মিথ্যা অপবাদ । পর্ব - ২৪
মিথিলার বিয়েটা হয়ত হয়ে গেছে,,,ঘুমিয়ে ছিলাম,,ফোনে মাইশা আপুর কল,,রিসিভ করতেই,কান্নার আওয়াজ,,,
— কি হয়েছে আপু কাদছো কেন?(আমি)
আপুর কান্নায় যেন বিপদের সংকেত পাচ্ছি।আপুর কি কোনো কিছু হলো?
–আসিফ ভাইয়া এক্সিডেন্ট করেছে,,হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হইছে।(মাইশা আপু কেদে কেদে)
— কিভাবে,,?(আমি)
— কি যেন কি জরুরি কাজে অফিসে যাচ্ছিল।কিছুক্ষন আগে খবর আসে ভাইয়ার গাড়ি বড় মালবাহী ট্রাকের সাথে ধাক্কা খায়।তার পর আমরা সেখানে এসে সুনি হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হইছে।আমরা সেখানেই যাচ্ছি।তুমি আসো?(মাইশা আপু)
— কোন হাসপাতাল?(আমি)
আপু হাসপাতালের নাম বললো।
— আপু মিথিলার বিয়ে হইছে?ঠিক ঠাক মত?(আমি)
–হুম,,মিথিলা মনে হয় এতক্ষনে শশুড় বাড়িতে,,,আর তুমি বিয়েতে আসো নি কেন?(মাইশা আপু)
— পরে বলবো। দুলাভাইকে দেখতে জান,,বেশি কিছু হইছে কিনা জানাবেন?(আমি)
ফোনটা রেখে দেই,,,যাই হওক মিথিলার বিয়েটা ঠিকঠাক ভাবেই হয়ে গেছে। আর দুলাভাই মনে হয় তার পাপের শাস্তি পাচ্ছে।জানি না কি হইছে,,,তবে আল্লাহর দুনিয়ার আল্লাহ কাউকে ছেড়ে দেয় না ছাড় দেয়।একদিন না একদিন তার পাপের শাস্তি পাবেই।হয়ত মিথিলাকে আল্লাহ মাফ করে দিয়েছে।হতে পারে মিথিলাকে তার দুলাভাই কোনোভাবে ব্লাকমেইল করছে।আবার তাদের অবৈধ সম্পর্ক থাকতে পারে।হয়ত সেই পাপের শাস্তি কিছু সময় পর হবে।,,,
এখন রাত প্রায় দশ টা,,খাওয়া দাওয়া শেষ করে টিভি দেখছিলাম।,,,
আংকেল আন্টি রিমি আর আমার পিচ্ছি সালাটা।
— আসিফ সুনলাম,তোমার চাচাতো বোন মিথিলার বিয়ে ঠিক হইছে?(আন্টি)
— জ্বি আন্টি বিয়েটা ঠিক ঠাক মতই হইছে।কিন্তু মিথিলার দুলাভাই এক্সিডেন্ট করছে।কি অবস্থা বলতে পারছি না?(আমি)
— অহ আচ্ছা,,,মাইশা আপুর কাছে ফোন দেও?(রিমি)
— হুম ভাবছি?(আমি)
— মিথিলার দুলাভাই তার পাপের শাস্তি পাচ্ছে আসিফ।তোমাকে বাসা থেকে বের করেছিল না।দেখবে মানুষ গুলোর কি হাল হয়।(আংকেল)
— জ্বী আংকেল।(আমি)
টিভি দেখা শেষ করে আংকেল আন্টির সাথে গল্প করে ঘুমুতে চলে আসলাম।বিছানায় বসে,সুমি আপুকে ফোন দিলাম।
–হ্যালো,,আসিফ কেমন আছিস ভাই?(সুমি আপুত কান্না করার কথা কিন্তু হেসে হেসে বলছে কেন)
— ভালো,,,সুনলাম দুলাভাই এক্সিডেন্ট করেছে।কি অবস্থা এখন? (আমি)
