সাইকো জামাই । পর্ব -০৫
মেঘ— চুপপ,,কোনো কথা হবে না।। পরের বার থেকে ওই পিয়াস তোমার থেকে ১০০ হাত দূরে থাকবে।। ওই ব্যবস্থা আমি করবো।। এখন বলো ফার্স্ট এইড বক্স কোথায়?? মলম লাগাতে হবে।।
আমি মেঘের দিকে তাকালাম
।। আমাকে কি মনে করে এই লোকটা,, ইচ্ছা হলে মারবে, আবার ইচ্ছা হলে যত্ন করবে।। আমাকে কি হাতের পুতুল পেয়েছে নাকি।
মেঘ— কি হলো, বলো??
অথৈ— দরকার নেই। আমি মলম লাগাতে পারবো।।
মেঘ— একদম রাগাবা না।।
ভালোই ভালোই বলো।।
মেঘ কথাগুলো আমার একটু কাছে এসে বললো।।
আমি দেখিয়ে দিলাম ওই খানে আছে।। ও বক্স টা এনে আমাকে মলম লাগিয়ে দিলো।। আমি শুধু দেখছি।
মেঘ— ঐ,, কি দেখছো,, আমাকে খেয়ে ফেলবে নাকি।।
যাও শুয়ে পড়ো।।
খেয়ে ফেলবো না, খুন করে ফেলবো।।
কি ভাবে মারলো,,ইসস্ দয়া মায়া কিচ্ছু নাই। বকতে বকতে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
জীবনে রান্না করতে যায় না আগুনের আঁচ লাগবে বলে,
আর আজকে কি না, ওই হারামিটা আমারে পুড়াইয়া দিলো।।
আমি শুয়ে পড়লাম।। আমি শুয়ে পড়তেই মেঘ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।।
ও রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।।
প্রায় ১৫ মিনিট পর মেঘ রুমে আসে।।মেঘকে দেখে কান্না বন্ধ করতে চাইলাম,কিন্তু পারলাম না।।
মেঘ আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত রাখলো।
আমার এলোমেলো চুল কানের পাশে গুজে দিলো। আমার কানের কাছে এসে ঝুকে পড়লো, আমার মুখে ওর নিশ্বাস পড়ছে।।
মেঘ— ঘুমিয়ে পড়ো।।
.
আমি ঘুরে ওর মুখের দিকে তাকালাম।
আমি মেঘের দিকে তাকাতেই মেঘ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।।
আমার ঘাড়ে ও মুখে দু ফোটা পানি পড়লো। কি হলো পানি কিসের??
আরও দু ফোটা পানি পড়লো।। এবার আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি,
দেখার জন্য পানির উৎস কি.. কিন্তু পারলাম না।।
আমাকে মেঘ শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে।মাথাটাও তুলতে পারছি না।
অথৈ— ছাড়ো আমাকে,,, আমার দম বন্ধ আসছে।।
নাহ, ছাড়লো না, উল্টো আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
অথৈ— ছাড়ো বলছি,, আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে তো।
মেঘ— দম বন্ধ হয়ে আসুক,, তবুও আমি তোমাকে ছাড়বো না।।
অথৈ— আরে,, মরে যাবো তো,, তারপর তুমি কাকে কষ্ট দিবে, কাকে মারবে??
.
আর কিছু বললো না,, শুধু নিশ্বাসের শব্দ শোনা গেলো।।
একসময় আমি বাধ্য হয়ে ওর বুকেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে মেঘকে দেখতে পেলাম না। ঘুম থেকে উঠতেও অনেক দেরি হয়ে গেলো।।
শাড়ির আচলটা একটু সরে গেছিলো, পোড়া গুলোতে চোখ পড়লো। উফফ তাকানো যাচ্ছে না।।
ওয়াশরুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম।।
সবাই উঠে গেছে আমার আগে। মেঘ ও বসে আছে।
আমি নিচে নামতেই মেঘ আমার দিকে তাকালো।
আমি ওকে একটু দেখে আম্মুর কাছে গেলাম। খাওয়া দাওয়া শেষেই আমরা রেডি হয়ে গেলাম।
বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছি ভেবেই চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকলো।
সারা রাস্তা কাদতে কাদতে আসলাম। শশুরবাড়িতে আসতেই শাশুড়ি এসে জড়িয়ে ধরলো।
আমাদেরকে বাড়িতে নামিয়ে মেঘ গাড়ি চলে গেলো। আমি রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
একটু পড়েই মেঘ আসলো। আমার হাতে কতোগুলো ঔষধ ধরিয়ে দিলো।
মেঘ—এগুলো খেলে পোড়াটা তারাতারি সেরে যাবে।।
আমার খুব হাসি পেলো।।হেসেই দিলাম।।
মেঘ— হাসছো কেনো??
অথৈ— এত তারাতারি কিসের তোমার? আমাকে সুস্থ করে আবার মারার জন্য,,
আবার জলন্ত সিগারেট আমার শরীরে চেপে ধরবার জন্য বুঝি।।
বলতে বলতে আমি ফ্লোরে বসে কেঁদে দিলাম।।
অথৈ— কেনো করছো আমার সাথে এমন?? কেনো??
