তুই আমার অজানা অনুভূতি | পর্ব -১০
কিরে মনে রঙ লাগছে নাকি আজ হঠাৎ রোমান্টিক গান গাইছিস যে। ( ছায়া )
ছায়া হকচকিয়ে গেলো নাহারের কথায় তারপর হাসতে হাসতে বললো,
এইসব রঙ চং আমার মনে লাগেনা বাবু। এইসব তোমার কাজ আমার নয়। আমিতো জাস্ট পাগলামীকেই ভালোবাসি। ( ছায়া )
নাহার ছায়ার কথার প্রতিউত্তরে বলে,
তা তো দেখতেই পাচ্ছি। (নাহার )
ছায়া নাহারকে থামানোর জন্য বললো,
আচ্ছা ছাড় এইসব এখন বল তোর বফ এর খবর কি ? ( ছায়া )
নাহার একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
হ্যাঁ সব ভালোই। কিন্তু ইয়ার টেনশন হচ্ছে আম্মু আব্বুকে দেখলাম আমার বিয়ের কথা বলছে তারা। জানিনা তারা রিদয়কে মেনে নিবে কি না।
মাঝে মাঝে অনেক সম্পর্কের পরিণতি দেখে ভয় লাগে।
বাবা মায়ের খুশির কাছে হেরে যায় ভালোবাসা।
তারা বুঝেনা সন্তান টাকা বা রূপের অধিকারী কাউকে চাইনা।
একজন বিশ্বাসযোগ্য মানুষ চাই যার হাতটা ধরে সারাজীবন নিশ্চিন্তে পার করা যায়।
কিন্ত এটা বাবা মা বুঝে না তারা সন্তানের খুশি দেখে টাকায় আর রূপে।( নাহার )
.
ছায়া নাহারের কষ্টটা বুঝতে পারছে ছায়া নাহারকে সান্তনা স্বরূপ বললো,
না রে ইয়ার বাবা মা আমাদের ভালো চাই কিন্তু তারা ভালো চাইতে গিয়ে ভুল করে ফেলে
এতে তাদের কোনো দোষ নেই। তারা চাই তাদের সন্তান ভালো থাকুক সুখে থাকুক
কিন্তু সেটা চাইতে গিয়ে majhe মাঝে তারা ভুল করে বসে। (ছায়া )
নাহার হতাশার সুরে ছায়াকে বললো,
জানিনা…..(নাহার)
ছায়া নাহরকে হাসানোর জন্য বললো,
আরেহ ইয়ার চাপ নিস না দরকার পড়লে তোকে নিয়ে আমি পালিয়ে যাবো । (ছায়া )
ছায়ার এমন আজব কথা শুনে নাহার ফিক করে হেসে দিলো।
তারপর দুই বোন মিলে গল্প করতে লাগলো।
রাতে খাওয়া দাওয়া করে ছায়া তার ফোনটা নিয়ে বেলকানিতে গেলো ওখানেই বসে রাতের আকাশ দেখছিলো কিছুক্ষন তারপর তার ফোনের ডাটা চালু করে মেসেঞ্জার এ গেলো। মেসেঞ্জারে ঢুকতেই দেখলো তুহিনের মেসেজ আসছে। ছায়া একটু মুচকি হেসে তুহিনকে জ্বালাবে এটা ভেবে তুহিনকে রিপ্লায় দিল।
ওই (তুহিন )
জ্বী বলুন…..( ছায়া )
জানোস আজকে ভার্সিটিতে কি হয়েছে? (তুহিন )
আমি কেমনে জানবো আপনার ভার্সিটিতে কি হয়েছে (ছায়া )
আচ্ছা আমি বলছি তুই শুন (তুহিন )
হুম বলুন (ছায়া )
.
