Breaking News

তুই আমার অজানা অনুভূতি | পর্ব -১১



ছায়ার কাণ্ডকারখানা দেখে রায়ান ছায়াকে বললো,
ছায়া তুমি এইসব কি করছো আমি তোমাকে কত্তো ভালোবাসি আর
তুমি আমার মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালবে বলছো। ( রায়ান )
ছায়া এমনিতেই রেগে আছে আর এদিকে রায়ান ভালোবাসি বলে বলে
আরো রাগাচ্ছে। ছায়া রেগে রায়ানকে বললো,
__ওই আপদ তোর বয়স কতো রে তুই আমার পিছনে লাগছিস কেন? ( ছায়া )
রায়ান দাঁত কেলিয়ে উত্তর দিলো,
___আমার ২০ বছর। আমি তোমার পিছনে লাগি না আমি তোমাকে ভালোবাসি। ( রায়ান )
রায়ানের মুখে বারবার ছায়ার জন্য ভালোবাসি কথাটা শুনে কেন
জানি তুহিনের রায়ানের উপর খুবই রাগ হচ্ছে। তুহিন রায়ানের হাতটা আরো জোরে
পিছন থেকে চেপে ধরেছে। যেন এক্ষনি হাতটা ভেঙে দিতে পারলে ওর রাগ শান্ত হতো।
ওইদিকে ছায়া প্রচুর রেগে রায়ানকে বললো,
__ওই পোলা আমি তোর এক বছরের বড় আমার ২১ চলতেছে।
আর তুই আসছোস আমার সাথে রিলেশনশিপ করতে বেটা আহাম্মক একটা। (ছায়া )
___কোনো সমস্যা নেই ছায়া তুমি আমার বড় হলেও চলবে এমনিতেও
তোমাকে দেখতে অনেক ছোটো লাগে। ( রায়ান )
ছায়া এবার রেগে তুহিনের দিকে তাকালো মুহূর্তেই ওর চোখে জল জমে গেলো
এই জলটা তুহিনের নীরবতার জন্যেই হয়তো জমেছে ছায়ার চোখে । ছলছল চোখে ও তুহিনকে বললো,
___তুহিন তুই ওকে কিছু বলতে পারছিস না দেখছিস তো ও আমাকে
কতক্ষন ধরে বিরক্ত করে যাচ্ছে। ( ছায়া )
তুহিন একটা এটিটিউড রায়ানের হাত ছেড়ে দিয়ে নিয়ে নির্লিপ্ত ভাবে বললো,
___আমি কি করবো! (তুহিন )
ছায়া তুহিনের এমন ব্যবহার আশা করেনি সে খুব কষ্ট পেলো তবুও বললো,
___তুই ওকে দুইটা থাপ্পড় হলেও মারতে পারতি। তোর কি একটুও
রাগ হচ্ছে না ও আমাকে এভাবে বলছে দেখেও তুই এতো শান্ত আছিস কেমনে। (ছায়া )
.
___ও তোকে বিরক্ত করছে আমাকে না। তাহলে আমি ওকে কেন
মারতে যাবো আর তোকে কেউ বিরক্ত করলো কি করলোনা তাতে আমার
কোনো যাই আসেনা। ( তুহিন )
ছায়া নিজের চোখের জল আটকে রাখতে পারছিলো না তুহিনের এমন কথা শুনে।
নেকাবের কারণে কেউই তেমন ছায়ার চোখের দিকে খেয়াল করেনি।
কিন্ত একজন ছায়ার চোখের জল আর তার কষ্ট দুটোই দেখতে আর বুঝতে পারছিলো।
সে আর কেউ নয় সে হলো তুহিন।
ছায়া আর একমুহূর্ত ও ভার্সিটিতে দাঁড়ালো না সোজা বাড়ি চলে এলো।
আর নিজের রুমের দরজা বন্ধ kkore কাঁদতে কাঁদতে বললো,
আপনি একদমই ভালো না তুহিন আপনি খুবই খারাপ।
আপনার সামনে একজন ছেলে আমাকে এভাবে ডিসটার্ব করছিলো আর
আপনি চুপকাপ সবটা দেখে যাচ্ছিলেন। আমি হয়তো আপনার কাছে
একটু বেশি এক্সপেক্ট করে ছিলাম। (ছায়া )
ছায়া কাঁদতে কাঁদতে কবে ঘুমিয়ে পড়েছে সেটা সে নিজেও জানেনা।
ওইদিকে তুহিন ছায়াকে ওভাবে বলার পর নিজেও মনেমনে প্রচুর কষ্ট পাচ্ছিলো।
হঠাৎ ই রায়ানের কথা মাথায় আসতেই তুহিনের রাগ উঠে গেলো। চোখ মুখ শক্ত করে তুহিন বললো,
তোর জন্য আজকে ছায়ার চোখে জল আসছে তোকেতো আমি কিছুতেই ছাড়বো না। (তুহিন )
.
