গল্পঃ ভাঙ্গা হৃদয় । পর্ব ০৪
স্বয়ং ইনিই সেই যার অবুঝ দু’বছরের সন্তানের জন্য
আজ আমি এক চোখের দৃষ্টি বিহীন। আশ্চর্য, হতবাক
হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি আমি। কটমট করে,তীব্র
রাগে রাগান্বিত হয়ে মিহিকার বর্তমান স্বামীর উদ্দেশ্য
আবারও তিনি উচ্চ কন্ঠ স্বর প্রয়োগ করে বললেন,
-আমি হতবাক! তোর মতো এক জানোয়ার নিম্ন মন
মস্তিষ্কের লোককে আমার বাবার অফিসের সন্নিকটে
এভাবে দেখতে পেয়ে?এখনো স্পষ্ট মনে আছে আমার
সেই দিনটির প্রতি যেদিন তুই আমার এক কাজিন কে
নির্দ্বিধায় কটু কথা শুনিয়ে অসভ্যতা করার চেষ্টায়
বিভোর ছিলি! মূলত সেদিন বেশ তাড়াহুড়ায় তথা
আমার ছেলের জ্বর,সর্দি,অসুখ থাকায় অবশ্য তখন
তেমন একটা কিছুই করতে পারিনি।নাহলে তোর মতো
নিম্ন স্তরের মানুষদের কিভাবে চরম শিক্ষায় শিক্ষিত
করতে হয়, সে আর যাই হোক এই তোহফা চৌধুরীর
বেশএকটা ভালোই জানা রয়েছে।বেশ একটা বাকরুদ্ধ
হয়েই স্থির অবস্থায় নিশ্চুপ , দাঁড়িয়ে রয়েছি আমি
আজ কেনো যেন একের পর এক আমি বেশ অবাকই
হচ্ছি বটে!অতঃপর এরূপ রাগান্বিত, উচ্চ কন্ঠ-স্বর কে
কেন্দ্র করে অফিসের প্রায় সবাই দলে দলে ভীর
জমিয়েছেন আমার ডেস্কের নিকট। অতএব সবাইকে
সাইড করে ভেতরে এসে অফিসের বস খুব একটা
বিস্মিত কন্ঠ স্বরেই বললেন, এতো চিৎকার চেঁচামেচি
কেনো? মা, তোহফা তুমি এখানে কেনো, কি করছো?
do not understand anything! হচ্ছে কি এখানে?
মিহিকার বর্তমান স্বামীকে ইঙ্গিত করে জবাবে তোহফা
খানিকটা কড়া কন্ঠ স্বরই প্রয়োগ করে বললেন, এসব
কি বাবা! I can’t believe it. Whey বাবা! “তুমি একে
ম্যানেজার পদে চাকরি প্রধান করেছো? যার কোনো,
মূল্যবোধ, আত্মবোধ বিবেকবোধ বলতে অন্তত কিছুই
নেই। এক কথায় যাকে শুধু মাত্রই রক্তে মাংসে গড়া
নিচু মন মানসিকতার অধিকারী বলা তাই শ্রেয়ো!
নরম কন্ঠ স্বরে অফিসের বস বললেন,
-মা আমার কিছুই তো বুঝলাম না তোমার কন্ঠস্বর
গুলোর অর্থ!
জবাবে তোহফা এখনো বেশ রাগান্বিত কন্ঠ স্বরেই
বললেন,
-You may not know! বাবা? এই লোকটার আচরণ
কত-খানি জঘন্য ! সেদিন আমার কাজিন রাসেদাকে
এই লোকটাই, ঘৃণিত ভাষায় কটু কথা, এমনকি বাজে
ইঙ্গিতও করেছিলো। I don’t want to say anything
more ! I just don’t want to see this bad guy in
the office as a manager anymore! The rest is
up to you!.
কথা গুলো বলার পরপরই বেশ খানিক বিরক্ত মুড
নিয়ে ডেস্ক থেকে তিনি দ্রুতই বেড়িয়ে যান।
অতঃপর মৃত মিহিকার বর্তমান স্বামীকে আরও
কিছুক্ষণ লাঞ্চনা-অপমান করা হলো।পরিশেষে তাকে
চিরতরে বহিষ্কার ঘোষণা করা হয় অবশ্য অফিস
থেকেই। ছুটি হওয়ার সতেরো মিনিট পূর্বে আমাকে
বসের সম্মুখে এসে দাঁড়াতে হয়। বাবা-মেয়ে দু’জনই
বসে রয়েছেন চোখের দৃষ্টির সন্নিকটের নিকট।
বেশ একটা গম্ভীর গম্ভীর কণ্ঠে বসের মেয়ে অর্থাৎ
তোহফা বলল,
-আপনি তো ভিষনই সাহসী মানুষ বটে!কাউকে তেমন
একটা কিছুই না জানিয়ে ওভাবে সেদিন চুপিচুপি
হাসপাতাল ত্যাগ করে অনত্রে কোথাও চলে যাওয়ার
কি মানে দাঁড়ায় মিস্টার শাহরিয়ার? Answer me without being
station! You know a missing diary has been made in your name in the
police station. আপনার জন্য কতটা চিন্তিত ছিলাম
আমরা সেই আন্দায কি মাথার গহীনে রয়েছে
আপনার?