আজকে ওই মেয়েটা যে আমাকে চড় মেরেছিলো ওকে আমি লাইব্রেরিতে টুল থেকে ফেলে দিছি। (তুহিন )
এই বলে তুহিন দুষ্টু হাসি হাসতে লাগলো।
এদিকে ছায়ার মাথা গরম হয়ে গেছে সকালের ঘটনাটা মনে পড়তেই রাগ হচ্ছে খুব।
ছায়াকে কিছু বলতে না দিয়ে তুহিন আবার বলতে শুরু করলো,
জানিস আরো একটা কান্ড হয়েছে। ওই মেয়েটা ভার্সিটির সবার সামনে আমাকে সরি ও বলেছে।
আর জানোস আমাকে I Love u ও বলছে অবশ্য আমি ভালো ছেলে তাই রিজেক্ট করে দিয়েছি। ( তুহিন )
ছায়াকে রাগানোর জন্য সব বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলছে
তুহিন আর এদিকে ছায়া রাগে ফুসফুস করছে। তুহিন মনেমনে বললো,
আমি যে আপনাকে চিনে ফেলেছি ওটা আমি বলবো না।
আপনার মুখ দিয়েই বলবো মিস সাহারা ইবনান ছায়া। ( তুহিন )
এদিকে ছায়া রেগে আগুন ছায়ার কান দিয়ে মনে হয় এখুনি ধুঁয়া বেরুবে।
ছায়া খুব রেগে মনেমনে বলতে লাগলো,
মিথ্যুক ধরিবাজ বাজে পোলা তুই আমাকে আমারই গল্প শুনাচ্ছিস তাও আবার সব মিথ্যে বলছে।
আমি কবে তোকে সরি বলেছি রে আর প্রপোজ হাহ তার তোহ প্রশ্নই উঠে না। ( ছায়া )
ছায়া খুব রেগে তুহিনকে বললো,
একদম মিথ্যে বলবি না এরকম কিছুই ঘটেনি। খামোখা মিথ্যে বলে মেজাজ খারাপ করবিনা। (ছায়া )
তুহিন মুচকি মুচকি হাসছে আর ছায়ার রাগ এনজয় করছে ।
তুহিন নিজেকে আটকে একটু গম্ভীর ভাবে বললো,
তুই কেমনে এতো কনফ্রম হয়ে বলছিস যে এমন কিছুই ঘটেনি। ( তুহিন )
ছায়া এবার ফেঁসে গেলো সে আমতা আমতা করে বললো,
.
ওই আসলে আমাকে তোর ভার্সিটির একজন বলেছে। (ছায়া )
ওহ আচ্ছা। আচ্ছা শুন তোকেতো বলাই হয়নি আজকে না আমি ওই মেয়েটাকে ভার্সিটির লেকের পানিতে ফেলে দিয়েছিলাম।
বেচারি নাকানি চুবানী খেয়ে তার যা হাল হয়েছিল না জাস্ট দেখার মতো। (তুহিন )
ছায়াকে মিথ্যে বলে তুহিন মনেমনে হাসতে লাগলো আর মনেমনেই বললো,
এবার দেখি তুই আমাকে সত্যি না বলে কিভাবে থাকিস। (তুহিন )
ছায়া তো এবারে রেগেমেগে আগুন হয়ে গেছে। ছায়া নিজেকে সামলাতে না পেরে রেগে বললো,
একদম বাজে কথা বলবি না বদ পোলা তুই আমাকে ফেলেছিস নাকি আমি তোকে ফেলেছি হুম।
আইছে আমাকে ফেলতে সকালের শিক্ষাটা ভুলে গেছেন আপনাকে আবার ডোস দিতে হবে।
বেটা বেদ্দপ আমাকে আমারই গল্প শুনাচ্ছিস। (ছায়া )
তুহিন তো মহা খুশি ছায়া নিজের মুখে নিজের দোষ গড়গড় করে বলে দিচ্ছে।
তুহিন একটু সন্দেহের অভিনয় করে বললো,
তুই আমাকে ফেলেছিস মানে। আর আমি বা কখন তোর নামে মিথ্যে বললাম।
কি সব বলছিস বল তো। (তুহিন )
ছায়া এবার বুঝতে পারলো সে এতক্ষন কি করছিলো।
ছায়া হন্তদন্ত হয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে তুহিনকে বললো,
আমাকে মানে ওই মেয়েটাকে ওই তোহ আমাকে বললো তুই ওর নামে খামোখা মিথ্যে বলবি না। (ছায়া )
তুহিন একটু বিরক্তির সুরে ছায়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললো,
তুই মেয়েটাকে চিনিস নাকি? (তুহিন ).
