গল্পঃ ভিলেন । পর্ব-০২
ইমান শান্ত ভাবে মিমের দিকে তাকিয়ে রইলো,সে কনস্টেবল মতিউর রহমানের সাথে গিয়ে উঠে বসলো তার গাড়িতে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ইমানের কাছে মিমের সব খবর পৌঁছে গেলো।মিমের ফ্যাম-লি ব্যাক-গ্রাউন্ড ইমানের কাছে খুব ইন্টারেস্টিং বলে মনে হয়েছে এবং তার প্রধান কারণ হলো মিমের বাবা জনাব আফিফ আশরাফ সাহেব উপ-সহকারি পরিচালক (র্যাব) এবং মা বাংলাদেশ পুলিশের কমিশনার হিসেবে কর্মরত আছে।
ইমান প্রথম প্রথম খুব অবাক হচ্ছিল কিন্তু মিম সম্পর্কে সব জানার পর ইমানের ভাবনায় কিছু পরিবর্তন এসেছে…। কি ভেবে সে মিটিমিটি হেসে বললো,
– “সব বাবা-মায়ের গায়ের জোর…? আমি ও দেখবো সময়কালে এসব কোথায় থাকে…?” মিম বাড়িতে পৌঁছাতে না পৌঁছাতে দেখলো বাবা কোনো কারণে খুব চিন্তিত হয়ে আছে।মিম এসে হঠাৎ আশরাফ সাহেবর মুখের সামনে এসে দাঁড়ালো,সে হঠাৎ কিঞ্চিৎ খুব ভয় পেয়ে গেলো ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে এসে…।” মিম আশরাফ সাহেব কে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো,
.
– “কি ব্যাপার বাবা? না মানে তোমার মন খারাপ কেন কি হয়েছে?” আশরাফ সাহেব মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই পেছন থেকে মাসুমা মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
– “আমি কিংবা তোমার বাবা,,,
আমরা কেউ’ই চাইছি না মা যে তুমি লাইফ ফাউন্ডেশনের সাথে ঝামেলায় জড়িয়ে ফেলো নিজেকে…।”
– “কিন্তু মা…?” আশরাফ বললেন,
– “কোনো কিন্তু না মা…। আমরা কোনো কিছুর বিনিময় হারাতে পারবো না আমাদের একমাত্র মেয়ে টা কে…।” মিম আশরাফ সাহেবকে বললো,
– “তোমরা এভাবে বলছ কেন বাবা? বড় আপু,মাহিন আর ভাইয়া ও আছে…।” মাসুমা মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– “বলছি কারণ ওরা আমাদের কাছে থাকে না।তুমিই থাকছ আমাদের কাছে আর বাবা-মায়ের কাছে তাদের সকল সন্তান অনেক মূল্যবান কাজেই তুমি দয়া করে কোনো ঝামেলায় জড়িয়ে না ওই সব স্বার্থপর লোকের সাথে…।
মা ওরা যদি সত্যি এমন কিছু করে থাকে,তাহলে আমাকে বিশ্বাস করো ওরা তোমার কোনো মারাত্মক ক্ষতি করে দেবে…।” মায়ের কথা মিম কিছুক্ষণ যাবত চুপ করে রইলো,অতঃপর বললো,
– “কিন্তু মা এভাবে চলতে থাকলে ওরা যে-কোনো সময় যে কারো ক্ষতি করে দেবে…। মা ওরা ছোটো-ছোটো বাচ্চাদের ওপর,সদ্য যৌবন প্রাপ্ত ছেলেমেয়েদের ওপর ভয়ংকর এক্সপেরিমেন্ট করছে আর আমি এটা হতে দেই কিভাবে…?” আশরাফ সাহেব মেয়ের কথা শুনে বললেন,
.