— অবস্থা আর কি হবে,,সব তার পাপের শাস্তি।(আপু)
— কি হয়েছে?(আমি)
— পা দুটু ভেংগে গেছে।ডাক্তার বলেছে একেবারে অকেজো।আর কোনো দিন হাটতে পারবে না।(সুমি আপু)
— আপু তোমার ত কান্না করার কথা কিন্তু তুমি এভাবে হেসে হেসে বলছো কেন?(আমি অবাক হয়ে)
–ভাই কান্নার কথা বলছিস?এই লোকটা মরে গেলেও যে আমার চোখে পানি আসবে না।এই লোকটা আমার আদরের ভাইকে বাসা ছাড়া করছে। আর ভাই দেখিস মিথিলাও তার পাপের শাস্তি পাবে?(সুমি আপু হঠাৎ ই কেদে দিল)
— কেদো না আপু,,,আমি সবাইকে মাফ করে দিয়েছি,আমি চাই আল্লাহ মাফ করুক।(আমি)
–নারে ভাই আল্লাহ মাফ করুক এই দোয়া করিস না।শুধু মাত্র বাচ্চাটার জন্য সত্যটা জেনেও সংসার করছি।নয়ত সত্যটা জানার সাথে সাথে এই সংসার ত্যাগ করতাম।তুই জানিস সবটা জানার পর মিথিলা আর তার দুলাভাইয়ের সাথে ভালোভাবে কথা ও বলি নাই।(সুমি আপু কান্না করছিল)
— আপু,,,কান্না থামাও প্লিজ,,, তোমার কান্না আমি সহ্য করতে পারি না।।(আমি)
— তাই ত মিথ্যা অপবাদ নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলি। তবে তুই চিন্তা করিস না,,,আমি তোকে আবার বাসায় ফিরিয়ে আনবো,,।সবাই সত্যটা জানবে?(সুমি আপু)
— আচ্ছা আপু রাখি, ঘুমাবো?(আমি)
ফোন রেখে,,,মাইশা আপুর কাছে ফোন দিলাম।নয়ত আপু ভাববে এমন বিপদে আমি খবর নেই নাই।পরে রাগ করে বসবে।
— আপু দুলাভাইয়ের কি অবস্থা এখন?(আমি)
— ভাইয়া আর হাটতে পারবে না,,,পায়ের উপর দিয়ে বাসের চাকা গেছে?(মাইশা আপু কান্না করছিল)
— কি করবেন আপু সব নিয়তির খেলা,,,এখন আপনি কোথায়।।(আমি)
— হাসপাতলেই আছি,,,তুমি ত আমার ভাইকে দেখতেও আসলা না?(মাইশা আপু)
— আপু এত রাতে কিভাবে যেতাম বলো?কাল সকালে আসবো।(আমি)
ভেবেছি একটু দেখেই আসি,,আমাকে দেখলে হয়ত পাপের আগুনটা আরো জ্বলবে।
— আচ্ছা,,
ফোন রেখে সুয়ে আছি,,,রিমি পাশ থেকে বলে উঠলো,,
— তুমি কি সত্যিই যাবে?(রিমি)
— হুম,,সবার জন্য না হওক মাইশা আপুর জন্য যেতে হবে।(আমি)
— আমি কি যাবো?(রিমি)
— কোনো দরকার নেই,,,,আমি শুধু আপুর সাথে দেখা করেই চলে আসবো।(আমি)
— আচ্ছা ঠিক আছে,,,.(রিমি)
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে হাসপাতলে ছুটলাম।
হাসপাতলে গিয়ে দেখি,,আশা,আশার আব্বু,আম্মু,মাইশা আপু,আর আশার ভাইয়া,,দাড়িয়ে আছে,,।সুমি আপুকেও দেখতে পাচ্ছি মনে হয় শাশুড়ির সাথে দাড়িয়ে আছে।
আমাকে দেখে আশা এগিয়ে এসে?
