তীব্র ভালোবাসার অনুভূতি । পর্ব - ০৪
সে কি আন্টির (মিম) মতো হবে?” ইমান অবাক চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো বড়
ছেলের চোখের দিকে,তারপর মৃদু হেসে বলল,
– “হুমম…! তবে তার আগে আমাকে একটু সময় দিতে হবে,না মানে
নতুন “মম” যেন আমার বাচ্চাদের আদর করে এবং যত্নে রাখে সেটাও
তো আমাকে নিশ্চিত করতে হবে।” তখন আজিন এবং জাবিন দু’জনেই ইমান কে জড়িয়ে
ধরলো,ইমান দুপুর দু’টোর দিকে বাচ্চাদের সাথে নিয়ে ফিরে এলো বাড়িতে..।
মিম হঠাৎ জাবিন এবং আজিনের গলায় আওয়াজ শুনতে পেয়ে ছুটে এসে ওদের
বুকে জড়িয়ে ধরলো,আজিন বলল,
– “জানো আজকে আমরা চিড়িয়াখানায় ঘুরতে গিয়ে ছিলাম ড্যাডের সাথে?
চিড়িয়াখানায় এতো বড় বড় সাপ,রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখে এসেছি আমার খুব ভালো লেগেছে।
মিম দু’জন কে আদর করতে করতে বললো,
– “তাই না কি..? আমাকে কেন নিয়ে গেলে না নিজেদের সাথে?” আজিন বললো,
– “জানতাম না তো…বাবা আজকে আমাদের চিড়িয়াখানা ঘুরতে নিয়ে যাবে।জানলে তোমাকেও ঘুরতে নিয়ে যেতাম আমাদের সাথে।” তারপর মিম জাবিন ও আজিন কে ঘরে নিয়ে এসে গোসল করিয়ে দিলো,এরপর ঔষধ লাগিয়ে দিলো জাবিনের পিঠে,জাবিন হঠাৎ করেই বললো,
– “কিছুদিন আগে মমের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম,মম মেরে ছিল আমাকে…।” মিম জাবিনের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল,
– “কেন বাবা? তুমি কি কোনো অন্যায় করেছিলে তার সাথে?” জাবিন মুখ কালো করে বলল,
– “আমাকে মম বুড়ো দাদু টা কে “বাবা” বলে ডাকতে বলেছিল,আমি কেন “বাবা” বলে ডাকতে যাবো ওই লোকটা কে…!
আমি জানি,উনি আমার বাবা না।…তবুও মম বারবার বাবা ডাকার জন্য জোরাজুরি করে ছিল আমাকে।”
– “তারপর…?”
– “আমি ওই বুড়ো লোক টা কে “বাবা” বলে ডাকিনি আর এর জন্য’ই মম বেত দিয়ে মেরেছিল আমাকে।” মিম আদর করে জাবিনের গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো,ইমান দরজায় দাঁড়িয়ে সবটা শুনে ফেলে ছিল কিছুক্ষণ আগে,
ওর খুব রাগ হচ্ছিল,ইচ্ছে করছিল এই মুহূর্তে পুলিশকে সবটা জানিয়ে আরিশফা কে চরম শাস্তি দিতে,তবুও কি ভেবে যেন নিজেকে সামলে রাখলো,মিম ওদের দু’জন কে ঘুম পারিয়ে চলে এলো নিচে।তখন ইমান মিম’কে উদ্দেশ্য করে বললো,
.
