গল্পঃ অন্ধ বউ || ২য় -পর্ব
তাকাতেই দেখি বাথরুমে ফ্লোরে পড়ে আছে, জ্ঞান হারিয়েছে।
একি হলো, কিভাবে হলো কিছুই বুঝতেছি না। কোলে তুলতেই শরিরটা এলিয়ে দিলো।, হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
আমি যতটা বুঝি হাত পা ঠান্ডা হওয়াটা খুব একটা ভাল লক্ষন না।
কারন আমার বাবাও এমন হাত পা ছেড়ে দিয়ে ছিলো, কিন্তু আর ফিরেনি।
.
কোন রকম কোলে তুলে চটির উপর শুইয়ে দিয়ে মুখে পানি ছিটা দিতেই জ্ঞান ফিরলো।
অবস্থা তেমন একটা ভাল লক্ষ করলাম না।
দৌড় দিয়ে কালু ডাক্টারের কাছে সব খুলে বলে তাকে নিয়ে আসলাম।ডাক্টার প্রেশার টেশার মেপে বল্লেন
.
— উনিকি সকালে কিছু খেয়েছেন?
.
–না ঘুম থেকে উঁঠে বাথরুমে গিয়েই এ
অবস্থা(আমি)
.
–উনার প্রেশার একদম কম।।আমি ঔষধ লিখে দিচ্ছি।আর হ্যাঁ ডিম দুধ ভাল করে
খাওয়ায়েন। নইলে ঔষধে কোন কাজ হবে না।
তাছাড়া খেতে না চাইলেও জোর করে খাওয়াতে হবে।
.
–আচ্ছা ঠিক আছে।(আমি)
.
ডাক্টার চলে যাওয়ার পর, বাজারে চলে গেলাম।
দেরি হলে পরে আবার দুধ পাবো না।
আধা কেজি দুধ আর হাঁসের ডিম নিয়ে এলাম।
হাঁসের ডিমে নাকি পুষ্টি বেশি।
দুধটা জাল দিয়ে ডিমটা বসিয়ে দিলাম।
.
ভাবতেছি বড় ডাক্টার দেখাবো, ছোট ডাক্টার দিয়ে বিস্বাস নাই, ডিম দুধ
খাইয়ে দেখি কি হয়।
.
–এই যে উঠুন একটু (আমি)
.
–আপনি নাস্তা করেছেন? (জান্নাত )
.
–হ্যাঁ, আপনি দুধটুকু খেয়ে, ডিমটা খান।
কাজে যেতে চাইছিলাম। আপনার শরিরটা
ভাল না। তাই আজ যাবো না।(আমি)
.
–না না ঠিক আছি আমি। আর দুধ ডিম আনছেন
কেন? টাকা পেলেন কই?(জান্নাত)
.
–আপনাকে অত ভাবতে হবে না। আমি যা
দিবো খাবেন। আপনার দাইত্ব নিছি
খাওয়াতে তো হবে বলেন।(আমি )
.
–আপনিও তো খান নি। ডিমটা আমি একটু খাই
আপনি একটু খান।(জান্নাত)
.
–না, আমি ডিম খাই না।(আমি)
.
–Okay আমিও খাবো না।(জান্নাত)
.
–দুর খাইলে খান না খাইলে যা ইচ্ছা
করেন।(আমি)
.
উচু গলায় বলেই বেরিয়ে গেলাম। কি আল্লাদ
জানে আল্লাহই ভাল জানে।
খুদা পেটে নাকি রাগ বেশিই উঠে। আমারও
তাই হলো।বেশ রাগ করেই চলে এলাম।
একা ছিলাম ভাল ছিলাম। না পারবো ফেলে
দিতে, না পারবো কিছু করতে।
.
চায়ের দোকানে বসে বসে শুধু ভাবছি
মেয়েটা দেখতেও পায় না, কিছুু খেতেও
পারবে না। তার উপর নতুন জায়গা কিভাবে
কি করবে।
.