– “তুমি কি মনে করো মা এতে দেশের ক্ষমতাধর লোকেদের কোনো মদদত নেই? অবশ্য আছে,এতকিছু ওই ইমান খানের একার পক্ষে করা সম্ভব না নিশ্চয়ই ও বেশ ভালো রকমের সাপোর্ট পাচ্ছে ওপর থেকে…।”
– “কি কিন্তু মা…? তোমার কথা মতো তোমার আম্মু বেশ কিছু থানায় সারভে করিয়েছিল মা কিন্তু কোনো মিসিং কমপ্লেন থানায় দায়ের করা হয়নি সেভাবে…।” মিম চমকে গিয়ে বলে উঠলো,
– “আচ্ছা বাবা তাহলে ওরা বাচ্চা কোথায় পাচ্ছে? আর ছেলেমেয়ে গুলো কে’ই বা ওরা পাচ্ছে কোথা থেকে…?
না মানে চাইল্ড ট্রাফিকিং কিংবা হিউম্যান ট্রাফিকিং এর মাধ্যমে কোনো ভাবে সম্ভব…? পসিবিলিটি আছে…?” মাসুমা বললেন,
– “নিরানব্বই ভাগ মা! তবে তুমি এখন যাও ফ্রেশ হয়ে আসো আর এসব ঝেড়ে ফেলো মাথা থেকে…।” মিম বললো,
– “চাইলে কি সব টা ঝেড়ে ফেলা সম্ভব মা…? একজন সায়েন্টিস্ট মরতে মরতে আমার কাছে লাইফ ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে কিছু তথ্য প্রমাণ পৌঁছে দিয়ে গেছে…।” মাসুমা মেয়েকে কিছুই বললেন না,কারণ জানেন মেয়ে এই ঘটনার বেশ গভীরে ঢুকে গেছে।
.
মেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসার পর তিনি মেয়েকে আদর করে খাইয়ে দিতে লাগলেন আর কথায় কথায় বললেন,
– “সকালে ইয়াজিদ এসেছিলো তোমাকে তার বার্থডে পার্টির জন্য ইনভাইট করে গেছে।” মিম প্রথমে একবার ভাবলো যাবে না কিন্তু পরক্ষণেই কি ভেবে সে সাদা ওয়েটলেস পার্ল জরজেট শাড়ির সাথে মায়ের একটা ডিজাইনার ব্লাউজ পরে পার্টির জন্য ঝটপট তৈরি হয়ে গেলো রাতে…। মিনিট এিশের মধ্যেই সে ইয়াজিদের বার্থডে পার্টিতে পৌঁছে গেলো,সেখানে ইমান বেশ চমকে গেলো মিমকে ইয়াজিদের সাথে দেখে…।
মিমকে দেখা মাএই অবন্তী কিছু টা চোটে গিয়ে ইমানকে বললো,
– “এটা হাই-প্রোফাইল লোকেদের পার্টি এখানে ও কি করতে এসেছে…?” ইমান বলল,
– জানি না, তবে ইয়াজিদ কেন এতো খেয়াল রাখছে এই মেয়েটির দিকে…?” মিম হাসিমুখে ইয়াজিদ কে একটা শপিং ব্যাগ দিয়ে বলল,
– “আপনার বার্থডে গিফট ভাইয়া আশা করছি অনেক দামী না হলেও আপনার বেশ পছন্দ হবে…?” ইয়াজিদ হাসতে হাসতে বললো,
.
