গল্পঃ সুখ নেই কপালে । পর্ব- ০১
ভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত ফাংশনে যখন আচমকা রোহিকা ম্যাডাম চিৎকার দিয়ে আমায় উদ্দেশ্য করে বললেন, তুই ছাত্র নামের কলঙ্ক!কি করে মাঝ বয়সী একজন শিক্ষিকার বুক থেকে ইচ্ছে কৃত ভাবে শাড়ীর আঁচল টেনে মাটিতে ফেলে দিতে পারলি??তোর একটুও কি লজ্জা বোধ করলো না,বিবেকেও বাঁধলো না, মায়ের বয়সী মহিলার সাথে এরূপ জঘন্য অসভ্যতামি করতে ? তখন,গ্রাম থেকে আগত ফাংশনে থাকা আমার গরীব বাবা-মা উভয়ই থমকে গিয়েছিলেন।হতভম্ব হয়ে সবার মতো তারাও আমার দিকে বেশ খানিকটা অগ্নিমূর্তির ন্যায়ে,অশ্রুতে দু-নয়ন ভিজিয়ে তাকিয়ে রয়েছিলেন।
.
জানি না আজ আমার কন্ঠ স্বর কোন বনেতে গিয়ে হারালো।এতটাই অবাক হয়েছি,যা আমার কন্ঠ স্বরকে দমিয়ে রাখতে ক্ষণে ক্ষণে সাহায্য করছে। কখনোই করিনি আশা,এমনটাও কি হওয়া সম্ভব? ভার্সিটির প্রিয় একজন শিক্ষিকা এভাবে লোক সম্মুখে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলবে!সত্যি বলতে এমনটা আমার কল্পণারও শত দূরে অবস্থান করছিলো। অবশ্য ওনার মতো দুশ্চরিত্রা মহিলার কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কোনো কিছুই আশা করা যায় না। হয়তো এটাই শুধু আমার জীবনের সবচেয়ে মস্ত বড় অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।ভুল বসত আমি ওনাকে এই ভার্সিটির স্বনাম-ধন্য প্রিন্সিপাল স্যার অর্থাৎ আমার বড় লোক চাচার সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে নষ্টামি করতে
দেখে ফেলেছিলাম।যা হয়তো তারা উপলব্ধি বা আঁচ করতে পেরেছিলেন।যে, কেউ তাদের এরূপ নিষিদ্ধ, পাপিষ্ঠ কু-কর্ম কাজ গুলো দেখে ফেলেছে।হয়তো বা এটাও তাদের চিহ্নিত করতে বেশ একটা সমেস্যার সুত্র পাত হয়নি,যে আমিই সেই।
.
একের পর এক ভালো রেজাল্ট পাওয়াকে কেন্দ্র করে আজ মেধাবী সব স্টুডেন্টদের পুরস্কৃত করার জন্য মূলত এই বিশেষ আয়োজন।যাদের মধ্যে আমিও এক জন ছিলাম বটে। কিন্তু কি দূর্ভাগ্য আমার!পুরস্কৃত হওয়ার বদলে পেলাম শুধুই লাঞ্চনা,অপমান আর অপমান।সেদিন রৌহিকা ম্যাডামের কথা গুলোকে সবাই সত্যি বলে সম্বোধন করেছিলেন।কারণ তিনি এই ভার্সিটির সবার প্রিয় একজন শিক্ষিকা।অতঃপর চাচাও ওনাকে সাপোর্ট করেছিলেন।যা অবশ্য স্বাভাবিক পর্যায়ের মধ্যেই পরে।ফলেই আমাকে চির জীবনের জন্য এই ভার্সিটির সীমানা ত্যাগ করতে হয়। এমনকি পুলিশের হাতেও হস্তান্তরিত করা হয় আমায়।
.
