Breaking News

তুই আমার অজানা অনুভূতি | পর্ব -১২



ছায়ার হাত থেকে তুহিন নিজের হাতটা টেনে নিয়ে নেয়।
তারপর ছায়াকে বলে,
আমি একদম ঠিক আছি সামান্য লেগেছে বেশি না।
তুই গিয়ে তোর রায়ান ভাইয়া আই মিন তোর বফ কে দেখ।
তার তো অবস্থা খুবই করুন মনে হচ্ছে কারো সাথে পাঙ্গা নিছে।
আর সে তোর ভাইয়ার ১২ টা বাজায় দিছে। ( তুহিন )
কথাটা বলে তুহিন সবার আড়ালে একটা বাঁকা হাসি দেই।
তুহিনের কথা শুনে ছায়ার রায়ানের কথা মনে পড়ে। ছায়া পিছনে ফিরে রায়ানকে দেখতে পাই।
রায়ানের এমন অবস্থা দেখে ছায়ার খারাপ লাগে খুব।
ছায়া রায়ানের কাছে গিয়ে মুখ কালো করে ছোটো করে রায়ানকে বলে,
রায়ান ভাইয়া তোমার এই অবস্থা কি করে হলো? এভাবে চোট পেলে কোথায়? কোনো এক্সিডেন্ট হয়েছিল বুঝি? ( ছায়া )
.
ছায়ার এমন প্রশ্ন শুনে তুহিনের বড্ড রাগ হয়।
কাল ছায়ায় বলেছিলো রায়ানকে মারতে কিন্তু আজ সে রায়ানের এই অবস্থা দেখে কষ্ট পাচ্ছে সেটা
দেখে তুহিনের প্রচুর রাগ হচ্ছে। তাও যথা সম্ভব নিজেকে সামলে রাখছে তুহিন।
ছায়ার প্রশ্নের উত্তরে রায়ান খুব কষ্টে বলে,
তোমাকে কাল প্রপোজ করেছিলাম বলে কেউ একজন আমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গিয়ে মেরেছে। (রায়ান )
রায়ানের কথায় ছায়া খুব অবাক হয়। ছায়া মনেমনে ভাবতে থাকে কে হতে পারে
যে ওর জন্য এতকিছু করবে। আর কেনই বা করবে? ?
ছায়া খুব শান্ত সরে রায়ানকে বলে,
___রায়ান ভাইয়া আমার এমন কেউ নেই যে আমার জন্য তোমাকে মারবে। ( ছায়া )
রায়ান একটু অবাক আর সন্দেহের সাথে ছায়াকে বললো,
___তাহলে ওনি আমাকে কেন বললেন তোমাকে বিরক্ত করেছি বলে আমাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন। আবার ওনি আমার ট্রিটমেন্ট ও করিয়েছেন। (রায়ান )
.
ছায়া রায়ানের কথায় খুব চিন্তায় পরে যায়। ভাবতে থাকে কে ওর জন্য এতোটা ভাবে কে
ওর জন্য এইসব করেছে।
ছায়াতো জানেনা তুহিনই এইসব করেছে। আর তুহিনও ছায়াকে কিছু বলেনি আর বলবেও না।
আর বলতে চাইলেও কি বলবে কেন করেছে সে এইসব তা তো সে নিজেও জানেনা।
ছায়া রায়ানকে শান্তিনা দিয়ে রায়ানকে সরি বলে ওখান থেকে চলে যায়।
ছায়ার মাথায় একটাই কথা ঘুরছে কে করেছে ওর জন্য এমনটা।
কিন্তু ছায়া অনেক ভেবেও এর উত্তর পেলো না।
.
কেটে গেছে অনেক গুলো দিন প্রায় এক মাস। ছায়া এখনো জানতে পারেনি
সেদিন কে ওর জন্য রায়ানকে ওভাবে মেরেছিলো।
এর মধ্যে তুহিন আর ছায়ার ফ্রেন্ডশিপ টাও অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যায়।
ওরা এখন একে অপরের সাথে খুব ফ্রীলি কথা বলে।
আজ একমাস পর রুহি ভার্সিটিতে এসেছে। সেদিন তুহিনের কথায় সেই যে সে চলে গেছিলো
আজ ফিরলো। রুহি মনেমনে সেইদিনই ঠিক করে নিয়েছিল ছায়া সেদিন যা
করেছে তার জন্য প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বে।
ছায়া আর তুহিন এবং তাদের কিছু ফ্রেন্ড একসাথে আড্ডা দিচ্ছিলো।
হঠাৎ রুহি সেখানে আসে। ছায়া আর তুহিনকে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে রুহির প্রচুর রাগ হয়।
রুহি গিয়ে তুহিনকে বলে,
___কি রে এই মেয়েটা না তোকে থাপ্পড় মেরেছিলো আর তুই এর সাথে হেসে হেসে কথা বলছিস। (রুহি )
রুহির কথায় ছায়া তুহিন সহ বাকিরা সবাই রুহির দিকে তাকায়।
তুহিন গিয়ে রুহির সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
___আমি কার সাথে হেসে কথা বলবো কার সাথে রেগে কথা বলবো সেটা
আমাকে তুই বলে দিবি নাকি। (তুহিন )
তুহিনের কথার প্রতিউত্তরে রুহি কিছুটা রাগী গলায় তুহিনকে বলে,
___এই মেয়েটা কি করেছে ভুলে গেছিস নাকি। আর তুই এই মেয়েটার জন্য আমার সাথে
এভাবে কথা বলছিস। (রুহি )
তুহিনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুহি ছায়ার কাছে গিয়ে ছায়ার হাত ধরে টেনে বসা থেকে তোলে ছায়াকে উদ্দেশ্য করে কাটকাট গলায় বলে,
.