ভাগ্যের পরিহাসেই আমার কাছে এসে
পড়েছে।
নইলে আমার মত ছেলের এত বাজে কথা ওর মত
এত সুন্দর মেয়ে কোনদিন এভাবে শুনবে না।
তাই রাগ ভেঙেই বাসায় গেলাম।
গিয়ে দেখি জান্নাত কাঁদছে। একি করলাম,
মেয়েটাকে কাঁদিয়ে দিলাম।
কি এমন বলেছে, আর আমিও এমন করলাম।
তাছাড়া ওর কান্নাটা এমন বুকে বিধছে
কেন।
আর থাকতে পারলাম না। কাছে গিছে ওর
হাতটি ধরলাম।
.
–I’m sorry, আমার ভুল হয়ে গেছে, মাফ
করে দিন।(আমি)
.(চোখ মুছতে মুছতেই বল্লো)
–কি বলেন এসব, আপনি আমার স্বামী, আপনি
শত অন্যায় করলেও আমার কাছে ক্ষমা চাইতে
পারেন না।(জান্নাত)
.
–আমি তো ভুল করেছি। আমাকে ক্ষমা করো
.
-করতে পারি ১ শর্তে(জান্নাত)
.
–কি শর্ত?
.
— আমি এই ডিমটা খাইয়ে দিবো, অর্ধেক
খেতে হবে।(জান্নাত)
.
কোন উপায় না দেখে দুধ আর ডিমের
অর্ধেকটা খাইয়ে দিলাম।
লক্ষি মেয়ের মত খেতে খেতে কেঁদে দিলো।
এই মেয়েটা শুধু কাঁদতেই পারে নাকি কে
জানে।
.
–এই আবার কাঁদছেন কেন?
.
–না এমনি। জানেন আমাকে এভাবে কেও
কখনো খাওয়ার জন্য বকেনী। বাবা ছাড়া
এভাবে কেও খাইয়ে দেয় নি। ছিলাম তো
পরিবারের বোঝা, আম্মুও জন্ম দিয়েই মরে
গেছে।।এবার এসেছি আপনার বোঝা হতে।(জান্নাত)
.
–আপনি না অনেক বাজে বকতে পারেন। আর
বকবেন না।আর হ্যাঁ একটু রেডি হয়ে
থাকবেন,
সংসারের কিছু জিনিস কিনতে হবে। আপনি
পছন্দ করে দিবেন।
.
–আমি তো চোখেই…(জান্নাত)
.
–আবার সেই কথা। ও দুপুরে আজ বাইরে
খাবো।
.
–ঠিক আছে।(জান্নাত)
.
বাসন্তি রঙের শাড়িটা বেশ মানিয়েছে,
কপালের টিঁপটা এক পাশ হয়ে গেছে,
হয় তো দ্যাখেনি।
.
–এই যে শুনুন, টিপটাতো জায়গা মত বসেনি।
.
–আপনি বসিয়ে দিন তাহলে?(জান্নাত)
.
–আচ্ছা এদিকে আসুন।
.
টিপ পড়ানোর ছলে খুব কাছে থেকে দেখছি,
কি মায়াবী চোখ, যে কাওকে পাগল করতে
পারে।
ঠোঁটদুটোও কাপো কাপো, বেশ ছুয়ে দেখতে
ইচ্ছে করে।
.
–একটা টিপ পরাতে এত সময় লাগে?(জান্নাত)
.
— না ইয়ে মানে হয়ে গেছে।
.
–আচ্ছা চলুন(জান্নাত)
.
ঘড়টা কোন মতে তালা দিয়ে বেরোলাম।
ও দেখি আমার হাত শক্ত করে ধরে আছে।
সবাই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।
দেখে কেমন যেন একটু লজ্জা লাগছে।
কিন্তু কি করবো ও তো দেখতে পায় না, আর
এমন ভাবে ধরেছে যেন ভয় পাচ্ছে।
.
–জান্নাত , আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?
.
–আসলে কখোনো এভাবে বের হইনি তো, তাই
একটু ভয় লাগছে।(জান্নাত)
.
–আচ্ছা আপনাকে যদি আমি এখন রেখে চলে
যাই?
.
–আমি জানি আপনি কখনো যাবেন না।(জান্নাত)
.
–এমনটা মনে হলো কেন?
.
