গল্পঃ ভাঙ্গা হৃদয় । পর্ব ০৮ এবং শেষ
কেনো যেন আমার মনে হলো এটাই তোহফার শেষ কথা! এরপর আমি আর তোহফাকে দেখতে পারবো না! তার সাথে আর কখনো কথাও বলতে পারবো না। তবুও মুখে হাসি রেখে জবাবে আমি বললাম,
-বিশ্বাস বা ভরসা রাখুন কিছুই হবে না আপনার। কিন্তু তাতক্ষণিক,
জানিনা কেনো আমার ভাঙা মন বারবার আমায় বলল,আমি তোহফাকে বাঁচার মিথ্যাই আশ্বাস দিচ্ছি।
যেখানে সত্যি বলতে তোহফার বাঁচার তেমন একটা চান্সই নেই।সারা রাত আমার নির্ঘুমে কেটেছে।কোনো
ক্রমেই মোটেও ঘুমাতে পারিনি আমি,অজনা সব হৃদয় বিদারক ভয়ে। না জানি কখন কি হঠাৎ আচমকা ঘটে
যায়। পরের দিন সকালে আমার আশংকায়ই সত্যিতে রুপ নিয়ে ছিলো। রাত ফুরিয়ে দিনের আলো ফুটতেই
তোহফার অবস্থা বেশ করুণ দশায় পরিণত হয়। যার ফল সরূপ ইমিডিয়েটলি এম্বুলেন্সে তোহফাকে দ্রুতই
হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।আইসিইউতে রয়েছে সে। বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে আমার!অল্প দিন হলেও
ভাঙা হৃদয়ে বেশ-খানিকটা জায়গা বিস্তার করে নিয়ে ছিলো সে। সইতে পারছি না আমি তার এরূপ করুণ
যন্ত্রণা দ্বায়ক মুহূর্ত গুলো! জীবনে কি এমন জঘন্য পাপ করেছিলাম আমি!কেনো এমন হয়!কেনো একটু
সুখের পরিবর্তে অজস্র দুঃখ পেতে হয় আমায়!সত্যিই কি তাই,অভাগা যেদিকে যায়, সাগর যে শুকিয়ে যায়।
আমি আদৌ কোনো সুখের সন্ধান পাবো না? অন্তীম শ্বাস অবধি কি আমায় এভাবেই চিরতাকাল কষ্টের
জলন্ত দহনে পুড়ে,ডুকরে ডুকরে মৃত্যু কে সদরে বরণ করে নিতে হবে?
.
মায়ের এরূপ কন্ডিশন দেখে, এক প্রকার কান্না করতে করতেই, কোলে থাকা অবস্থায় ঘুমিয়ে রয়েছে, ছোট্ট
সিহান। আহ কি এমন হৃদয় বিদারক অবস্থা আমার। কি ভাবে আর সইবো ক্ষণে ক্ষণে এভাবে! মৃত্যু কেনো
করছে না স্বরণ আমায়! আমি তো চাই খুব, নিজেকে মৃত্যুর নিকটে সঁপে দিতে। পারছি না আর এরূপ তীব্র
কষ্টের দহনে প্রতিনিয়ত পুড়তে,বারবার হৃদয় বিদারক করুণ ঘটনায় এভাবে হৃদয় ভাঙার যন্ত্রণায় আহত
হতে। অতএব, রাত তিন ঘটিকায় তোহফার একবার জ্ঞান ফিরে ছিলো বটে!কিন্তু পরমুহূর্তেই আবার সেন্স
লেস হয়ে পড়ে। অবস্থা বেশ গুরুতর। কিন্তু পরের দিন যখন বাসার কাজের মেয়েটা হাসপাতালে খাবার দিতে
এসে তোহফার বাবাকে খানিকটা কড়া কন্ঠ স্বর প্রয়োগ করেই বলল, -স্যার আজ দীর্ঘ দু-তিন বছর যাবৎ আমি আপনাদের বাসায় কাজ করছি কিন্তু আজ থেকে আমি আর কাজ করতে পারবো না তার প্রধান কারণ সরূপ,
