তীব্র ভালোবাসার অনুভূতি । পর্ব - ০৮
চলুন,এতো দুশ্চিন্তা করে কি হবে? বাচ্চারা যথেষ্ট ম্যাচুওর এমন কোনো কাজ করবে না যাতে ওদের কোনো ক্ষতি হবে।” মিম হাসিমুখে ইমানের সাথে বাড়ির বাহিরে পা রাখলো আর তখনি রিকিয়া’র দুর্ভাগ্য শুরু হয়ে গেছে।আজিন ওর টয় ট্রেন টা খুঁজে বেড়াচ্ছিল,খুঁজে না পেয়ে কেঁদে কেটে পুরোপুরি একাকার করেছে।
ওর কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে রিকিয়া যখন ওকে টয় ট্রেন টা খুঁজে দিতে ঘরে এলো,দেখলো,আজিন পুরো ঘর ট্রেন টা না খুঁজে পেয়ে পুরো ঘর নোংরা করে ফেলেছে।রিকিয়া ঘরে এসে আজিনের ওপরে চিৎকার করে বলল,
– “এতো অসভ্য কেন তোমরা? পুরো ঘর কেন নোংরা করেছ এভাবে?” আজিন রিকিয়া কে বললো,
– “দেবো? দেবো? ড্যাড কে ফোন দেবো? তোমার ব্যাপারে নালিশ করবো তার কাছে?” রিকিয়া চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো ঘর গোছাতে লাগলো,জাবিন নিজের অংক বই আর খাতা নিয়ে এসে রিকিয়া কে বললো,
– “চাচি,তাড়াতাড়ি অংক গুলো দেখিয়ে দাও…। এরপর আমার অন্য পড়াশোনা আছে।” রিকিয়া এক হ্রাস বিরক্তি নিয়ে জাবিন কে পড়াতে বসলো,আজিন এসে বলল,
– “এই যে নাস্তা কখন করবো আমি…? ঘড়িতে দেখেছ কয় টা বাজে? ওঠো ওঠো প্লিজ ওঠো,ঝটপট দুধ বানিয়ে দাও আমার কিন্তু খুব খিদে লেগেছে।” রিকিয়া আজিন কে বলল,
– “তোমার খিদে লেগেছে তো আমি কি করবো? জেইদা কে গিয়ে বলো তোমাকে দুধ বানিয়ে দিতে।” জাবিন হাসতে হাসতে বলল,
.
– “কুচুটে জেইদা, আজ তোমার কোনো কাজ করে দিতে পারবে না চাচি…। আমার ড্যাডে’র বারণ আছে।”
– “মানে কি বলতে চাইছ তুমি?”
– “বলতে চাইছি কোনো সমস্যা হলে ফোন করো তুমি আমার ড্যাডে’র কাছে।” রিকিয়া রেগে গেলো,বলল,
– “চুপ করো তুমি জাবিন…। আর একদম জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করবে না আমাকে…।” জাবিন পায়ের ওপরে পা তুলে নিজের বাবার স্টাইলে বসে বললো,
– “যাও…! গিয়ে দুধ বানিয়ে এনে খাইয়ে দাও আমার ছোটো ভাইয়া কে…। আর নয়তো ড্যাড কে ফোন করে দেবো।
তখন বুঝতে পারবে কেন আমার ড্যাড বিয়ে করতে চাইছে না তোমাকে।” রিকিয়া বলল,
– “কেন?”
