তীব্র ভালোবাসার অনুভূতি । পর্ব - ১১
মন খারাপ না আম্মু, আমার খুব কানে ব্যাথা করছে সকাল থেকে…।” মিম কি ভেবে ঝটপট চেক করে দেখলো জাবিনের কানে কি হয়েছে? ইমান জরুরী কিছু ফাইল ঘটাতে ঘাটতে ইফতি সাহেবের ঘরে ঢুকে দেখে,
– “মিম ছোটো একটা তেলাপোকা বের করছে জাবিনের কানের ভেতর থেকে…।” ইফতি সাহেব তা দেখে হতবাক আজিন কিছু বলতে চাইলে ইমান ওর মুখ টা চেপে ধরলো সাথে সাথে।
আজিন বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পারলো,মিম নিজেকে স্বাভাবিক রেখে ছেলে কে জিজ্ঞেস করলো,
– “বাবা তোমার কি এখনো কানে ব্যাথা করছে…?” জাবিন বলল,
– “অল্প…।” মিম বললো,
– “বাবা…! এখন আর অপেক্ষা করা যাবে না তোমাকে হাসপাতালে যেতে হবে…।
জাবিন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
.
– “কেন আম্মু…?” মিম বললো,
– “তোমার কানে বোধহয় কোনো সমস্যা হয়েছে?” ইফতি সাহেব দ্রুত নিচ থেকে উপরে ছুটে এসে মিম কে বলল,
– “দাদুভাই কে নিচে নিয়ে যাও মা…! ইমান ঘাড়ি বার করেছে।” ইমান ও মিমের মতো নিজেকে সামলে রেখে ছিল,ইতি আজিনের কাছ থেকে সব শুনে একটু ঘাবড়ে গেছে।” এদিকে,হাসপাতালে আসার পর…। ডক্টর জাবিনের কান চেক করে ছোটো তেলাপোকার মাথা টা বের করে এনে ইমান এবং মিম কে বললেন,
– “ভয়ের কোনো কারণ নেই পোকা টা সরষে তেলের কারণে আগেই মরে গেছে।” জাবিন চমকে গিয়ে মিম কে জিজ্ঞেস করলো,
– “আমার কানে তেলাপোকার বাচ্চা ঢুকে ছিল আম্মু..! আর সেটাই কামড়াচ্ছিলো আমাকে…?” ডক্টর আদিত্য রায় চৌধুরী হাসতে হাসতে বললেন,
– “হ্যাঁ…! আব্বু,তবে ভয়ের কোনো কারণ নেই তোমার আম্মু সেটা কে বের করে এনেছে।”
– “তাহলে এখনো আমার কান জ্বালা করছে কেন আঙ্কেল..?”
– “আসলে বাবা,ওটা ঔষধের কারণে হচ্ছে। কেননা,তেলাপোকার কামড়ে তোমার কানের মধ্যে অল্প ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে…। তবে তোমাকে ঔষধ দিয়ে দিয়েছি আমি,,,খুব তাড়াতাড়ি তুমি সুস্থ হয়ে উঠবে…।” জাবিন মা কে জড়িয়ে ধরে বললো,
.