-Sorry Madame! মূলত আমি তখন হাসপাতাল ত্যাগ
করতে এক প্রকার বাধ্যই ছিলাম। প্রথমত আমি চাইনি
আমার কোনো বিশেষ মূল্যবান অঙ্গের চিকিৎসা হোক কারো করুণার ভিত্তিতে!
দ্বিতীয়ত আমি অনেক বড়
সমেস্যার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করছি। যা আমাকে
ধীরে ধীরে বেশ একটা গ্রাস করার চেষ্টা অনাবরত
করেই যাচ্ছে। নিরুপায় ছিলাম। তাই চুপি-চুপি না বলে
নিরবে কাউকে কিছু না জানিয়ে ত্যাগ করেছিলাম
হাসপাতালের চৌকাঠ!
ভুরু ভাজ করে হাল্কা নরম কন্ঠ স্বরে অফিসের বস
বললেন,
-তা কি এমন সমেস্যার মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছো তুমি?
দ্বিধাবোধ না করে নিশ্চিন্তে বলতে পারো আমাদের?
যথা সম্ভব সাহায্য সহযোগিতা করতে আমি প্রস্তুত।
উত্তরে শত ভীরে মিথ্যা সুখের চাদরে নিখুঁত আকারে
দুঃখ গুলো লুকিয়ে মুচকি হেঁসে আমি বললাম,
-না স্যার! সেগুলো আমার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যপার-
স্যাপার! বলতে মোটেও ইচ্ছুক নই আমি।
কিছুটা বিস্মিত হয়ে তোহফা বলল,
-ওকে ওকে মিস্টার শাহরিয়ার! সেগুলো বা নাই
বললেন।তবে এক চোখের দৃষ্টিবিহীন আর কত দিন
এভাবে চলবেন আপনি?যেহেতু আপনার এরূপ নির্মম
অবস্থার জন্য যদিও বা আমার এক মাত্র ছেলেটাই
দ্বায়ী। তাই আপনার চিকিৎসার সব খরচ বহন করা
আমার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।
-নাহ ম্যডাম! আমি আপনার টাকায় মূলত নিজের
চোখের অপারেশন করাতে পারবো না?
কিছুটা হেঁসেই তোহফা বলল,
-Oh Rally!আপনি তো বড় জেদি তবে মনে তো হচ্ছে
আপনার কাছে অপারেশনের যথেষ্ঠ টাকা রয়েছে?
তাই বোধ হয় আমার টাকায় নিজের অপারেশনের
খবচ বহন করতে চাচ্ছেন না?
-যেমনটা ভাবছেন আসলে সেটা নাহ! আমার কাছে
নিজের অপারেশন করানোর মতো কোনো টাকাই নেই
তবে যখন হবে তখন অপারেশন নিশ্চয়ই করিয়ে
নিবো। তবুও আপনার টাকায় নিজের অপারেশন
করাতে মোটেও সহমত নই আমি।ক্ষমা করবেন।
-ডাক্তার কি বলেছেন জানেন? দ্রুতই অপারেশন না
করালে পরবর্তীতে বেশ সমেস্যার উদ্ভব হতে পারে
আপনার। তাই যেমনই হোক যে করেই হোক
ইমিডিয়েটলি অপারেশনটা আপনাকে করতেই হবে?
সেটা জোর করে হলেও করতে আপনি নিশ্চই বাধ্য।
অফিস ছুটির সময় হয়েছে, এবার আপনি আসুন।
অতঃপর খানিকটা মুচকি হেঁসেই আমি নিজের ডেস্কে
এসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল সঙ্গে নিয়ে বাড়া বাসায়
চলে আসলাম। রাত খুব গভীর, অফিসের কিছু কাজ
সম্পূর্ণ করে সবেই মাত্র নিদ্রায় অচল হয়ে প্রায় পড়েই
ছিলাম তবে আচমকা অনান্য নাম্বারে ফোন বেজে
ওঠায় কেমন একটা ‘শরীরটা শিউরে উঠলো আমার।
এতো রাতে কে ফোন দিয়েছে?কেনো দিয়েছে?কি
কারণ?কিছুই যেন তেমন একটা ভেবে পাচ্ছি না আমি
শীতের রাত, মোটা আরাম-জাতীয় কাঁথায় পা’দুটো
গুজে ফোন রিসিভ করে আমি বললাম,
-কে?