– “আমার সবচেয়ে বড় ভুল আমি বিশ্বাস করে বারবার বাচ্চা দু’টো কে পাঠিয়েছিলাম ওদের মায়ের কাছে।
কিন্তু ওই মহিলা একটা ডাইনি,ও আমার সাথে সাথে আমার নিষ্পাপ বাচ্চা দু’টোর জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে।” মিম মৃদু হেসে ইমান কে বলল,
– “একটু ধৈর্য্য ধরেন জনাব…! কারণ,কিছু কিছু পাপের বিচার এই দুনিয়ার জন্যই আল্লাহ তাআ’লা বরাদ্দ করেছে।” মিমের কথা শুনে ইমান হাসলো,বলল…,
– “আচ্ছা তাহলে দেখা যাবে…!” তখন প্রমী এবং ইমা এসে ইমান’কে বললো,
– “ভাইয়া…! কতদিন তোমার হাতের বার্বিকিউ খাই না।একদিন সময় পেলে করে খাওয়াবে?” ইমান হাসতে হাসতে বলল,
– “কাল আমি খুব ব্যস্ত,পরশুদিন ও খুব ব্যস্ত কিছুদিন পরে না হয় হবে?” সবাই সহমত হলো,ইমান বলল,
– “তবে আমাকে কেটেকুটে সবটা রেডি করে দিতে হবে,যেহেতু আমি একজন ব্যস্ত মানুষ,এতো ঝক্কি কি করে সামলাবো এক সাথে?” মিম সবার আলোচনা শুনে বলল,
– “ব্যাপার নাঃ…! আমরা আছি তো…? সমস্ত গোছগাছ হয়ে যাবে।” সকালে মিম দেখলো জাবিনের চশমা টা ড্রয়ারে রাখা নেই,চশমা ছাড়া ছেলে টা ঠিক মতো দেখতে পায় না খালি চোখে।মিম খেয়াল করে দেখলো,সকাল থেকে জাবিনের মন খারাপ,ও কিছু একটা লুকোনোর চেষ্টা করছে সবার কাছ থেকে।মিম তখন কি ভেবে জাবিন কে আড়ালে ডেকে জিজ্ঞেস করে,
.
– “ভাঙা চশমা কোথায় ফেলেছ বাবা…! দেখাও আমাকে?” জাবিন মন খারাপ করে বললো,
– “তুমি কি বলে দেবে আমার ড্যাডের কাছে?” মিম বললো,
– “না বাবা,বলবো কেন?” বরং ডক্টরের কাছে নিয়ে গিয়ে চোখের পাওয়ার চেক করে নতুন চশমা বানিয়ে এনে দেবো তোমাকে।” জাবিন কৌতুহলী হয়ে বললো,
– “সত্যি বলছ তুমি…! নতুন চশমা বানিয়ে এনে দেবে আমাকে?” মিম বলল,
– “হুমম…! বাবা,যাও তৈরি হয়ে এসো,বাবা অফিসের জন্য বেরুলেই আমরা সবাই বেরোবো ঠিক আছে?” তখন জাবিন মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো, জেইদা এসে মিম কে বলল,
– “তুমি একটু স্টাডি রুমে যাও মিম! ইমান স্যার ডেকে পাঠিয়েছেন তোমাকে।” মিম স্টাডি রুমে এসে ইমান কে জিজ্ঞেস করলো,
– “স্যার! আপনি কি ডেকে পাঠিয়ে ছিলেন আমাকে?” ইমান মৃদু হেসে বলল,
– “হুমম…! বসুন,কিছু কথা আছে আপনার সাথে।” মিম চেয়ার টেনে ইমানের পাশে বসলো,ইমান একটা এগ্রিমেন্ট পেপার এগিয়ে দিলো মিমের হাতে,মিম সেটা খুলে দেখলো,সেখানে ওর মাসিক বেতন এবং কাজ সমূহ উল্লেখ করা আছে।তবে ও কিছু বলার আগেই ইমান বললো,
– “কোনো সমস্যা হলে বলুন! প্রবলেম নেই,বেতন চাইলে বাড়িয়ে দেওয়া যাবে।” মিম চমকে উঠে ইমান কে প্রশ্ন করে বসলো,
.