যার ফল সরূপ এক সপ্তাহ ব্যথার তীব্র যন্ত্রণায় কাতর হতে হয়।যদিও বা পুলিশের প্রহারে।অতএব চার মাস, চৌদ্দ দিনের জন্য জেল হয় আমার। ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনায় বেশ একটা ভালোই
ছিলাম আমি।যেই সুবাদে চাচি আমাকে শহরে নিয়ে এসেছিলেন।নিজেদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে ছিলেন। যদিও বা চাচা এতে বেশ নারজই ছিলেন বটে কারণ তার সাথে আমাদের সম্পর্ক তেমন একটা ভালো ছিলো বা যাচ্ছিলো না। তবে চাচি ছিলেন খুবই মিশুক এবং ভালো মনের মানুষ।সেই তখন থেকেই চাচাকে আমার বেশ একটা অস্বাভাবিকই মনে হতো যেদিন প্রথম ভার্সিটিতে তালাক-প্রাপ্তা সুন্দরী রৌহিকা ম্যাডামের আগমন ঘটেছিলো।অল্প সময়ের মধ্যেই ভার্সিটির সকল ছাত্র-ছাত্রীর মন কে তিনি জয় করে নিয়ে ছিলেন।সকলের কাছেই একজন প্রিয় শিক্ষিকা হয়ে উঠে ছিলেন।এমনকি আমারও।কিন্তু কখনো ভাবিওনি তার ভেতরটা এতটাই কুৎসিত,বিকৃত,জঘন্য ।যদি ওই দিন তাদের এরূপ জঘন্য দৃশ্য আমি নিজ চেখের দৃষ্টিতে না দেখতে পেতাম হয়তো সত্যিই দিনের পর দিন আমি মানুষ চিনতে অবশ্যই বেশ একটা ভুলই করে যেতাম।সরল মনের মানুষ,চাচি হয়তো জানে না, চাচা তাকে অজান্তেই বিভিন্ন ভাবে দিনের পর দিন,
.
পর নারীতে আসক্ত হয়ে,এই বয়সেও এভাবে কৌশলে
ঠকাচ্ছেন অনাবরত।খুব আশা পোষণ করে ছিলাম
এই ক্ষুদ্র মনে।একদিন অনেক দূর এগোবো।মা-বাবার
মুখ উজ্জ্বল করবো।তাদের সমস্ত দুঃখ কষ্টের ইতি
টেনে সুখের বন্যা আমি বইয়ে দিবো,যেথা নহি থাকিবে
কোনো দুঃখ-কষ্টের আলোচ্ছানি।কিন্তু তা আর হয়ে
উঠলো না।আমার জন্যই মা-বাবার দেখা সব স্বপ্নই
ভাঙাচুরাই পরিণত হয়েছে।সেদিন বাবা-মা উভয়কেই
অপমানিত হতে হয়েছিলো,এক প্রকার সবার সম্মুখেই
।প্রশ্ন তুলে ছিলেন তারা,কি করে আমার মতো এরূপ
নিচু মন-মানসিকতার অধিকারী এক পাপিষ্ঠ ছেলেকে
জন্ম দেন!সেদিন খুব কষ্ট হয়ে ছিলো আমার।
যন্ত্রণার তীব্র ব্যথায় মৃত্যুকে ডেকে ছিলাম বহুবার।
.
