Breaking News

তীব্র ভালোবাসার অনুভূতি । পর্ব – ১৫ এবং শেষ



আরে নিচে চলো,ইফতারের সময় হয়ে গেছে।” সবাই ওজু করে এসে বসতেই আজিন লাফাতে লাফাতে এসে বললো,
– “আমার খুব খিদে লেগেছে,এই আঙ্কেল তোমরা কেউ জানো আজান কখন দিবে…?” আজিনের পেট চেপে ধরে লাফালাফি দেখে রোজাদারগণ হাসতে লাগলো,ইমান ছেলেকে ধরে নিজের কোলে বসিয়ে বলল,
– “একটু ধৈর্য্য ধরো বাবা…! এখুনি দেবে।” আজিন মোনাজাত ধরে বলল,
– “ওহ আল্লাহ তাড়াতাড়ি মসজিদের হুজুরকে আজান দিতে বলো আমার পেটে খুব ব্যাথা করছে।” ইমানের বন্ধু সাদিক বললো,
– “এইতো সময় হয়ে এসেছে বাবা। ব্যাস…আর একটু ঠিক আছে…?” মিম ডাইনিং টেবিলে বসে ছেলেদের কথা শুনে অস্থির হয়ে ইমাকে বলল,
– “ইমা কাওকে দিয়ে ডেকে পাঠাতে পারো ওদের দু’জন কে…!” ফাহাদ গিয়ে জাবিন এবং আজিনকে কোলে করে মায়ের কাছে নিয়ে এলো,তারা মা কে দেখেই ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
– “আম্মু….জানো? আমাদের পেটে খুব ব্যাথা করছে…?” সাথে সাথেই আজান দিয়ে দিলো মিম ইফতার করার জন্য দোয়া পড়িয়ে ফলের শরবত খাইয়ে দিলো দু’জন কে…। ইমান এদিক-সেদিক তাকিয়ে ছেলেদের না দেখতে পেয়ে ফাহাদ কে জিজ্ঞেস করলো,
– “ওরা কোথায়? রোজা খুলবে না? ডেকে নিয়ে আসো ওদের দু’জন কে…। তখন ফাহাদ হাসতে হাসতে বললো,
– “তারা আবার কোথায় যাবে ভাইয়া…? এই মাএ ভাবির কাছে রেখে এলাম ওদের দু’জন কে…।” ইমান হাসতে হাসতে বলল,
.
– “কাজের কাজ করেছ একটা আর নয়তো আমি সামলাতে পারতাম এই ব্রিটিশদের কে…।” ছেলের কথা শুনে ইফতি সাহেব হাসতে হাসতে বললেন,
– “তুমি ও কিন্তু ছেলেবেলায় ব্রিটিশ ছিলে বাপ জান আমি কিন্তু এখনো সে সব ভুলিনি নাই ঠিক আছে…?” ইমান হাসতে হাসতে বলল,
– “আমি এখন অনেক বদলে গেছি বাবা…! যাই একটু গিয়ে দেখে আসি তোমার মেয়েকে…।” মিম ছেলেদের খাইয়ে দেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে নিজে ও খাচ্ছিল আর তখন রিকিয়া এসে মিমকে বললো,
– “মামীকে দেখলাম,তোমার জন্য স্পেশাল জেলি বানিয়েছে…।” মিম চমকে রিকিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো আর তখন ইতি এসে মিমকে একটা বাটি দিয়ে বললেন,
– “মা এই পেয়ারা ফলের জেলি টা খেয়ে দেখ তো কেমন হয়েছে..?” মিম জেলি খেতে খেতে বললো,
– “খুব মজা মা…! তবে পেয়ারার জেলি হয় জানতাম না এর আগে।” তখন ইমান এসে একটা প্লেট নিয়ে লাউশাকের ঝোল তারকারি দিয়ে ভাত মেখে এনে মিমকে বলল,
– “চুপ করে,শান্ত হয়ে বসো আমি খাইয়ে দিচ্ছি তোমাকে…।” মিম ইমানের গায়ে হাত বুলোতে বুলোতে বলল,
– “নিজে ইফতারি করেছ তুমি? না,না খেয়ে এসেই খাওয়া জন্য ঠাসাঠাসি করছ আমাকে…? যাও গিয়ে নিজে খেয়ে আসো,আমি রোজা রাখিনি না খেলেও সমস্যা নেই নিজেই খেয়ে নেবো ঠিক আছে…?” ইমান মিমের কথা শুনলো না,
একদম জোর পূর্বক খাইয়ে দিতে লাগলো ওকে…। তখন অনিক এসে রিকিয়া কে এটা-সেটা খাইয়ে দিতে লাগলো,রিকিয়া তবুও আনিককে খোঁচা মেরে বলল,
.