– “না মানে,এতো বেতন দিয়ে কি হবে?” ইট’স ফোর্টি থাউজেন্ট টাকা? জনাব, আপনার কি মাথা ঠিক আছে?” ইমান হাসতে হাসতে বলল,
– “জ্বি,তবে এই নিয়ে আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না আপনার মুখে।” মিম ভূত দেখার মতোই চমকে ইমানের দিকে তাকিয়ে রইলো,ইমান হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলো স্টাডি রুম থেকে,তারপর,ইমান বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতেই মিম বাচ্চাদের সাথে নিয়ে ঢাকার সব চেয়ে বড় চক্ষু হাসপাতালে চলে এলো জাবিনের চোখের পাওয়ার পরীক্ষা করাতে।
চোখের পাওয়ার পরীক্ষা করা শেষ হতে না হইতে,মিম হাসপাতালের করিডরে ছোটাছুটি করছিল কিছু কাগজপত্র হাতে আর তখন হঠাৎ ইমান ডক্টর আহাদের কেবিন থেকে বেড়িয়ে মিম কে দেখে রীতিমতো চমকে গেছে,মিম দৌড়াদৌড়ি করতে করতে হঠাৎ এসে ধক্কা খেলো ইমানের সাথে,ইমান মিম কে পরে যেতে যেতেই ধরে ফেললো,তারপর গম্ভীর গলায় বললো,
– “আস্তে আস্তে ছুটুন…! আবার লেগেটেগে যাবে।” মিম চোখ মেলে ঘাড় ধাক্কা কাত করে ইমানের দিকে তাকালো,ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “কি ব্যাপার? হাসপাতালে কেন? কি হয়েছে?” মিম বললো,
– “জাবিন কে নিয়ে এসেছি…। বাবুটার চশমা ভেঙে গেছে।” ইমান মুচকি হেসে বললো,
– “আপনাকে জিন্স,কামিজ,কার্টিগান পরে গলায় মাফলার জড়ানোয় চেনা যাচ্ছে না…। আই মিন শাড়িতে একদম অন্য রকম দেখতে লাগে।জাগগে,বাচ্চাদের দেখতে পাচ্ছি না? ওরা কোথায়?”
– “ওরা ডক্টরের সাথেই আছে,একটু অপেক্ষা করুণ…! এখুনি বেড়িয়ে আসবে কেবিন থেকে।” ইমাম কিছু টা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মিম কে বললো,
.
– “আমার ছেলে তো আমার মতোই হয়েছে…! আমি ও বাবার ভয়তে চশমা ভেঙে ফেলার কথা মা কে গিয়ে বলতাম আর মা নতুন চশমা বানিয়ে এনে দিতেন আমাকে।
যদিও বাবা কিছু বলতেন না,তবুও খুব ভয় পেতাম তাকে।” তখন জাবিন এবং আজিন ডক্টরের চেম্বার থেকে বেড়িয়ে ভয় পেয়ে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,ইমান সাথে সাথেই কোলে তুলে নিলো দুই ছেলে কে…। জাবিন ভয় পেয়ে চুপ করে রইলো,ইমান আহ্লাদ মাখা কণ্ঠে ছেলে কে জিজ্ঞেস করলো,
– “তোমার চশমা কি করে ভেঙেছে?” জাবিন বললো,
– “ড্যাড…! ওই আমার হাত থেকে ছিটকে পরে গিয়েছিল নিচে।” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “ওহ,এই ব্যাপার…! আমার তো প্রতিবার পিঠের নিচে পরেই চশমা ভাঙে।” অতঃপর,বাবা ছেলে হঠাৎ উচ্চ শব্দে হাসতে শুরু করলো,হাসপাতালে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।মিম নিজের হাসি সামলে বলল,
– “চলুন…! স্যার,প্লিজ..বাবুর চশমা বানাতে দিতে হবে।” ইমান তারপর সবাই কে সাথে নিয়ে জাবিনের জন্য চশমা বানাতে শপে এলো,সেখানে চার জনের পছন্দে জাবিনের জন্য চারটি চশমা বানাতে দেওয়া হয়েছে।
বাড়িতে আসার পর ছেলে কে হাসিখুশি দেখে ইমান মিম কে বললো,
– “ধন্যবাদ,আপনাকে…! সারাদিন কাজ নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত থাকি,ছেলেদের দিকে নজর দেওয়ার সময় কোই আমার হাতে…!” মিম বলল,
.