– “এতো ভাবছ কেন তুমি? গিফট টা নয়,তুমি মানুষ টাই বরং প্রাইস-লেস আমার কাছে…। আমি ভাবিনি তুমি আমার জন্মদিনে আসবে…? একটু চিমটি কাটবে আমাকে…?” মিম ইয়াজিদের কথা শুনে হাসতে হাসতে বলল,
– “আশ্চর্য! মানুষ আপনি ভাইয়া,এখনো বললেন না বাড়িতে সবাই কেমন আছে…?” ইয়াজিদ মিমের হাত ধরে বললো,
– “আলহামদুলিল্লাহ্,খুব ভালো! চলো আজ তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি আমার ফ্যাম-লির সবার সাথে…।” ইমান এবং অবন্তী বেশ কৌতূহল বশত ইয়াজিদের কাছে এগিয়ে এলো,ইয়াজিদ মিমকে বললো,
– “এই হলো আমার চাচাতো ভাই আর তুমি নিশ্চয়ই চেনো তাকে…?” মিম হাসিমুখে ইমানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
– “জ্বি,ইয়াজিদ ভাইয়া! তবে সরি ফর ইওর ট্রাবল,মিস্টার খান ওকে…?” ইমান মুখে হাসি ধরে রেখে বললো,
– “ইয়া শিওর,নট অ্যাটঅল! এনজয় টা দ্যা পার্টি মাই গার্ল ওকে…?” মিম মৃদু হেসে ইয়াজিদের হাত থেকে অরেঞ্জ জুসের গ্লাস টা নিয়ে বসলো,ইমান ইয়াজিদকে কিছু টা দূরে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “তুমি কি পছন্দ করো ওকে..?” ইয়াজিদ হাসতে হাসতে বললো,
– “মিথ্যে বলবো না ভাইয়া অপছন্দ করার মতো কিছুই নেই মেয়েটির মাঝে…। প্রপোজ করেছিলাম এক্সেপ্ট করেনি,তাই বলে আমি অপছন্দ করিনা তাকে…।
– “কষ্ট হচ্ছে…?”
.
– “কোই না তো বরং আমি এখন কমিটেড অন্য কারো সাথে,তবে হ্যাঁ ওর প্রতি আমার ভালো লাগাটা চিরকাল থেকে যাবে কারণ প্রথম ভালোবাসা কেউ ভোলে না সহজে…।” ইয়াজিদের কথা শুনে ইমান হাসতে হাসতে বলল,
– “আচ্ছা ওদিকে চল সকল ইনভাইটেড গেস্ট এসে গেছে।” মিম চুপচাপ জুস খেয়ে গ্লাস টা ওয়েটারের হাতে দিলো,ইয়াজিদ এসে হঠাৎ মিমকে জিজ্ঞেস করলো,
– “উড ইউ লাইক টু ড্যান্স উইথ মি…? তুমি কি ডান্স করবে আমার সাথে?” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “ফাইজা আপু রাগ করলে কিন্তু আমি কিছু জানি না,আপনাকে পস্তাতে হবে…।”
– “সমস্যা নেই ও করবে না ও সবটাই জানে…।” মিম ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো,ওর চাহনি দেখে ইয়াজিদ হাসতে হাসতে বললো,
– “জাস্ট কিডিং,মজা করলাম তোমার সাথে…।” মিম তারপর কিছুক্ষণ ইয়াজিদের সাথে ডান্স করলো কিন্তু হঠাৎ লাইট অফ হয়ে গেলো এবং অন্ধকারে পার্টনার চেঞ্জ হয়ে ইমান চলে এলো মিমের কাছে…। মিম হঠাৎ ইমানকে দেখে ঘাবড়ে গেলেও কাওকে কিছু না বুঝতে দিয়ে সে সামলে নিলো নিজেকে…অতঃপর হঠাৎ সে ইমানের দিকে তাকালো আর মুহূর্তেই তার চোখের মণির রঙ বদলে একদম নীলচে বর্ণ ধারণ করেছে…।
এতে মিম কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো এতোক্ষণে সে মনেমনে তিন থেকে চারবার আয়াতুল কুরসি পড়ে ফেলেছে এবং এরপর সে ইমানের কাছ থেকে কিছু টা দূরে সরে যেতে লাগলো ইমান মিমকে আচমকা’ই ফিসফিস করে বলতে লাগলো,
.