– “কিছু শেখো আমাদের ইমানের কাছ থেকে…।” অনিক দাঁতে দাঁত চেপে সবাই কে উদ্দেশ্য করে বললো,
– “কিছু কিছু বউ আছে,যাদের কলিজা কেটে খাওয়ালে ও হবে না…। এদের চোখ থাকবে অন্যের জামাইয়ের দিকে…।” অনিকের কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো,রিকিয়া বলল,
– “যাও খাইতাম না তোমার হাতে…।” অনিক মিটিমিটি হেসে রিকিয়াকে বললো,
– “তুমি ও ভাবির মতো ধীরস্থির হও তাহলে আমাদের সংসার জীবন সুখের হবে…।” ইমান হাসতে হাসতে বলল,
– “সে আশা তুমি ছেড়ে দাও ভাই কারণ আমার বউয়ের মতো একখানা আর এক পিস’ই আছে…।” ইমানের কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো,রিকিয়া অনিক কে বলল,
– “আজ তোমার খবর আছে…।” মিম ইমান কে ঝাড়ি মেরে বললো,
– “কোথায় যাচ্ছ তুমি…? আগে চুপটি করে বসো আমার কাছে…। আমি আগে তোমাকে খাইয়ে দিবো তারপর তুমি গোল্লায় যাও আমার এতো দেখার সময় নেই ঠিক আছে…?” ফাহাদ মিমকে রাগতে দেখে ইমানকে জিজ্ঞেস করলো,
– “ভাইয়া আবার ভাবি কেন রাগ করলো আপনার সাথে…?” ইমান মিটিমিটি হেসে বলল,
– “আরে ওই ইফতারি না করে উঠে এসেছি না…? তাই আর কি মেজাজ দেখাচ্ছে আমাকে…।” মিম বললো,
– “একজনের যে রোজা কাজা হয়ে গেলো তার কি সে হুঁশ আছে…?” অনিক মুচকি হেসে বললেন,
– “হয়নি ভাবি,কারণ আপনার জামাই শরবত আর আপনার বানানো আলুর চপ খেয়ে এসেছিল হল ঘর থেকে…।” এবার মিম কিছুটা শান্ত হলো,সবজি দিয়ে ভাত মাখিয়ে এনে খাইয়ে দিতে লাগলো ওকে…। সকালে হঠাৎ বাড়ির দারোয়ান নুরু মেয়া এসে ইমান কে বললেন,
– “আব্বা কয়েকদিন ধরে একটা বাচ্চা ছেলে এসে বউ মায়ের (মিম) ছবি দেখিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করছে,’যে এই ভদ্রমহিলা কি এই বাড়িতে থাকে…?’ আমি কিন্তু তার কাছে এই ব্যাপারে কিছু স্বীকার যাইনি শুধু বলেছি,’ক’দিন পরে আসেন,বাড়ির মালিক হয়তো এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবে তোমাকে…।” ইমান একটু কৌতুহলী হয়ে নুরু মেয়া কে বলল,
.
– “চাচা আজ এলে ওকে আর ফিরিয়ে দেবেন না।বাড়িতে নিয়ে আসবেন আমার কাছে…।” ইমানের কথা মতোই নুরু মেয়া দুপুরে রেহানকে বাড়িতে নিয়ে এলো,ইমান মিমের ছবি দেখে ঠান্ডা মাথায় রেহানকে জিজ্ঞেস করলো,
– “আব্বু,তোমার কি সম্পর্ক ওনার সাথে…?” রেহান সামনে থাকা জুসের গ্লাস থেকে জুস খেয়ে বললো,
– “উনি আমার ফুফি…! আমরা প্রায় আট মাস ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছি তাকে…। তারপর একদিন আমি আমার ফুফি কে দু’টো বাচ্চা সহ টি.এস.সি তে দেখেছিলাম আর বাচ্চা গুলো মা মা বলে ডাকছিল তাকে…।
হয়তো তারাই হবে আমার ফুফির ছেলে মানে আরকি আমার ছোটো ছোটো ভাই,কিন্তু আমি সত্যি খুঁজে পেতে চাই তাকে।
বাবা ফুফিকে অনেক ভালোবাসেন এতো মাস ধরে ফুফিকে খুঁজে না পেয়ে তিনি কেমন একটা একগুঁয়ে স্বভাবের আর রগচটা মেজাজের হয়ে গেছে…।”
তখন হঠাৎ কিছু একটা পরে যাওয়ার শব্দ হলো,ইমান এবং রেহান তাকিয়ে দেখলো মিম অবাক হয়ে দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে।রেহান ফুফিকে দেখা মাত্রই ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো,মিম কাঁদতে কাঁদতে ওর গায়ে মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে কপালে চুমু খেয়ে বললো,
– “বাবা কেমন আছো তুই? তোর আব্বু আম্মু কেমন আছে? আর কি করেই বা খুঁজে পেলি আমাকে…?” রেহান ফুফিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “ফুফি কেমন আছো তুমি? তুমি এখুনি বাসায় ফিরে চলো আমার সাথে…। তুমি জানো তোমাকে খুঁজে না পেয়ে বাবা কেমন হয়ে গেছে…?”