– “এতো ভাববেন না স্যার…। আমি যতদিন আছি ততদিন নিজের সন্তানের মতোই আগলে রাখবো ওদের দু’জন কে…।” মিমের কথা শুনে ইমান চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো,তখন আজিন এসে ইমান কে বলল,
– “ড্যাড আজকে বিকেলে রেস্টুরেন্টে খেতে নিয়ে যাবে আমাকে আর ভাইয়া কে…?” ছেলের হাসিখুশি চেহারা দেখে ইমান বললো,
– “কেন নয়? তোমরা ঝটপট তৈরি হয়ে আসো এর আগে।” আজিন বলল,
– “আম্মু মণি ও কিন্তু যাবে,তাকে ও নিতে হবে আমাদের সাথে।” ইমান অবাক হয়ে ছেলে কে বললো,
– “আচ্ছা! তোমার এই আম্মু মণি টা কে? তুমিই বা কোথায় খুঁজে পেয়েছ তাকে…!” আজিন সঙ্গে সঙ্গেই মিম কে জড়িয়ে ধরলো,বলল,
– “আম্মু মণি তো আমাদের বাসায় থাকে ড্যাড…। তুমিই তো আম্মু মণি কে এনে দিয়েছ আমাদের কাছে।” ছেলের পাকা পাকা কথা শুনে ইমান হাসতে লাগলো,ছেলে কে জিজ্ঞেস করলো,
– “তুমি আন্টি কে আম্মু মণি বলে ডাকতে শুরু করেছ কবে থেকে? না মানে,এই নামে ডাক কেন? চাইলে অন্য নামে ও তুমি ডাকতে পারো তাকে?” আজিন রাগ দেখিয়ে বাবা কে বলল,
– “না,আমি আম্মু মণি বলেই ডাকবো…কারণ আমার এই নাম টা খুব ভালো লাগে।” ইমান বললো,
– “সেটাই তো বলছি আব্বু! কেন ভালো লাগে? সেটা বলো আমাকে?” আজিন বললো,
– “কারণ মম মানে “আম্মু” আর মণি মানে “আন্টি” আর তাই আমি “আম্মু মণি” বলে ডাকবো তাকে।” ছেলের যুক্তি শুনে ইমান চুপ,মিম আজিন কে ঘরে নিয়ে এলো নিজের সাথে।
.
এরপর রাতে ইমান দুই ছেলে সহ মিম কে নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে চলে এলো,ইমান রেস্টুরেন্টে বলেই রেখে ছিলো আগে থেকে…মিম বাচ্চাদের সাথে দুষ্টুমি করছিল তখন হঠাৎ ওর নজর গেলো পাশের টেবিলের দিকে।
সেখানে হাবিবুর রহমান সাহেব এবং রহিমা গল্প করছিলেন পাশাপাশি বসে।মিম তাদের দেখা মাএই ছুটে গিয়ে বলল,
– “বাবা-মা…!” দু’জনেই অবাক চোখে তাকিয়ে ছিলেন মেয়ের দিকে,মিম এগিয়ে এসে হাবিব সাহেব কে জড়িয়ে ধরলো,ইমান এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,
– “ওনারা আপনার বাবা মা?” মিম হাসি মুখে বললো,
– “অবশ্যই কোনো সন্দেহ আছে?” তখন হাবিব সাহেব বললেন,
– “তুমি আমার মেয়ে না,আমার মেয়ে একটাই ঠিক আছে? আর শোনো প্লিজ এখনে কোনো সিনক্রিয়েট করো না,কেননা আজ এখানে আমার ছোটো মেয়ের হবু শশুর বাড়ির লোকজন উপস্থিত আছে।” মিম বললো,
