Breaking News

গল্পঃ ভাঙ্গা হৃদয় । পর্ব -০২


হেই ইডিয়ট! আমার স্ত্রী মিহিকার কোমরে হাত দিয়ে  অসভ্যতা করে এখন ঘুমানার অভিনয় করা হচ্ছে
ছোটলোকের বাচ্চা? মুহূর্তেই চোখ জোড়া আমার বড় বড় তে রুপ নিতে
বাধ্য হয়। হতভম্ব হয়ে আমি বললাম, আশ্চর্য আমি কেনো এরূপ জঘন্য আচরণ আপনার স্ত্রীর সাথে
করতে যাবো? আপনি ভুল করছেন? প্লিজ কলারটা ছাড়ুন অনেকেই দেখছে? জবাবে তিনি হুংকার দিয়ে
বললেন,শাট-আপ! এভাবে ক্রমাগত মিথ্যের আশ্রয়ে কখনো পার পাবি না তুই? জানিস আমি কে? তোকে
তো আমি পুলিশ এ দিবো! বাসে উপস্থিত থাকা প্রায় সবাই আমার দিকে ঘৃণিত চোখের পলকে তাকিয়ে ছিলো। আটাশ জন যাত্রীই আমাকে ভুল বুঝে রাগান্বিত হয়ে নষ্টার ছেলে বলে কটু কথা শুনাচ্ছিলো। অনেকেই মার-ধর করার জন্য
সামনে এগিয়ে আসলে বাসের সুপার ভাইজারের উচ্চ কড়া কন্ঠ স্বরে পরক্ষণেই থেমে যায় তারা সবাই।
আমার পাশের বসিটেই বসে থাকা আঠারো বয়সী ছেলেটা মুখ চেপে আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি
করে হাসছিলো তখন। জানি না কেনো? হয়তো সেই এমন কাজ করেছে?নতুবা অন্য কেউ কিন্তু কি
করেই বা বিশ্বাস করাবো তাদের আমি যে এমন কিছুই করিনি।অতএব বাসের সুপারভাইজার যখন আমায়
বলল, আপনি এক্ষুনি বাস থেকে নেমে যান?আপনার মতো নিম্ন স্তরের মন মানসিকতার মানুষ কে আর
দৃষ্টির সন্নিকটে দেখতে পারছি না।সত্যি বলতে ভুলটা আমারি ছিলো ভালো মানুষ ভেবে এভাবে কম টাকায়
আপনাকে টিকিট ক্রয়ের সুযোগ করে দিয়ে। পরক্ষণেই যখন আমি অসহায়ত্ব ভঙ্গিতে বললাম,
প্লিজ এমন করবেন না? এতো রাতে আমি একা কি করবো,কোথায় যাবো?এমনকি আমার কাছে বাড়ি
ফেরার মতো যথেষ্ট টাকাও অবশিষ্ট নেই । আমি নিরুপায়।এভাবে বাস থেকে নামিয়ে দিবেন না আমায়
কিন্তু কারো মনেই স্থান লাভ করলো না আমার এরূপ আকুতি মিনতি গুলো।
.
তাই তো আমায় নষ্টার ছেলে হিসেবে সম্মোধন করে বাস থেকে এই গভীর রাত্রে
গুট গুটে অন্ধকার রাস্তার মাঝে এভাবে নির্দ্বিধায় নামিয়ে দেওয়া হলো।জানিনা এখন আমি কি ভাবে,কি
করবো? কেই বা আমায় এই করুণ পরিস্থিতিতে সাহায্য করবে?শীতের রাত চার দিকে কুয়াশা,থরথর
করে কাপছি আমি। বুকের ভেতরটা তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে অজানা সব তীব্র কষ্টের জলন্ত দহনে।
নিস্তব্ধতা বিরাজমান চারদিক।মনে হচ্ছে কেউ আমায় ডাকছে তাহার নিকট!কিন্তু কে?মনের সব ব্যথা ধীরে
ধীরে বাড়ছে, মাথা ঝিমঝিমও করছে বটে!হঠাৎই
চোখের সম্মুখে একটা যাত্রীবাহী বাস এসে থামলো।
দ্রুতই বাস থেকে একজন হেল্পার নেমে বেশ কিছুটা
চিৎকার করেই বলল,জ্ঞান শূন্য মানুষ নাকী আপনি?
একটু হলেই তো বাসের নিচে চাপা পড়ে নৃশংস ভাবে
মারা যেতেন?
.