ছায়া পড়েছে মহা বিপদে রাগের মাথায় সে খালি ভুল করেই যাচ্ছে। ছায়া তুহিনকে বললো,
হ্যাঁ চিনি তো ওই আপুটা আমাদের পাশের পাড়ায় থাকেন। ( ছায়া )
ওহ তাই আচ্ছা তোর ভার্সিটির নাম বল তো…. ( তুহিন )
কেন আমার ভার্সিটির নাম দিয়ে তোর কাজ কি? ( ছায়া )
আরেহ আমি কাল তোদের গ্রামে যাচ্ছি ভাবলাম তোর সাথে দেখা
করে আসি। ( তুহিন ) [সব ডপ মারতেছে বেটা তুহিন কতো মিথ্যে বলে গো] আরেহ আমার ভার্সিটি তো কুমিল্লায় পড়েছে তুই আমার গ্রামে আমাকে পাবি কই ( ছায়া ) আরেহ আগে বল না তোর ভার্সিটির নাম আর তুই কি জানিস না কুমিল্লাই আমার আন্টির শশুর বাড়ি আর আমরা নেক্সট উইক ওখানে যাচ্ছি। আমি না হয় তখন তোর সাথে দেখা করে আসবো। (তুহিন ) আরেহ আমিতো ভুলেই গেছি আমার ভার্সিটি কুমিল্লায় নই আমার ভার্সিটি অন্য কোথাও ।( ছায়া)
দূর বল তো ভার্সিটির নাম কি? (তুহিন)
না আসলে ওই আসলে( ছায়া )
কি আসলে আসলে করছিস বলতো বেশি ঢং করবি না একদম।( তুহিন )
তুহিনের ধমক শুনে ছায়া অসহায় ভাবে বললো,
আসলে সরি ওই মেয়েটা আমি। আমার পুরো নাম সাহারা ইবনান ছায়া। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছে করে ওইদিন মারিনি তোকে। ( ছায়া )
আর মিথ্যে বলতে হবেনা যা বলবি কাল ভার্সিটিতে বলবি।
কালকে না এলে কিন্তু তোর খবর আছে। (তুহিন )
ছায়া কিছু বলার আগেই তুহিন অফলাইন চলে গেলো।
ছায়া কিছুই বুঝতে পারছে না কাল ভার্সিটিতে যাবে কি না।
ছায়ার একটা ইম্পরট্যান্ট ক্লাস আছে কালকে যে করেই হোক তাকে ভার্সিটিতে যেতে হবে।
আর যদি ভার্সিটিতে যাই তাহলে তুহিন তাকে কাল যে কি পরিমান বকা দিবে সেটা ভেবে পাগল পাগল লাগছে ছায়ার। যাই হোক এইসব না ভেবে ছায়া মনকে শান্ত করে ঘুমিয়ে পড়লো।
.
সকালে ছায়া নাস্তা করে ভার্সিটির জন্য বেরিয়ে পড়লো।
ভার্সিটিতেই পৌঁছে ভার্সিটির গেট থেকে একটু ভিতরে তুহিনকে দেখতে পেলো ছায়া।
তুহিনকে দেখে একটা শুকনো ঢোক গিললো ছায়া। তারপর মনেমনে নিজেকে বললো,
আজ তোর কি হবেরে ছায়া!! এই বজ্জাত টা তোকে কি বলবে আল্লাহ জানে।
আল্লাহ বাঁচান আমাকে, আজকে বাঁচাই দেন আর কোনোদিন এই পাগলটাকে চোটাবো না । ( ছায়া )
ছায়া এইসব বিড়বিড় করছিলো তখনি তুহিন ছায়ার সামনে এসে দাঁড়ায়।
তুহিন ছায়াকে কিছু বলবে তার আগেই হঠাৎ ছায়ার সামনে রায়ান এসে দাঁড়ায়।
রায়ান ছায়াকে উৎফুল্ল হয়ে বলে,
হাই ছায়া তোমাকেই খুজছিলাম আমি। (রায়ান)
আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। (ছায়া )
ওয়ালাইকুম আসসালাম। ছায়া প্লিজ ভাইয়া ডেকো না আচ্ছা বাদ দাও এই টপিক টা।
আমার তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো। ( রায়ান )
ছায়াকে কিছু বলতে না দিয়ে রায়ান ছায়ার সামনে হাটু মোড়ে বসে পড়ে। তারপর হাতের পিছন থেকে গোলাপের একটা তোড়া বের করে ছায়াকে বলে,
I Love you chaya
.
