গল্পঃ ভিলেন । পর্ব-০৮
আসলেই এই মেয়েটির মাথায় সমস্যা না হলে কে এমন করে তার প্রতিপক্ষের সাথে…?”
মিম তখন ও ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে ইমান কে বিরক্ত করছিল ইমান বুকে হাত বেঁধে প্রচন্ড রেগে দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে ছিল মিমের দিকে…।
তারপর প্রিশা কে ডেকে,তাকে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো,
– “তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করতে বলো,আজ ওই মেয়ের একদিন কি আমার একদিন,
আমি এক চুল ও ছেড়ে কথা বলবো না ওকে…।
আর তখন হঠাৎ ইমানের ফোন বেজে উঠলো,ও ফোন রিসিভ করতেই মিম বলল,
– “এতো প্যানিক’ড হবেন না জনাব! আপনার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ আসেনি এখনো আমার হাতে…।
ইমান হ্রাস ভারী গলায় মিম কে বললো,
– “আপনি আমাকে উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে ছোটো করার চেষ্টা করছেন মিসস,
নিচু নজরে দেখছেন আমার এই দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞান উন্নত করার প্রচেষ্টা কে…।
মিম মৃদু হেসে বললো,
– “আমি মোটেও আপনার এই প্রচেষ্টা কে অসম্মান করছি না খান সাহেব…।
আপনার মনে হয় না যে কেউ আপনাকে সামনে রেখে নিজের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে…?
.
দেখুন,আমি আপনাকে অবিশ্বাস করছি না! তবে আমার খুব খারাপ লাগছে
কেউ আপনার ক্ষমতায় অপব্যবহার করছে দেখে..।
ইমান যেন মিমের বলা কথা গুলো শুনে চমকে গেলো,সে কল টা কেটে দিলো সাথে সাথে…।
বিকেলের মধ্যে যে যার গন্তব্যে এসে পৌঁছালো,এরি মধ্যে খবর এলো নিউ ইস্কাটন,
ঢাকা একটা পঁচিশ থেকে এিশ বয়সী মেয়ের লাস পাওয়া গেছে,
লাসের অবস্থা খুব খারাপ দেখে মনে হচ্ছে যেন,
কেউ বা কারা মেয়েটির ওপরে নৃশংস ভাবে এক্সপেরিমেন্ট চালিয়েছে।
মিম খবর পেয়ে সেখানে নিউজ কভার করতে চলে গেলো,তখন সে দেখলো
মেয়েটির মুখ থেকো নীল নীল কি যেন বেয়ে পরছে…?
যদি ও এসব নিয়ে এতো টা ভাবলো না কারণ ওর ওই বাচ্চা মেয়েটির কথা ভেবে খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে…।
ও কি ভেবে সেই মুহুর্তে নিজের বড় ভাই আরাব কে ফোন করে বললো,
– “ভাইয়া তুমি আমাকে একটা সাহায্য করতে পারবে…?”
আরাব ছোটো বোনের কথা শুনে বলল,
– “এ কেমন কথা বুড়ি? তুই শুধু বল না কি করতে হবে…?”
মিম তারপর আরাব কে সেই বাচ্চা মেয়েটির ব্যাপারে সব খুলে বলল,আরাব বললো,
.
– “তুই একদম চিন্তা করিস না বুড়ি! আমি দেশে নেই তো কি হয়েছে? তোর কাজ ঠিকই হয়ে যাবে…।” মিম এরপর ঝটপট আহসানউল্লাহ মেমোরিয়াল মানুষিক হাসপাতালে এসে দেখে,
– “ইমান হেসেখেলে সময় কাটাচ্ছে বাচ্চা মেয়েটির সাথে..।” তবে মিম কেবিন ঢুকে এসেই সেই বাচ্চা মেয়েটি কে জড়িয়ে ধরে সাথে সাথে…।
ইমান অবাক হয়ে মিমের দিকে তাকিয়ে রইলো,মিম বলল,
– “আমি আজ ওকে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি নিজের সাথে…।” ইমান চমকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “কিন্তু কেন…?”