উত্তরে কেউ গুঙিয়ে কাঁদছে কিন্তু জবাবে কিছুই
বলছেন না তিনি। বেশ কিছুক্ষন এভাবেই নিস্তব্ধ হয়ে
বসে রয়েছি তবুও ওপাশ থেকে কারও কান্নার কন্ঠ
স্বর ছাড়া যেন আর কিছুই শুনতে পারছি না আমি।
অতএব বিরক্ত হয়ে, খানিকটা ধমকের কন্ঠ স্বরেই
আমি আবার বললাম,
-কি সমেস্যা আপনার?এতো রাতে অচেনা কাউকে
এভাবে ফোন দিয়ে মাত্ররিক্ত গুঙিয়ে কান্না করার
কি কারণ?
উত্তরে এবার বেশ কান্না মিশ্রিত এবং গম্ভীর কণ্ঠে
ওপাশ থেকে কেউ বললেন,
-বাবা আমি তোর চাচা বলছি রে!
মুহূর্তেই হকচকিয়ে উঠলাম আমি। চাচার সাথে
আমাদের সম্পর্ক বেশ একটা ভালো নয়।একি গ্রামে
থাকা সত্যেও, দেখা সাক্ষাৎ হলেও কথা হয়না আজ
বহু বছর ধরে।সেখানে এত বছর পর হঠাৎ যদিও বা
হয় এই গভীর রাত্রে ফোন দেওয়ার কি বিশেষ কারণ
হতে পারে চাচার?কয়েক বার বেশ খানিকটা হিমশিম
খেয়ে আমি বললাম,
-কি ব্যাপার চাচা তুমি! আচমকা এভাবে এতো রাতে
ফোন দেওয়ার কি এমন বিশেষ কারণ তোমার?
জবাবে চাচা যা বললেন তা শোনা মাত্রই আমার
বুকের ভেতরের সব জ্বালা যন্ত্রণা আবার সেই আগের
মতোই তীব্র আকারে বাড়তে আরম্ভ করলো।সারা
শরীর শিউরে উঠছে প্রতিনিয়ত।শীতের রাত তবুও
অজস্র ঘাম জড়ছে কপালে!ধীরে ধীরে হাত পা ঠান্ডা
হওয়ার উপক্রমে।চাচা যখন বললেন,
-বাবা,তোদের বাড়িতে আগুন লেগেছিলো!খানিক
সময় পূর্বে!যেই আগুনে পুড়ে তোর বাবা এবং অসুস্থ
মা উভয়ই মারা গিয়েছেন।আল্লাহ রাস্তে বিশ্বাস কর
বাবা , হৈচৈ কোলাহলে যখন খবরটা শুনতে পেয়েছিলাম
তখন এক মুহূর্তের জন্যেও ঘাপটি মেরে
বসে থাকিনি।সব রাগ অভিমান ভুলে, কুকুরের মতো
দৌড়ে এসে সবার সাথে আমিও আগুন নিভানোতে
বেশ একটা বিভোর হয়ে পড়েছিলাম।কিন্তু সৃষ্টি কর্তার
কি এমন করুণ সিদ্ধান্ত!বাম হাত পুড়ে গিয়েছে
আমার।এখনো পোড়া স্থান দিয়ে গড়গড়িয়ে প্রচুর
রক্তপাত হচ্ছে তবে পারলাম নারে তোর বাবা বা মা
কাউকেই এই জলন্ত তীব্র আগুনের যন্ত্রণা-দ্বায়ক
মৃত্যুর হাত থেকে উদ্ধার করতে।
চাচার এরুপ কন্ঠ স্বর গুলো যখন আমার কান নামক
বিশেষ এক যন্ত্র দিয়ে শুনছিলাম তখন আমার বেশ
একটা শ্বাস রুদ্ধ হয়েছিলো।ধুমরে-মুচরে যাওয়া ভাঙা
হৃদয়ে যেন আরও তীব্র আকারে কষ্টের দহন গুলো
ধীরে ধীরে বেড়েই যাচ্ছিলো।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com