– “মানে কি? আমার ড্যাড কি এমনি এমনি বিয়ে করবে না কি তোমাকে? তুমি দেখতে সুন্দর,কিন্তু কেমন যেন তুমি একদম ভালো লাগে না তোমাকে…।” রিকিয়া রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো,
– “জাবিন,প্লিজ! মুখ সামলে কথ বলো আমার সাথে।” তখন আজিন এসে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি রিকিয়ার মুখে ছুড়ে মেরে বলল,
– “কি হলো যাও? গিয়ে দুধ বানিয়ে এনে দাও আমাকে…।” রিকিয়া আজিন কে চড় মারার জন্য এগিয়ে গেলো,জাবিন বলল,
– “ওয়েট চাচি,একটু ভালো করে পোজ দাও প্লিজ! ড্যাড কে হোয়াটস অ্যাপে ভিডিও পাঠাতে হবে।” রিকিয়া রাগে গজগজ করতে করতে কিচেনে চলে এলো,আজিন জাবিন কে হাই ফাইভ দিয়ে বললো,
– “তাড়াতাড়ি কিচেনে চলো ভাইয়া,জনো ওখানে না সেই মজা হবে।” জাবিন আজিন কে সাথে নিয়ে কিচেনে চলে এলো রিকিয়া কে বলল,
– “শুধু কি ছোটো ভাইয়ার জন্য দুধ বানালে হবে? আমার জন্য ও দুধ বানাও চাচি নয়তো আমাকে কি করে খাওয়াবে?” রাগে রিকিয়া টেবিলে লাথি মারলো,তা দেখে জাবিন বলল,
– “আরে আরে চাচি? ব্যাথা পেয়েছ? ডক্টর ডাকতে হবে?” পাশ থেকে আজিন বলল,
– “সরি…! আমাদের ফোনে টাকা নেই তোমার ফোন থেকে ফোন করি ডক্টর আঙ্কেলের কাছে?” রিকিয়া দু’জন কে ঝাড়ি মেরে বললো,
.
– “বেয়াদব ছেলেপেলে দূর হও আমার চোখের সামনে থেকে।” আজিন বলল,
– “শোনো,দুধ ঠিক মতো না বানালে ড্যাড কে বলে তোমাকে বের করে দেবো বাড়ি থেকে..। রিকিয়া রাগে কাঁপতে কাঁপতে হাতের চামচ টা আজিনের গয়া ছুড়ে মারলো,কিন্তু সেটা গিয়ে পরলো জাবিনের পায়ের কাছে।জাবিন রেগে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
– “চাচি,ওই বিস্কুটের ডিব্বা টা নামিয়ে দাও না আমাকে…।” রিকিয়া যখন বিস্কুটের ডিব্বা নামাতে গেলো,তখন হাত থেকে ডিব্বা উল্টে পরে গিয়ে আটা মেখে ভূত হয়ে গেলো সে…।
আর দেখে জাবিন এবং আজিন হাসতে হাসতে দৌড়,আজিন জাবিন কে বলল,
– “ভাইয়া, একদম ঠিক হয়েছে।” দু’ই নাতির কথা শুনে ইতি হাসতে হাসতে ইমান কে ম্যাসেজ করে বললো,
– “সবে তো শুরু হয়েছে…!” এদিকে,মিম দুশ্চিন্তা করতে করতে ইমান কে বলল,
– “একটু বাড়িতে ফোন দিন না…! খোঁজ নিন,বাচ্চা দু’টো কি করছে,?” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “ওরা বাচ্চা না চৌবাচ্চা,কাজেই এতো ভাবতে হবে না আপনাকে…।” মিম আমতা আমতা করে বলল,
– “একটু খোলসা করে বলবেন,কেন বাসা থেকে এতো দূরে নিয়ে এসেছেন আমাকে…!” মিমের কৌতুহল দেখে ইমান মিটিমিটি হেসে বললো,
.
– “এমনি,আসলে আমি একটু কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে চেয়েছিলোম আপনার সাথে।” কথা টা শুনেই মিম বেশ লজ্জা পেলো ইমান তখন ছোলার বুটের সাথে চিড়া ভাঁজা এনে দিলো ওকে…। মিম চুপচাপ খেতে লাগলো,ইমান কে ও খাইয়ে দিলো নিজের হাতে।
ওদিকে,ফ্রেশ হয়ে রিকিয়া বাহিরে আসতে না আসতেই আজিন বলল,
– “এই তুমি খেতে দিবে না আমাকে…?” রিকিয়া আবারও কিচেনে ছুটে এলো,দুধ বানিয়ে নিয়ে এলো নিচে।
তা দেখে,জাবিন বললো,
– “এখন আমি এসব খাবো না…। যাও, গিয়ে চিলি চিকেন বানাও রেসিপি দেখে।” আজিন হঠাৎ দুধের গ্লাস টা মেঝেতে ছুড়ে মেরে বলে,
– “এই তুমি এটা কি বানিয়েছ? লবন দিয়েছ কেন এতে? দাদু মণি এটা কি দুধ? আমি ওর বানানো দুধ খাবানো না তাড়াতাড়ি তুমি ফোন করো আমার আম্মু মণির কাছে।” আজিন কে মন খারাপ করতে দেখে প্রমী এসে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বলল,
– “রাগ করে না সোনা…! তুমি তো জানো তোমার আম্মু মণি একটা জরুরী কাজে বাহিরে গেছে ড্যাডের সাথে।”
– “তবুও…ফোন করো,এই ডাইনি মহিলা জানো ছোটো ফুপি বড় একটা চামচ ছুড়ে মেরেছিল আমার দিকে।” নাতির কথা শুনে ইতি রেগে গিয়ে রিকিয়া কে বললেন,
– “তোমার সাহস তো কম না…। তুমি কোন সাহসে চামচ ছুড়ে মেরেছ এতোটুকু ছেলের বাচ্চার দিকে…?”