– “কারণ ও আর এক মুহূর্ত নিরাপদ নয় এই জায়গাতে…।
এই জায়গা টা ওর জন্য নয় খান সাহেব বুঝতে হবে আর আপনি বিচক্ষণ মানুষ,মনে হয় না আপনার এই সিম্পল বিষয় টা বুঝতে কোনো সমস্যা হবে?” ইমান জিজ্ঞেস করলো,
– “সে নয় বুঝলাম,তবে কোর্ট অর্ডার আছে আপনার কাছে…?” তখন কনস্টেবল মহিউদ্দিন এসে কোর্ট অর্ডারের কাগজপত্র সবাইকে দেখাল এবং মিম বাচ্চা টি কে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করিয়ে বাড়িতে নিয়ে এলো নিজের সাথে…।
এদিকে ইমানের মনমেজাজ ঠিক নেই,তার মধ্যে সে আবার একজন প্রফেশনাল ডিটেকটিভ লাগিয়েছে অবন্তীর খোঁজ-খবর নিতে।
.
কারণ আজকাল তার ব্যবহার ইমানের কাছে খুব অদ্ভুত লাগে,বারবার মনে হচ্ছে সে কিছু লোকাচ্ছে তার কাছে?
পরদিন সকালে কথায় কথায় অবন্তী ইমান কে বললো,
– “ওই মেয়ে টি আমাকে সবার সামনে চড় মারলো অথচ সেদিন তুমি কিছু বলনি তাকে…?” ইমান বলল,
– “দোষ টা তোমার ছিল,তাহলে আমি শুধু শুধু কি বলতাম ওনাকে…?
আর তুমি কেন বাচ্চা টা কে দেখে রিয়েক্ট করেছিলে? ওর টাই বা পুতুল কেন বাহিরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ছিলে?
বলো আমাকে…?” অবন্তী রেগে গিয়ে ইমান কে বললো,
– “দেখ! ইমান তুমি কিন্তু এভাবে কথা বলতে পারো না আমার সাথে…।” তখন অবন্তীর ভাই সামাদ এলো,অবন্তী প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
– “আসলে ইমান আমি সামাদ এবং ইমার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে চেয়েছিলাম তোমার সাথে…।” ইমান বলল,
– “দেখ! সামাদের সাথে আমাদের ইমার বিয়ে কোনো ভাবেই সম্ভব না অবন্তী,ওর নিজের পছন্দ আছে…।” বড় ভাইয়ের কথা শুনে ইমা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো,সামাদ বললো,
– “আরে ভাই মেয়ে মানুষের এতো পছন্দ দিয়ে কি হবে?
সেই বিয়ের পরে বেশি কিছু না বরং হাতা খুন্তি নাড়তে হবে…। আর তাছাড়া তোমার আবার জন্ম থেকেই পায়ে সমস্যা আছে ইমা,মনে হয় না তোমার দাঁড়া সে টুকু ও হবে…।” ইমান তেড়ে এসে সামাদের শার্টের কলার চেপে ধরে বলল,
– “তোর কি মনে হয়? আমি আমার একমাত্র বোন কে তুলে দেবো তোর মতো একটা অপদার্থ লোকের হাতে…?
আমার বোন কি কোনো ফেলনা? যে তুই বিয়ে করে উদ্ধার করতে এসেছিস তাকে…?” তখন অবন্তীর বাবা এসে বললো,
.
– “বাবা! ও আসলে বুঝতে পারেনি,তুমি শুধু শুধুই ভুল বুঝেছ ওকে…।” ইমান বলল,
– “আমি এতকিছু জানি না কাল পাএ পক্ষ ইমা কে দেখতে আসছে মা…। সকালে তৈরি করে রেখো ওকে…।” ইমা ইমানের দিকে তাকিয়ে রইলো,রাতে ঘুম আসছে না তার কিছুতে…। মনেমনে সে ভাবল,
– “একবার ভাইয়ের সাথে বসে কথা বলা উচিত?” পরে নিজেই নিজেকে বলল,
– “না ঠিক আছে।”
সকালে পাএ পক্ষ ইমা কে দেখতে এলো ইমা মাথা নিচু করে পাত্রের সামনে সবে আছে…। অবন্তী মিম কে দেখে ইমান কে জিজ্ঞেস করলো,
– “উনি এখানে কেন? উনি কি আমাদের আবার কোনো ক্ষতি করতে এসেছে…?” ইমা সাহস নিয়ে মুখ তুলে তাকিয়ে মাহিন কে দেখে চমকে গেলো,মাহিন মৃদু হেসে ইমান কে বলল,
– “আমার আপনাদের মেয়ে পছন্দ ভাইয়া! কিন্তু আমি লেখাপড়া করছি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে…।” ইমান মৃদু হেসে বললো,
– “তুমি এতো ভেবো না মাহিন! বিয়ে টা করে নাও রিজিকের ব্যবস্থা আল্লাহ তাআ’লা করে দেবে।” মিম ইমানের কথায় সায় দিয়ে বলল,
– “হ্যাঁ,ভাই! বুঝতে হবে হালাল যে-কোনো কিছুতে ওপর ওয়ালার রহমত আছে…।” অবন্তী মিম কে ছোটো করার উদ্দেশ্যে বললো,
– “তোমরা যে এতো বড়বড় কথা বলছ,ইমার এক মাসের খরচ চালানোর সামর্থ তোমাদের আছে…?” ইমান রেগে গিয়ে বলল,
.