— কিরে তুই এখানে কেন এসেছিস,,,?(আশা)
— মাইশা আপুর জন্য আসতে হলো?(ফিসফিস করে বললাম)
— ভালো করেছিস।তোদের বাসা থেকেও কেউ আসে নি?(আশা)
— তাই নাকি তাহলে ত সমস্যাই নাই।(আমি)
আশার আব্বু আম্মু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।আমি আমার দুলাভাইকে দেখতে আসলাম।যে কিনা আমার জিবন ধংশ করতে চেয়েছিল?
মাইশা আপুর কাছে গিয়ে খুজ খবর নিলাম।সুমি আপু ত আমাকে দেখে কান্নার অবস্থা।এটা যে স্বামীর পা হারা কান্না না ভালোভাবেই বুজতে পারছি।সুমি আপু বাসায় কাউকে জানায় নি।।তাই কেউ আসে নি।
সুনেছি পা গুলো কেটে ফেলতে হবে,,তার পর প্লাস্টিকের পা লাগাবে।আজ নাকি অপেরেশন করানো হবে।
আমি বিদায় নিয়ে,,,বাসায় চলে আসবো।কেউ আটকাতে চায় নি।শুধু মাইশা আপু বলেছিল এখনি চলে যাবো নাকি।।চলে আশার সময় আশাও আমার সাথে চলে এসেছে।
রিকশায় বসে বাসার দিকে যাচ্ছি।
— আসিফ দেখছো আল্লাহ কাউকে ছাড় দেয় না।তুমি হয়ত নিজে কিছু করতে চাও নি।কিন্তু আল্লাহ ঠিকই তার পাপের শাস্তি দিয়েছে।(আশা)
— হুম,,হয়ত?(আমি)
— হয়তো না এটাই ঠিক,,,,(আশা)
— হুম,,,রিদয় ভাইয়ার সাথে তোমার কথা হয়? (আমি)
— হুম,,,,আসলেই রিদয় আমাকে অনেক ভালোবাসে।(আশা)
— দেশে আসবে কবে কিছু বলেছে?(আমি)
— না,,,এখনি আসবে বলে মনে হয়না।বলেছে বাসায় বিয়ের কথা চললে নাকি জানাতে।তখনি আসবে আর আমাকে নিয়ে যাবে?(আশা হাস্যজ্জল মুখ নিয়ে)
— তাহলে ত অনেক ভালো?(আমি)
— হুম।(আশা)
— কিন্তু আশা তুমি জানো,,,আগে ত ভাবতাম আংকেল আন্টি আমাকে আশ্রয় দিয়েছে।আর আমার যাওয়ার কোনো জায়গা ও নাই।কিন্তু এখন না এখানে থাকতে ভালোলাগে না।মনে হয় যেন ঘরজামাই থাকছি।(আমি)
— ঝহ এই ব্যাপার,,,তাহলে রিমিকে নিয়ে একটা ফ্লাট নিয়ে থাকো?(আশা কি না ভেবেই বললো)
— কিন্তু এত টাকা পাবো কোথায়?রিমির আব্বুর অফিসে চাকরি করে পাই ৩০০০০ টাকা।আমার পড়ালেখা,,ফ্লাট ভাড়া,গ্যাসের বিল,বিদ্যুৎ বিল,, খাওয়া।সব কিছু মিলে কি সম্ভব বলো?(আমি)
— এটা ত ভেবে দেখি নাই।(আশা)
— আচ্ছা পরে কথা হবে বাসায় চলে আসছি।(আমি)
— আচ্ছা।(আশা)
আশাকে নামিয়ে দিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
ফ্রেশ হয়ে রুমে এসেই দেখি রিমির হাতে সরবতের গ্লাস
— কি ব্যাপার এত জলদি চলে আসলে?( রিমি সরবতের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে)