– “নো ম্যাটার,হাউ মাচ ইউ হেট মিহহ…। বাট দ্যা ম্যাটার ইজ,হাউ মাচ আই হেট ইউ ওকে…?” মিম ইমান কে সাথে সাথেই ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিলো আর ইয়াজিদ কে বললো,
– “আমি কেক কাটা অব্দি থাকতে পরাবো না ভাইয়া…! বাসায় ইমার্জেন্সি আছে তাই আমাকে এখুনি চলে যেতে হবে…।” ইয়াজিদ একটু মন খারাপ করে মিমকে বলল,
– “পাঁচ মিনিট ও অপেক্ষা করতে পারবে না তুমি…? আমি বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবো তোমাকে…।” মিম বললো,
– “তার কোনো প্রয়োজন নেই ভাইয়া বাট আই ফিল সরি।”
– “না না,ইটস ওকে…। আচ্ছা,চলো তোমাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আসি…।” মিম বলল,
– “তার কোনো প্রয়োজন হবে না ভাইয়া,আমি একা একা চলে যেতে পারবো।”
– “ঠিক আছে…।” মিম খান মঞ্জিল থেকে বেড়িয়ে এসে চটপট রিকশায় উঠে পরলো,ফিরে তাকালো না নিজের চারপাশে বারবার তার মনে হচ্ছে কেউ যেন তাকে ফলো করছে কিংবা দু’টো চোখ তার ওপরে সবসময় নজরদারি করছে তার আশেপাশে থেকে আর সেই ব্যক্তির উপস্থিতি সে অনুভব করতে পারছে কিন্তু বুঝতে পারছে না সেই মানুষ টা কোথায় আছে…?
.
মিম গলির মুখে পৌঁছে দেখে নতুন রাস্তা তৈরি করার জন্য কাজ চলছে আর ও তাই রিকশাওয়ালার বিল মিটিয়ে পায়ের জুতো খুলে হাতে নিয়ে চোখ বুঝে বাড়ির দিকে ছোটে…। বাড়ির গেইটেট কাছে পৌঁছতে না পৌঁছাতে কেউ পেছন থেকে মিমের শাড়ির আঁচল টেনে ধরলো।মিম ভয় পেয়ে বাবা বাবা বলে চিৎকার করতে লাগলো সাথে করতে লাগলো সাথে সাথে…। মেয়ের গলার আওয়াজ শুনতে পেয়ে আশরাফ সাহেব বাড়ির দারোয়ান কে নিয়ে তৎক্ষনাৎ ছুটে নিচে এলেন আরও বেশ কয়েকজন মিমের চিৎকার শুনে চলে এলো পাশের ফ্ল্যাট থেকে…।
মেয়েকে ভয় পেয়ে কাঁপতে দেখে আশরাফ সাহেব এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন,মালেক সাহেব দুঃখ প্রকাশ করে বললেন,
– “রোড লাইট গুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর আমাদের এই গলি দিয়ে রাতবেরাতে চলাচল করা অনেক দুষ্কর হয়ে গেছে…।” সেলিম সাহেব বললেন,
– “সেটাই ভাই মামণির (মিম) কথা কি বলবো আর? আপনার ভাবি সে দিন রাতে হাঁটতে বের হয়ে ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে…।” মেয়ের চেহারা দেখে আশরাফ সাহেব তার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে জিজ্ঞেস করলেন,
– “কি হয়েছে মা?” মিম বললো,
– “আমি আসছিলাম কে যেন আমার শাড়ির আঁচল টেনে ধরেছিল পেছন থেকে?” তখন সাইমুম হাসতে হাসতে মিমকে বলল,
.
– “কেউ তোমার শাড়ির আঁচল টেনে ধরেনি মিম…। হুমম,সত্যি বলছি। পেছনে চেয়ে দেখো কামাল ভাইয়ের রিকশার চাকায় আটকে গেছে…।” মিম পেছনে তাকিয়ে দেখল সাইমুম যা বলছে ঠিক তাই কিন্তু আশরাফ সাহেব কিছুতেই বোঝাতে পারলো না মেয়ে টা কে…। মিম আশরাফ সাহেব কে খুব জোর দিয়ে বললো,
– “বিশ্বাস করো বাবা! ওটা মানুষ ছিল আর হয়তো আমার চিৎকার শুনে পালিয়ে গেছে…?” মাসুমা মেয়েকে ঘরে নিয়ে এসে শান্ত করে ঘুম পারিয়ে দিলেন,তবে নিজেও দুশ্চিন্তায় পরে গেলেন মেয়ের কথা ভেবে…। আশরাফ সাহেব কথায় কথায় মাসুমা কে বললেন,
– “আমাদের মেয়ে তো এতো সহজে ভয় পাওয়ার মেয়ে নয় ও হঠাৎ কি এমন দেখেছে…?” তখন মাহিন এসে আশরাফ সাহেব কে বললো,
– “বাবা আমি জাহিদ আঙ্কেল কে বাসায় ডেকে পাঠিয়েছি…।”
– “এখন?”