– “মা ও আমাকে খুব জ্বালাতন করছিলো।”
– “তো? তাই বলে,তুমি চামচ ছুড়ে মারবে ওর দিকে…? এতো সাহস কোই পেয়েছ তুমি? এতো আলগা রাগ তোমার আসে কোথা থেকে…?”
– “কিন্তু মা?”
.
– “মানলাম ও ভুল করেছে,তুমি বুঝিয়ে বলতে পারতে ওকে?” জাবিন বললো,
– “আমার ড্যাড কিন্তু এমনি এমনি তোমায় বিয়ে করবে না,ড্যাড কে বিয়ে করতে হলে তোমার আগে আমাদের দু’ই ভাই কে খুশি করতে হবে।” সাথে সাথে রিকিয়া চিৎকার করে বললো,
– “জাবিন?” ইতি বললেন,
– “যাও বউ মা কথা বাড়িয়ো না…। চিলি চিকেন বানিয়ে নিয়ে আসো,ওরা খাবে।”
– “কিন্তু মা…!” ইতি হাসতে হাসতে বললেন,
– “বউ মা,বিয়ে তো তুমি শুধু ইমান কে করছ না…। বাচ্চাদের ও দায়িত্ব নিতে হবে।” রিকিয়া বলল,
– “আমি কেন ওদের দায়িত্ব নিতে যাবো মা? আপনারা আছেন কি করতে?” ইমা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
– “তাহলে নিয়ো না…। বিয়ে করার ইচ্ছে ছেড়ে দাও ভাই কে…।” রিকিয়া জেইদা কে বলল,
– “আমার সাথে রান্না ঘরে আয়,চিলি চিকেন রান্না করেদে ওদের দু’জন কে…।” জেইদ বললো,
– “বড় ভাবি,আমি আধুনিক রান্নাবান্না করতে পারি না। এই সব খাবার বাড়িতে আসে নাম করা রেস্টুরেন্ট থেকে…।” রিকিয়া তখন রান্নাঘরে এসে ইউ টিউব দেখে রান্না চুলোয় চাপিয়ে দিলো,কিছুক্ষণ পর জাবিন এসে বলল,
– “চাচি গোসল করিয়ে দাও আমাকে…!” রিকিয়া বললো,
– “এতো বড় ছেলে হয়েছ আর নিজে নিজে গোসল করতে পারো না? দিবো? একটা দিবো? কানের নিচে?” জাবিন মিটিমিটি হেসে বলল,
.