— হুম শুধু মাইশা আপুর সাথে দেখা করতে গেছিলাম।(গ্লাস টা হাতে নিয়ে)
— ওহ আচ্ছা,,(রিমি)
সরবত খেয়ে শরিরের যেন সকল ক্লান্তি দুর হয়ে গেলো।রিমির হাতের লেবুর সরবতের তুলনা হয়না।আর কিছু পারুক আর না পারুক এটা রিমি ভালোভাবেই পারে।
— রিমি তোমার সাথে একটা কথা ছিল?(আমি)
— কি কথা বলো।(রিমি)
— রিমি আমার এখানে থাকতে ভালোলাগছে না।নিজেকে ঘরজামাই মনে হচ্ছে?(আমি)
— কে শিখিয়ে দিয়েছে এইসব?(রিমি)
— পাঠক, পাঠিকা।(ফিসফিস করে)
— কি বললে?(রিমি)
— না মানে,,বিয়ের পর ত মেয়েরা শশুড় বাড়ি যায়।আর উল্টো আমি শশুড় বাড়িতে আছি?(আমি)
— হুম আমার শশুরবাড়ি থাকলে আমিও যেতাম।আর তুমি এখানে থাকবে না কোথায় থাকবে?(রিমি)
— চলো না,,,আমরা কোথায় ভারা থাকি?(আমি)
— কি বলছো তুমি?কতটাকা বেতন পাও মাত্র ৩০০০০ টাকা।এই টাকা দিয়ে কি চলা সম্ভব?(রিমি)
— একটু কষ্ট হবে কিন্তু আমরা ঠিক পারবো?(আমি)
— এখন এইসব চিন্তা বাদ দেও।যখন বড় চাকরি করবা আর আমিও আমার সপ্ন পুরন করব।তখন না হয় অন্য কোথাও যাবো।এখন একটু কষ্ট করে থেক যাও সোনা।(রিমি)
কথাটা কিন্তু ঠিক,,এখানে থেকে যেই সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি।নিজেরা চলতে গেলে হয়ত খেয়ে বাচতেই সমস্যায় পড়বো।আর রিমির লেখাপড়ায় অনেক খরচ।আমার টা আমি চাকরির টাকাতে চালিয়ে নিচ্ছি।কিন্তু রিমির টা?তবে বেতন একটু বাড়াতে পারলে যাওয়া যায়।রিমি না হয় আংকেলের টাকায় লেখাপড়া করলো আমি নিজের টাকায়।নিজের ভাড়া বাড়িতে।
— আচ্ছা ঠিক আছে।(আমি)
— খেতে আসো,,,?(রিমি)
(খাবার সময় হয়ে গেছে)
— হুম আসছি,,,(আমি)
খাবার খেয়ে রুমে এসে সুয়ে আছি।কাল থেকে ভার্সিটি যাবো।অনেকদিন যাওয়া হয়নি।,,,সারাদিন দিন নানা চিন্তা,,আর রাতে রিমির সাথে রোমান্স করেই কেটে যায়। সকালে ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটিতে গেলাম। রিমি আমার সাথেই। ভার্সিটিতে এসে রিমির ইচ্ছা ছাড়া কোনো কিছুই করতে পারছি না।
ফ্রেন্ডসার্কেল ও বাধা,,,রাহুল,ফাহিম,ইভা,আশা।এছাড়া অন্য কারো সাথে কথা বলা নিষেধ।
ক্যাম্পাসে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছিলাম। পেছন থেকে কে যেন ডাক দিলো।
— এটা আসিফ না?(মেয়ে কন্ঠ)সামনে এসে,,
— হায় আসিফ,,কেমন আছো।(মেয়েটি)
এদিক দিয়ে ত রিমির চোখে আগুন।সাথেই বসা ছিল রিমি।
চলবে……….
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com