– “হুমম,কারণ ছোটো আপুর খুব জ্বর এসেছে…।” জ্বরের কথা শুনে দু’জনেই মেয়ের কাছে ছুটে চলে এলেন মেয়েকে আজ কিছুতেই একা ছাড়া যাবে না রাতে…। ডক্টর ও চেক-আপ করে বললেন,
– “ভয় পেয়েই এতো কিছু তবে মেয়েকে বেশ কিছুদিন রেস্ট দিতে হবে।” মিম তিন দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে গেলো,তারপর সিদ্ধান্ত নিলো সে কিছু তেই নিজের হার স্বীকার করবে না ইমানের কাছে…। আর তাই সে নিজেই ইমানের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে টাকার খাম নিয়ে তার লাইফ ফাউন্ডেশনে পৌঁছে গেলো এবং প্রিশার কাছ থেকে এপয়েনমেন্ট নিলো দেখা করার জন্য ইমানের সাথে…। ইমান রিসার্চ সেন্টার থেকে বেড়িয়ে ফ্রেশ হয়ে নিজের কেবিনে এলো,প্রিশাকে বলল,
.
– “যারা যারা দেখা করতে এসেছে তাদের তুমি ইমিডিয়েটলি পাঠিয়ে দাও আমার কাছে…।” ইমানের অনুমতি পেয়ে প্রিশা সবার প্রথমে মিম কেই ইমানের কেবিনে পাঠালো আর ইমান চমকে গেলো মিমকে দেখে,
তবে মিম হাসিমুখে একটা হলুদ খাম ইমানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
– “আমি কারো ঋণ রাখি না স্যার বলেছিলাম আপনাকে…।” ইমান মৃদু হেসে কফির মগে চুমুক দিয়ে খাম ট হাতে নিয়ে দেখলো তার ওপরে একটা স্মাইলি আঁকা আছে আর তাই সে বেশ আগ্রহ নিয়ে মিমকে জিজ্ঞেস করলো,
– “মিসস, আপনি কি শান্তি চুক্তি করতে এসেছেন আমার সাথে…?” মিম ইমানের সামনে পায়ের ওপরে পা তুলে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বললো,
– “না জনাব,আমি বরং যুদ্ধ ঘোষণা করতে এসেছি আপনার কাছে আর হ্যাঁ প্লিজ আপনি সাবধান হবে জান নয়তো কপালে ঢের দুঃখ আছে…।” ইমান হাসতে হাসতে বলল,
– “ওহ সো স্যাড…! ইসস,এখন আমার কি হবে…?” মিম প্রচন্ড রেগে গিয়ে ইমানের দিকে তাকিয়ে রইলো…। ইমান বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে একটা টাকার ব্যাগ দিয়ে বললো,
– “এগুলো আপনার…। আপনার মতো সুন্দরী নারী লাইফ ফাউন্ডেশনের গুণগান গাহিলে আমার অনেক নামডাক হবে…।” মিম উঠে দাঁড়িয়ে ইমানের চোখে চোখ রেখে বলল,
– “আপনার কি এতো টাই সস্তা বলে মনে হয় না কি আমাকে…?” ইমান আরো কিছু টাকা বের করে মিমের সামনে রেখো বলল,
.
