলল,
– “বুঝি না বাবু এতো ঢং করে কাঁদার কি আছে…?”
মিম রেগে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে ইমান কে উদ্দেশ্য করে বললো,
.
– “সুগার ড্যাডি কোথাকার যেন একটা দেখলেও গায়ে রাগ লাগে…।” ইমানের মুখের হাসি মুহূর্তে’ই মিলিয়ে গেলো,মিম হাসতে হাসতে কথা বলতে লাগলো সকলের সাথে।
তারপর সবাই মিলে এক সাথে ডিনার করতে বসলো,মিম সবাই কে বললো,
– “তোমরা সবাই বসো আমি আসছি ওয়াশরুম থেকে…।” মিম ওয়াশরুমে গিয়ে শাড়ির কুঁচি গুলো ঠিক করে নিলো এবং সামনে চোখ তুলে তাকিয়ে আয়নায় দেখতে পেলো,ইমান ঠিক ওর পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে।
মিম হঠাৎ সেদিন রাতে পার্টির কথা আর গত কাল রাতের কথা মনে করে ভয় পেয়ে গেলো ও দ্রুত পা ফেলে বেড়িয়ে আসতে চাইলো বাথরুম থেকে…। কিন্তু ইমান মিমের পথ আটকে দিলো মিম ভয়ে ভয়ে ইমান কে বললো,
– “প্লিজ যেতে দিন আমাকে…!” ইমান মিম কে বলল,
– “আমি তো সুগার ড্যাডি তাই না? এবার দেখো এই সুগার ড্যাডি ঠিক করে সুইট চিলির সাথে…।” মিম গিয়ে দরজা ঠেলাঠেলি করে দরজা খোলার চেষ্টা করলো ইমান হঠাৎ মিম কে খুব শক্ত করে চেপে ধরলো দরজার সাথে।মিম বলল,
– “এমন কেন করছেন আপনি? আমি কি করেছি আপনার সাথে…?” ইমান ঝাঁঝালো কণ্ঠে মিম কে ঝাড়ি মেরে বললো,
.
– “মিসস আমার চোখের দিকে তাকান…।” মিম দু’হাত দিয়ে চোখ চেপে ধরে বলল,
– “আমি কিছুতেই তাকাবো না আপনার ওই ভয়ংকর চোখের দিকে…।” ইমান মুচকি হেসে মিম কে ছেড়ে দিয়ে বললো,
– “আপনি এখন যেতে পারেন…।” মিম সাথে সাথে খুব করে খোলার চেষ্টা করলো বাথরুমের দরজা টা কে ইমান ওর খুব কাছে চলে এলো মিম ইমানের বুকে কিল-ঘুষি মারতে মারতে বলল,
– “আপনি কেন এমন করছেন আমার সাথে…? কেন এমন করছেন? জেন্টস টয়লেট এদিকে না ওদিকে…।” ইমান মিম কে হঠাৎ ঝাড়ি মেরে জিজ্ঞেস করলো,
– “আমি সুগার ড্যাডি…?” মিম কাঁদতে কাঁদতে বললো,
– “নাঃ! আজ থেকে ভাইয়া বলে ডাকবে আপনাকে…?” ইমান মিম কে ধমকে জিজ্ঞেস করলো,
– “কি?” মিম ফোঁপাতে ফোপাঁতে বলল,
– “স্যার! বলে ডাকলো আপনাকে…।” ইমান দাঁতে দাঁত চেপে আবারও জিজ্ঞেস করলো,
– “এই কথা টা মনে থাকবে…?” মিম চোখেরজল মুছতে মুছতে বললো,
– “থাকবে…।” ইমান এগিয়ে এসে কান পেতে বললো,
– “কি বললেন শুনতে পাইনি?” মিম বললো,
– “থাকবে থাকবে খুব করে থাকবে…।” ইমান আবারও মিম কে ধমকালো,মিম ভয়তে উচ্চশব্দে কাঁদতে শুরু করলো সাথে সাথে।
.
ধীরে ধীরে ইমানের মুখের হাসি টা মিয়ে গেলো আর সে ও বুঝতে পারলো বিষয় টা বেশ বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে…।
কি ভেবে তখন ইমান মিম কে জড়িয়ে ধরলো,ওর চোখের জল মুছে দিলো নিজের হাতে,তবে মিম তখন ও ভয়ে,আতংকে কেঁদেই চলেছে ইমান অনেক কষ্টে শান্ত করল তাকে…। এরপর জিজ্ঞেস করলো,
– “চকলেট খাবেন?” মিম কোনো উওর দিলো না তাকে…। ইমানের হঠাৎ মিশ্র অনুভূতি হতে লাগলে,অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করতে লাগলো তার মাঝে…।
সে পকেট থেকে চকলেট বের করে প্যাকেটা ছিঁড়ে মিমের মুখের সামনে ধরলো,মিম রাগ দেখিয়ে,জেদ করে বললো,
– “আমি কিচ্ছু খাবো না আপনার মতো একটা অদ্ভুত লোকের হাত থেকে…।” ইমান চকলেট টা ভেঙে কয়েক টুকরো করে মিমের মুখের সামনে ধরলো,মিম বলল,
– “খাবো না,খিদে নেই আমার…খিদে চলে গেছে…।” ইমান তখন জোর করেই মিমকে চকলেট খাইয়ে দিতে লাগলো আর বলল,
– “খাবার না খেলে আপনি কি করে লড়াই করবেন আপনার প্রতিপক্ষ অথাৎ আমার সাথে…?
.
চলবে,,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com