তুমি যদি জানতে | পর্ব -০২
স্টাডিতে চলো কথা আছে।” মিম কৌতুহল বশত ইমানের পিছুপিছু এলো,জিজ্ঞেস করলো,
– “বলুন কি হয়েছে?” ইমান হটাৎ গাল পেতে বললো,
– “গুড বাই কিসস দাও! অফিসে যাবো কাজ আছে।” মিম লজ্জা পেলো আমতা আমতা করে বলল,
– “দিতেই হবে?” ইমান বললো,
– “হুমম,হবে।” মিম আস্তে আস্তে করে ইমানের খুব কাছে চলে এলো,নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো ইমানের দু’হাতে,ইমান বলল,
.
– “এতে হবে না।”
– “তাহলে?”
– “গালে দিতে হবে।” মিম ধীর গলায় বলল,
– “আজ থাক না,না হয় অন্য কোনোদিন হবে?”
– “না তা কেন? অন্য কোনোদিন কেন? আজ’ই দিতে হবে।”
– “শুনুন না প্লিজ? ছেড়ে দিন না আজকে।” ইমান গাল পেতে বলে,
– “দিলে দাও আর নয়তো ঘরে চলো আমার সাথে।” মিম আচমকা ইমানের গালে চুমু খেয়ে দৌড়,ইমান ওর কাণ্ড দেখে নিচে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।মিম ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে মনেমনে বলে,
– “এই লোকটার আজ কি হয়েছে? ওনার সাথে বিয়ের আগে কত কথা বলেছি অথচ আচার-ব্যবহার দেখে একবারও ফাজিল বলে মনে হয়নি তাকে।” ইমান গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে মনেমনে বললো,
– “ধীরে ধীরে বুঝবে তুমি চাঁদ,তোমার কার সাথে বিয়ে হয়েছে?”
এদিকে মিম একটা জরুরী কাজে ফাহিম সাহেবে’র ঘরে এসে দেখে,সে মেঝেতে পরে গিয়ে ছটফট করছে।ও তাড়াতাড়ি রান্নাঘর ঘরে ছুটে গিয়ে চকলেট এনে খাইয়ে দিয়ে ফাহিম সাহেব’কে জিজ্ঞেস করে,
– “বাবা এখন কেমন লাগছে?” ফাহিম সাহেব কিছু বলার আগেই অজ্ঞান হয়ে যায় তা দেখে নাদিরা চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ফাইজা’কে ডেকে বলে,
.
– “দেখুন মা বড় ভাবি বাবা’কে কি সব খাইয়ে দিয়েছে?” ফাইজা হঠাৎ ঘরে এসে ফাহিম সাহেব’কে মেঝেতে দেখে ভয় পেয়ে মিম’কে বলে,
– “এই মেয়ে এই? তুমি কি খাইয়ে দিয়েছ ওনাকে?” মিম কিছু বলার আগেই ফাইজা বলে ওঠে,
– “কি মতলব কি তোমার? কি করেছ তুমি ওনার সাথে?”
– “মা আমার কথা শুনুন?”
– “এখুনি বেড়িয়ে যাও তুমি এই ঘর থেকে।” নাদিরা বলল,
– “দেখুন মা! বাবা’র মুখে কালো কালো কি যেন লেগে আছে।”
– “ছোটো বউ মা বেশি না কথা বলে ডাক্তার’কে ফোন করো,তোমার ভাইয়া আর ইয়াসিন’কে আসতে বলো বাড়িতে।”
– “মা আমি বাবা’কে দেখবো?”
– “তোমাকে? কেউ এখানে ডেকেছে? বলছিনা যাও! পারলে এখুনি বাপের বাড়ি চলে যাও এখান থেকে।” মিম তবুও দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রইলো,ফাইজা ওকে বের করে দিতে বলল ঘর থেকে।বেশ কিছুক্ষণ পর,
ইমান আর ইয়াসিন অফিস থেকে ফিরে এলো,তখন নাদিরা সব খুলে বলল তাদের কাছে।ইমান কেন যেন চুপ থাকতে পারলো না,জিজ্ঞেস করেই ফেললো,
.
– “মা তোমার মনে হয় মিমের চিকিৎসায় ভুল আছে?” পাশ থেকে নাদিরা বললে উঠলো,
– “আমি যে দেখলাম বাবা’র মুখে কালো কালো কি যেন লেগে আছে? মা না মুছিয়ে দিলেন? দেখান ভাইয়া’কে?” ডক্টর আবরার বললো,
– “চিকিৎসায় কোনো ভুল নেই,ফাহিম সাহেব একদম ঠিক আছে।” ফাহিম সাহেবের জ্ঞান ফিরতেই বললেন,
– “নতুন বউ মা কোথায়? দেখতে পাচ্ছি না কেন তাকে? আমার সুগার ফল করেছিল আর তাই ও দ্রুত ছুটে গিয়ে রান্নাঘর থেকে চকলেট এনে খাইয়ে দিয়েছিল আমাকে।”
– আমি ভাবলাম কি না কি?”
– “ছোটো বউ মা,এতো ভাবতে কে বলেছে তোমাকে?”
– “আসলে মা বড় ভাবি’কে একটু বকে দিয়েছেন।”
– “নিশ্চয়ই তোমার ন্যাকামো দেখে?”
– “ভাইয়া আমি ও মেডিকেলে পড়াশোনা করেছি।”
– “তবে তুমি আমার বউয়ের মতো সার্টিফাইড এম.বি.বি.এস ডক্টর নও,ঠিক আছে?”
– “বাবা আমার কথা শোন।”
.