– “এবার বোধহয় আমি বুঝতে পারছি আপনি ঠিক কত টাকায় বিক্রি হবেন আমার কাছে…?” মিম আচমকা এগিয়ে এসে ইমানকে ঠাস ঠাস করে দু’টো চড় মারলো,তারপর চেঁচিয়ে বলতে শুরু করলো,
– “লজ্জা করে না আপনার ছোটো-ছোটো বাচ্চাদের ওপর উল্টোপাল্টা এক্সপেরিমেন্ট চালাতে…? তার মধ্যে আবার উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা ও আছে এতো টা বাজে মানুষ কেন আপনি? ভয় নেই আপনার? উপরে কিন্তু একজন আছে…।” অবন্তী এসে মিমকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো,ইমান এক পা এক পা করে একটা ধারালো চাকু নিয়ে এগিয়ে এলো মিমের কাছে।মিম তবুও প্রচন্ড ঘৃণায় ইমানের চোখ চোখ রেখে তাকিয়ে রইলো ইমান হঠাৎ চাকু টা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রেখে মিমের কানে ফিসফিস করে বললো,
– “দয়া করে অযথাই বদনাম করার চেষ্টা করবেন না আমাকে আর আমি চাইলে এক্ষুণি আপনাকে ঘুম করে দিতে পারি।
দিলাম না কারণ আমি সন্তান হারা করতে চাইনা কোনো মা এবং বাবাকে…কাজেই যেচে পরে আমার সাথে লাগতে আসবেননা তাহলে তার ফল কিন্তু মারাত্মক হবে আর আজ যে এই চড় দু’টো আপনি আমাকে মারলে নাঃ!
এ দু’টো কে স্মৃতি হিসেবে রেখে দিলাম নিজের কাছে,তবে হ্যাঁ দ্বিতীয়বার আপনি এই দুঃসাহস আপনি আমার সামনে বসে দেখান,তখন আপনার অবস্থা দেখার মতোই হবে।” মিম হাসতে বললো,
– “ক্ষমা করবেন জনাব,আমি কিন্তু একটু ও ভয় পাইনি আপনাকে…। একটা মানুষখেকো দানব কে আমি কেন ভয় পাবো একজন অপরাধী কে ভয় পাওয়ার মধ্যে কোনো বীরত্ব লুকিয়ে নেই ঠিক আছে…?” ইমান হাসলো,তারপর হঠাৎ মিমের শাড়ির আঁচল টা ঠিক করে দিলো নিজের হাতে।মিম কিঞ্চিৎ লজ্জা পেয়ে ইমানকে ধাক্কা মেরে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের পার্স আর পানির বোতল টা নিয়ে বেড়িয়ে গেলো কেবন থেকে…। আর তা দেখে অবন্তী রেগে গিয়ে ইমানকে বললো,
.
– “আশ্চর্য মানুষ তুমি…? মেয়ে টার কাছে চড় খেলে থাপ্পড় খেলে তবুও তুমি কিছু কেন বললেন না মেয়ে টা কে…?” ইমান কিছুক্ষণ মিমের দিকে তাকিয়ে থেকে হাসতে হাসতে বললো,
– “কি বলবো বলো? শিকারি হয়ে লড়াই করার চেষ্টা করছে সিংহের সাথে আর একে তো বাচ্চা মেয়ে আমার রুচি এতো টাও খারাপ না যে মেয়েটির গায়ে হাত তুলবো…।”
– “ঠিক আছে…এর পরে কখনো ভুল বশত দেখা-সাক্ষাৎ হলে নিজেই নিজের গাল টা বরং আগে থেকেই পেতে দিয়ো ঠিক আছে…? বাচ্চা মেয়ে যখন,তখন বাচ্চাটির সুবিধা হয়ে যাবে…?” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “অস্বীকার করবো না তবে মেয়েটির রুগ্ন হাতে বেশ জোর আছে কিন্তু আমি তাকে ছেড়ে ও দেবো না কারণ ও আমার ওপরে মানুষ খুন করার অভিযোগ এনেছে।
.
চলবে,,,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com