– “মা আমি খুব ভালোবাসি তোমাকে…।” মিম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ছেলের কপালে চুমু খেয়ে বলল,
– “জানি বাবা…। তবে তোমার এখন কেমন লাগছে?” জাবিন বলল,
– “খুব ভলো মা…এখন তাড়াতাড়ি বাসায় চলো,এতক্ষণে বোধহয় ছোটো ভাইয়া মন খারাপ করতে শুরু করেছে?” আজিন কে চুপচাপ দেখে,ইফতি সাহেব নাতি কে কোলে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
– “দাদুভাই তোমার কি হয়েছে?” আজিন ফোঁপাতে ফোপাঁতে বললো,
– “আমার আম্মু মণি কে তাড়াতাড়ি ফোন করো দাদু ভাই,আম্মু কে বাসায় ফিরে আসতে এতো দেরি করছে?।” ইমা এসে আজিন কে কোলে তুলে নিয়ে বললো,
– “আম্মু এই মাএ ফোন করেছিলো বাবা..! সে ভাইয়া কে সাথে নিয়ে তোমার ড্যাডের সাথে এখুনি বাসায় ফিরে আসছে।” ইতি চিন্তিত হয়ে মেয়ে কে বললেন,
– “জাবিন ঠিক আছে…? ডক্টর কি বলছে?” ইমা বললো,
– “ভয়ের কোনো কারণ নেই মা জাবিন ঠিক আছে…।” মিম এবং ইমানের বাসায় আসতে একটু দেরি হওয়ার আজিন কাঁদতে কাঁদতে সবাই কে অস্থির করে তুলেছে।
মিম ট্রাফিক জ্যামের অবস্থা দেখে ইমান কে বললো,
– “জনাব,আমরা কি আজ রাতের মধ্যে ফিরতে পারবো বাড়িতে…?” মিম কে দুশ্চিন্তা করতে দেখে,ইমান বলল,
– “চলো তাহলে হেঁটে হেঁটে না হয় ট্রাফিক জ্যাম টা পার হই? ওসমান না হয়,ট্রাফিক জ্যাম শেষে গাড়ির টা নিয়ে ফিরবে বাড়িতে…?” মিম বললো,
– “হ্যাঁ,তাই করে ফেলা যাক…? কে জানে আমার আজিন টা বাসায় কি করছে? আমি তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে নিজের ফোন টা বাসায় ফেলে এসেছি আর এদিকে আপনার ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেছে।’ ওসমান বললো,
– “ভাবি আমার ফোন ডা ও লগে নাই,জলে পুইরা নষ্ট হইয়া গেছে।” মিম কোনো কথা বাড়ালো না,গাড়ি থেকে নামার আগে জাবিন কে চাদর দিয়ে ঢেকে দিলো ভালো ভাবে…। ইমান ছেলে কে কোলে তুলে নিলো,মিমের ডান হাত ধরে জ্যামের মধ্যে খুব সাবধানে হাঁটতে লাগলো সে…। প্রায় আধ ঘন্টার পথ পারি দিয়ে অবশেষে তারা ট্রাফিক জ্যাম থেকে বেড়িয়ে একটা রিকশায় উঠেছে…। বাসায় পৌঁছাতে পোঁছাতে প্রায় রাত দশ টা আর ততক্ষণে জাবিন মায়ের কোলে আর আজিন কাঁদতে কাঁদতে ইফতি সাহেবের কাছে ঘুমিয়ে পরেছে।ইতি দুশ্চিন্তা করতে করতে ইফতি সাহেব কে বললেন,
.
– “ছেলে টা কে ফোনে পাচ্ছি না আর কে জানে মেয়ের ফোন টা কোথায় রেখেছে?” প্রমী ছুটে এসে বলল,
– “মা ভাবির ফোন বাসায়…!” কথা টা শুনেই ইতির মাথায় হাত চলে গেছে,তখন ফুলমতি নিচ থেকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বললেন,
– “আরে আম্মেরা কোম্মে সবাই? আব্বা জান আম্মারে লগে লইয়া আইছে…।” দ্রুত সবাই ওপর থেকে নিচে চলো এলো দেখলো দু’জ কেই বেশ ক্লান্ত লাগছে…।
জাবিন মায়ের গলা জড়িয়ে তার কোলের মধ্যেই ঘুম,প্রমী মিম কে বলল,
– “ভাবি,আজিন তোমার জন্য কাঁদতে কাঁদতে না খেয়েই ঘুমিয়ে গেছে।” মিম জাবিন কে কোলে নিয়েই আজিনের কাছে এলো,তারপর বুকে জড়িয়ে আদর করতে লাগলো তাকে…। আজিন মায়ের স্পর্শ পেয়ে নড়েচড়ে উঠলো,চোখ মেলে কতক্ষণ চেয়ে রইলো তার দিকে।
তারপর ছোটো ছোটো দু’হাত দিয়ে মায়ের গাল স্পর্শ করলো,মিম তাকে কাতুকুতু দিতে লাগলো সাথে সাথে…। আজিন উচ্চশব্দে হাসতে লাগলো,ওর হাসির শব্দ শুনে ইফতি সাহেব বললেন,
– “এবার মনে হচ্ছে বাড়িতে আবার ও প্রাণ ফিরে এসেছে…।” মিম দু’ই ছেলে কে খাইয়ে দিলো,আজিন অভিমান করে বললো,
– “আম্মু মণি আমি রাগ করেছি আপনার সাথে…।” মিম আড়চোখে একবার আজিন কে দেখে জাবিন কে বলল,
– “তোমার ভাইয়া যখন আমার সাথে রাগ করেছে,তখন নিশ্চয়ই আমার আনা চকলেট’স গুলো খাবে না সে…?” আজিন ভ্রু কুঁচকে বললো,
.