– “দাঁড়াও! তুমি চাচি,ড্যাড ফোন করেছিল।আমি গিয়ে একটু কথা বলে আসি তার সাথে…?” রিকিয়া এক হ্রাস বিরক্তি নিয়ে এসে জাবিনের গায়ে হাত বুলোতে বুলোতে বলল,
– “চলো বাবা! তোমাদের দুই ভাই কে আজ আমি গোসল করিয়ে দিচ্ছি,চলো আমার সাথে।” জাবিন এবং আজিন দুষ্টু হাসি দিতে দিতে বাথরুমের দরজায় এলো রিকিয়ার সাথে…। রিকিয়া বেখেয়ালে দরজা ঠেলে বাথরুমে ঢুকতেই স্লিপ করে পরে গিয়ে বাথটাবে আর দেখে ওরা দু’জন হাসতে হাসতে শেষ,আজিন বলল,
– “দাঁড়াও…! তোমার নামে এখুনি নালিশ দিচ্ছি ড্যাডের কাছে।” অতঃপর,রিকিয়া নতুন ভিডিও গেইম এনে জাবিন আজিন কে দিলো,ওরা বললো,
– “আমরা ভিডিও গেইম খেলতে পছন্দ করি না,কেউ কখনো বলেনি তোমাকে?” রিকিয়া বলল,
– “চলো তাহলে কার্টুন দেখি…!” আজিন বললো,
– “হুমম..! নিজে দেখ কার্টুন একা একা বসে?” রিকিয়া তারপর দু’জন কে বকতে লাগল,আজিনের হাত থেকে রিকিয়ার ফোন টা ছিটকে পরে গেলো নিচে।
কিন্তু ও…চেয়ে ও আজিন কে কিছুই বলতে পারলো না কারণ শাশুড়ী দাঁড়িয়ে আছে নাতিদের কাছে।সকাল থেকে দুপুর অব্ধি রিকিয়া বাচ্চাদের কাছে নাজেহাল হয়ে ক্লান্ত হয়ে গেছে,তবু্ও সে উঠে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে ছুটে এলো,দেখলো তার চিলি চিকেন পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে।পুড়ে যাওয়া চিকেন দেখে জাবিন দাদা ভাই কে ফোন করে বললো,
.
– “দাদা ভাই, চাচি কি আজ সারাদিন না খাইয়ে রাখবে আমাদের দুই ভাই কে…।” নাতির ফোন পেয়ে বাড়িতে এসে ইফতি সাহেব ইমা কে জিজ্ঞেস করলেন,
– “মিম কোথায়? ও না দেখে রাখে আমার জাবিন আজিন দাদু ভাই কে…?” আজিন বলল,
– “আজ আমার আম্মু মণির ছুটি! তুমি কি ভুলে গেছো দাদু ভাই আজ কি কথা হয়েছিল বাবার সাথে?” নাতির চ্যাটাং চ্যাটাং কথা শুনে ইফতি সাহেব হাসতে হাসতে বললেন,
– “ওহ! তাহলে মিম নেই বাড়িতে…?” প্রমী বললো,
– “না নেই বাবা,ভাইয়া কোনো একটা জরুরী কাজের জন্য বাহিরে নিয়ে গেছে তাকে।” তখন এসে ফুলমতি বললেন,
– “দ্যাহো অবস্থা,মুই বেমালুম ভুইলা গেছি মা জননী (মিম) আব্বার (ইমান) লগে বাইরে যাও নের আগে সবার লাইগা রান্না কইরা রাইখা গেছে।” আজিন রাগে চোখ পাকিয়ে বলল,
– “আগে বলতে পারলে না তুমি? জানো আমার পেটে খুব ব্যাথা করছে।” ইমা এবং প্রমী মিলে সবাই কে খেতে দিলো,তখন জাবিন রিকিয়া কে বললো,
.
– “তুমি আজ খেতে বসবো না আমাদের সাথে…। আমার আম্মু হওয়ার খুব ইচ্ছে না তোমার? সব কাজ গুছিয়ে এসে তারপর খেতে বসবে ঠিক আছে?” ইফতি সাহেব না তি কে বললেন,
– “দাদু ভাই,এভাবে কথা বলতে হয় না কি বয়সে বড় মানুষের সাথে?” জাবিন বললো,
– “হয় না,কিন্তু আমরা কেউ পছন্দ করি না তাকে…।” রিকিয়া বলল,
– “এই তোমার কি এতোদিন ধরে বেয়াদবি শিখেছ ওই মেয়েটির কাছে?”