আপনার মেয়ে জামাইয়ের স্বভাব চরিত্র কিন্তু মোটেও, একদমই ভালো না। খাবার নিয়ে ক্যাবিনের ভেতরে
প্রবেশ করার সময় আচমকা আপনার মেয়ের জামাই আমার গায়ের ওন্না টেনে বুকে হাত দেওয়ার চেষ্টা
করেছেন!হয়তো আপনি খেয়াল করেন নি কারণ নিজ নাতি কে সামলাতে আপনি বেশ একটা বিভোরই
ছিলেন।এমনকি ইশারা,ইঙ্গিতেও তিনি আমায় অবৈধ সম্পর্ক গড়ার বেশ কয়েকবার তাগিদও জানিয়েছেন
বটে! কিন্তু তাও আপনার চোখের দৃষ্টির সন্নিকটে পড়লো না তাই বাধ্য হয়ে আমাকেই এভাবে বলতে
হচ্ছে কারণ আপনি এটা বেশ ভালো করেই জানেন আমরা কাজের লোক হতে পারি স্যার কিন্তু অতিই
সহজে কোনো অন্যায় সয্য করে নিতে অব্যস্ত নই।
.
কাজের মেয়েটার এরূপ ঘৃণাপূর্ণ মুখের কন্ঠ স্বর শোনা মাত্রই, আমার শশুর সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার
চেয়েও অধিক স্তব্ধ, অবাক, আশ্চর্য, হতবাক হতভম্ব কিন্তু স্বয়ং আমিই হয়েছিলাম। হাত, পা থরথর করে বারবার কেঁপে উঠছিলো। মন বলছে আবার কোনো বিপদের নিকটবর্তী স্থানে প্রায়ই পৌছে গিয়েছি আমি।
ছেলেটা গত কাল থেকে না খেয়ে এক প্রকার খালি পেটেই ছিলো। আজ যখন মুখে কিছু তুলে দিতে
যাচ্ছিলাম,কি দুর্ভাগ্য আমার! তাও আর পারলাম না! হাত থেকে খাবারের বাঁটি-খানা মুহূর্তেই ফ্লোরে পড়ে
গিয়েছিলো তখন! কাজের মেয়েটির এরূপ মিথ্যা অভিযোগে। সেদিন আমার শশুর কাজের মেয়েটার
কথার গুরুত্ব একটু বেশিই দিয়েছিলেন। তাই তো তিনি কাজের মেয়ে রুহানার কান্না মিশ্রিত কন্ঠস্বর গুলো
সত্যি মনে করেছিলেন। তার বলা প্রতিটা কথা চোখ বন্ধ করে অনায়াসে বিশ্বাস করেছিলেন।হয়তো সত্যিই
দীর্ঘ দিন যাবৎ কাজ করে আসছে রুহানা!তাইতো আমার কোনো কথারই গুরুত্ব না দিয়ে অগ্রায্য করে
নিজের শশুর আমায় ভুল বুঝে ছিলেন। সজোরে থাপ্পর প্রধান করে বিশ্বাস ঘাতক, চরিত্রহীন বলে
সম্বোধন করে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন আমায়। আজ, আট দিন পর শশুরের নিষেধ আজ্ঞা থাকার
পরেও হাসপাতালের উদ্দেশ্যে গমন আরম্ভ কিছুক্ষণ আগেই মাত্র শুরু করে ছিলাম। অবশ্য এতোদিন
আমাকে কোনো এক হোটেল রুমেই থাকতে হয়েছে। যেহেতু ভাড়া বাসা সেই আগেই ছেড়ে দিয়েছি।তাই
সেখানে যাবার কোনো চান্সই ছিলোনা আমার নিকট। আর শশুর বাড়ির কথা নাই বা বললাম। কারণ
সেদিনই আমার শশুর আমাকে উচ্চ কন্ঠ স্বরে বলে দিয়েছিলেন, তিনি আর আমার মুখ কোনো ক্রমেই