_এই আনকালচারাল গাইয়া আনস্মার্ট মেয়ে গ্রাম থেকে এসে শহরের ছেলেকে ফাঁসানো শিখে গেছো।
এমনিতেও তোমাদের মতো গাইয়া মেয়েরা এর চেয়ে বেশি কি বা করতে পারে।
তোমরা গাইয়া মেয়েরা শহরে আসো পড়ালেখা করতে নই ছেলেদের ফাঁসাতে। (রুহি )
ছায়া রুহির কথা শুনে শুধু চোখের জল ফেলছে সত্যিতো ও একজন আনস্মার্ট গাইয়া মেয়ে।
হ্যাঁ রুহি এটা জানেনা যে ছায়ার ছোটবেলা শহরে কেটেছে।
কিন্তু ছায়া নিজেকে পর্দার আড়ালে রাখতে ভালোবাসে তাই সে পর্দা করে।
ছায়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে রুহির কথা শুনে যাচ্ছে আর রুহি আজেবাজে কথা বলেই যাচ্ছে।
ওইদিকে তুহিন রুহির কথা শুনে খুব বেশি রেগে যাই।
তুহিনের রাগে চোখমুখ লাল হয়ে গেছে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তুহিন তার রাগ কমানোর চেষ্টা করছে।
ছায়ার নীরবতা তুহিনকে আরো বেশি রাগাচ্ছে।
তুহিন সোজা গিয়ে ছায়াকে খুবই জোরে একটা থাপ্পড় মারে।
তুহিনের এহেন কাণ্ডে ছায়া সহ উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে যায়।
কারণ সবাই ভেবেছিলো তুহিন থাপ্পরটা রুহিকে মারবে।
কিন্তু তুহিন তা না করে ছায়াকে থাপ্পড় মারাই সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।
ছায়া তুহিনকে কিছু বলতে যাবে তুহিন ছায়াকে আরেকটা থাপ্পড় মারে।
তারপর অনেক জোরে চেচিয়ে ছায়াকে বলে,
____তুই কি ভেবেছিলি আমি তোর অপমান দেখে রুহিকে থাপ্পড়
মারবো আর তোর অপমানের জবাব দেবো। তাহলে তুই সম্পূর্ণ ভুল ভেবেছিস।
আমি সারাজীবন তোর পাশে থাকবো না যে তোকে কেউ অপমান করলে তার জবাব দিতে পারবো।
তোর অপমানের জবাব তোকেই দিতে হবে। (তুহিন)
তুহিনের কথায় ছায়া খুব অবাক হয়। ছায়াকে কিছু বলতে না দিয়ে তুহিন আবার জোরে চেচিয়ে বলে,
____এখুনি নিজের অপমানের জবাব দিয়ে আয় রুহিকে নয়তো আবার থাপ্পড় লাগাবো।
এখন তোর চয়েস তুই থাপ্পড় খাবি নাকি রুহিকে তোকে করা অপমানের যোগ্য জবাব দিবি। ( তুহিন )
ছায়া তুহিনের ধমকানি শুনে একটু ভয় পেয়ে যায়। তার উপর গালে পড়ছে দুইটা থাপ্পড়।
ব্যাথায় গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে ছিলো। শেষ পর্যন্ত না পরে রুহির দিকে এগিয়ে গেলো ছায়া।
রুহির কাছে গিয়ে খুবই শান্ত সরে বললো,
.