– “একদম আম্মু কে টেনে বাজে কথা বলবে না,নিজে কেনো চামচ ছুড়ে মেরেছিলে আমার ভাইয়ের দিকে..?” ইফতি সাহেব অবাক চোখের ভাগ্নীর দিকে তাকিয়ে রইলেন,ওদিকে মিম অবাক হয়ে ইমান কে বললো,
– “হঠাৎ রেস্টুরেন্টে কেন নিয়ে এলেন আপনি আমাকে…?” ইমান হঠাৎ মিমের পায়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে একটা জুয়েলারি বক্স এগিয়ে দিয়ে বলল,
– “দেখুন তো? জিনিস টা কেমন হয়েছে?” মিম বক্স টা খুলে বলল,
– “বাহ! ডায়মন্ড রিং টা তো অনেক সুন্দর,প্রপোজ করতে চলেছেন কাকে?” ইমান হঠাৎ মৃদু হেসে বলল,
– “উইল ইউ ম্যারি মি…!” কথা টা শুনেই মিমের শরীর যেন অসার হয়ে গেছে,ইমান মিম কে বলল,
– “শুধু সন্তানের জন্য চাইছি না…। নিজের জন্যে ও চাইছি আপনাকে…।” মিম থতমত খেয়ে বলল,
– “আপনার পরিবার এটা মেনে নেবে না।” ইমান বললো,
– “কে বলেছে? আমি কি এমন কিছু বলেছি আপনাকে…?” মিম বলল,
– “নাঃ…!”
– “তাহলে কেন ভয় পাচ্ছেন বিয়ের মতো একটা পবিএ সম্পর্কে জড়াতে…? শুনুন,আমি আপনার প্রাক্তন নই যার সাথে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়ে ছিল আপনাকে…। আমি আপনার সম্মতি নিয়েই আপনাকে বিয়ে করবো কারণ আপনার সিদ্ধান্ত অনেক ম্যাটার করে আমার কাছে।” মিম কোনো কথা বলল না,পরক্ষণেই আমতা আমতা করে বললো,
.
– “কিছুদিন ভেবে দেখার জন্য একটু সময় দিন আমাকে…!” ইমান মৃদু হেসে বলল,
– “দিলাম,আশাকরি আপনি ফিরিয়ে দেবেন না আমাকে…?” মিম চোখ বুঝে ফললো,অনুরোধ করে স্বরে বলল,
– “বাসায় নিয়ে জাবেন আমাকে…?” ইমান আধঘন্টা পর মিম কে নিয়ে বাসায় ফিরে এলো,তারপর একে একে সব ঘটনা শুনলো সবার কাছে,রিকিয়া ইমান কে বললো,
– “আমাকে শুধু আজ রাত টুকু সময় দাও! আমি নিশ্চয়ই নিজেকে ভালো ‘মা’ হিসেবে প্রমাণ করতে পারবো বাচ্চাদের কাছে।” জাবিন রিকিয়া কে বলল,
– “ইউ আর এ বিগ জিরো,ইউ আর গুড ফর নাথিং। আমরা এখন যাচ্ছি আম্মুর সাথে।” মিম দু’জন কে খাইয়ে দুপুরে ঘুম পারিয়ে দিলো,রাতে রিকিয়া এসে শুয়ে পারলো বাচ্চাদের সাথে…। কিছু সময় পেরুতেই না পেরুতেই,আজিন ঘুমন্ত রিকিয়ার গায়ে পা তুলে দিলো,রিকিয়া বিরক্ত হয়ে পা সরিয়ে দিলো নিজের শরীরে ওপর থেকে।তখন জাবিন বললো,
– “আমরা এভাবেই আম্মু কে জড়িয়ে ধরে ঘুমাই…তুমি এমন কেন করলে আজিনের সাথে?” রিকিয়া উওর দিলো না,কিছুক্ষণ পর,আজিন রিকিয়া কে ডেকে বলল,
– “চাচি! আমি হিসু করবো,বাথরুমে নিয়ে চলো আমাকে…।” রিকিয়া ঘুমঘুম চোখে বলল,
– “একা একা গিয়ে করে নাও না,ঘুমতে দাও আমাকে…।” জাবিন বলল,
– “ড্যাড কে বিয়ে করতে চাইলে ছোটো ভাইয়া কে বাথরুমে নিয়ে যাও নিজের সাথে,তারপর এসে আমাকে কমপ্ল্যান আর নয়তো হরলিক’স বানিয়ে দেবে জানো আমার রাতে কত খিদে লাগে…?” রিকিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
– “লাগুক! আমার কি তাতে? একবার তোমার বাবার বউ হয়ে এ বাড়িতে আসি,তারপর সায়েস্তা করবো এক এক টা কে…।” আজিন রিকিয়া কে বলল,
.