দেখতে চান না! আমার পাপিষ্ঠ মুখ-খানি নিয়ে তার সম্মুখে দাঁড়াতে একদমই নিষিদ্ধ করেছেন। সেদিন খুব
কষ্ট পেয়েছিলাম, নিজেকে ছোট মনে হয়েছিলো।
কিন্তু সেদিন কিছুই করতে পারিনি আমি। নিরবে মাথা নত শিকার করা ছাড়া!কারণ আমার কাছে কোনো প্রমান
ছিলো না?যার জন্য সেদিন আমায় অকারণে অপমান অপদস্ত,লাঞ্চনার মূখ্যম শিকার হয়ে দাঁড়াতে হয়।আর
তাছাড়া কখনো, ভাবিও নি আমি, কল্পনায় আসক্তও হতে পারিনি কখনো, যে নিজের শশুর এভাবে অতি
সহজেই আমায় অবিশ্বাসের তালিকায় অন্তরভুক্ত করে ফেলবে।ভুল বুঝে কাজের মেয়েটা থেকে নির্গত
সমস্ত কন্ঠ-স্বর এভাবে মেনে নিবে।কিন্তু আজও তেমন কোনোই প্রমান নেই আমার সম্মুখে। তবুও বেহায়াদের
মতো হাসপাতালে উপস্থিত হওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছি। যদিও বা আমি সম্পূর্ণই নির্দোষ। এভাবে তো
আর মিথ্যা বদনাম চেপে থাকা যায় না।জানিনা সঠিক এতে তোহফার বাবার রিয়েক্ট কি হবে? এটাও জানিনা
কেনো কাজের মেয়েটা আমায় এরুপ অপবাদ দিলো! কি তার উদ্দেশ্য?নিশ্চয়ই রয়েছে? কারণ কোনো লক্ষ
উদ্দেশ্য না থাকলে তো আর কেউ এভাবে বিনাকারণে ফাঁসাবে না!তবে সেটা কি?কেনো করলো এমন!যেমন
করেই হোক সেটা তো আর অজানা রাখা যাবে না আমার নিকট! অতএব হাসপাতালে যাওয়ার পূর্বে
একটা সেতু অতিক্রম করে যেতে হয়। সেই সেতুই পার হওয়ার সময়,গাড়ির জানালা দিয়ে,সেই কাজের মেয়ে
টি কে কারও নিকটে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কথা বলতে দেখে, দ্রুততার সাথেই গাড়ি থেকে নেমে,তাদের খানিকটা
নিকটে যেতেই আমি পুরাপূর্ণ থমকে গিয়ে ছিলাম। অন্তঃসত্ত্বা বোনের প্রধান খুনি, যাকে এখন দুলাভাই
বলাটাও পাপ! স্বয়ং তার সাথেই কাজের মেয়েটার কিছু কথোপকথন কান নামক যন্ত্র দিয়ে স্পষ্ট শুনতে
পেয়ে। তারমানে এসব দুলাভাই করিয়েছেন? কিন্তু কেনো?এতে ঠিক কি লাভ তার! অতঃপর আরেকটু
তাদের নিকটে পা বাড়াতেই আমার মতোই তারা উভয় বেশ খানিক থমকে গিয়ে ছিলেন। যদিও বা আচমকা
এভাবে আমার মুখচ্ছবিকে চোখের সন্নিকটে দেখাকে কেন্দ্র করে। তাত্ক্ষণিক কোনো মতে এড়িয়ে কাজের
মেয়েটা এখান থেকে, ভয়ে ঘামার্থ শরীর নিয়ে দ্রুতই অগ্রসর হয়ে চলে যায়, চোখের দৃষ্টি কোণের বাহিরে।
পুলিশকে ফোন দেওয়ার আগেই পাপিষ্ঠ দুলাভাই আমার নিকট এসে খুব দ্রুতই কিছু কথা বলে,চোখের
শত আড়ালে হারিয়ে যায়। সে যখন অট্টহাসিতে মেতে উঠে বলেছিলো, মরবি শাহরিয়ার! তুইও চোখ বুঝবি!