আপু আপনি আমার বড় তাই এতক্ষন আপনাকে সম্মান দেখাচ্ছিলাম। বাট কিছু মানুষ সম্মানের যোগ্য নয় সেটা একটু ভুলে গেছিলাম। তো আপু কি যেন বলেছিলেন আমি গাইয়া তো আপু ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন আমি ছোটো থেকে শহরে মানুষ হয়েছি। গ্রামে গেছি জাস্ট কয়েক বছর হলো। (ছায়া )
ছায়া একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলো,
___আর কি যেন বলেছিলেন আমি আনস্মার্ট। হ্যাঁ আমি আনস্মার্ট কারণ আমি বোরকা পড়ি পর্দার করি তাই।
আচ্ছা আপু একটা কথা বলুন এখন যদি কোনো এক রাস্তায় আমি আর আপনি পর পর যায় তাহলে মানুষ গুলো কার দিকে কিভাবে তাকাবে জানেন? জানেন না তো তাহলে আমি বলছি আমার দিকে সম্মানের নজরে তাকাবে আর আপনার দিকে লালসার নজরে তাকাবে। ( ছায়া )
ছায়ার এই কথায় রুহি ছায়াকে থাপ্পড় মারতে চাইলে ছায়া রুহির হাত ধরে ফেলে আর রুহির হাত ঝামটা দিয়ে ছায়া বলে,
___ না না একদম এটা করার দুঃসাহস দেখবেন না। আমাকে দেখে যতটা শান্তশিষ্ট আমি ঠিক ততটাই রাগী। আর আমি তো ভুল কিছু বলিনি আমাকে ভুল ভাবার আগে নিজের পোশাকের দিকে তাকান। আর আপু আমার কথায় আমি জানি আপনার কষ্ট লেগেছে। কিন্তু আপু আমি এটা আপনাকে ঠিক ভুল গাইয়া স্মার্ট আনস্মার্ট এইসব বুঝানোর জন্য বলিনি। বলেছি আপনার ভুল গুলো আপনাকে ধরিয়ে দিতে। (ছায়া )
ছায়া একটু দম নিয়ে আবার বলা শুরু করলো,
____আপু আপনার লাস্ট কথা ছিলো আমরা গ্রামের মেয়েরা শহরে এসে শহরের ছেলেদের ফাসায়। তাহলে আপু এটা একটু বলবেন আমরা ঠিক কিভাবে শহরের ছেলেদের ফাশায়। আমরা বাজে কাপড় পড়ি নাকি আমরা মেকআপ করে নিজের রূপের জালে ফাশায় বলুন কোনটা করি আমরা? ( ছায়া )
ছায়া তুহিনের দিকে তাকিয়ে একটু দম নিয়ে বলে,
.
___আপনি হয়তো জানেন না আমি শহরে আসার আগে থেকে তুহিনকে চিনি অনলাইনে আমাদের পরিচয় হয়। আর আমিও জানতাম না ও এখানে পড়ে আর তুহিনও জানতোনা আমি এখানে চান্স পেয়েছি। যেদিন আপনি আমাকে তুহিনকে প্রপোজ করতে বলেন সেইদিন আমি জানতে পারি তুহিন এখানে পড়ে। তাহলে আপনি কোন ভিত্তি দিয়ে আমাকে এতো গুলো কথা শুনালেন। আর আপনি একজন মেয়ে হয়ে যদি অন্য মেয়েকে সম্মান না করেন তাহলে নিজে সম্মান পাওয়ার আশা করেন কেমনে। যাই হোক মাফ করবেন অনেক কথা বললাম আপনাকে। ( ছায়া )
.
ছায়া রুহিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সবার আড়ালে চোখের পানি মুছে ভার্সিটির পিছনের লেকের পাড়ে চলে যায়। তুহিনও ছায়ার পিছনে যায়। কারণ ছায়ার চোখের জল কেউ না দেখলেও তুহিন ঠিকই দেখেছে।
[ আমার গল্পটা কোনো সিনেমা নয় যে হিরো হিরোইনের জন্য অন্যকে কথা শুনাবে। আমি মনে করি তুহিন যা করেছে তা একদম ঠিক করেছে। আপনাদের খারাপ লাগলেও আমার মতে এটাই ঠিক।
আমি মনে করি তুহিন যা করেছে তা প্রতিটা ভালোবাসার মানুষের করা উচিত। কারণ যাকে অপমান করা হয়েছে তার উচিত যোগ্য জবাবটা দেওয়া। আর যদি ভালোবাসার মানুষের উপর নির্ভর করে থাকেন তাহলে যেদিন সে থাকবে না সেদিন কে দিবে আপনার অপমানের জবাব।
প্রতিটা ভালোবাসার মানুষের উদ্দেশ্যে একটাই কথা বলবো। নিজের ভালোবাসার মানুষকে তার লড়াই নিজেকে লড়তে শিখান। কারণ জীবন মৃত্যু বলতে একটা কথা আছে কার মৃত্যু কখন হয় কেউ জানেনা। তাই জীবনে সময় থাকতে ভালোবাসার মানুষটাকে শক্ত বানান প্রতিবাদী বানান ]
.
বাকিটা কমু না কালকে কমু ……
.
চলবে..

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com