ছায়াতো জাস্ট অবাক কি বলবে বুঝে পাচ্ছে না আর ওইদিকে তুহিন বিরক্তি নিয়ে
রায়ানের কান্ড দেখছে আর মনেমনে রায়ানকে হাজারটা বকা দিচ্ছে।
ছায়া নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলে,
ভাইয়া এইসব কি উল্টো পাল্টা বলছেন আপনি।
এইসব আজেবাজে কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিন। (ছায়া )
রায়ান ছায়ার কথা কিছুতেই শুনছিলো না।
অনেক বুঝালো ছায়া কিন্তু রায়ান মানতে নারাজ। ছায়ার এবার প্রচুর রাগ হলো।
ছায়া নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে চেচিয়ে বলে উঠলো,
ওই আপদ চুপ কর বেয়াদপ।
এইটুকু বাচ্চা আসছে আমাকে ভালোবাসতে তুই ভালোবাসার কি বুঝোস রে।
তুই তো আমার সাথে একি ক্লাসে পড়িস ক্লাসমেট কে লাইন মারতে লজ্জা করেনা।
অনেকদিন তোরে সহ্য করেছি শুধুমাত্র তুই বাড়িওয়ালার ছেলে বলে কিন্তু আর না।
বেটা আপদ দূর হো আমার সামনে থেকে। ( ছায়া )
ছায়া তুমি এইসব কি বলছো আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।
জানো রোজ আমি বেলকানিতে তোমার গান শুনার জন্য অপেক্ষা করি।
তুমি যখন আকাশের দিকে তাকিয়েই থাকো আমি তখন তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি।
শুধু তোমাকে দেখবো বলে আমি আব্বুর সাথে ঝগড়া করে তোমার পাশের ফ্লেট টা নিয়েছি। ( রায়ান )
রায়ানের কথা শুনে ছায়ার আরো বেশি রাগ উঠে গেলো।
সে ভাবতেই পারেনি বেটা খাবিস লুইচ্চা তাকে রোজ দেখে বেলকানি থেকে।
ছায়া এবার প্রচুর রেগে বললো,
.
তুই বেটা লুইচ্চা তোর এতো সাহস তুই আমাকে দেখতি তাও লুকিয়ে।
তুহিন বেটা বজ্জাতটার হাতটা পিছন থেকে ধরতো।
বেটারে আজ মজা দেখাবো এখনই এর মাথা থেকে ভালোবাসার ভূত তারাবো। ( ছায়া )
তুহিন এতক্ষন ছায়ার রাগ দেখছিলো ছায়ার কথাই সে বাস্তবে ফিরলো।
তারপর একটু রাগী আর বিরক্তির সুরে ছায়াকে বললো,
.
আমি পারবো না ধরতে তোর ইচ্ছে হলে তুই ধর। (তুহিন )
তুহিন তুই ওকে ধরবি নয়তো তোর আমি 12 টা বাজাবো তোর কাঁদামাক্ত কালকের একটা ছবি আমার আছে আমি কিন্তু ওইটা ফেসবুকে ছেড়ে দিবো বলে দিলাম। (ছায়া )
[কোনো ছবি নেই ছায়া সব ঢব মারতেছে ]
বেশি হচ্ছে কিন্তু এটা ছায়া ( তুহিন)
ছায়ার রাগ দেখে তুহিন আর কিছু বললো না কারণ সেও দেখতে চাই ছায়া কি করে। ছায়ার কথা অনুযায়ী তুহিন রায়ানের হাত পিছন থেকে চেপে ধরে। ছায়া তুহিনের আরেক ফ্রেন্ড কে বলে,
রোশান ভাইয়া জান ক্যান্টিন থেকে এক বালতি বরফ নিয়ে আসুন। (ছায়া )
রোশান রায়ান আর তুহিন সবাই চকিত হয়ে ছায়াকে জিজ্ঞাসা করলো,
বরফ দিয়ে কি হবে ছায়া? (সবাই )
রায়ানের মাথায় ঢালা হবে আর ভালোবাসার ভূত তাড়ানো হবে । (ছায়া )
ছায়া এবার একটু জোরেই রোশনকে বললো,
রোশান ভাইয়া আপনি কি শুনতে পাননি আমি কি বলেছি। বেশি দেরি করলে আপনাকে সোজা ভার্সিটির পাশের পচা ডুবাই চুবাবো। ( ছায়া )
ছায়ার এমন রাগ দেখে রোশান কিছু বলার সাহস পেলো না। জাস্ট মনেমনে বিড়বিড় করে বললো,
কি জল্লাত মেয়েরে বাবা আল্লাহ জানে তুহিন এরে কেমনে সামলাই এরকম ফ্রেন্ড যেন আমার লাইফ এ কোনোদিন না আসে মতো। (রোশান )
[আজ যে রায়ানের কি হবে তা শুধু আল্লাহই জানেন ]
.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com