অনন্ত কালের জন্য! এমন এক ধাঁধার বশীকরণের মূখ্যম শিকার তুই চাইলেও পারবি না, বেরিয়ে যেতে!
পারবি না শত চেষ্টায়ও পালাতে। তখন চাইলেও আমি তাকে আটকাতে পারতাম! নিজেই পুলিশের হাতে তুলে দিতে পারতাম কিন্তু আমি এমনটা করিনি, কারণ শিকার কে দৌড়িয়ে মৃত্যু কে চিনিয়ে দেওয়াটাই হলো সর্ব উত্তম।অতএব
আবার হাসপাতালের উদ্দেশ্য গমন আরম্ভ করলাম। না জানি আমি হীনা ছোট্ট সিহান এখন কিরূপ পজিশনে রয়েছে।সেদিন আমার জন্য সিহান প্রচুর কেঁদে ছিলো।ঠান্ডা ফ্লোরে গড়াগড়ি পর্যন্ত করছিলো।
না জানি ছেলেটা এখন কেমন আছে।
.
তোহফার কি জ্ঞান ফিরেছে আদৌও নাকি সে এখনো জ্ঞান ফিরে পেতে সক্ষম হয়নি! বর্তমান কি কন্ডিশনে রয়েছে সে? কিছুই তো জানিনা আমি! শিগগিরই জানতে হবে আমায়।কিন্তু এটা কখনো আমি বাস্তব,অবাস্তব,কল্পণা
বা অকল্পণায় ভাবতেও পারিনি,পরিশেষে হাসপাতালে এসে, ওয়াশ রুমে শশুর এর নৃশংস লাশ পাওয়ার
হৃদয় বিদারক কথা-খানি এভাবে এক নার্সয়ের কন্ঠ স্বর থেকে আমি শুনবো।এসেছি থেকেই নার্স এর
কোলে ছটফটিয়ে কাঁদছে ছোট্ট সিহান!থামার কথা হয়তো সে আজ ভুলেই গিয়েছে।শশুরের লাশ সেই
কবেই পোস্ট-মর্ডামের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিশাল আঁকারে প্রশ্ন দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে আমার
নিকট।কে?.কে?এরূপ নৃশংস মৃত্যু উপহার সরূপ প্রধান করলো আমার শশুরকে? জানিনা কি এক
গোলাক ধাঁধায় ফেঁসে গিয়েছি আমি তবে আমাকে তো সব ধাঁধার বিনাশ ঘটিয়ে বেরিয়ে তো আসতেই
হবে।অতএব সিহানকে আমার কোলে নিয়ে শান্ত করার প্রায় পাঁচ-ছয় মিনিট পর ডাক্তার এসে যখন
বলল, পেশেন্ট এর অবস্থা খুবই মর্মান্তিক!বাঁচার তেমন কোনোই আশংকা নেই।আমাদের দ্বারা আর
কিছুই সম্ভব নয়।তবে আপনি যত দ্রুত সম্ভব পেশেন্টকে ইমিডিয়েটলি আমেরিকার উন্নত
হাসপাতাল গুলোতে নিয়ে যেতে পারেন।যদি সেখানেও কোনো কিছু না হয় তাহলে She Is No More!
ডাক্তারের কথা-গুলো শুনা মাত্রই বুকের ভেতরটায় যন্ত্রণায় তীব্র আঁকারে ধরফর করতে আরম্ভ শুরু
করে দিলো।অতএব নিজেকে সংযোত রেখে, চোখের জল গুলো মুছে দ্রুতই তোহফাকে নিয়ে আমেরিকার
বিশিষ্ট এক সুনাম-ধন্য হাসপাতালে উপস্থিত হই। শেষ ধাপের চিকিৎসার জন্য।
.
অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার বেশ খানিক পূর্বে একবার জ্ঞান ফিরেও ছিলো তোহফার।যার খানিকটা
বাদেই জোরে শ্বাস টেনে দুঃখে জর্জরিত হয়ে দু-একটা কথা বলেই আবার সেন্স লেস হয়ে পড়ে। অবস্থা খুবই
করুণ গুরুতর।একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো উপায় নেই।জানিনা খোদা কি এমন রেখেছে আমার ভাগ্যে।
সিহানকা বুকে জড়িয়ে নিরবে চোখের অশ্রু অনাবরত মুছেই চলেছি আমি। ফুরাবার কোনো গন্ধই পাচ্ছিনা
আমি।অপারেশনের পর ডাক্তার খুবই গম্ভীর কন্ঠ স্বর প্রয়োগ করে আমাকে শান্তণা প্রধান করে,নির্দিষ্ট কিছু
সময়,বলে দিয়ে চলে যান।যেই সময় ফুরাবার পূর্বে জ্ঞান না ফিরে পেতে সক্ষম হলে, আর কখনোই সে
চোখ মেলে তাকাবে না!সতেজ শ্বাস টেনে রইবে না আর এ ভূবণে।যে ছেলে আজ পর্যন্ত ফজরের নামাজ
এর জন্য সঠিক সময়ে কোনো দিনি উঠতে পারেনি স্বয়ংসেই আজ উঠেছে মূখ্যম সময়ে,নামাজ আদায়ের
জন্য!তুলেছি হাত সৃষ্টি কর্তার নিকট,চোখের অশ্রুতে চাইছি পানা,ফিরিয়ে দেও আমার ভালোবাসা,সুখ
শান্তি!দিয়ো না আর কোনো আঘাত এই মোর দুঃখ ভরা কষ্টের দহনে জ্বলতে থাকা বুকে।তীব্র আঘাতে
আহত হতে হতে আমি যে আজ নিঃস্ব।কেনো এতো যন্ত্রণা,মর্মান্তিক ঘটনা আমার জীবনে।কেনো
এমন হয় ক্ষণে ক্ষণে আমার সাথেই!আমিতো মানুষ! নই কোনো পাথর! সকাল হতে না হতেই তোহফার নিকট এসে অপেক্ষার প্রহর গুনে বসে রয়েছি,কখন জ্ঞান ফিরবে তার। ডাক্তার তো সেই কখনই আশা ছেড়ে দিয়েছে।তবুও
নিরাশ হয়নি আমি।বিশ্বাস রেখেছি সৃষ্টি কর্তার নিকট। নিশ্চয়ই সে আজ আমায় হতাশ করবেন না।ঠিক তাই
হয়েছে,তিনি আমায় নিরাশ বা হতাশ কিছুই করেননি। যখন আমিও আশা ছেড়ে দিয়ে তোহফার এক হাত
ধরে ডুকরে ডুকরে কাঁদছিলাম তখন হঠাৎই চোখ মেলে শ্বাস টেনে উঠে তোহফা।খুশিতে আত্মহারা হয়ে
ঝাপটি মেরে সেদিন তোহফাকে প্রথম বারের জন্য জড়িয়ে ধরে ছিলাম আমি।সৃষ্টি কর্তার অসীম কৃপায়
তোহফা এখন সুস্থ তবে সম্পূর্ণ সুস্থটা লাভ করতে আরও বেশ খানিক সময় লাগতে পারে।অতঃপর
দেশে আসার নয় মাস পর ছেলেকে কোলে বসিয়ে খবরের কাগজ পড়ছিলাম সেই সময় তোহফা ছুটে
এসে পেছন থেকে এক প্রকার ঝাপটি মেরেই জড়িয়ে ধরে বলল,
-আজ আমি খুব খুশি শাহরিয়ার!
-কেনো?.