– “তুমি চুপ থাকো অবন্তী এখানে কেউ সাজেশন চাইতে ডাকেনি তোমাকে…।” অবন্তী ইমানের কথা শুনে চুপ করে গেলো ইমান কথা বলার কোনো আগ্রহ খুঁজে পেলো না তার সাথে।
দুই পরিবারের মাঝে বিয়ে নিয়ে কথাবার্তা শেষে ইমা এবং মাহিনের আংটি বদল হয়ে গেলো,অবন্তী বললো,
– “একটা ডায়মন্ড রিং আপনারা অন্তত গিফট করতে পারতেন ইমা কে…?” মিম মৃদু হেসে বলল,
– “শুনুন! আমার পরিবারে সাধ্য মত সবার পছন্দ-অপছন্দের খেয়াল রাখা হয় ঠিক আছে…? আশ্চর্য! আপনি গত দশ বছর ধরে এ বাড়িতে পরে আছেন অথচ এটা জানেন না যে আপনার হবু ননদ সোনার জিনিস পরতে বেশি ভালোবাসে…?
আর এনগেজমেন্ট রিং পছন্দ হয়েছে কি হয়নি সেটা ইমা বলবে অবন্তী! আপনার মুখ থেকে আমি কিছু শুনতে চাই না ঠিক আছে…?” অবন্তী এবার ও মিম কে ইনসাল্ট করতে চাইলো,কিন্তু পারলো না কারণ ইমা খুশি হয়ে মিম কে বলল,
– আপু মণি সত্যি আমার এনগেজমেন্ট রিং টা খু পছন্দ হয়েছে।” মিম বললো,
– “সে নয় বুঝলাম,তবে আমার তরফ থেকে থেকে তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।” ইমা চমকে মিমের দিকে তাকিয়ে রইলো মিম চব্বিশ ক্যারেট গোল্ডের এটা স্বর্ণের চেইন ইমার গলায় পরিয়ে দিলো নিজের হাতে।” তখন ইমানের বড় চাচি রেবেকা নিজের মেয়ে রামিসা কে দেখিয়ে মাহিন কে বললেন,
– “বাবা! ইমার পায়ে জ জন্ম থেকেই একটা সমস্যা আছে।” হলে উপস্থিত সবার মুখ সাথে সাথেই কালো হয়ে গেলো মাহিন মৃদু হেসে বললো,
.
– “আন্টি এটা ইমার কোনো দোষ না এবং গুণ ও না ঠিক আছে…? মানুষ কখনো নিখুঁত হতে পারে না আমারও ও অনেক দোষ-গুণ আছে।” মাহিনের কথা শুনে রেবেকা চুপসে গেলেন,মাসুমা মৃদু হেসে ছেলে কে বললেন,
– “তাহলে বাবা আমি সঠিক শিক্ষা দিতে পেরেছি তোমাকে…?” মাহিন বলল,
– “অবশ্যই মা তোমার এবং ছোটো আপুর সবচেয়ে বেশি ভূমিকা আছে এতে…।” নাজনীন খুব খুশি হলেন,তার খুব ভালো লেগেছে মাহিনের পরিবার কে আবার কোথাও না কোথাও মিম তার মনে বসে গেছে।
গত কাল রাতে ইমার বিয়ে নিয়ে অবন্তীর সাথে কথা-কাটাকাটি হওয়ার পর,ইমান সোজা ঘরে এসে ফোন করে মিমের কাছে।
দু’জনেই তারপর সব ঠিক-ঠাক করে নেয় কারণ মিম ও জনতো মাহিন ইমা কে ভালোবাসে…। আর তারা যাতে ভবিষ্যতে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত না নেয়,তাই বড় ভাই বোন হিসেবে তারাই দায়িত্ব নিয়েছে ছোটো ভাই এবং বোনের চার হাত এক করে দিতে…। তবে তারা কি জানে তাদের জীবনে কি ঘটতে চলেছে?