.
– “আমি জানতাম না বাবা তোরা চলে এসেছ দেশে…। আমি কতবার তোদের ফোন নম্বরের জোগাড় করার চেষ্টা করেছি কিন্তু পেরে উঠিনি কোনো ভাবে…।” তখন জাবিন এবং আজিন এসে ইমানকে রাগী গলায় বলল,
– “ড্যাড, ওই ছেলেটা ওভাবে কেন জড়িয়ে ধরেছে আমাদের আম্মুকে…?” ছেলেদের এতো টা হিংসে করতে দেখে ইমান মিটিমিটি হেসে বললো,
– “ও তোমাদের মামাতো ভাই…! রেহান ভাইয়া,আট মাস আগে দেশে এসেছে বিদেশ থেকে…।” দু’জনেই খুব এক্সাইটেড হয়ে বলল,
– “আমাদের একটা মামা আছে? আবার ভাইয়াও? ও হ্যাঁ,ভাইয়ার গল্প আমরা শুনেছি আম্মুর কাছে…।” ততক্ষণে বাড়ির সবাই জড়ো হয়ে গেলো,ইফতি সাহেব সব শুনে বললেন,
– “তাহলে তো আমাদের এখুনি যেতে হয় রুদ্র বাবা আর নেহা বউ মায়ের কাছে…।” রেহান বললো,
– “এসেছি যখন,তখন আমি খালি হাতে ফিরতে চাই না…। আমার ফুফিকে নিয়েই যাবো নিজের সাথে।”
এদিকে প্রায় সন্ধ্যা হতে চললো,ছেলের কোনো খোঁজখবর না পেয়ে নেহা দুশ্চিন্তায় পরে গেছে।তখন রেহান বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে বাবা এবং মা কে উদ্দেশ্য করে বললো,
– “দেখ তোমরা, রহমতের দ্বিতীয় দিনে আমি কাদের নিয়ে এসেছি নিজের সাথে…।” ছেলের কথা শুনে দু’জনেই ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে ফিরে তাকালো আর দেখতে পেলো হাসিমুখে মিম দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।রুদ্রের যেন বিশ্বাস হচ্ছে না,তবুও হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেলো নিজের আদুরে বোনের কাছে…। মিম রুদ্র কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,রুদ্র কাঁদতে কাঁদতে বোনের মাথাটা বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,
– “কোথায় ছিলি এতদিন তুই? কোথায় কোথায় আমি খুঁজে বেড়িয়েছি তোকে…।” ইমান রুদ্রের কাঁধে হাত রেখে বললো,
.
– “রাগ করবেন না ভাইয়া ওর কোনো দোষ নেই তাতে…। আমরা আপনার এবং ভাবির ফোন নম্বরের জন্য অনেক অনুনয় বিনয় করেছিলাম কিন্তু কোনো সাহায্য পাইনি ও বাড়ি থেকে…।” ইমানের কথা শুনে রুদ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো,তখন জাবিন আর আজিন এসে রুদ্রকে জিজ্ঞেস করলো,
– “তুমি আমাদের বড় মামা…! তোমার অনেক গল্প শুনেছি আম্মুর কাছে…।” সাথে সাথেই নেহা এসে ওদের কোলে তুলে নিয়ে বলল,
– “আর আমি তোমাদের মামী…! মা কখনো আমার গল্প করেনি তোমাদের কাছে…।” আজিন হাসতে হাসতে বলল,
– “করেছে তো খুব ভালোবাসে মা তোমাদের সবাইকে…।” রুদ্র রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো,
– “আমি যে দেশে ফিরে এসেছি এ ব্যাপারে ও ওরা কিছু বলেনি তোকে…?” মিম বললো,
– “না ভাইয়া…।” রুদ্র নেহাকে বলল,
– “তুমি আবার আমাকে সম্পর্ক ঠিক করতে বলো ওই ছোটো লোকের বাচ্চার সাথে…?” ইফতি সাহেব রুদ্র কে বললেন,
– “বাবা শান্ত হও…! এখন রাগারাগি করো না এভাবে…?” রুদ্র বলল,
– “আমি কি করে শান্ত হই আঙ্কেল বলেন আমাকে…? আমি শান্ত হতে পারছিনা কারণ আমার বোন ওদের জন্য কষ্ট পেয়েছে…। আমি বিদেশে গিয়ে লেখাপড়া করি তারা সেটা সাপোর্ট করতো না,শুধুমাত্র আমার একমাত্র বোন টাই তখন ছায়ার মতো ছিল আমার পাশে।
.