মন সেদিন বারবার সম্মতি প্রধান করে ছিলো আমায়,তাদের সব
কু-কর্মের কথা গুলো সবার সামনে উল্লেখ করতে
কিন্তু আমি পারিনি বলতে।কারণ আমি ভালো করেই
জানতাম আমার এরূপ কথা গুলো কেউই তখন আর
বিশ্বাস যোগ্য হিসেবে গ্রহন করতেন না।যেখানে যদিও
বা হয় কোনো রকম প্রুফ অথবা প্রমান ছাড়া!তবুও
চিৎকার করে,তাদের বলেছিলাম ক্ষণে ক্ষণে বিভিন্ন
কায়দা অবলম্বন করে বুঝাচ্ছিলামও বটে।
-আমি তার সাথে এরূপ কোনোই অসভ্যতামি করিনি।
তিনি মিথ্যে বলছেন। আমাকে অযথাই ফাঁসানোর
নিখুঁত চেষ্ঠা করছেন কিন্তু অভাগার পোড়া কপালে
হয়তো এটাই লিখনে ছিলো,কেউই আর করলো না সেদিন আমায় বিশ্বাস।
অবিশ্বাসের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত
করেছিলেন সবাই।সেদিন ভার্সিটির প্রথম বর্ষের মেয়ে
টাও আমায় কোষে থাপ্পর মে’রে বলেছিলো,আমারি
বোঝার উচিত ছিলো, তোর মতো গরীব ছেলেদের
চরিত্র,মন কখনো পবিত্র অথবা ভালো হতে পারে না।
তোকে একজন সৎ মানুষ ভেবে মনের কোণে জায়গা
দিয়ে,ভালোবেসে আমি সত্যিই অনেক বোকা একটা
মানুষের পরিচয় দিয়েছি।
.
শেষ অবধি যখন ভালোবাসার মানুষটিও আমায়
এরূপ কথা শুনিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো তখন আমার
সত্যিই বেশ একটা মরে যেতেই ইচ্ছে করেছিলো বটে।
লোক লজ্জায় মাথা উঁচু করে অপরাধ না করা
সত্যেও মা-বাবার চোখে চোখ রেখে আমি মোটেও
কথা বলতে পারিনি তখন।সেদিন ফাংশনে থাকা
সকল ছাত্র-ছাত্রী এবং তাদের প্যারেন্টসরাও আমায়,
চারিত্রহীন লম্পট,বাজে ছেলে হিসেবে আখ্যাহিত করে
কটু কথা শুনিয়ে ছিলো।জানি না কেনো সর্বদা দোষী
রাই মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ায় ডানা মেলে,
সতেজ শ্বাস টেনে বেঁচে রয় নির্দ্বিধায়।কেনো প্রতিবার শুধুই
নির্দোষীরাই বন্দী হয় অন্ধকার কোনো কারাগারে।
আজ প্রায়ই পনেরো দিন হতে চললো।কিন্তু বাবা কিং
বা মা কেউই আর আসেনি আমার সাথে দেখা বা
সাক্ষাৎ করতে।হয়তো তারা সত্যিই অনেক আঘাত
পেয়েছেন।মনে ভিষণ কষ্ট, রাগ,ঘৃণা পোষন করেছেন।
তাই বোধ হয় আসছে না।কিন্তু আমি কি করেই বা
বলবো,বুঝাবো, প্রমান করবো আমি যে সম্পূর্ণই
নির্দোষ।গভীর কোনো ষড়যন্ত্রের মূখ্যম শিকার মাত্র।
তাছাড়া আর কিছুই নয়।তার পরের দিন সকালে চাচি
এসে যখন মুখ ঘুরিয়ে প্রচন্ড রাগান্বিত কন্ঠ স্বরে
বললেন,
.
-তোর কাছ থেকে এটা মোটেও আশা করিনি আমি!