মিমের পরিবার বিয়ে সম্পর্কিত সমস্ত আলোচনা সেরে চলে যাওয়ার পর আবন্তী ইমান কে বললো,
– “তুমি কি করে চুপ করে রইলে? যখন ওই মেয়ে টি কথা শোনাচ্ছিল আমাকে…?”
– “আগ বাড়িয়ে তুমি অপমানিত কেন হতে গেলে অবন্তী আপু আগে সেটা বলো আমাকে…?
না মানে তোমার কি মনে হয়? আমি বিয়ে করতাম সামাদ কে?
.
কখনোই নাঃ! আমি প্রয়োজনে গলায় দড়ি দিতাম আর তবুও বিয়ে করতাম না ওকে…।” অবন্তী ইমান কে বলল,
– “তোমার বোন কে চুপ করতে বলো ইমান এখন কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে…।” তখন হঠাৎ ইমানের কাছে একটা ম্যাসেজ এলো এবং কেউ একজন এম.এম.এস পাঠালো তার কাছে…। ইমান উঠে দাঁড়িয়ে অবন্তী কে বললো,
– “এতো যে বড় বড় কথা বলছ তুমি,তোমার আজকে বিচার হবে।” নাজনীন ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলো,ইমান ডেকে পাঠালো অবন্তীর বাবা এবং মা কে,
তারপর ও সবাই কে কিছু ছবি দেখালো যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে অবন্তী অত্যন্ত ঘনিষ্ট অবস্থায় বিছানায় শুয়ে আছে সায়েন্টিস্ট কলিন’র সাথে…। ইমান কিছু ভিডিও দেখাল,
অবন্তী সে গুলো দেখে একদম চুপ হয়ে গেছে।অতঃপর ইমান অবন্তী কে জিহাদ করলো,
– “আর কিছু…?” অবন্তী ইমান কে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করতেই ইমান বলল,
– “নিজের নোংরা হাত দিয়ে তুমি স্পর্শ করবে না আর কখনো আমাকে আর হ্যাঁ,
প্লিজ কেউ বলো না যে এগুলো এডিট করা কিংবা গ্রাফিক্সের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে…কারণ এর আগেও আমি একবার অবন্তী কে হাতেনাতে ধরেছি এবং এক বার সুযোগ দিয়ে ছিলাম তাকে কাজেই কেউ আর আমাকে এর সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে জড়াতে বলো প্লিজ!
.
আমি নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারবো না এই রকম একটি মেয়ে কে…। অবন্তী’র বাবা বললেন,
– ” ইমান আমার একটু কথা শোনো!”
– “কোনো কিছু শোনার বা বলার বাকি নেই আঙ্কেল,আপনি আর এর হয়ে সাফাই গাইতে আসবেন না দয়া করে আমার কাছে…।
ভাইয়ের মৃত্যুর পর ও অনেক ভেঙে পরেছিল,তাই আমি মেন্টাল সাপোর্ট দিয়েছিলাম ওকে আর তোমরা সে টা কে প্রজেক্ট করেছ ভালোবাসার দিকে আর সত্যি বলতে আমি কখনো ওকে ভালোবাসিনি এই সম্পর্ক টা একটা বোঝা মনে হয় আমার কাছে। মা তুমি বারবার আমকে বুঝিয়েছ অবন্তী একটা ভালো মেয়ে অথচ ভালোর বৈশিষ্ট্য আমি ঠিক খুঁজে পাইনি গত দশ বছর ধরে ওর মাঝে…।
ভাইয়া মারা গিয়েছে পাঁচ বছর হলো,ভাই থাকা কালিন ও এমন নোংরামি করে বেড়িয়েছে বহু লোকের সাথে।
আমি অবন্তীর সাথে ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক রাখতে চাই না,এ বাড়িতে দেখতে ও চাই না তাকে,প্রফেশনাল সম্পর্ক থাকুক,তবে আমি বিয়ে মতো একটা পবিত্র সম্পর্কে জড়াতে চাই না অবন্তীর সাথে।
.
চলবে,,,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com