আমার আজ এতো বড় হওয়ার পেছনে সত্যি বলতে আমার পরিবারের কোনো অবদান নেই,অবদান ছিলো আমার স্ত্রী এবং একমাত্র বোনের ঠিক আছে…?
আমার বাবা চাইতো আমি পলিটিক্স করি,সেটা করি,যেটা আমি কখনোই করতে চাইনি মন থেকে আর হ্যাঁ আঙ্কেল বাড়ি থেকেও বিতাড়িত হয়েছিলাম নিজের বাবা-মায়ের পছন্দে বিয়ে করিনি দেখে আর এখন আমি যখন টাকার কুমির…।
তখন সব এসে বসে থাকে পায়ের কাছে,এদের লজ্জা নেই,থাকলে কেউ এমন টা করে না কি নিজের আপনজনের সাথে…?” মিম হঠাৎ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে থেকে হাঁপিয়ে উঠলো,ইমান এবং রুদ্র মিলে ধরে বসিয়ে দিলো তাকে আর তখন পাশের মসজিদ থেকে আজানের শব্দ শোনা গোলো,নেহা ঝটপট শরবতের গ্লাস এনে দিতে লাগলো সবার হাতে হাতে…।
ইমা আর প্রমী ও ওকে হাতে হাতে সব এগিয়ে দিতে লাগলো,রুদ্র বোনকে আদর করে এটা-সেটা খাইয়ে দিতে লাগলো নিজের হাতে…। তারপর ভাগ্নেদের কোলে তুলে নিয়ে খুব গল্প করতে লাগলো,জাবিন এবং আজিন খুব খুশি হয়েছে মামা মামী কে দেখে,রেহান এগিয়ে এসে ভাইদের বললো,
– “চলো ভিডিও গেইম খেলবে…?” ওরা লাফাতে লাফাতে চলে গেলো রেহানের সাথে…। নেহা মিমকে ধরে নিজের বেডরুমে নিয়ে গেলো,তারপর অনেক অনেক গল্প করতে লাগলো তার সাথে…। একে একে ইতি,ইমা,প্রমী আর রিকিয়া এসে ওদের সাথে যুক্ত হলো কথায় কথায় নেহা মিমকে বলল,
– “বুঝতে পারছি আমার দুলাভাই সারাক্ষণ তোর জন্যে পাগল হয়ে থাকে…।”
– “মিম লজ্জা পেয়ে চুপ করে রইলো।” ইমা বলল,
– “ভাইয়া এক মুহূর্ত না দেখে থাকতে পারেনা তাকে…।” রিকিয়া হাসতে হাসতে বললো,
– “এদের হলো টোনাটুনির সংসার,যে কেউ তাদের সুখ দেখে হিংসায় জ্বলে পুড়ে যাবে…।” মিম হাসতে হাসতে নেহাকে বলল,
.
– “চলো ভাবি রান্নাঘরে যাই! কত মানুষের রান্নাবান্না করতে হবে।” নেহা বললো,
– “তা নিয়ে তোকে এতো ভাবতে হবে না…। আমার বাড়িতে রান্নাবান্না করার জন্য দু’জন লোক আছে।” মিম নিশ্চিন্তে বসলো নেহা কিছুক্ষণ পর গিয়ে দুধ বানিয়ে নিয়ে আসলো জাবিন এবং আজিনকে খাওয়াতে…।
কিন্তু তারা দু’জনেই এখন রেহানের ফ্যান তাদের আর পায় কে? রান্নাবান্না শেষ হতেই মিম তিনজনকে ভাত মেখে খাইয়ে দিলো,ইমান রেহানের ঘরে অনেক বইপত্র দেখে জিজ্ঞেস করলো,
– “বাবা তুমি বইপোকা না কি? বই পড়তে খুব ভালো লাগে?” রেহান বলল,
– “হুমম আর আমি এই অভ্যাস টা পেয়েছি আমার বাবা ও ফুফির কাছ থেকে…।” ইমান মিটিমিটি হেসে বললো,
– “বুঝেছি,তবে আমার জাবিনের ও পড়াশোনা করতে খুব ভালো লাগে কিন্তু আজিন টা হলো মহা ফাঁকিবাজি মোটেও পড়াশোনা করতে চায় না সে…।” আজিন গাল ফুলিয়ে বলল,
– “ড্যাড তুমি আমার নামে মিথ্যে কথা বলছ কেন? আম্মু তুমি একটু বকে দাও ড্যাড কে…।” মিম হাসলো ইমানকে বলল,
– “এই তুমি যাও তো এখান থেকে…।”৷ ইমান হাসতে হাসতে ঘরের বাহিরে চলে এলো তখন রুদ্র ইমানকে ধন্যবাদ দিয়ে বললো,
– “আমার বোনকে নিজের কাছে সামলে রাখার জন্য আমি চিরকৃতজ্ঞ তোমার কাছে…।” ইমান রুদ্রকে জড়িয়ে ধরে বলল,
.