ভার্সিটি ছুটির পর রায়ান বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। হঠাৎ ই কেউ একজন তার মুখে রোমাল চেপে ধরলো। রায়ান কিছুক্ষন ছুটার চেষ্টা করার পর শেষে অজ্ঞান হয়ে গেলো।
রায়ানের যখন জ্ঞান ফিরলো সে নিজেকে একটা অন্ধকার রুমে হাত পা বাধা অবস্থায় পাই । রায়ান ছুটাছুটি করছিলো হাত পায়ের বাঁধন খুলার জন্য কিন্তু সে ব্যর্থ হলো।
হঠাৎ ই রায়ান অন্ধকারে কারো ছায়া দেখতে পেল যে তার দিকেই এগিয়ে আসছে এবং লোকটার হাতে একটা হকি স্টিক ও আছে। লোকটা রায়ানের সামনে আসতেই রায়ান দেখতে পেলো একটা কালো হুডি পড়া লোক যার মুখে মাস্ক পড়া এবং তার চোখ দেখে মনে হচ্ছে সে প্রচুর রেগে আছে।
রায়ানের সামনের চেয়ারে লোকটি বসে পড়ে আর রায়ানের দিকে অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে কাটকাট গলায় বলে,
___তোর সাহস হলো কেমনে তুই ছায়াকে প্রপোজ করেছিস তাও সে রিজেক্ট করার পরও তাকে বিরক্ত করেছিস। (অজ্ঞাত লোক )
এই বলে লোকটি হকি স্টিক টা দিয়ে একটা টেবিলে জোরে আঘাত করে। এতে রায়ান ভয় পেয়ে যায়। তবুও রায়ান কাঁপাকাঁপা গলায় বললো,
___আমি ছায়াকে ভালোবাসি তাই ওকে প্রপোজ করেছি আবারো করবো। ( রায়ান )
রায়ানের কথা শুনে লোকটার রাগ যেন সপ্ত আসমানে উঠে গেছে তার চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে আগুন বেরুবে। লোকটার এতো ভয়ঙ্কর চেহারা দেখে রায়ান খুব ভয় পেয়ে যায়।
ভয়ে ভয়ে রায়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই অজ্ঞাত লোকটি রায়ানকে হকিস্টিক দিয়ে মারা শুরু করে। অনেক্ষন মারার পর লোকটার রাগ একটু কমতেই সে দুইজন লোককে ডেকে রায়ানকে হাসপাতালে ভর্তি করতে বলে।
রায়ানকে ওই দুইজন লোক নিয়ে যাবার পর অজ্ঞাত লোকটি তার মাস্ক খুলে ফেলে। অবাক করা বিষয় হলো অজ্ঞাত লোকটি আর কেউ নয় সে হলো তুহিন।
.
তুহিন নিজেও জানেনা সে এমন কেন করলো। সে শুধু এটুকু জানে রায়ানের জন্য আজ ছায়ার চোখে জল এসেছে আর এটা তুহিন কখনো মেনে নিতে পারবেনা। তুহিন নিজে নিজেই রেগে একটু চেচিয়ে বলে,
____ছায়াকে কাঁদাবো ও আমি আর ওকে জ্বালাবো ও আমি। আমি ছাড়া অন্য কারো জন্য ছায়ার চোখে জল এলে বা কেউ ছায়াকে বিরক্ত করলে তাকে আমি কখনোই ছাড়বো না। ছায়ার পাগলামী, রাগ, জেদ এমনকি তার চোখের জলেও শুধুমাত্র আমার অধিকার আছে অন্য কারোর নেই কারোরই নাহ । (তুহিন )
তুহিন যে কি বললো সে নিজেও তার মানেটা জানেনা আর এই মুহূর্তে জানার চেষ্টাও করছে না। এখন তুহিনের শুধু ছায়ার চোখের জলের দৃশ্য টা মনে পড়ছে। তুহিন তার রাগ কমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু বার বার ব্যর্থ হচ্ছে।
রেগে তুহিন পাশের টেবিলে জোরে ঘুষি মারে যার ফলে তুহিনের হাত টেবিলের কোনায় লেগে খুব বাজে ভাবে কেটে যায়। তুহিনের সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই সে ছায়ার কথা ভাবতে ব্যাস্ত।
.