ছিহ শাহরিয়ার?তুই সত্যিই এতো খারাপ,জঘন্য সেটা
আমার ভাবলেও চোখের কোণে অশ্রুর সূত্রপাত ঘটে।
আমি নিঃসন্তান।তোকে এই আমার,নিজের সন্তানের
মতো এতটা স্নেহ মমতা দিয়ে যত্নে রেখে,সত্যি বলছি
আমার ভিষণ ভুল হয়েছিলো।
মায়ের মতো চাচির মুখে এরূপ গলার কন্ঠ স্বর শুনে
তখন আমার হৃদয় যেন ফেটে যাচ্ছিলো।অন্তরটা
কেঁদে উঠছিলো প্রতিনিয়ত।কিন্তু তখনও আমি নিশ্চুপ
হয়েই দাঁড়িয়ে রয়েছিলাম।কিন্তু বেশিক্ষণ আর নিশ্চুপ
হয়ে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি চাচির সম্মুখে।
বাধ্য হয়েই যখন চাচিকে,চাচার সব কু-কির্তীর কথা
গুলে উল্লেখ করে বললাম,চাইলে আমি ভার্সিটিতে
তখন এসব গলা ফাটিয়ে বলতে পারতাম কিন্তু বলিনি,
শুধু চাচার মান-সম্মানের দিকে তাকিয়ে।কারণ যতই
হোক সে তো আমার বাবার রক্তের ভাই।পরিশেষে
জবাবে চাচিও আমায় ধিক্কার জানিয়ে ঠাঠিয়ে,কয়েক
টা থাপ্পর বসিয়ে দিয়ে,অবিশ্বাস করে চলে গেলেন।
এবং এটাও বেশ একটা সোজাসাপটা স্পষ্ট কন্ঠ স্বরেই
আমায় বললেন,জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর যেন
আমি আর তাদের বাড়ির দরজার চৌকাঠে না যাই।
এমনকি মা-বাবার কাছেও যেতে কড়া কন্ঠে বারন
করে দিয়েছেন চাচি কারণ তারাও আমার এরূপ
পাপিষ্ঠ মূখচ্ছবি আর দেখতে চান না।অতঃপর আজ
দীর্ঘ চার মাস চৌদ্দ দিন পর জেলে থেকে বের হওয়ার
পরপরই অনত্র কোনো শহরে চলে এসেছি।অবশ্য
আসার,
.
পূর্বে একবার মা-বাবার কাছেও গিয়ে ছিলাম। তবে
মুখ গোমড়া করেই আমাকে আবার ফিরতে হয়।যদিও
বা সত্যি তো এটাই এখনো আমার প্রতি তাদের রাগ
আর ঘৃণা সেই রয়েই গিয়েছে।তবে চাচির জন্য খুবই
বেশ একটা কষ্টই হচ্ছে আমার।না জানি চাচি কবেই
বা চাচার এরূপ পশু রুপ-খানা সম্বন্ধে জানবেন বা
নিজ চোখের দৃষ্টিতে দেখে বিশ্বাস করতে বাধ্য হবেন।
টিউশনির জন্য ছাত্রীর বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছি।
অবশ্য এখানে আমাকে টিউশনির সাহায্যেই নিজের
ক্ষুদার্ত পেট চালাতে হয় কোনো রকম।তবে আজ
আমার ছাত্রী রুহির মা জোর করে কিছু টাকা হাতে
ধরিয়ে দিয়ে যখন দূর করে তাড়িয়ে দিলেন আমায়
তখন অবাক,আশ্চর্য না হয়ে আর পারলাম না।কারণ
তার মতে আমি পড়ানোর ছলে ওনার একমাত্র
আদরের মেয়ে রুহির দিকে খারাপ নজরে তাকিয়ে
থাকি।যেটা তিনি বেশ কিছুদিন যাবৎই লক্ষ করেছেন।
.
যাতে আমার ছাত্রী কিন্তু তার মায়ের বিপক্ষে বেশ
একটা প্রতিবাদের সৃষ্টি করেছিলো কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি।
জানি না সঠিক,রুহির মায়ের হঠাৎ এরূপ
আচরণের প্রধান কারণ কি? তবে যার দশ দিন পরই
আমার ছাত্রী রুহিকে অপ্রকাশ্যে মুখে কাপড় বেঁধে
দলবদ্ধ ভাবে ধর্ষণ করা হয়।খবরটা আমার কানে
আসতে বেশ একটা দেরী হলেও আমাকে গ্রেফতার
করতে কিন্তু পুলিশের একমুহূর্তও দেরী হয়নি।কারণ
সরূপ,রুহির মাকে যখন পুলিশ জিজ্ঞেসা করেছিলেন,
কাউকে সন্দেহ হয় কি না?
‘তখন কিন্তু রুহির মা নির্দ্বিধায়ই উত্তরে পুলিশ কে
আমার নামই সর্বপ্রথম বলেছেন!
.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com