– “এভাবে বলবেন না ভাইয়া,এমন টা যদি হয়েও থাকে তাহলে আমি সব থেকে বেশি কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে…।
আমার মা হারা সন্তানেরা মা পেয়েছে কারণ আপনার বোন নিজের সবটা দিয়ে ভালোবেসেছে আমাকে এবং তাদেরকে…। তাকে ছাড়া এখন আমার পুরো পরিবার টা অচল এর থেকে আমি বেশিকিছু বলতে চাই না আপনাকে…। ভাইয়ের বাড়িতে আসার পর থেকে মিম আদর আহ্লাদ যেন কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে।
ওখানে একমাস কাটিয়ে আসার পর নিজের বাড়িতে ফিরে আসতেই আবারও সেই শশুর শাশুড়ির আদর আহ্লাদে তার দিন গুলো বেশ ভালোই কাটছে…। এরি মাঝে একদিন রিকিয়া মিমকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলো,
– “কি ব্যাপার বান্ধবী…? তোমার দিনকাল কেমন যাচ্ছে…?” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “আলহামদুলিল্লাহ বান্ধবী,তোমার খবর কি? নিজে কিছুই যে জানালে না আমাকে…!” রিকিয়া হাসতে হাসতে বলল,
– “সত্যি বলতে প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে এ বাড়িতে আমার আদর দশগুণ বেড়ে গিয়েছে আর আমি কখন কি খাবো না খাব আমার শাশুড়ি মা সব ঠিক করে রাখছে…। তবে তুমি তো জানো আমার শশুরের শরীর টা তেমন একটা ভালো নেই,তবুও বাবা মাঝেমধ্যে আমাকে এটা-সেটা এনে খাওয়াচ্ছে কিন্তু আমার বড় ননদ টা হলো একটা শাঁকচুন্নি…।
ডিভোর্সের পর এ বাড়িতে এসে আমাকে খুব জ্বালাচ্ছে।কিন্তু আমার তাকে কিছুই বলতে হচ্ছে না কারণ যাদের মেয়ে তারাই তাকে খুব শাসন করছে আর রইলো বাবুর আব্বুর কথা,সে তো মেয়ের আশায় আল্লাহ তাআ’লার দরবারে প্রাণপাত করছে আর আমার ওই চুন্নি ননদ আমাকে কিছু বলতে এলেই মা বলছেন,’খবরদার আমার ছেলের ঘরের প্রথম নাতিনাতনি ল,তার কোনো ক্ষতি হলে তোমার খবর আছে।’ যদিও আমি চুন্নি ননদ কে কোনো দোষ দেবো না,ডিভোর্স হওয়ার পর মেয়ে টা কেমন যেন হয়ে গিয়েছে ও আগে বেশ ভালোই ছিল কিন্তু আমার আর নিজের ভাইয়ের সুখ বোধহয় সহ্য হচ্ছে না তার কাছে…।” মিম বলল,
.
– “থাক এভাবে বলো না,ওর কথা ভেবে আমারও খুব কষ্ট হচ্ছে…। স্বামী চরিএহীন হলে একজন স্ত্রী’এর কি যে জ্বালা,সে শুধু সেই বোঝে…।” রিকিয়া দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
– “তা আমার ইমান কোথায়…? অফিসে গেছে?” তখন হঠাৎ শুনতে পেলো মিম কাকে যেন বলল,
– “এই আমাকে খোঁচাচ্ছিলে কেন…? অফিস যাচ্ছ না কেন কাল থেকে…?” ইমান মিমকে জড়িয়ে ধরে বলল,
– “ওয়ার্ক ফরম হোম সুইটহার্ট…! খুব তাড়াতাড়ি আমাদের অনাগত সন্তান আসতে চলেছে…।” মিম ভ্রু কুঁচকে বললো,
– “সে নয় বুঝলাম…! তবে তোমার মতিগতি তো ঠিক লাগছে না আমার কাছে…?” ফোনের ওপাশ থেকে রিকিয়া হাসতে হাসতে বলল,
– “আসলে বান্ধবী! তোর জামাই না কিছু-মিছু চাইছে,তুই দয়া করে কিছু-মিছু টা দিয়ে শান্ত কর তাকে…।” মিম দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
– “থামবি তুই না আমার পক্ষ থেকে আড়ং ধোলাইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে…?” রিকিয়া হাসতে হাসতে বলল,
– “তোর জামাইয়ের বহুত কারেন্ট ভাই এতো কারেন্ট আবার নাই আমাদের কাছে…।” তখন হঠাৎ মিম বুঝতে পারলো রিকিয়াকে কে যেন খোঁচাচ্ছে,তাই ও হাসতে হাসতে বললো,
– “বুঝতে পারছি বান্ধবী…! এখানে সবার সমান সমান কারেন্ট আছে…। এখন রাখি…? তোমার জামাইয়ের কারেন্ট কমলে ফ্রী হয়ে ফোন দিয়ো আমাকে…।” রিকিয়া পুরো বোকা বনে গিয়ে হাসি হাসি মুখ করে অনিকের দিকে তাকিয়ে আছে…। ইমান মিমকে জড়িয়ে ধরে বললো,
.