উত্তরে নরম কন্ঠে নিজের অসহায়ত্বের কথা উল্লেখ
করলে,বোধ হয় বেশ মায়াই হয়েছিলো ওনার!তাই তো
আমায় এতো বড় সাহায্য করলেন তিনি। পরের দিন
সকালে গ্রামের মাটিতে পা রাখা মাত্রই ছুটে চলে
আসলাম নিজের বাড়ির নিকট।কত-শত লোকের ভীর
ঠেলে সাদা কাফনে মোড়ানো নিজের বোনের এরূপ
লাশ দেখে মুহূর্তেই ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমি।বেশ
খানিক নিজেকে সামলে নিয়ে যখন বাবাকে বললাম,
বাবা পুলিশকে ইনফর্ম করেছো? উত্তরে নিজেকে
সামলাতে না পেরে বেশ কেঁদে কেঁদেই বাবা বলল,
-হ্যা করেছি তবে মূল আসামি তোর বোনের স্বামী এখনও পলাতক!
কথা গুলো বলার পরপরই বাবা তীব্র যন্ত্রণায় কান্নার
বুক ফাটা আর্তনাদে আরও ভেঙে পড়েন।
.
মায়ের দিকে ও খুব একটা তাকানো যাচ্ছে না।কি করুণ দশাই না
তাদের।অতঃপর বোনের দাফন-কাফনের তিন দিন
পর মন মরা হয়ে যখন অশ্রুতে নয়ন ভিজিয়ে খোলা
জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছিলাম
ঠিক তখনই, মিথ্যা অভিযোগ ও যক্তির সাহায্যে যেই
অফিস থেকে আমায় গাঢ় ধাক্কা,
অপমান করে বের করে দেওয়া হয়েছিলো, মূলত সেখান থেকেই ফোন
করে আমায় জানিয়ে দেওয়া হয়,ঘুষের দশ লক্ষ টাকা
আমার এক্যাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তার
সাথে চাকরিটাও আবার নির্দ্বিধায় আমি করতে
পারবো।তবুও এরুপ আনন্দের কথার স্বর শুনেও
কেনো যেন আমি তেমন একটা খুশি হতে পারছি না।
বোনের খুব ইচ্ছে ছিলো গলায় দামি এক সোনার হার
পড়ার।মূলত সেদিন বোনকে কথাও দিয়ে ছিলাম বটে
কিন্তু কি পোড়া-কপাল আমার!পারলাম না বোনের
সেই আবদার ইচ্ছে গুলো ভাই হয়ে পূরণ করতে।
.
এক সপ্তাহ পর মন না চাইলেও নিজেকে বহু ধরনের
বাধার সম্মুখীন করিয়ে সংযোত রেখে আবার ঢাকায়
চলে আসলাম।কারণ এই মূহুর্তে আমার টাকার
বিশেষ প্রয়োজন।তার জন্য চাকরিতে আবার জয়েন
হওয়া আমার জন্য খুবই জরুরী।দশ লক্ষ টাকা সেই
কবেই বাবার হাতে তুলে দিয়েছি।মায়ের ক্যন্সার ধরা
পড়েছে অপারেশনের জন্য আরও টাকা চাই।অনেক
টাকার প্রয়োজন তার জন্য হলেও আমাকে অতি
শিগগিরই চাকরিতে জয়েন হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অতএব সকাল বেলা বাবার সাথে কথা বলার
পরপরই অফিসের পথে গমন আরম্ভ সবে মাত্র শুরুই
করে ছিলাম কিন্তু বিধাতা হয়তো চেয়েছিলেন অন্য
কিছু।রাস্তার একপাশ দিয়ে গুটি গুটি পায়ে হেটে
যাচ্ছিলাম হঠাৎ গাড়ির জানালা দিয়ে আনুমানিক দুই
বছরের এক বাচ্চা ছেলে কিছু একটা ফেলেছিলো যা
তীব্র বাতাসের স্রোতে মুহূর্তেই আমার চোখের প্রায়
গহীনে প্রবেশ করা মাত্রই ব্যথার আর্তনাদে নিমিষেই
লুটিয়ে পড়লাম মাটিতে।জানি না কি এমন ছিলো?
.
কেনোএতো যন্ত্রণা হচ্ছে ডান চোখে!পারছি না তো
আর সয্য করতে?কেনো এমন হয়?রক্ত-ক্ষরণও হচ্ছে
বটে।সঠিক জানিনা বা বলতেও পারবো না কখন
আমি যন্ত্রণায় কাতর হয়ে জ্ঞান হীন হয়ে পড়ে ছিলাম
বা আজ কদিন পরই সেন্স ফিরে পেয়েছি তবে
ব্যন্টিজ দিয়ে নিখুত ভাবে চোখ বাঁধা অবস্থায় স্বয়ং
একজন ডাক্তারের , কন্ঠ স্বর শুনে বুঝলাম, ডান চোখ
দিয়ে দেখার সক্ষমতা আমার মধ্যে আর নেই!অর্থাৎ
এক চোখের দৃষ্টিহীন অন্ধ আমি।অতএব দুঃখ লুকিয়ে
বেশ খানিক হেসে উল্লাসিত কন্ঠেই ডাক্তার কে ইঙ্গিত
করে আমি বললাম, এর চেয়ে হয়তো আমার মৃত্যু
অধিকই ভালো ছিলো?
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com