– “কে বলেছে খাবো না…? আমি রাগ করিনি চকলেট’স এর সাথে…।” আজিন চুপচাপ চকলেট’গুলো খেয়ে নিলো,জাবিন কে জিজ্ঞেস করলো্,
– “ভাইয়া,তোমার কানের ব্যাথা কমেছে…?” জাবিন বললো,
– “হুমম! তবে তুমি প্লিজ রাগ করে থেকো না মায়ের সাথে…।” আজিন রাগ করে রাতে মায়ের পাশে শুলো না,সে বরং শুয়ে পরলো বাবার পাশে…। মিম আজিন কে বেশ অনেকক্ষণ ধরে বোঝানোর চেষ্টা করলো কিন্তু সে বলল,
– “আমি রাগ করেছি তোমার সাথে।” ইমান ছেলের মন ভালো করতে রূপ কথার রাজকন্যের গল্প শোনাচ্ছে কিন্তু সে মাঝেমধ্যেই বিছানা ছেড়ে উঠে মা কে দেখছে আর সেটা মিম খেয়াল করে জাবিন কে বলল,
– “বাবা! একটু ঘুমের ভান করো আর তোমার বাবা কে ও বলেছি ঘুমের ভান করতে…।” ছেলেকে গল্প শোনাতে শোনাতে ইমান ঘুমের ভান করলো আর মিম চোখ বুঝে ফেললো সাথে সাথে…। কিছুক্ষণ পর,আজিন বাবার কোলের মধ্যে থেকে বেড়িয়ে এসে শুয়ে পরলো মায়ের পাশে।মায়ের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে সে হঠাৎ শক্ত করে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
– “সোনা আম্মু…! আমি রাগ করিনি তোমার সাথে।আমি কি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারি? ছোটো বাবুতো পারে না তার আম্মু কে ছেড়ে থাকতে…।” মিম হঠাৎ ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
– “এতো রাগ আমার বাবা টার? এর জন্যেই সোনা ছেলেটা রাগ করেছিল আমার সাথে?” ইমান হাসতে হাসতে ছেলেকে চুমু খেয়ে বলল,
.