– “আসো একটু শক দেই তোমাকে…?” মিম মিটিমিটি হেসে বলল,
– “তোমার উদ্দেশ্য কি হুমম…? এমন একটা চোরচোর ভাব নিয়ে তুমি কেন তাকিয়ে আছো আমার দিকে…।” ইমান মিমের কপালে চুমু খেয়ে বললো,
– “প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে দেখতে আরো বেশি সুন্দর লাগে তোমাকে…। বাবু হওয়ার পর ও এরকম থাকলে আমি বাড়িতেই স্যাটেল হয়ে যাবো বউ! ওয়ার্ক ফরম হোম ঠিক আছে…?” মিম লজ্জায় ইমানের বুকে মুখ লুকোলো,ইমান আদর করতে লাগলো তাকে…।
কিছুদিন পর রিকিয়া অনিক কে সাথে নিয়ে বাড়িতে বেড়াতে এলো।মিমের ঘরে ঢুকে ওকে চুল মুছতে দেখে বলল,
– “বাব বাহ! বাচ্চা পেটে ওদিকে কারেন্ট কমে না কারো,সকাল সকাল এ তুমি কি দেখালে বান্ধবী আমাকে…?” মিম বললো,
– “থামবি তুই? এতো আজাইরা চিন্তাভাবনা তোর আসে কোথা থেকে…? না মানে আমার জামাই কি নিষ্কর্মা,যে সারাক্ষণ বেডরুমে পরে থাকবে আমার সাথে?” মিমের কথা শুনে রিকিয়া হাসতে হাসতে বলল,
– “সে যাই থাক…! তোর জন্য একটা সু-খবর আছে,না আসলে তোর মেয়েকে আমি আমার ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাই আর তাই খবরদার আগে থেকে জানিয়ে রাখলাম মনের ভুলে নৌকা বাঁধার চেষ্টা করবি না অন্য ঘাটে…। তখন নেহা মিমের ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
– “তুমি কে ভাই যে নজর দিয়ে বসে আসো আমার ছেলের বউয়ের দিকে…?” নেহার কথা শুনো রিকিয়া তব্দা খেয়ে তাকিয়ে রইলো মিম হাসতে হাসতে বলল,
.
– “যুদ্ধে,যে জয়ী হবে রাজকন্যা যাবে তার সাথে…।” আর তখুনি দু’জনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়ে গেলো মিম ধীর পায়ে ঘর থেকে হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলো ইমার সাথে…। মিমের দিন কাল বেশ ভালোই চলছে এ বাড়িতে এর মধ্যে লোক মারফত খবর এলো হাবিব সাহেব গুরুতর আহত হয়ে ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।মিম সে খবর শোনা মাএই কেঁদেকেটে বাবার জন্য অস্থির হয়ে পরেছে…। মিম যদি অসুস্থ হয়ে পরে,সেই ভয়ে ইমান আর অপেক্ষা করেনি ওকে হাবিব সাহেবকে দেখাতে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে।মিম হাসপাতালে পৌঁছে জানতে পারে হাবিব সাহেবকে আই.সি.ইউ তে রাখা হয়েছে।মিম বেশ ভয় পেয়ে মনে মনে আল্লাহ তাআ’লা কে ডাকছিল ঠিক তার পাঁচ মিনিট পর ডক্টর ইব্রাহিম চৌধুরী এসে বললেন,
– “পেসেন্ট’এর জ্ঞান ফিরেছে…!” মিম উঠে দাঁড়িয়ে ডক্টরের কাছে এগিয়ে যেতেই আনির মিমকে বলল,
– “তুমি কেন দেখতে এসেছ আমার বাবাকে…?” মিম রেগে গিয়ে বললো,
– “তার কৈফিয়ত তো আমি দিতে যাবো না তোমাকে? আর কে তুমি ? যে এতো বড় বড় কথা বলছ আমাকে…? উনি আমার আমার জন্মদাতা আর তাই তোমার থেকে আমার অধিকার তার ওপরে অনেক অনেক টাই বেশি ঠিক আছে…?”