– ” অনির বিয়ে ঠিক করে ফেলেছ তোমরা? কার সাথে?” রহিমা বললেন,
– “তোমার এতো জেনে কাজ নেই…। আপা (জাইমা) ঠিক বলেছিলেন,
তার ছেলের কি দোষ? আমাদের মেয়েই তো বেলেল্লাপনা করে বেড়াচ্ছে পরপুরুষের সাথে…।
আবার সেই লোকটা কে সাথে নিয়ে ঘুরছে কোনো লাজলজ্জার ছিটেফোঁটা ও বেঁচে নেই এই নির্লজ্জ মেয়ের টির মাঝে?” মিম মায়ের বলা নোংরা নোংরা কথা গুলো শুনেই কেঁদে ফেললো,ইমান রেগে গিয়ে বললো,
– “আর একটা ও ফালতু করে বলবেন না এখানে বসে,জীবন অনেক ক্লাসলেস লোক দেখেছি,তবে আপনাদের মতো সেন্সলেস লোক দেখিনি আগে…!” হাবিবুর রহমান সাহেব রেগে গিয়ে বললেন,
– “এই ছেলে একদম বড় গলায় কথা বলবে না আমার সাথে,
নেহাৎ এখন আর এ.এস.পি অফিসার নই,নয়তো তোমার জায়গা টা ঠিক বুঝিয়ে দিতাম তোমাকে।” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
.
– “আপনার মনে হয় জনাব,যে আমি ভয় পেয়েছি আপনাকে দেখে? শুনে রাখুন,আপনার মতো গোটা কয়েক পাতি এ.এস.পি সারাক্ষণ আমার পায়ের কাছে বসে থাকে আর মিম…!
প্লেট এখন থেকে চলুন কারণ আমার মনে হয় না এরা আপনার কিংবা অন্য কারো মা-বাবা হওয়ার যোগ্যতা রাখে।” মিম চুপচাপ রেস্টুরেন্ট থেকে চলে এলো ইমানের সাথে…এসে ওর খুব খারাপ লাগছে যে ওর জন্য বাচ্চাদের আনন্দ সাথে ইমানের আনন্দ ও নষ্ট হয়ে গেছে আর তাই মিম তিন জনের জন্য সকাল সকাল উঠে ফ্রাইড রাইস,চিকেন কারি,চিকেন ফ্রাই,থাই ভেজিটেবল কারি,রোজ স্পেশাল বিফ,বিফ মাসালা এবং চিকেন ক্যাসো নাট সালাদ বানিয়েছে।
আর এদিকে,ঘুম থেকে ওঠা মাত্রই মজাদার খাবারের গন্ধ শুকতে শুকতে সবাই নিচে চলে এসেছে,
ইমান ছেলেদের খাবার ঘরে নিয়ে এসে সব কন্টেইনারের ওপর থেকে ঢাকনা সরাতে সরাতে খুশি হয়ে বলে,
– “এতো রান্নাবান্না সকাল সকাল উঠে কে করেছে?” তখন প্রমী এবং ইমা চেঁচাতে চেঁচাতে বলল,
– “প্রেজেন্টিং মিম আপু…।” সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো মিমের দিকে,মিম বললো,
– “আশ্চর্য…! আমি আবার কি করলাম?” ইমা মিটিমিটি হেসে বললো,
– “না মানে,তুমিই তো এগুলো রান্না করেছ নিজের হাতে।” জাবিন ফিরনীর গন্ধ শুকে বললো,
– “এগুলো তোমার রান্না…!” মিম বলল,
– “হ্যাঁ,বাবা…। ‘সরি’ আমার জন্য গতকাল তোমাদের আনন্দ মাটি হয়ে গেছে।” আজিন এগিয়ে এসে মিমের হাত ধরে বলল,
.