মেঘ আমাকে দেখলো।।তারপর আমার পাশে ফ্লোরে বসে পড়লো,,,
মেঘ— কেনো করছি সেটা তো তুমি জানো।।
অথৈ— প্রতিশোধ নিচ্ছো তো।। তাহলে একটা কাজ করো, আমাকে একেবারে মেরে ফেলো।।
আমি আর পারছি না।।
মেঘ— মাত্র তিন দিনেই তুমি হাপিয়ে গেলে।
তুমি তো আমাকে সাত সাতটা বছর কষ্ট দিয়েছো,
তবুও তোমাকে কিছু বলে নি শুধু তোমাকে ভালোবাসতাম বলে।।
অথৈ— ভালোবাসতাম বলে!!! আর এখন ভালোবাসো না???
প্রশ্নটা করে আমি মেঘের দিকে তাকালাম। মেঘও আমার দিকে তাকালো।।
মেঘ— তুমি ভালোবাসার মূল্য দিতে জানো না।।
কথাটা বলেই মেঘ উঠে চলে গেলো।।আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
দুপুর গড়িয়ে সন্ধা হয়ে গেলো, মেঘ বাসায় না আসাতে আমার একটু একটু টেনশন হচ্ছিলো। তাই বৃষ্টির কাছে জানতে চাইলাম। বৃষ্টি বললো ও নাকি এইভাবেই বাড়ি ফিরে।।
তবে একটু পড়েই মেঘ চলে আসে। আমি রুমে বসে মোবাইল টিপছিলাম। রুমে এসেই মোবাইলটা আমার হাত থেকে ছো মেরে নিয়ে নিলো।। তারপর বিছানায় শুয়ে আমার মোবাইল টা দেখছে।।
মেঘ— ও ম্যাডাম, মোবাইলে কি করেন?? বন্ধুদের খোজ খবর নিচ্ছেন।। কিন্তু আমি যে সারাদিন বাসায় ছিলাম না কই আমার খোজ তো নিলেন না।।
আমি কিছু বলার আগেই বৃষ্টি রুমে চলে আসলো।।
বৃষ্টি— কে বললো তোর খোজ নেয় নাই,,
মেঘ আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।।
মেঘ— আমার খোজ নিয়েছে!!!
বৃষ্টি— হুম। আচ্ছা ভাবিই কি সেই মেয়ে, যাকে তুই ভালোবাসতি??
মেঘ একবার বৃষ্টির দিকে তাকালো, তারপর আমার দিকে,,
মেঘ— নাহ্।
বৃষ্টি— ওহ,, আচ্ছা
মেঘ— একটা কফি বানিয়ে দিবি,, বৃষ্টি।
মেঘ আমার মোবাইলে কি যেনো দেখছে।বৃষ্টি চলে গেলো।।মেঘ মিথ্যে কথা কেনো বললো বুঝতে পারলাম না।
হঠাৎ আমাকে টান দিয়ে ওর উপর ফেলে দিলো।। আমি উঠে পড়তে চাইলে আমাকে নিচে ফেলে ও আমার উপর শুয়ে পড়লো।।
মেঘ— ঐ, এতো ছটফট করো কেন?? হুম। এই জন্যেই তো মাইর খাও।।
অথৈ— হুহ, আমাকে মারার জন্য তোমার কোনো কারন লাগে না।।
মেঘ— আমার কথা শুনলে আর মারবো না।।
অথৈ— কি ব্যাপার,, আজকে কি হয়ছে তোমার??
মেঘ— কই কিছু না তো।।
মেঘ কথাগুলো বলতে বলতে আমার কপালে, গলায় চুমু দিতে লাগলো।।
আমি মেঘের কান্ডগুলো দেখছি শুধু। এই ভালো তো এই খারাপ। আমি ওকে এখনো চিন্তে পারলাম না।। মাঝে মাঝে মনে হয় ও আমাকে অনেক ভালোবাসে আবার মাঝে মাঝে মনে হয় আমাকে ঘৃণা করে।
আমি বাহানা ভাবছি এখন নিজেকে ছাড়ানোর জন্য।।
অথৈ— ইসসস,,, ব্যাথা পাচ্ছি,, পেটে।।
মেঘ— বাহানা,, আচ্ছা, ছেড়ে দিবো তোমাকে,, আগে বলো এই জোহান আহমেদ টা কে???
আমি তো চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।।জোহান কে ও চিনে কেমনে? আবার চিনতেও পারে, কারন সম্পর্কে ও তো সব জানে। তাহলে আবার জোহানের কথা জিজ্ঞাস করছে কেনো??
মেঘ— ওই বলো।। জোহানের সাথে তোমার কি সম্পর্ক??
অথৈ— আ,,, আমার ব,,,
“ভাইয়া” বৃষ্টি ডাক দিতেই মেঘ উঠে দাড়িয়ে পড়লো। আমি উঠে বসে পড়লাম।
বৃষ্টি— কি হয়েছে তুমি এই ভাবে উঠে দাড়ালে কেনো??
মেঘ— তুই যেই ভাবে ডাকলি,, আমি ভাবলাম হাত পা পুড়িয়ে বসলি নাকি, তাই আর কি…
মেঘ আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেনো ও হাফ ছেড়ে বাচলো।বৃষ্টি এই অবস্থায় দেখলে আমি নিজেও অসস্থিতে পড়তাম।।
বৃষ্টি মেঘকে কফি দিয়ে আমার পাশে বসে গল্প করতে লাগলো। মেঘ কফি শেষ করে গোসলে গেলো।। জোহান কে আর বলা হলো না।।
.
চলবে,,,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com