– “তাই বুঝি…? তাহলে কেন সেদিন মেনে নাওনি বাবার সিদ্ধান্ত টা কে…? শোনো আপু,আজ যা হয়েছে তার জন্য তুমি দায়ী কারণ আরিশ ভাইয়া হয়তো তোমার জন্যই বাবার গায়ে হাত তুলেছে…।” মিম হাসতে হাসতে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
– “তাহলে এতোদিন পরে তোকে ঠিক চিনলাম আমি আর আমার বড় ভাই তোকে একদম ঠিক চিনেছে? আমার বাবার আদর্শ সন্তান হওয়ার জন্য তোমার এতো নাটক তাই না? তবে তোমার এই লো বাজেটের নাটক মোবারক তোমাকে…। আর হ্যাঁ,আমি এখানে কোনো ঝালেমা করতে আসিনি,আমি শুধু দেখা করতে এসেছি আমার বাবার সাথে…।” অনির বলল,
.
– “আমার বাবা তোমার সাথে দেখা করতে চায় না।” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “সেটা আমি নিজের কানে শুনতে চাই আমার বাবার মুখ থেকে…।” তখন নার্স এসে ডক্টর ইব্রাহিমের কানে কানে কি যেন বলল,ডক্টর ইব্রাহিম বললেন,
– “হাবিবুর রহমান সাহেব দেখা করতে চান তার মেয়ের সাথে…।” মিম এবং অনির দু’জনেই দরজার কাছে এগিয়ে গেলো,তখন ডক্টর বললো,
– “যে কোনো একজন দেখা করতে পারবে পেসেন্টের সাথে…।” অনির হাসতে হাসতে মিমকে ফেলে রেখে হাবিব সাহেবের কেবিনে ঢুকে গেলো হাবিবুর রহমান সাহেব দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠলো,
– “আমি ডেকে পাঠাইনি তোমাকে…।” কথা টা শুনে আনিরের ঠোঁটে হাসি মিলিয়ে গেলো,পা থেমে গেলো সাথে সাথে..। হাবিবুর রহমান সাহেব স্পষ্ট দেখতে পেলেন তার মেয়ে,তার নিজের সন্তান দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।উনি মৃত্যু হেসে বললেন,
– “আম্মু (মিম) ভেতরে আসো…।” ইমান মিমকে ধরে কেবিনে নিয়ে বসিয়ে দিলে হাবিব সাহেবের পাশে।বাবাকে এমন অবস্থায় দেখে মিম তার গায়ে হাত বুলোতে বুলোতে কেঁদে ফেললো সাথে সাথে কারণ সে হয়তো কখনো বুঝতেই পারেনি তার শক্তসমর্থ বাবা টা কে এভাবে দেখতে হবে তাকে…। হাবিব সাহেব মেয়ের চোখের জল মুছে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
.
– “ক্ষমা কে দাও মা আমার মানুষ চিনতে ভুল হয়ে গেছে কিন্তু বিশ্বাস করো আমি কখনো তোমার খারাপ চাইনি।
আমি সর্বদা সুখে দেখতে চেয়েছি তোমাকে…। আমি তুমি যাকে পছন্দ করতে তার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ছিলাম।
জানতে পারি,দুই সন্তানের বাবা আর তুমি যদি আবেগের বসে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নাও,তাই তড়িঘড়ি করে তোমার বিয়ে টা দিয়ে দিয়েছিলাম আরিশের সাথে…।
ভেবেছিলাম বাড়ির ছেলে,তাহলে আমার একমাত্র মেয়ে সারাজীবন থাকবে আমার সামনে এবং আমার কাছে কিন্তু বুঝতে পারিনি ওরা তোকে প্রতিনিয়ত কষ্ট দিচ্ছে,তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে আমার মেয়ে টা কে…। তুই যখন বাড়ি ছেড়ে চলে এলি,তখন আমার ও মনেছিল আমার মেয়ে কেন সহ্য করবে ওই ছেলেটা কে…? যখন দেখলাম এসে ক্ষমা চাইছে,ভাবলাম একটা সুযোগ দেওয়াই যায় ছেলে টা কে,
তবে ভাগ্যিস তুই দাওনি,চলে এসেছিলি বাড়ি থেকে…।আমি রাগ হয়েছিমাল ঠিকই কিন্তু সন্তান টা যে আমার তার জন্য ভালোবাসা আমারো আছে।” মিম কাঁদতে কাঁদতে বলল,
– “বাদদেও তুমি পুরোনো ওসব কথা আরিশ কেন মেরেছে তোমাকে…?”