ছায়ার ঘুম ভাঙলো রাতে সে নিজেকে বিছানায় পেয়ে অবাক হলো।
কারণ সে তো মেঝেতে বসে বসে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিল।
তাহলে তাকে বিছানায় কে আনলো। পরের মুহূর্তেই ছায়ার নাহারের কথা মনে
পড়লো ছায়া ভাবলো নাহার ওকে হয়তো বিছানায় শুয়ে দিয়ে গেছে।
ছায়া উঠতে যাবে তার আগেই আবার পড়ে গেলো। বেশি কান্না আর বেশি ঘুমের কারণে হয়তো
ওর এই অবস্থা হয়েছে। ছায়া নিজেকে সামলে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো
আর একটা লম্বা সাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসে নামাজ পড়ে নিলো।
.
চুল শুকানোর জন্য ছায়া বেলকানিতে যাবে ভেবে পা ফেললো কিন্তু আবার থেমে গেলো রায়ানের বলা কথা মনে পড়তেই। ছায়া আজ আর বেলকানিতে গেলো না সোজা না খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
হঠাৎ ছায়ার তুহিনের কথা মনে পড়তেই ফোনটা হাতে নিলো ভাবলো তুহিন হয়তো সরি বলার জন্য কোনো না কোনো মেসেজ দিয়েছে। কিন্তু ছায়ার ধারণা ভুল প্রমাণিত করে তুহিন তাকে কোনো মেসেজই দিলো না।
এদিকে ছায়া অপেক্ষা করছে তুহিনের মেসেজের জন্য আর ওইদিকে তুহিন অপেক্ষা করছে ছায়ার মেসেজের জন্য। দুইজনেই মনেমনে সিদ্ধান্ত নিলো তারা আজকে নিজেরা মেসেজ দিবেনা।
এভাবে অপেক্ষা করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেলো কেউ কাউকে মেসেজ দিলো না।
দুইজনেই বার বার মেসেজ লিখছে কিন্তু সেন্ড করছে না। ওই যে বলেনা
কিছু অনুভূতি প্রকাশ করা যায়না আর কিছু কথা বলতে গিয়েও বলা হয়না।
ওদের হয়েছে ঠিক তেমন দশা।
যাই হোক দুইজনেই একেঅপরের মেসেজের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালের দুইজনের ঘুম ভাঙতেই মেসেজ অপসন চেক করলো।
কিন্তু ওখানে কোনো মেসেজই এলো না দুইজনেই বড্ড হতাশ হলো
সাথে তাদের মনে একে অপরের প্রতি পাহাড় সমান অভিমান জমা হলো।
যাই হোক তারা তাদের অভিমান নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
ভার্সিটিতে পৌঁছে ছায়া একটু দূরে রায়ানকে দেখে চামকে গেলো কারণ
রায়ানের হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ বাধা ছিলো।
.
ছায়া রায়ানের দিকে এগিয়ে যাবে ঠিক সেই সময় ছায়া রায়ানের পিছনে একটু দূরে
তুহিনকে দেখতে পেলো। ছায়া দৌড়ে রায়ানের দিকে এগিয়ে আসছে এটা দেখে
রায়ান আর তুহিন দুইজনেই ভাবলো ছায়ার রায়ানের প্রতি হয়তো একটু ভালোলাগা আছে ।
তুহিন রেগে মনেমনে বললো,
এতো প্রেম যে ওর ব্যাথা দেখে দৌড়ে আসতে হচ্ছে। তাহলে কাল এতো নাটক
করতে গেলো কেন। (তুহিন )
তুহিন আর রায়ানের ভাবনা মিথ্যে করে দিয়ে ছায়া রায়ানের পাশ দিয়ে দৌড়ে তুহিনের
কাছে গেলো। তুহিনের হাতের ব্যাথা দেখে ছায়ার সমস্ত অভিমান দুশ্চিন্তার রূপ নিলো।
ছায়া তুহিনের হাত টা টেনে ধরে খুব চিন্তিত সরে উত্তেজিত হয়ে তুহিনের হাত
দেখতে দেখতে তুহিনকে প্রশ্ন করলো,
এভাবে কোথায় চোট্ পেয়েছেন? ইসস কতটা কেটে গেছে মেডিসিন নিয়েছেন
ডক্টর দেখিয়েছেন তো। আর এভাবে কাটলো কেমনে এতো ক্যারেলেস কেন আপনি। ( ছায়া )
ছায়ার এহেন কাণ্ডে তুহিন সহ বাকিরা সবাই হতবাক হয়ে গেলো।
তুহিনতো জাস্ট অবাক তুহিন মনেমনে বলছে,
কাল মেয়েটাকে এতো কথা শুনালাম আর আজ দেখো আমার
এটুকু ব্যাথা দেখে সে কালকের সব ভুলেই গেছে। আজব মেয়ে একটা মাঝে মাঝে আমি ওকে বুঝতেই পারিনা আসলে ও
মানুষটাই একটা মিস্ট্রিরিয়াস পারসন।( তুহিন)

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com