– “কখনো ড্যাডের জন্য কাঁদতে দেখিনি তোমাকে…।” আজিন বলল,
– “তুমি সারাদিন কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকো,কাঁদলেও তুমি বাড়িতে থেকে যাবে না কি আমার কাছে?” ছেলের অবাক করা কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো,জাবিন ভাই কে বললো,
– “তুমি শুধুশুধুই রাগ করেছ ছোটো ভাইয়া আম্মুর সাথে…। আম্মুর কোনো দোষ নেই আমাদের গাড়ি ট্রাফিক জ্যামে ফেঁসে গেছে…।” আজিন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “ড্যাড! ট্রাফিক জ্যাম হয় কি ভাবে…?” ইমান ছেলেকে বললো,
– “অনেক অনেক গাড়ির মাঝে আটকে যাওয়া কে ট্রাফিক জ্যাম বলে আর আমরা এতো বাজে ভাবে ফেঁসে গিয়েছিলাম যে,
আমাদের গাড়ি একচুল ও নড়ছিল না নিজের জায়গায় থেকে আর তা দেখে তোমার আম্মু তোমাকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা করছিল এবং তাই পায়ে হেঁটে আমরা ট্রাফিক জ্যাম পার হয়ে রিকশায় এসেছি বাড়িতে…।” আজিন মায়ের দুই গালে চুমু খেয়ে বলল,
– “ক্ষমা করে দেন আম্মু মণি আমার ভুল হয়ে গেছে।” মিম সাইড টেবিলের ওপরে রাখা দুধের গ্লাস টা আজিনের হাতে দিয়ে বললো,
– “তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও বাবা নয়তো ঠান্ডা হয়ে যাবে।” আজিন কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দুধের গ্লাস টা খালি করে ফেললো,মিম তারপর ঘুম পারিয়ে দিলো ছেলে টা কে…। সকালে জাবিন স্কুলে যাওয়ার পূর্বে মা কে অনেক কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
.
– “মা,আমার কানে তেলাপোকা ঢোকার কথা টা তুমি বলোনি কেন আমাকে…?” মিম ছেলের স্কুল ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বলল,
– “যদি তুমি ভয় পেতে…? তখন আমি কি করে সামলাতাম তোমাকে?” জাবিন সাথে সাথেই ছুটে এসে মা কে জড়িয়ে ধরে বলল,
– “ইউ আর দ্যা বেস্ট মাম্মা ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড,আই লাভ ইউ মা…! খুব খুব ভালোবাসি তোমাকে।” মিম দুই ছেলেকে আদর করে গাড়িতে তুলে দিলো,ইমান ওদের স্কুলে ছেড়ে এসে অফিসে না গিয়ে চলে এলো বাড়িতে।ইমানের মুড অফ দেখে মিম এগিয়ে এসে ওর কপালে হাত ছুঁইয়ে বললো,
– “কি হয়েছে?” ইমান সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল,
– “জানি না,সকাল থেকে কেমন যেন একটা অস্থির অস্থির লাগছে…।” মিম ইমানের হাত ধরে ওকে ঘরে নিয়ে এলো,তারপর লেবু সরবত করে এনে খাইয়ে দিলো ওকে…। ইমান হঠাৎ মিমের হাত চেপে ধরে বললো,
– “একটু বসবেন আমার পাশে?” মিম মৃদু হেসে ইমানের পাশে বসলো,ইমান হঠাৎ খুব শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে লাগলো ওর ঠোঁটে…। মিম লজ্জা পেয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ইমান কে বলল,
– “কি করেছে আপনি? ঘরের দরজা খোলা আছে।” ইমান উঠে দরজা লাগিয়ে আবারও মিম কে জড়িয়ে ধরলো,মিম বাঁধা দেয়নি তাকে,সে ইমানের ব্লেজারের কলার আঁকড়ে ধরে তার চোখেচোখ রেখে তাকিয়ে রইলো,ইমান আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে লাগলো তাকে।” এদিকে মেয়েকে মিথিলা ব্যাগপএ গোছাতে দেখে বললেন,
– “কি রে তুই এখন কোথায় যাচ্ছিস এখান থেকে…?” রিকিয়া বললো,
.