– “আমি ওর নতুন বিজনেসের জন্য কোনো টাকা দেইনি বলেছিলাম,” নিজে যোগার করে নাও যে কোনো ভাবে,কারণ ওর সম্পর্কে ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে আমি যা জানতে পেরেছিলাম তাতে ওর এবং তোর ফুফির ওপর থেকে আমার সমস্ত ভরসা উঠে গেছে।আমাকে ক্ষমা করে দে মা,আমি আর কখনো কষ্ট দেবো না কিংবা বাড়ি থেকে চলে যেতে বলবো না তোকে…।” তখন হঠাৎ জাবিন এবং আজিন হাবিবুর রহমান সাহেবের কেবিনে ঢুকে পরে বলল,
– “আশ্চর্য! আমরা জানতাম না তো আমাদের একটা নানাভাই ও আছে…?” ওদের বিষ্ময়কর কর চাওনি দেখে আর কথাবার্তা শুনে সবাই হেসে ফেললো সাথে সাথে…। হাবিব সাহেব কিছুদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে অনেক বড় অনুষ্ঠান করে মেয়ে জামাই কে নিয়ে আসলেন বাড়িতে…। মেয়ের ঘরের নাতিদের পেয়ে তিনি বেশ খুশি আবার বড় ছেলের সাথে ও ঝামেলা মিটমাট হয়ে গেছে।
.
তবে রহিমা মেয়ের সাথে কথা বলতে ভয় পান,মেয়ে বাড়ি এসে এখন পর্যন্ত কথা বলেনি তার সাথে…। মিম ঘরে বসে ভাবিদের সাথে গল্প করছিল,তখন মা কে দরজার আড়ালে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
– “কিছু বলতে চাও তুমি আমাকে…?” রহিমা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন,বললেন,
– “সুখী হও মা,আল্লাহ তাআ’লা অনেক ভালো রাখুক তোমাকে…।” হাবিব সাহেব ইমানকে কোর্টে নিয়ে কিছু জায়গাজমি আনিরের নামে লিখে দিয়ে বললেন,
– “তোমার মুখ দেখাবে না আমাকে কখনো,আমি আর কেন সম্পর্ক রাখতে চাই না তোমার সাথে।” অনির কিছু বলতে চাইলো,তখন হাবিব সাহেব বললেন,
– “তুমিই আমাকে বলেছিলে না মিম বিয়ে ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে ইমানের সাথে…।অথচ তখন একবারও আমার মাথায় আসেনি আমার মেয়ে টা কখনো সামনা-সামনি দেখেনি ছেলেটা কে…। তাহলে এটা কি করে সম্ভব? ভূতে করে দিয়ে গেছে?” অনির অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো,হাবিব সাথে কোর্ট থেকে হনহন করে বেড়িয়ে গেলো ইমানের সাথে…।অতঃপর ইমানকে অনুরোধ করে বললেন,
.
– “বাবা এই কথা গুলো তুমি কখনো মিমকে বলো না,তাহলে আমার মেয়ে টা আরো বেশি কষ্ট পাবে,ও হয়তো ভাবতেই পারবেনা ওর বোন এতো টা খারাপ চোখে দেখে ওকে আর আরিশ ও আর এ জীবনে বের হতে পারবে না জেল থেকে…।” ইমান মৃদু হেসে বলল,
– “আপনি এতো ভাববেন না বাবা! ইনশাআল্লাহ্,সব ঠিক হয়ে যাবে।” দেখতে দেখতে মিমের ডেলিভারির ডেট এসে গেছে রাত আটটা পয়তাল্লিশ মিনিটে ফুটফুটে একটি ছেলে আর মেয়ের জন্ম দিয়েছে সে…। জমজ সন্তানের বাবা হওয়ার পর ইমানের খুশি যেন আকাশচুম্বী হয়ে গেছে।বেশ কিছুক্ষণ পর মিমের জ্ঞান ফিরতেই তাকিয়ে দেখে ইমান ওর মাথায় হাত বোলাচ্ছে পাশে বসে।বাচ্চার কাছে দোলনায় জাবিন,আজিন,রোহান,ইভান মিলে খেলছে তাদের সাথে…। ইমান কিঞ্চিৎ ঝুঁকে মিমের দু’ই গালে চুমু খেলো,মিম তীব্র ভালোবাসার অনুভূতি অনুভব করে নিজের চোখ বুঝে ফেললো সাথে সাথে…। ইমান মিটিমিটি হেসে ফিসফিস করে ওর কানে কানে বলল,
– “সারা জীবন এভাবেই থাকবে তো আমার পাশে…?” মিম বলল,
– “হুমম…!” ইমান তারপর শক্ত করে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো তাকে…। যার অর্থ,'”আমি শুধুই ভালোবাসি তোমাকে আর বছরের পর বছর এভাবেই আমি ভালোবেসে যেতে চাই শুধু তোমাকে…।’
.
<>সমাপ্ত<>

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com