– “মা তোমার কথা শোনা’র ইচ্ছে বা ধৈর্য কোনো টা নেই আমার কাছে।” ফাইজা কেঁদে ফেললেন,ফাহিম সাহেব রেগে গিয়ে বললেন,
– “তোমার তরফ থেকে অনেক বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে,না জেনে এতো বেশি কথা বলো কেন তুমি? আগে শুনবে তো মেয়ে টা কি বলতে চাইছে?” ইমান ঘরে এসে দেখে মিম মনমরা হয়ে জানালা’র গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।ইমানের উপস্থিতি টের পেয়ে মিম পেছনে ফিরে হাসলো,ইমান এগিয়ে এসে বলল,
– “মায়ের হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি তোমার কাছে।” মিম বলল,
– “উনি মা বকতেই পারেন বাদদিন না,ছেড়ে দিন বিষয় টা কে।” ইমান জামা-কাপড় চেঞ্জ করতে বাথরুমে ঢুকলো,তখন নাদিরা এসে হাসতে হাসতে বলল,
– “বড় ভাবি,বাপের বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য জামা-কাপড় গোছাতে আমি কি সাহায্য করবো আপনা’কে?” তখন হঠাৎ ইমান বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এসে নাদিরা’কে তাচ্ছিল্য করে বলে,
– “আগে বলো কত দেবো তোমাকে?”
.
– “মানে ভাইয়া? বুঝলাম না,একটু খোলসা করে বলবেন আমাকে?”
– “না মানে,আমার অবর্তমানে কেউ একজন তো দেখে রাখবে আমার বউ টা কে? ওর যেন কোনো অযত্ন না হয়,ওকে যেন কোনো কাজ করতে না হয় বাড়িতে আর তাই বলছিলাম ওর কাজ গুলো কি নাদিরা তুমি করে দেবে?”
– “ছিঃ ভাইয়া? এগুলো কি বলছেন? আপনার মাথা ঠিক আছে?”
– “তাহলে তুমি কেন চাকরানী সেজে এসেছ? এখানে কেউ তোমাকে ডেকে পাঠিয়েছে? না তুমি আমার বউয়ের খাস বাদী? পয়সা দিয়ে আমি রাখিনি তোমাকে।” মিম কথা গুলো শুনে চমকালো,নাদিরা অপমানিত হয়ে নিজের ঘরে ফিরে গেছে,যদিও সে এই কথা গুলো কেঁদে কেঁদে ইয়াসিন’কে বলছিল,ইয়াসিন বিরক্ত হয়ে ঘরের বাহিরে এসে বসে আছে।” রাতে সবাই খাবার টেবিলে খেতে বসে ইমান’কে না দেখে চুপ হয়ে গেছে,ফাহিম সাহেব রেগে গিয়ে ফাইজার সাথে কথা বলছেন না এর মধ্যে মিম বুঝিয়ে ইমান’কে রাতের খাবার খাওয়াতে নিচে নিয়ে আসে।ইমান চুপচাপ মিম’কে সাথে নিয়ে খাবার খেয়ে উঠে গেলো,ফাইজা ছেলে’কে বলল,
– “বাবা কিছু কথা ছিল তোর সাথে।” ইমান বলল,
.
– “কি কথা আছে তোমার? কি চাও তুমি আমার কাছে? বিয়ে টা না করলেই ভালো হতো,তাহলে অন্তত তুমি এমন করতে পারতে না মিমের সাথে আর যেহেতু আমি তোমার বোনের মেয়ে’কে বিয়ে করিনি,তাই তোমার সহ্য হচ্ছে না ওকে?” ফাইজা কেঁদে ফেললেন,ইমান হনহন করে ঘরে চলে এলো নিচ থেকে।তখন নাদিরা এসে ফাইজা’কে বলল,
– “মনে হচ্ছে মা,বড় ভাবি ভাই’কে বাড়িয়ে চারিয়ে কিছু একটা বলেছে?” পাশ থেকে ইমা বলে ওঠে,
– “কোই আমি তো দেখলাম তুমি বাড়িয়ে চারিয়ে কথা বলছিলে ভাইয়াদের সাথে? ইনফ্যাক্ট বড় ভাবি এই ব্যাপারে ভাইয়া’কে কিছু’ই বলেনি বরং ভাইয়া সবটা শুনেছে তোমার মুখ থেকে।” ইস্পা বলল,
– “সেটাই,তুমি কি অশান্তি করতে চাইছ এ বাড়িতে?”
– “না মানে?”
.
– “শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করো না ছোটো ভাবি ঠিক আছে?” ফাইজা’র দুশ্চিন্তায় ঘুম হয়নি রাতে,সকালে ফাইজা মিমের ঘরে এসে দেখে ও রিসেপশন শেষে বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার সমস্ত গোছগাছ করে ফেলেছে আর ইমান এটা-ওটা এগিয়ে দিচ্ছে মিমের হাতে,মিম বলল,
– “বসে আছেন কেন? কি হলো? জান রেডি হয়ে আসুন,আপনার তো রেডি হয়ে আসতে অনেক সময় লাগে?”
– “তাতে কি? আর এমন হয়েছে বউ? আমার একটু বেশি’ই সময় লাগে।” ফাইজা আমতা আমতা করে মিম’কে বললেন,
– “বউ মা,আমার কিছু কথা আছে তোমার সাথে।” মিম হাসিমুখে বলল,
– “জ্বি মা বলুন? বাবা ঠিক আছে?” ফাইজা মিমের হাত চেপে ধরে বলল,
– “কোনো তিক্ততা মনে পুষে রেখো না মা,আমার ভুল হয়ে গেছে।”
.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com