– “কোথায় আবার? বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি এখান থেকে…! না হলে,ওই মেয়ে আবার মামা কে হাত করে নেবে,তারপর আমার যে টুকু আছে সব যাবে…।” মিথিলা মেয়ের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললেন,
– “এই না হলে আমার মেয়ে…? তুই যা মা,আমি সবসময় ছায়ার মতো আছি তোর পাশে…।” রিকিয়া মায়ের শশুর বাড়ি থেকে নিজের শশুর বাড়িতে চলে এলো কিন্তু কেউ কোনো কথা বললো না তার সাথে…।
সে যদিও এসব গায়ে মাখলো না তবে ইমানের ঘরের সামনে থেকে যাওয়ার সময় দেখতে পেলো ইমান মিমের শাড়ির আঁচল ঠিক করে দিচ্ছে।মিমের চুল ভেজা ইমান তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছছে দেখে প্রমী এসে বললো,
– “কি ব্যাপার? এতক্ষণ পর তোমাদের ঘুম ভেঙেছে…?” মিম লজ্জায় মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলো না,ইমান বলল,
– “আসলে সে সব কিছুই না,আমার শরীর টা সকাল থেকে খুব খারাপ লাগছে।” রিকিয়া হাবাগোবার মতো মুখ করে ইমানের দিকে তাকিয়ে রইলো,ইমা বলল,
– “ওহ তাই? তাহলো আমকেই বলতে পারতে? যদি ও আমি এখনো সার্টিফাইড ডক্টর হয়ে উঠতে পারিনি তবুও বুঝতে পারতাম তোমার কি প্রবলেম হয়েছে?” ইমান ইমা কথা শুনে হাসতে লাগলো,মিম কে বললো,
– “চলো গিয়ে ছেলেদের নিয়ে আসি স্কুল থেকে…?” মিম মৃদু হেসে বলল,
– “হুমম! চলুন,আপনি গাড়ি বার করুন আমি গিয়ে বিদায় নিয়ে আসি বাবা মায়ের কাছ থেকে…।” মিম এসে ইফতি সাহেবের ঘরের দরজা নক করে বললো,
– “বাবা আসবো?” ইফতি সাহেব বই উল্টে রেখে জিজ্ঞেস করলেন,
– “এখন কি খাওয়াতে এসেছ আমাকে…?” মিম চুপচাপ একটা বোয়াম ইফতি সাহেবের হাতে দিয়ে বলল,
– “বাবা ড্রাই ফ্রুটস এনেছি…! আপনার তো ড্রাই ফ্রুটস খেতে ভালো লাগে।” ইফতি সাহেব মৃদু হেসে বললেন,
– “আমার ব্যাপারে সব জানো দেখছি…। যাগগে কোথাও বেরুচ্ছ না কি আমার ছেলের সাথে…?” মিম বলল,
– “জ্বি,বাবা তার জন্যেই অনুমতি নিতে এলাম আপনার নাতিদের স্কুলে যাচ্ছি আপনার ছেলের সাথে…।” ইমান ব্যস্ত ব্যস্ত এসে মিম কে বললো,
.
– “কি গো চলো…? গাড়ি কখন বের করা হয়ে গেছে। বাবা আসি…।”
– “হুমম,সাবধানে যেও আর খেয়াল রেখো সবার দিকে…।” ইমান মিম কে নিয়ে বের হতেই রিকিয়া এসে ইফতি সাহেবের ঘরে ঢুকলো কিন্তু তিনি কোনো কথা বললেন না ভাগ্নীর সাথে।রিকিয়া কোনো প্রসঙ্গ না পেয়ে মিমের বদনাম করতে শুরু করলো ইফতি সাহেব বলেই ফেললো,
– “চুপ করো তুমি…! আমার চুল এমনি এমনি পাকেনি ঠিক আছে..?” ইফতি সাহেবের কাছে ঝাড়ি খেয়ে রিকিয়া ঘরের বাহিরে এসে শাশুড়ি কে বললো,
– “মা আপনি অন্তত বোঝার চেষ্টা করুণ আমাকে…?” ইতি বললেন,
– “আমি তোমাকে বুঝিনা তা না মা,তবে আমার ইমানের বিয়ে টা হয়ে গেছে মিমের সাথে…। তুমি বরং আমাদের পছন্দ মতো বা নিজের পছন্দ মতো কোনো ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করে নাও মা…। তোমার ও যে একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ আছে।”
– “কিন্তু মা..?”