– “প্লিজ, আমার সাথে বাথরুমে চলো না চাচি? আমার একা-একা বাথরুমে যেতে ভয় লাগে…!” রিকিয়া আজিনের কথা শুনলো না,মুহুর্তেই আজিনের প্যান্ট ভিজে গেছে! সাথে সাথেই রিকিয়া আজিন কে ঠাস ঠাস করে দু’টো চড় মারলো,তারপর মুহূর্তেই রিকিয়া ছিটকে পরে গেলো বিছানা থেকে…। গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে ইমানের দিকে তাকিয়ে রইলো,ইমান বললো,
– “তোর সাহস তো কম না,তুই কোন সাহসে মেরেছিস ওকে?” ইফতি সাহেব ছেলে কে শান্ত করার চেষ্টা করলেন,বললেন,
– “বাবা! ও বুঝতে পারেনি আমি বুঝিয়ে বলছি ওকে।” ইমান বলল,
– “কি বুঝতে পারেনি তোমার ভাগ্নী? এখনো ফিডার খায় না কি সে?” বাবা আমার কথা শোন?
– “কি শুনবো? দাঁড়িয়ে আছো কেন? এখুনি এই ঘর থেকে বেড়িয়ে যাও,চলো যাও! ওই নষ্টা মহিলার সাথে…। তুমি কি অন্ধ বাবা? দেখতে পাও না? কি সমস্যা কি তোমার? চোখের জন্য ডক্টর দেখাতে হবে…?”
– “বাবা,বাবা…।”
– “কি বাবা বাবা করছ? যাও এখান থেকে…।” রিকিয়া এগিয়ে এসে ইমান কে বলল,
– “প্লিজ ইমান, আমার কথা শোনো?” ইমান ওকে ঘাড় ধাক্কা মেরে চিৎকার করে বললো,
– “অসভ্য যেন কোথাকার…! এখুনি বেড়িয়ে যা আমার বাচ্চাদের ঘর থেকে…।” ইফতি সাহেব এগিয়ে এসে ছেলের কাঁধে হাত রাখলেন,ইতি বললেন,
– “প্লিজ,এবার যে যার ঘরে চলো সকাল থেকে অনেক ড্রামা হয়েছে।” ইমান মিমের দিকে তাকিয়ে সবাই কে স্পেশালি রিকিয়া কে উদ্দেশ্য করে বললো,
.
– “ডিসিশান ফাইনাল, কালকেই আমার বিয়ে টা মিমের সাথে হচ্ছে।” ইফতি সাহেব ছেলে কে বললেন,
– “বাবা আমার কথা শোন…!” ইমান ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
– “তোমার কথা অনেক আগেই আমার শোনা হয়ে গেছে,এখন এই আপদ টা কে বাড়ি থেকে বিদায় করো এসে থেকেই এ বাড়িতে সবার অসহ্যের কারণ হয়ে উঠেছে আর তার নজর এতোটাই ভালো,
যে নিজের স্বামী মরতে না মরতেই দেওরের গলায় ঝুলে পরার শখ জেগেছে।
বেহায়া যেন কোথাকার এতোই যখন শরীরে জ্বালা,তখন অন্যত্র বিয়ে করেনে দেশে কি ছেলের অভাব পরেছে?” রিকিয়া আবারও ইমানের কাছে এগিয়ে এসে কিছু বলতে চাইলো,ইমান এবার গালাগালির পর্যায়ে চলে গেছে।মিম তখন সবাই কে অনুরোধ করে বললো,
– “প্লিজ, আপনারা সবাই এখন চলে জান এ ঘর থেকে…। আমি ওনাকে সামলে নেবো সাথে বাচ্চারা রাও আছে।” কেউ আর কোনো কথা বাড়ালো না, সবাই যেতে না যেতেই মিম বাচ্চাদের সহ ইমান কে জড়িয়ে ধরলো নিজের বুকে।ইমান মিম’কে ছাড়িয়ে রিকিয়ার মুখের ওপরে দরজা লাগিয়ে দিলো,দেওয়ার আগে বললো,
– “তুই শুধু কাল সকাল অব্ধি অপেক্ষা কর,আমি তোর চোখের সামনেই আমার নতুন বউ নিয়ে ঢুকবো এ বাড়িতে।”
.
চলবে,,,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com