– “সরি কেন বলছ? এর পর কাঁদলে তোমার মম-ড্যাডের আগে,তোমাকে বকবো এই আমি বলে দিলাম ঠিক আছে?” মিম হাসতে হাসতে বলল,
– “আচ্ছা,এবার সবাই খেতে বসো বাবাই…! নয়তো খাবার গুলো ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।” সবাই সাথে সাথেই খেতে বসে গেলো,জাবিন মিম কে বলল,
– “তুমি খাবে না আমাদের সাথে?” মিম মৃদু হেসে জাবিনের গালে চুমু খেয়ে বললো,
– “তোমরা সবাই খেয়ে নাও বাবাই…। তাহলে আমরো খাওয়া হয়ে যাবে।” আজিন ইমান কে বলল,
– “তুমি দেখেছ ড্যাড,আম্মু মণি কত বোকা? আমরা খেলে তার কি করে খাওয়া হয়ে যাবে?” ইমান মিম কে বলল,
– “আপনি ও বসুন প্লিজ! খাবার গুলো কিন্তু খুব ভালো এবং ক্লাসি হয়েছে…আগে মা আমাদের জন্য এভাবে টেবিল ভরে খাবারের আয়োজন করতো আমরা খুব এনজয় করতাম খাবার খেতে কিন্তু মায়ের এখন ফুললি বেড রেস্ট,
তাই সে চাইলে ও আমরা কোনো কাজ করতে দেই না তাকে,তবে তার আপনার হাতের কাজ খুব পছন্দ, আপনি এতোকিছু করেছেন শুনে সে নিশ্চয়ই অনেক খুশিই হবে।” মিম বলল,
– “স্যার…! আপনাকে আর একটু চিকেন দেই?” ইমান বলল,
– “না থাক,ঠিক আছে।” তারপর মিম সবাই কে খাইয়ে ইমানের ঘরে বারান্দায় চলে এলো,এই জায়গা টা ওর খুব ভালো লাগে।ইমান এসে তখন হঠাৎ করে মিমের পাশে দাঁড়ালো,মৃদু হেসে বললো,
– “আরো একবার অসংখ্য ধন্যবাদ মিম আপনাকে…!” মিম কিভেবে বলল,
– “বারবার ধন্যবাদ দিয়ে আমাকে ছোটো কেনো করছেন? বরং আমি অনেক কৃতজ্ঞ আপনার কাছে…!” ইমান কথা গুলো শুনে শান্ত ভাবে মিমের দিকে তাকিয়ে রইলো,
.
মিম হঠাৎ করেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টা।ইমান মিমের আকষ্মিক কাণ্ডে বুঝতে পারলো না এই মুহূর্তে কি করা উচিত তার? মিম বলল,
– “আমি সত্যিই অনেক কৃতজ্ঞ আপনার কাছে। কারণ আপনি আমাকে থাকার জন্য একটা বাড়ি দিয়েছেন,গাড়ি দিয়েছে,একটা সুন্দর পরিবার এবং দু’টো সন্তান দিয়েছেন আপনি আমাকে।” ইমান মিমের মাথায় হাত বুলোতে লাগলো,মিমের হঠাৎ হুঁশ ফিরতেই ও লজ্জা পেয়ে ছিটকে দূরে সরে গেলো ইমানের কাছ থেকে…ইমান চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো,মিম হাত জোর করে বললো,
– “বেয়াদবির জন্য প্লিজ,পারলে ক্ষমা করে দেবেন আমাকে…!” ইমান মিম কে কিছুই বললো না,দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চলে দেখলো মেয়ে টা কে,,,,
মিম দৌড়ে নিজের ঘরে চলে এলো,তবে একজনের মনের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে,সে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে অন্য কথাই ভাবছে,ভাবছে,
– “যে বুকে একদিন আরিশফা নামক কেউ মাথা রেখেছিল,সেই বুকে অন্য কেউ মাথা রেখে হয়তো আমার মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলেছে।
তার মানে এই নয় যে আমি তার প্রতি দূরবল,না আমি দূরবল নই,ইমান খান দূরবল হতেই পারে না কিছুতে,সামনের মানুষ টা কে আমি সম্মান করি এবং তার অসহায়ত্বের সু্যোগ আমি নিতে পারি না,আমি এতো নিচ নই যে…।
.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com