গল্পঃ সুখ নেই কপালে । পর্ব- ০৩
তখন,রৌহিকা ম্যাডামকে ওনার বেডের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,আমি অবাক,আশ্চর্য,হতবাক,হতভম্ব না
হয়ে পারলাম না।এখনো বাহিরে থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি আমি। ভেতরে প্রবেশ করার সাহস যেন পাচ্ছি
না খুঁজে,আমার এই মনে। যেই ম্যাডামকে দেখলে বরং চো আমার এ মন, পূর্বে সবসময় মূলত শ্রদ্ধা-ভক্তিতে
মেতে থাকতো আজ সেই মনই আমায় নির্দেশ দিচ্ছে, ওনাকে অনেক অনেক ঘৃণা করতে।বুঝতে পারছি না
কিছুই আমি!রৌহিকা ম্যাডাম কেনো,তোহফা ম্যামের বেডের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন?তার সম্পর্কে কিছু হয়
না তো?যদি তাই হয় তাহলে তো এই মুহূর্তে ভেতরে যাওয়া টা আমার জন্য অবশ্য নিরাপদ নয়।রৌহিকা
ম্যাডাম যদি আমার সম্পর্কে ভুল কিছু বুঝান তাকে? হঠাৎ পেছন থেকে একজন নার্স বেশ একটা উচ্চ কন্ঠ
স্বরেই আমায় উদ্দেশ্য করে বললেন, -একি আপনি এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে কেনো রয়েছেন!
কে আপনি?ম্যাডামের ক্যাবিনে অপরিচিত মানুষদের এলাউ একদমই নিষিদ্ধ?আপনি কি ওনার পরিচিত
কেউ?
.
কথা গুলো যখন নার্সটি আমায় বলেছিলেন,তখন
ভেতরে অবস্থানরত রৌহিকা ম্যাডাম তা কিন্তু বেশ
একটা শুনতেই পেয়ে ছিলেন। তাই বোধ হয় আমার
দিকেই মূলত এগিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তার আগেই
আমি দ্রুততার সাথে স্থান ত্যাগ করে নিজের গন্তব্যে
চলে এসেছিলাম। ভাগ্যিস রৌহিকা ম্যাডাম দেখেননি
আমায়। তবে আমার এরূপ আচরণ, নার্সটির চোখে
বেশ খানিক সন্দেহের মনে হয়ে ছিলো।পরের দিন
সন্ধ্যার পড়ে যখন ছাত্রীকে পড়াতে এসেছিলাম তখন,
কেনো যেন আমার রুহিকে বেশ একটা অদ্ভুত মনে
হয়েছিলো।ইদানীং তার আচরণ গুলোও,আমার কাছে
জানিনা সঠিক কেনো জানি তেমন একটা সুবিধার
বলে মন সম্মোধন করছে না। কিছুদিন আগেও রাস্তায়
দেখা হওয়ার সময়, হাতে দু’টো গোলাপ ফুল ধরিয়ে
দিয়ে বলেছিলো, স্যার ঞ্যাঁ ঞ্যাঁ নন ক্রোতে! আজও
মূলত কোনোই বেতিক্রম হলো না।বুঝলাম না এর অর্থ
কি! আশ্চর্য হয়ে যখন রুহিকে জিজ্ঞেসা করেছিলাম,
এসবের মানে কি রুহি?তখন সে হাসতে হাসতে বলল,
-বুঝে নিন এর মানে কি।
.
জবাবে খানিকটা ক্ষুব্ধ হয়ে বিরক্তিকর কন্ঠ স্বরে আমি
বললাম,চুপচাপ পড়ায় মনযোগী হও রহি? দু-মাস পর
তো পরিক্ষা শুরু হবে তোমার।এভাবে অলসতায় মগ্ন
হইয়ো না? জবাবে রুহি আর কিছুই বলল না,খানিক্ষন
নিজেকে আমার সম্মুখে, পড়ায় মনযোগী হিসেবে
চিহ্নিত করে, হুুঠ করে আচমকা পড়ার টেবিল থেকে
উঠে গিয়ে, নিজের মা-কে ডেকে এনে লজ্জা ভরা মুখে
রুহি বলল, আম্মু স্যার কিন্তু আজ আমাদের সাথেই
রাতের ডিনারটা অবশ্যই করছেন।তাই স্পেশাল কিছু
রেঁধো,বিশেষ করে স্যারের জন্য!
.