–কেও তো হাতই ধরেনি, আপনি যেহেতু
ধরেছেন, আমার বিস্বাস আপনি ছাড়বেন না।(জান্নাত)
.
–যদি কখনো ছেড়ে দেই?
.
–যদি কখোনো ছেড়ে দেন তবে বুঝবো আমার
ভালর জন্যই ছেড়েছেন।(জান্নাত)
.
(কেন জানি আমিও শক্তকরে হাতটা ধরেই
বল্লাম।)
.
–এ হাতটা ছাড়া যাবে না। কোটি টাকার
বিনিময়েও
.
রিক্সা করেই বড় একটা স্টোরে গেলাম,
অনেক জিনিসই আছে।
ওর হাতটা তখনো ধরে আছি।হাড়ি করাই
একটা একটা করে দেখছি, আর ওর হাতে দিয়ে
বলতেছি।
.
–দেখতো এটা কেমন?
.
–ওনিতো কিছু চোখে দেখে না। ওনাকে
দেখিয়ে লাভ কি? আপনিই দেখেন।
(দোকানী)
.
–দোকান্দারতো ঠিকই বলেছে।আমি তো…(জান্নাত)
.
–চলেন এখান থেকে ( আমি)
.
–কি হলো? কেনাকাটা করবেন না?(জান্নাত)
.
–করবো কিন্তু এ দোকান থেকে না।
.
–কেন, এ দোকানে কি হইছে?(জান্নাত)
.
–দেখলেন না? কিভাবে আপনাকে অপমান
করলো।
.
–উনি তো ঠিকই বলেছেন, আমিতো দেখতে
পাই না।(জান্নাত)
.
–এইযে শুনুন, টাকা দিয়ে কিনবো। আপনি
ধরে দেখবেন, পছন্দ হলে তবেই নিবো।
.
–আচ্ছা ঠিক আছে, এবার একটু শান্ত হোন।(জান্নাত)
.
সংসারের যাবতীয় জিনিস কিনে বোঝাই
করলাম,
সবই ও পছন্দ করে দিছে।
চয়েজ আছে বলতে হবে।
শুধু একটু বিরক্ত হচ্ছিলাম, যখন ওর হাতে
দিয়ে দেখাচ্ছিলাম, বাকি সব লোক কেমন
যেন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতো।
.
যাই হোক দুজনে হোটেলে ঢুকে দুই প্লেট
বিরানী নিয়ে নিলাম। এবং ম্যারেজারকে
বল্লাম.
.
–মামা ২ টা বিরানী পার্সেল কইরেন তো।
.
–২ টা বিরানী কেন? (জান্নাত)
.
–রাতের জন্য, আজতো গিয়ে আর রান্না করতে
পারবো না।
.
–তাই বলে ২ টা কেন, ১ টাই দুইজনের হবে।
১৫০ টাকা দিয়ে ১ টা মুরগি নিলে ২ দিন
হবে আমাদের।
.
— এত হিসেব?
.
–হুম, আমার সংসার না?
.
–হ্যাঁ, তাইতো লোকে বলে, সংসার সুখের হয়
রমনীর গুণে। আজ বুঝলাম কেন বলে।
.
দুজনে খেয়ে দেয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা
হলাম।
দুহাতে জিনিসপত্র তাই ওর হাতটা ধরতে
পারলাম না। রাস্তায় এত জ্যাম, রিক্সাও
পেলাম না।
কিভাবে পার হই এতগুলো জিনিস নিয়ে।
.
–আচ্ছা আপনি এখানে দাঁড়ান আমি রিক্সা
নিয়ে আসি। কোথাও এক চুলও নরবেন না।
আর কেও পথ দেখাতে চাইলেও যাবেন না।
.
— অতিপতি করে রিক্সা খুজতে চলে গেলাম।
কত রিক্সা সামনে দিয়ে ঘুড়ে, আজ আর পেলাম
না। খুজতে খুজতে অনেক ক্ষন পর পেলাম।
.
রিক্সা নিয়ে এসে দেখি, জিনিসপত্র আছে
কিন্তু জান্নাত নেই।
বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠলো,
হাত-পা ঠান্ডা হবার উপক্রম আমার।
.
চলবে…………
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com