-তুমি কি জানো শাহরিয়ার!বাবাকে কারা ষড়যন্ত্র করে খুন করেছে?
-না তো!তুমি কি জানো?পুলিশ কি কিছু বলেছেন তোমায়?
-বাবাকে আমাদের অফিসের দ্বিতীয় ম্যানেজার অর্থাৎ
যেই ছেলেটাকে আমার অপমান ও কথার বৃত্তিতে বের
করে দেওয়া হয়েছে,সেই বাজে লোকটা এবং তার সহ
যোগী দূর সম্পর্কের আত্মীয় মিলে ষড়যন্ত্র করে নৃশংস
ভাবে হত্যা করেছে আমার বয়স্ক বাবাকে।আর এটাও
বলতে খুবই খারাপ লাগছে আমাদের বাসার কাজের
মেয়েটাও এতে জড়িত ছিলো।তবে মজার ব্যাপারটা
কি তুমি জানো?
-কি?
.
-তাদের তিন-জন কেই অজানা কেউ একজন নৃশংস মৃত্যু উপহার সরূপ প্রধান করেছেন।পুলিশ খানিক
সময় আগেই ফোন করে আমায় সব বলল। তোহফার কথার উত্তরে আমি বেশ একটা রহস্য মূলক
হাসি দিয়ে,হাস্য উজ্জ্বল কন্ঠে বিরবির করে বললাম, -বেশ তো!পাপের শাস্তি পেয়েছে তারা।তবে জানলে
অবাক হবে তুমি,তাদের একজন ছিলো আমার প্রাক্তন স্ত্রীর স্বামী এবং অপরজন আমার বোনের হত্যাকারি।
-এই বিরবির করে কি বললে তুমি? (ভ্রু কুঁচকে) -বলেছি,বেশ তো!তারা পাপের শাস্তিই পেয়েছে!
-হুম তা ঠিক বটে,তবে ওদের কেই বা মারলো?কেনো মারলো সেটাই তো প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ালো পুলিশের নিকট।
অতএব তোহফাকে আর কিছুই বলার সুযোগ না দিয়ে সিহানকে কোলে নিয়ে বেলকনিতে এসে আনমনেই
জানিনা কেনো আমি প্রচুর হাসলাম আজ।অতএব সময়ের,তীব্র গতিতে,আজ বহু দিন অতিবাহিত হলো।
তোহফা এখন প্রায়ই সম্পূর্ণই সুস্থ।তার সাথে অন্তঃসত্ত্বাও।পরিশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে
আজ সেই দিন এসেই গেলো,যে দিনে কারও এ ভূবণে আসার কথা ছিলো কিন্তু তা আর হয়ে উঠে নি।
তাকে নিয়ে দেখা মনের গহীনে পরম আদরে সাজানো সব স্বপ্নই ভেঙে গিয়েছে নিমিষেই।তার আগমন হলো
না আর এই ভূবণে।মূলত সেদিন আমার স্ত্রী তোহফার ডেলিভারির সময় ডাক্তার শুধু মাত্র তোহফাকেই
বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে!তার গর্ভে থাকা আমার সন্তান কে নয়।এতে আমি অতটাও ধাক্কা খাইনি বা থমকে
দাঁড়ায়নি।ব্যথার আর্তনাদে চেঁচিয়ে কান্নাও করিনি। শুধুই ধর্য ধারণ করে নিজের করুণ ভাগ্যকে সদরে
বরণ করে নিয়ে ছিলাম।কারণ তাছাড়া আর করার কিছুই নেই আমার নিকট।সেদিন কার পর থেকেই
তোহফা আমার বুকে মাথা রেখে বা জড়িয়ে ধরে প্রায়ই সময় কাঁদে।ঠিক আজও তার বেতিক্রম হলো
না।কপালে চুমু দিয়ে মুখে,হাসি রেখেই আজও সেই একই ভাবে আমি তোহফাকে শান্তনা প্রধান করছি।
<>সমাপ্ত<>
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com