হঠাৎ রুহির এরূপ অদ্ভুত মূলক আচরণে আমার বেশ
রাগ হচ্ছিলো বটে।কিন্তু রুহির মায়ের মুখচ্ছবির দিকে
তাকিয়ে জানিনা কেনো আর কিছুই বলতে পারলামনা
কারণ রুহির মা-ও চান, আজ যেন আমি তাদের সাথে
রাতের ডিনার-টুকু করে তবেই বাসায় ফিরি। যদিও বা
আজ রুহির বড় ভাই বিদেশ থেকে আসছেন,অতঃপর
রাত, নয় ঘটিকায় রুহির বড় ভাই বাসায় এসেছিলেন।
যার মিনিমাম বত্রিশ মিনিট পর রুহিদের বাসায় মূলত
খাবার-দাবারের বিশাল আয়োজন করা হয়। অতএব
ডিনারের শেষে সবার কাছ থেকে, বিদায় নিয়ে নিজের
গন্তব্যে হাটা সবেই মাত্র আরম্ভ করে ছিলাম বটে কিন্তু
আচমকাই থেমে যেতে হয় আমায়। অবশ্য পিছন
থেকে কারো গলার কন্ঠ স্বরে। অতএব আমার নিকটে
এসে,জোর করে দু’টো গোলাপ ফুল হাতে ধরিয়ে দিয়ে
রুহি বলল, স্যার আপনি এতো কেয়ারলেস কি করে
হতে পারেন? ভালোবেসে ছাত্রী দু’টো গোলাপ ফুল
দিয়েছে আর আপনি সেগুলো সঙ্গে না নিয়ে এভাবেই
তুচ্ছ ভেবে ফেলে আসলেন?
.
জবাবে বিরক্তি লুকিয়ে, কিছুটা রাগান্বিত হয়ে আমি বললাম,
-সাধারণ কয়েকটা ফুলের জন্য তুমি এভাবে বাড়ির বাহিরে চলে এলে?
-ভালোবেসে দেওয়া কোনো কিছুই সাধারণ হতে পারে
না? অসাধারণ হয়ে থাকে বুঝলেন। কারণ আমি, ঞ্যাঁ ঞ্যাঁ নন ক্রোতে।
-এ্যাহ!একটা কথা বলতো রুহি?এটার ঠিক মানে কি?
-তেমন কিছুনা!যেদিন আপনি জানবেন,সেদিন হয়তো
আমি থাকবো না। সহিসালামতে বাসায় ফিরবেন
প্রার্থনা রইলো।
.
কথাগুলো বলার পরপরই আমাকে তেমন আর কিছুই
বলার সুযোগ করে না দিয়ে,চলে যায় রুহি। আজকাল
কেনো যেন রুহির আচরণ গুলো আমাকে বেশ একটা
বিভ্রান্তির শিকার হতে বাধ্য করছে।অতঃপর দিনযতই
অতিবাহিত হচ্ছে,রুহির দিনদিন অদ্ভুত আচরণ গুলো
আমাকে প্রতিবারই বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলছে অনাবরত,
রুহির বড় ভাইয়ের জন্য পাত্রী দেখা হচ্ছে।এক প্রকার
জোর করেই আমাকে তাদের সাথে নিয়ে আসা হয়েছে কিন্তু
সত্যি বলতে এটা মোটেও আশা অথবা কল্পণাও
করিনি আমি।আমার ছাত্রী রুহির বড় ভাইয়ের জন্য
পাত্রী দেখতে শেষপর্যন্ত আমাকে আমার ভালোবাসার
মানুষটির বাড়িতেই এভাবে আসতে হবে।ভালোবাসার
মানুষটি যখন পাত্র পক্ষের সঙ্গে আমাকে দেখেছিলো,
তখন প্রথমেই জিজ্ঞেসা করেছিলো,আমি তাদের কি
হই? প্রতি উত্তরে আশ্চর্য হয়ে রুহির মা যখন বলল,
আমি তাদের মেয়েকে টিউশনি করাই।যার উত্তরে
আমার ভালোবাসার মানুষ সিমা অট্টহাসি দিয়ে বলল,
.
-আপনাদের মন-মানসিকতা কতই না নিচু প্রকৃতির
সেটা অবশ্য স্বয়ং নিজের চোখের পলকেই দেখতে
পারছি আমি।যাকে আপনি নিজের মেয়ের টিউশনির
স্যার হিসেবে পরিচয় দিলেন,সে কি আদৌও কারোই
স্যার হওয়ার যোগ্য?আমার মতে সে তো কলঙ্ক!সেন্স
বলে সত্যি বলতে কিছু কি রয়েছে আপনাদের?কখনো
কি আপনার মেয়েকে যে ব্যক্তি টিউশনি করায় তার
ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে ছিলেন?তার চরিত্র কতটা
ঘৃণিত,জঘন্য।যে ছেলে ভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত ফাংশনে
প্রিয় একজন শিক্ষিকার বুক থেকে ইচ্ছে কৃত ভাবে
শাড়ীর আঁচল টেনে,মাটিতে ফেলে দিতে পারে,সে
আপনার মেয়ের টিউশনির স্যার কি করে হতে পারে?
না জানি সে আপনার মেয়েকে ঠিক কিরূপ চোখের
পলকে দেখে?
.
কথা গুলো বলার পরপরই যখন সিমা আরও কিছু
বলতে যাবে ঠিক তার আগেই সবাই কে বাকরূদ্ধ
করে দিয়ে,আমার ছাত্রী রুহি সিমাকে কোষে একটা
থাপ্পর দিয়ে বলল…….
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com