– “কোনো কিন্তু না,তুমি আমার কথা টা শোনো ভালো ভাবে..। তুমি যতই ইমান আর মিমের মাঝখানে এসে ঝামেলা করার চেষ্টা করো না কেন ইমান কখনো ছাড়বে না ওকে…। ও বরং মিম কে আরো আগলে রাখতে চাইবে ও চাইবে তুমি চলে যাও এই বাড়ি থেকে…।
.
তবে আমি চাই না,কেন জানো? কারণ আমি নিজের মেয়ের মতো তোমাকে মানুষ করেছি ছোটোবেলা থেকে,ছেলের বউ করে এনে ছিলাম যাতে তুমি সারাজীবন থেকে যাও আমাদের কাছে।কিন্তু এখন? এখন আমার ইমান মিম কে ভালোবাসে,তুমি বিয়েশাদি করে স্যাটেল হয়ে যাও মা।তুমি কেন বুঝতে পারছ না? কেন বুঝতে পারছনা তুমি শুধু কষ্ট পাবে আর ভেতর থেকে জ্বলে যাবে ওদের দু’জন কে এক সাথে দেখে,
আর আমার ইমান কখনো তোমাকে ভালোবাসতে পারবে না,কারণ ও কখনো সেই নজরে কখনোই দেখেনি তোমাকে।তবে হ্যাঁ,আমি কিন্তু তোমার ওপর খুব রাগ,কারণ তুমি ফালুদার বাটি টা ফেলে দিয়েছিলে আমার স্বামীর হাত থেকে…।” রিকিয়া কেঁদে ফেললো,ইতি বললো,
“আমার বলা কথা গুলো তুমি একটু ভেবে দেখো ঠান্ডা মাথায় বসে,নিজের ক্ষতি নিজে করো না রিকিয়া,,,
সন্তানের মতো আমি তোমায় মানুষ করেছি একদম ছোটোবেলা থেকে…।”
– “তাহলে মা…! আমার কষ্ট গুলো কি কিছুতেই পরছে না তোমার চোখে?”
.
– “পরছে বলেই বলছি আর মা হিসেবে শাসন করছি তোমাকে…। তুমি প্লিজ আর এমন কিছু করো না,যা তে আমার তোমার বাবা কে বলতে হয়,তোমাকে এই বাড়ি থেকে বের দিতে।” শাশুড়ি মায়ের কথা শুনে রিকিয়া ঝটপট নিজের ঘরে চলে আসে আর এদিকে স্কুল ছুটির পর বাবা মা কে স্কুলের গেটে দেখে দু’জনেই খুব খুশি হয়ে গেছে।জাবিন এবং আজিন ছুটে এসে হঠাৎ বাবা-মা দু’জন কেই জড়িয়ে ধরলো পেছন থেকে…। মিম ইমান ছেলেদের খুব আদর করে দিলো,তারপর ঝটপট দু’জন কে নিয়ে চলে এলো বাড়িতে,দু’জন চটপট লক্ষী ছেলের মতো গোসল করে নিলো মিম গা মুছিয়ে জামাকাপড় পরিয়ে দিলো জাবিন এবং আজিন কে…। আজিন হঠাৎ মিমের কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো,
– “আম্মু মণি তোমার কাঁধ লাল কেন? কি হয়েছে?” মিম যত সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখলো,ইমান এসে স্যাভলন ক্রিম মিমের কাঁধে লাগিয়ে দিতে দিতে বললো,
– “ও কিছু না বাবা…! এমনিই কাঁধে আম্মু ব্যাথা পেয়েছে।” জাবিন ফুঁ দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো,
– “খুব ব্যাথা আম্মু?” মিম হাসতে হাসতে ছেলেদের কপালে চুমু খেয়ে বলল,
– “না বাবা…! একদম ঠিক আছে,তোমার বাবা ঔষধ লাগিয়ে দিয়েছে তো…? এবার খেতে চলো,আমার ব্যাথা কাল সকালের মধ্যেই সেড়ে যাবে।”
.
চলবে,,,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com